অডিও ব্লগঃ কার্সড ফর ইটার্নিটি

অন্ধকার হাতড়ে ফোন তুলে যখন তোমাকে কল করলাম তুমি জানতেও পারোনি আমি তখন কবরের আঁধারে ডুবে ছিলাম। আমার শোবার ঘরের কাঁচের জানালার বাইরে তখন নিশুতি রাত। সামনের হলি গ্রোভ রোডে শুনশান নিরবতা। দূরে কোথায় যেন একটা এ্যাম্বুলেন্স চলে গেলো সাইরেন বাজিয়ে বাজিয়ে।

চল্লিশ মাইল দূরের শহরটিতে তুমি তখন শুয়ে পরেছো লুসিকে নিয়ে। তোমার পায়ের কাছে ধূসর রঙা বেডে গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে লুসি। আমি ঠিক দেখতে পেলাম, পাশের টেবিলে একটা দুধ সাদা ডয়লির ওপর সসারে ঢাকা জলের গেলাস। ফোনের মলাটে আমার ছবি ভেসে উঠতেই তুমি হেসে বললে, ও রায়া, তুমি? সব ঠিক আছেতো? জানতে চাইলে আমার কুশল। কোথাও কোন তাড়া নেই তোমার। কাঁচা ঘুম ভাঙিয়ে এই যে বললাম কেমন আছো তাতেও তোমার কিছু এসে যায় না যেন। আহ্লাদী কিশোরীর মত ঠোঁট গোল করে কাঁচুমাচু করে বললাম, ঘুম ভাঙাবার জন্য সরি, অভি! আমার ইতস্তত ভঙ্গী দেখে তুমি বললে, ঘুম কি পোরসেলিনের সুপের বোল যে ডাকলেই ভেঙ্গে যাবে??

সন্ধ্যায় আমার কাজিন মিশুর সঙ্গে বলছিলাম তোমার কথা। আমার এই দিদিটি জন্স হপকিন্স থেকে বায়ো মেডিকেলে উচ্চতর ডিগ্রী নিয়ে কাজ করছে এমোরীতে। ছয় মাসের রূম্পা আর তিন বছরের রেশমিকে নিয়ে রবিন ভাইয়ার সাথে তার আনন্দের সংসার। দিদির সাথে জানো আমার জগতের সব খুনসুটি। শনিবার দিনশেষে ঠোঁটে গ্লস আর চোখে মাস্কারা পরে আমরা আড্ডা দেই স্কাইপে বসে। সপ্তাহ জুড়ে কত কথা জমে থাকে আমাদের। আজ লাল কম্বলের নীচে শুয়ে আমি বলি, আমার একটা সিক্রেট আছেগো আপু! অভয় দাওতো বলি এখুনি!

মিশু আপু বলল, ওরে ওরে বলতে না বলতেই ব্লাশ করছিস? খুব গুরুতর কিছু নাকিরে? কে মন চুরি করলো তোর, বল? কোন সে কৃষ্ণ অই, কোথায় নিবাস তার? কে বাজালো অই মোহনবীনা??

মিশুর কথায় আমি হাসি। ঘর পোড়া গরুর মত ভেতরে ভেতরে কি কাঁপি একটুখানি?? অনেক ভেবে চিনতে দুবার গলা পরিষ্কার করবার ছলে সময় ক্ষেপণ করে বলি,
ও কর্পোরেটে কাজ করো ন’টা পাঁচটায়, উইকেন্ডে টেনিস খেলতে ভালবাসে আর সাহিত্যে ভীষণ ঝোঁক!

তোর মতো কবিতা আউরায় নাকি সকাল দুপুর? তোর মত লুকিয়ে লুকিয়ে ব্রাউনি খায় নাকি সেও?? মিশুকে দারুণ উচ্ছল দেখায়, জানো!

হাতের সবুজ টিয়ে নেইলপলিশ খুঁটতে খুঁটতে আমি বলি, অভিজিৎ বলেছে, আমাকে নিয়ে ও গন্ডোলায় চড়ে ঘুরে বেড়াবে ভেনিসের জল হাওয়ায়! সুইটসারল্যান্ডের লুসারণ থেকে লোকারনো ঘুরে বেড়াবো আমরা উইলহেম টেল এক্সপ্রেসে চড়ে। কুলু মানালির হাডিম্বা মন্দিরে দেখো কেমন…
এটুকু বলতেই মিশু আমাকে থামিয়ে দিল!
‘দাঁড়া, দাঁড়া’ দিদি বলে ওঠেন হঠাৎ। আমার লোকান্রো যাত্রা থেমে যায় মাঝ পথেই। মন্টে রোসায় আর যাওয়া হয়না আমাদের।
অভিজিৎ?? অভিজিৎ কিরে? মিশুর কণ্ঠে উত্তেজনা!
ওর নাম অভিজিৎ বসু, পিতা অনিমেষ বসু। আদি নিবাস বশিরহাট।
আর কী জানতে চাও, বলো?? আমি খুব শান্ত হয়ে বলি মিশুকে।

আমার বন্ধু আর মমতাময়ী দিদিমণিটি ততক্ষণে মিসেস মিশুক রহমান হয়ে উঠে বসেছে তার কুইন সাইজ বেডে। গরম লাগছে বলে এক ঝটকায় তার অফ হোয়াইট ইলেকট্রিক কম্বল সরিয়ে মিশু বলে, হিন্দুর ছেলে?কুলু মানালির মন্দির? রোমান্টিসিজম দেখি ওভারলোডেড! তোর জন্য আমাদের আর মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না রাবু! আগুনে হাত দিস না, বলে রাখছি আগেই! জ্বলে পুড়ে খাক হয়ে যাবে আমাদের সাত পুরুষ!

২,৭১৮ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “অডিও ব্লগঃ কার্সড ফর ইটার্নিটি”

  1. জিয়া হায়দার সোহেল (৮৯-৯৫)

    ওয়াও, চমৎকার মিউজিক কম্পোজিশন। সত্যি খুব ভালো লেগেছে। তোমার কণ্ঠে ভেরিয়েশেন অনেক ভালো হয়েছে। লিখাটাও সুন্দর। শ্লোগান হোক, '' আপু তুমি এগিয়ে চল, আমরা আছি তোমার সাথে'' । তোমার জন্য মন থেকে অনেক শুভকামনা আরও বড় কিছু যেন কর। :clap: :clap:

    জবাব দিন
    • সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

      🙂 🙂 🙂 🙂

      তুমি বড় বেশী ভালবাসো তাই প্রশংসার আধিক্য তোমার, জিয়া! রাবেয়া-অভিজিতের গেলো পর্বে অনেকেই অডিও শুনতে চেয়েছিলেন তাই এটি করা। বহুদিন পড়িনি কিছুই। এখানে গুণীজন বন্ধুদের পাঠ-প্রচেস্টা দেখেই তো এগিয়ে আসা। অনেক ধন্যবাদ এত্তো এত্তো অনুপ্রেরণা দেবার জন্য!

      তোমার আইডিয়া অনুযায়ী এর পর কবিতা আর গানের যুগল অডিও ব্লগ আসবে অচিরেই!

      জবাব দিন
  2. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    নাহ, কান্নাই পেয়ে গেল শেষমেষ!!
    ভালবাসা কেউতো এনে দিতে পারে না অথচ দেখো একটা না একটা অজুহাত তৈরী করে তা কেড়ে নিতে, তাড়াতে কি ভিষন খড়গ হস্ত সব্বাই।
    এরচেয়ে বেদনার, এরচেয়ে কষ্টের আর কি হতে পারে?
    আমি জানি না।

    একটি অনবদ্য প্রযোজনা......


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    তোমার কমেন্ট পড়ে মনটাই মেঘে ঢেকে গেলো, পারভেজ ভাইয়া। তুমি যাকেই ভালবাসো না কেনো শুনবে, তার দোষের সীমা নেই। সে দেখতে সুন্দর নয়তো ফ্যামিলি ভাল নয় অথবা আগের পুরুষ চাষা ছিল বলে কটাক্ষ করেন আমাদের বন্ধুরাই। অর্থনৈতিক স্ট্যাটাস সমান না হলে বলবে হাভাতে ফ্যামিলির মেয়ে/ছেলে তো তাই অমন আচরণ তার। আর যদি সে অন্য ধর্মের অনুসারী হয় তো সবাই তখন কোরান আর হাদিস বিশেষজ্ঞ হয়ে যান। কেউ কিন্তু একটিবারের জন্যও ভাবেন না এই প্রেমিকযুগল এডাল্ট এবং তারা জেনে শুনেই বিষ করেছে পান!

    অনেক ধন্যবাদ শুনবার জন্য! 🙂 🙂 🙂 🙂

    জবাব দিন
  4. মঞ্জুর (২০০২-২০০৮)

    অসাধারণ আপু। শুনতে শুনতে আর পড়তে পড়তে পুরো অন্যজগতে হারিয়ে গিয়েছিলাম। ''আমার বন্ধু আর মমতাময়ী দিদিমণিটি ততক্ষণে মিসেস মিশুক রহমান হয়ে উঠে বসেছে তার কুইন সাইজ বেডে।'' এই অংশটুকু বেশি দারুণ। সত্যি, সবাই এইজায়গায় এসে বেশি কনসারভেটিভ হয়ে যায়, কিন্তু বুঝতে চেষ্টা করে না, মানুষের ভালো লাগার উপরে কোন কিছুরই নিয়ন্ত্রণ নেই। ভালোবাসার কোন সীমা - পরিসীমা নেই।

    জবাব দিন
  5. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    আজ সকালে শোনার অবকাশ পাওয়া গেল অবশেষে!
    গল্প তো তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে - পুরো পাঠটি নিবিড়ভাবে শুনলাম আপা। সুর সংযোজন আর পাঠ দুটোই একে অন্যের সাথে এত সুন্দর করে মিলে গেছে!
    এতদিন পর্যন্ত এই দুটো চরিত্র নিজেদের জগত নিয়েই ছিল -- সমাজ বা তৃতীয় ব্যক্তির অনুপ্রবেশ সেভাবে দেখতে পাইনি। 'মিশু'-র কথাগুলো তো নতুন কিছু নয়; তবু কেমন অসহায়, হতাশ আর ক্রুদ্ধ করে তোলে, তাই না? আমি যতটুকু বুঝি -- রাবেয়া এই চোখ রাঙ্গানিকে দুইপয়সাও পাত্তা দেবার বান্দা নয়। তবু কাছের মানুষের সংকীর্নতা তার বুকে শেলের মত বিঁধেছে। এবারে একটা ছবিব্লগ বানাও এ সিরিজের কোন একটা পর্ব নিয়ে -- অভিজিত রাবেয়ার প্রিয় অনুষঙ্গকে ঘিরে।

    আরেকটা কথা --- এ পর্বে জানছি রাবেয়ার ভালো লাগার বা প্রেমে পতিত হবার কথা। অবাক হইনি -- যেন এটাই হবার কথা ছিল। কিন্তু সে পথে রাবেয়ার মানসিক ভ্রমনের বর্ণণা তো পেলাম না! এ নিয়ে নিশ্চয়ই আলাদা সিরিজ আসছে।

    জবাব দিন
  6. Madam Sabina, another well orchestrated piece of the jigsaw of the love story you have started to pen. This time you have narrated and written first person. And I for one think it’s a brilliant change. When authors write in first person, it is as though they are immersed in the story and sometimes, they are a part of the story themselves. A few of my favorite first person writings are The Adventures of Huckleberry Finn (Mark Twain), The Sun Also Rises (Hemingway) and To Kill a Mockingbird (Harper Lee). But your fist person narrative keeps on tugging me back to “Heart of Darkness” by Joesph Conrad. But that can be left for a conversation for another day. Today, lets talk about the environments each of the three characters are living in. The calm collected Abhijit, the wounded Rabya, and her bitter cousin are each living in conditions that peeks into and also reflects their very own souls. And may I add, that in itself makes this write up mesmerizing piece, in my humble mind.

    Rabya is hurting and she is in the depths of dark despair. From the darkness of the grave, she is reaching out to her light, Abhijit. She is wounded by her cousin and she is questioning her love. Rabya needs affirmation from Abhijit. She even hears the wailing of the ambulance on it’s way to the hospital. Is that her heart crying out for help? She is calling her doctor to make her whole again. Just a simple phone call to Abhijit makes her feel better enough to pout like a teenage girl in love! The color of love is red. And Rabya is wrapped up in it, as her red blanket signifies. Red is the color of sexuality and it can stimulate deeper and more intimate passions in us. In the Chinese culture, red is the color of good luck and in the Indian subcontinent, it symbolizes purity and often it’s is used in wedding gowns. But I ask you Madam Sabina, is Rabya’s red blanket meant to be a red flag to Abhijit?

    Abhijit is calm. He is elevated, God like. He is not in a hurry. The glass of water next to his bedside tells me that his life is full. Like the cover on his glass, his life is sheltered, protected and he does not want to get it dirty. Abhijit’s dog, lying in his bedroom is of immense significance in my opinion. The dog’s agenda is simple, fathomable, and overt. There are no ulterior motives with a dog, no mind games, no second guessing, no complicated negotiations of bargains, and guilt trips or grudges if a request is denied. People love dogs, Madam Sabina, you can never go wrong by adding a dog to a story. But to me, the dog is there are Abhijit’s protector. It’s a female dog as well. I do recall the pieces of the story where Abhijit’s mother was his protector in his childhood days. The great hound is there protecting her master from all harm. Abhijit is never alone. Even in the intimacy of his bedroom, his DOG is there. Interestingly, Madam Sabina, DOG spelled backwards is GOD!

    And then there is Rabya’s cousin, Mishu. She is well educated and lives in this great nation. Yet her mind is dark. She wants to pull Rabya in there. She is Dr. Faustus and the Mephistopheles morphed into one. Jekyll and Hyde. She is buried in her lush queen size bed like she belongs in the depths of Hades. In hell, it’s hot as her hot electric blanket tells us. Rabya feels she in the darkness of the grave after she talks with her “sweet” cousin. In the heat of the moment and from the heat of her soul, Mishu transforms into Mrs. Rahman and uncoils like a snake or like satan emerging from the hotness of a snake pit. Cousin Mishu’s heart is erupting like a volcano. if ones heart is a volcano, how shall you expect flowers of love to bloom?

    In closing, I would like quote two great people. One is a hindu and the other a muslim. And I will let the chips fall where they may:

    I love you when you bow in your mosque, kneel in your temple, pray in your church. For you and I are sons of one religion, and it is the spirit.
    -Gibran

    Where the mind is without fear and the head is held high
    Where knowledge is free
    Where the world has not been broken up into fragments
    By narrow domestic walls
    Where words come out from the depth of truth
    Where tireless striving stretches its arms towards perfection
    Where the clear stream of reason has not lost its way
    Into the dreary desert sand of dead habit
    Where the mind is led forward by thee
    Into ever-widening thought and action
    Into that heaven of freedom, my Father, let my country awake.
    - Tagore

    Atlanta, Georgia, USA

    জবাব দিন
  7. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    "I would like quote two great people. One is a hindu and the other a muslim" - In this regard, may I say, Khalil Gibran was born into a Maronite Catholic family in what is known today as Lebanon. He was not a Muslim. Due to a mistake at school, he was registered as "Kahlil Gibran".
    Rabindranath Tagore, although born to Brahmin parents of Kolkata with ancestral roots at Jessore, was a follower of Brahmoism, a monotheistic reformist and renaissance movement of Hindu religion.
    Please correct me if I am wrong.

    জবাব দিন
    • Mr. Ahasan, you are absolutely right of course. I should have left it at "two great poets". Tagore's family was a reformist within the hindu religion. But he was born in a brahmin family. Gibran was born as a catholic, and he was originally from Lebanon. But he had a tremendous Islamic and Sufi influence as his writings show. He saw things being done in the name of Christianity which he could not accept. In his writing, he raged against the oppression of women and the tyranny of the Church and called for freedom from Ottoman rule. Interestingly, Gibran's best selling book is called "The Prophet".

      Thank you Mr. Ahasan for the correction, for reading my post, and providing feedback. I stand corrected.

      জবাব দিন
  8. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    যেহেতু এই গেরামে নতুন তাই মন্তব্য পড়ার আগে এর ধারাবাহিকতার বিষয়টি জানা হয়নি। আর কোনো পর্ব এখনো পড়াও হয়নি ।
    দুদিন আগে পড়েছি আজ আবার শুনতে শুনতে লেখাটায় চোখ বুলিয়ে গেলাম ।

    পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম । আজ শুনে আপ্লুত হলাম ।
    দারুন ।

    আরো পড়ে অন্য পর্বগুলো থেকে এই চরিত্রগুলোকে আরো জানলে আরো কথা নিশ্চয়ই বলার থাকবে।
    তখন আবারো বলা যাবে ।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।