ক্যাডেট ক্কলেজের প্রথম সপ্তাহ কাটলো ঘোরের মধ্যে। সবার ঘোর লাগা শুরু হয় মা বাবা চলে যাবার পর। আমার শুরু হাউসে পৌছানোর পরপরই।
ডরমিটরিতে বাক্সো রাখার প্রায় সাথে সাথেই একজন সিনিয়র ভাই ধরে নিয়ে গেলেন কমন রুমে। তাঁর উদ্দেশ্য সাড়ে বারো বছরের শিশুটিকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে সাহয্য করা। তিনি আমাকে যখন ক্যারাম খেলা শেখাচ্ছেন, তার ফাকে কখন ঘন্টা পড়ে গেল জানিনা। খেলা শেষ করে রুমে ফিরে গিয়ে দেখি মা বাবা ফিরে গিয়েছেন। কাঊকে তখন চিনি না। কারো কাছে জিজ্ঞাসাও করতে পারলাম না। কেরাম খে লা শিখতে গিয়ে এতিম হয়ে গেলাম।
এর পর নতুন জীবন যাত্রায় অভ্যস্থ হতে গিয়ে লাইটস অফের আগ পর্যন্ত কান্নার সময়ও পেলাম না। লাইটস অফের পর বুকে চেপে আশা কান্নাটা বালিশ চাপা দিলাম। সেই দিন থেকেই নিজের কষ্ট গোপন করা শিখে গিয়েছি। দু’টি সপ্তাহ প্রায় ঝড়ের মত গেল। জামা কাপড়ের মাপ দেওয়া, বই পত্র ড্র করা, ক্যান্টিন কুপন নেওয়া, ধোপায় কাপড় দেওয়ার জন্যে স্লিপ বানানো শেখা, বিছানা গুছানো, মশারি তোলা, জুতা পালিশ, সিনিয়ারের একটু আধটু ফাইফরমাশ খাটা কিছুই বাদ গেলোনা। এরই মধ্যে শবে বরাত চলে এলো।(আজকাল শবে বরাত বিরোধী অনেক মতবাদ গড়ে উঠেছে। তখন আমাদের কাছে শবে বরাত অনেক মজার ছিলো)।
সন্ধ্যার নামাজের পর দেখি ডরমিটরী 6 এর সামনে মিঃ ফারুক লতিফ সিনহা। স্যার আমাদের হাউস টিউটর ছিলেন। সপরিবারে থাকতেন হাউসের তিন তলায়। সিনিয়ররা মোটামুটি সন্ত্রস্ত হয়ে গেলো। কার কি অপ্অরাধ কে জানে। স্যার বললেন ক্লাশ সেভেন ফলিন (সারি বেধে দাঁড়াও)। ভয়ে ভয়ে জড়ো হলাম সবাই। সার বললেন কুইক মার্চ টু তিন তলা। আমরা ১৮ জন হাজির হলাম স্যারের বাসায়। সেখানে গিয়ে দেখি স্যারের অন্য চেহারা। স্যারের ছেলে মেয়ে তখন ছোট। তিনি ম্যাডামের সাথে টেবিল সাজালেন ঘুরে ঘুরে সবার খাওয়া ঠিক মত হচ্ছে কী না দেখলেন। ম্যাডামকে সেইই আমাদের প্রথম দেখা। তবে একটি বারের জন্যেও অপরিচিত মনে হচ্ছিল না। সেদিন লাইটস অফের পর ভীষণ ভাবে মা বাবার কথা , বাড়ির কথা মনে হতে লাগলো। সেদিন রাতে কেঁদে বালিশ ভিজিয়ে ফেললাম।
"কেরাম খে লা শিখতে গিয়ে এতিম হয়ে গেলাম।" - চমৎকার, হৃদয়ছোঁয়া অভিব্যক্তি!
মিঃ ফারুক লতিফ সিনহা এবং ম্যাডাম এর বদান্য স্নেহশীল আচরণের কথা জেনে মুগ্ধ হ'লাম। আমাদের সময় কখনো এরকম কেউ করেনি, আর করতে চাইলেও হয়তো প্রিন্সিপাল সেটা করার অনুমতি দিতেন না।
বাকী কথাগুলো মনে হয় যুগ যুগ ধরে সব কলেজের সব ক্যাডেটদের জন্যই সত্য।
সুন্দর স্মৃতিকথা, ভালো লাগলো।
আমি ক্যাডেট হিসাবে খুব সাদামাটা ছিলাম। তাবলে স্যারদের স্নেহের ঘাটতি ছিলো না।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ভালো লেগেছে।
ধন্যবাদ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অনেক ভাল লাগলো সাইদুল ভাই
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
অনেক ধন্যবাদ অরুপ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
কুড়মুড়ে লেখা, সাইদুল ভাইয়া! আরো অনেক লেখা চাই আপনার থেকে।
এমজিসিসি শুরু হয়েছিল আমাদের নিয়ে, জানেন। ঊনিশে মার্চ, উনিশশো তিরাশি সালে আমাদের তিনটে ব্যাচ নিয়ে যাত্রা শুরু হলো। অষ্টম, নবম এবং দশম শ্রেণীর মেয়েরা এলাম কলেজে। আমি সবচেয়ে জুনিয়র ব্যাচে। দশমের গোটা দুই আপা অকারণে চেঁচামেচি করতেন আমাদের সাথে। এখনো দুঃস্বপ্নে আপাদের হাই পিচড ভয়েস তাড়া করে।করিমউদ্দীন আহমেদ স্যার আমাদের প্রিন্সিপ্যাল। সাথে ছিলেন আরো এক ঝাঁক নতুন টিচার। আমরা যেমন কনফিউসড ছিলাম তাঁরাও যে অনেকাংশে কনফিউসড ছিলেন না তা কিন্তু নয়। কিন্তু যেটা ছিল সবার মাঝে তা হলো ভীষণ ভালবাসা এবং নতুন কিছু করবার প্রচেষ্টা। ।
সাবিনা, পাবনা ক্যাডেট কলেজে আমার এক সহকর্মী ছিলো এমজিসিসির প্রথম ব্যাচের, মাহিনুর নাম। এখনও কোন কলেজে হয়তো পড়ায়। এমজিসিসিতে আমার কয়েকজন সহকর্মীও আছেন। ক্যাম্পাস্টা ছোট্ট কিন্তু সুন্দর।তোমাকে অনেক ধন্যবাদ।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ধীরে হলেও সিসিবি আপনার অবলিলায় গেথে যাওয়া গদ্যের পরশ পেতে শুরু করেছে।
আমি নিশ্চিত আরো অনেক অসাধারন মুহুর্ত আমরা কাটাবো আপনার এইসব গদ্যের সাথে।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ, পারভেজ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান