আমাদের বাড়ীর কাছেই রুবি ফলস। এর আগেও বার কয়েক গেছি মাটির নিচের এই রূপের জলধারা দেখতে। এবারের জার্নিটা একটু অন্য রকম কারণ কানাডা থেকে ভাই-ভাবী এসেছেন, আর আমি তাদের গাইড হয়ে আমেরিকার রূপ বৈচিত্র্য দেখাতে বেরিয়েছি। হাজার উপায়ে আমাকে তো তাদের কাছে প্রমাণ করতে হবে যে রূপে গুণে কানাডার চাইতে আমার দেশটি উত্তম! আমাদের বাড়ী থেকে মাত্র দুশো কিলোমিটার দূরে এই মেঘ পাহাড়ের দেশ। সবাই মিলে গল্প করতে করতে যখন টেনেসি পৌঁছুলাম আলো ঝলমলে একটি দিনের শুরু হয়েছে সবে। আমাদের দলে ছোট বড় মিলিয়ে ছয়জন, বড় একটা ভ্যানে করে আটলান্টা থেকে এসেছি আমরা একদিনের ট্যুরে।
শহরে ঢুকেই শক্তপোক্ত একটা ব্রেকফাস্ট খেয়ে নিলাম এই ভেবে যে কখন আবার না জানি খাবার জোটে। এখন রূবি ফলসের কথা একটু না বললেই নয়। রূবি ফলসের বিশেষত্ব হলো এটী মাটির প্রায় একশো পঞ্চাশ ফুট নিচে অবস্থিত, মাটির গভীরে পাথুরে গুহার মাঝ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে হঠাৎ দেখা মেলে এই ঝর্ণার। কী যে তার রূপ! মনে হবে মাটি ফুঁড়ে যেন বেরিয়ে এসেছে আলো আর জলের এই অবিরাম ঝর্ণাধারা!
আমেরিকান গাইড তার দায়িত্ব পালন করেছে যথাযথ ভাবেই। পিচ্চিটা হাঁটতে পারছেনা? তাতে কি, আমার কাঁধ তো রয়েছে! কাঁধে তুলে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে হাঁটলাম সবাইকে দেখিয়ে। চুইংগাম ফুরিয়ে গেছে? অসুবিধা নাই, আমার ব্যাকপ্যাকে পোটলা করে সব এনেছি। গেটোরেইড, চুইংগাম, চিপস, কুকি, টিস্যু পেপার অথবা পানির বোতল… হাজার হোক প্রমাণ তো করতেই হবে আমাদের আতিথেয়তাই সেরা! গুহা, গিরিখাদ, পাহাড় অথবা পথঘাট যা বলো, চিজি ঐ ট্যুর গাইডের চাইতে আমি কম জানি নাকি? হাহ! কিন্তু বাবারও যে বাবা রয়েছেন সেটি টের পেলাম ভেতরে যাবার পর। ভাতিজী কানাডিয়ান বিচ্ছু মেয়ে আমার ঝুঁটি চেপে বসে আছে কাঁধে, কখনো কু কু বলে চোখের চশমা খুলে নিচ্ছে তো কখনো আহ্লাদের আতিশয্যে আমার নাকের বাঁশী থেবড়ে দিচ্ছে। সব চলছিল ভালোই কিন্তু হঠাৎ মনে হলো আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। দম আটকে আসছে, চোখে কেবলই শর্ষে ফুল দেখছি। বাচ্চাটিকে বাপের কোলে দিয়ে ট্যুর গাইড কে হড়বড় করে নিজের কথা বলে এক দৌড়ে এলিভেটরে্র কাছে গেলাম। পেছনে পরে রইল আমার একমাত্র কন্যা আর ভিনদেশী অতিথিরা। দুজন গাইড ধরাধরি করে আমাকে খোলা আকাশের নীচে নিয়ে এসে শুইয়ে দিল। চোখে মুখে পানির ঝাপটা পরতেই আমি যেন নতুন জীবন পেলাম ফিরে!
রুবি ফলসে গিয়ে জানলাম আমি যে ক্লাস্ট্রোফোবিক!!
নিখুঁত বণর্না।অপূবর্ লেখা। 😀 😀
এবার তোর লেখা চাই, লুবনা! এট লিস্ট পুরনো লেখা গুলো সিসিবিতে দিস! 🙂
:hatsoff: :hatsoff:
শেষে এসে খারাপ লাগলো কিন্তু সত্যিটা এমনই হয়। সুন্দর লিখছ আপু। :clap: :clap:
:hatsoff: :hatsoff:
আমি সারা বছর ভালোই থাকি, জিয়া! বিপত্তি ঘটে কদাচিৎ। হঠাৎ হয়তো এলিভেটারে বেশী লোকজন উঠলো তো আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হলো। অথবা অটোমেটিক কার ওয়াশ মেশিনে গাড়ী ধুতে গেছি তো ভেতরে বসে দম বন্ধ হয়ে আসছে...
সাবলীল বর্ণনা। মুগ্ধতা রেখে গেলাম। শুভকামনা রইলো।
:hatsoff: :hatsoff:
আপনার জন্যও শুভেচ্ছা রইল।
যে কোন ফোবিয়ার কথা জানা থাকলে সেটা বড় কোন সমস্যা না।
অনেকেরই অনেক ধরনের ফোবিয়া থাকে, কৈ, তেমন কিছু তো হতে দেখি না...
বর্ননাটা চমৎকার লেগেছে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:hatsoff: :hatsoff:
আমার সর্বশেষ দুর্যোগ ঘটলো গত বছর দেশে যাবার পথে। আমার জিপি কে বলে ওষুধপত্র সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু প্লেনের ভেতর ঢুকতেই মনে হলো আমি দম নিতে পারছি না। কী যে কষ্ট হলো সারাটা পথ! সহৃদয় পাশের যাত্রী আমার সাথে কথা বলে বলে অনেকটাই ভাল রাখতে সচেষ্ট হলেন। লন্ডন যেতে যেতে ভদ্রলোক আমার জীবন কাহিনী সব জেনে ফেললেন এবং শেষ অবধি আমার ফেইসবুক বন্ধুও হলেন তিনি!
একদিন তো আমার মনেই হলো আকাশটা আমাদের বন্দী করে রেখেছে... পাগল হবার আর বেশী দিন বাকী নাই, ভাইয়া!
:boss: :boss:
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।
আকাশ টা কিন্তু সত্যি আমাদের বন্দী করেই রেখেছে, মুজিব! :dreamy:
আমি নির্দোষ, কাউকে বন্দি টন্দি করি না :-B
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
সত্যি বলছো, আকাশ?? B-)
সাথে কয়েকটি ছবি থাকলে বেশ হতো। (সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ছবি গুলো হাতের কাছে পেলাম না যে, রাজীব! আসছে লেখায় পাবে প্রয়োজনীয় ছবি! 🙂
দারুণ প্রাঞ্জল বর্ণনা, আপু! :clap: :clap: :boss:
নিজের সেফটির জন্য ফোবিয়ার কথা জানা থাকা ভালো। তবে যতক্ষণ না আপনি সেই ফোবিয়াটির ফোবিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন, ততক্ষণ এগুলো নিয়ে খুব বেশী উদ্বিগ্ন হবার কিছু নেই। 😀
গৌড় দেশে জন্ম মোর – নিখাঁদ বাঙ্গাল, তত্ত্ব আর অর্থশাস্ত্রের আজন্ম কাঙ্গাল। জাত-বংশ নাহি মানি – অন্তরে-প্রকাশে, সদাই নিজেতে খুঁজি, না খুঁজি আকাশে।
:hatsoff: :hatsoff:
অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য, মুজিব! আমি ভালোই থাকি মোস্ট অব দা টাইম...বিপত্তি ঘটলে পালাবার পথ খুঁজি দ্রুত! গত বছর দেশে গিয়ে বসুন্ধরা সিটি মলের এলেভেটরে এতো ভিড় ছিল যে দেখেই দম বদ্ধ লাগছিল। সিঁড়ি বেয়ে উঠছিলাম ওপর থেকে নীচে। আমি সাফোকেটেড ফিল করলে লোকজনের সাথে কথা বলা শুরু করি!
সাসপেন্স বাড়তে বাড়তে কেমন করে যেন ক্লাস্ট্রোফোবিতে গিয়ে আটকে গেলো ..... হিহি :brick:
মানুষ এমনতয়, একবার পাইবার পর
নিতান্তই মাটির মনে হয় তার সোনার মোহর.........
টানটান সাসপেন্স নিয়ে একশন থ্রিলার আসছে অচিরেই, রুনা! B-)
দারুন বর্ণনা আপু, শেষে এসে চিন্তায় পড়লাম। মুক্ত থাকুন 🙂
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
:hatsoff: :hatsoff:
আমি খুব ভাল আছিরে, আকাশ! তোমার খবর কিরে??
:boss: apu osadharon likha. Mone hocchilo apnar sathe sathe amio Ruby Falls ghure elM
ক্লাস্ট্রোফোবিক মানে কী? কোন বদ্ধ স্থানে দম বন্ধ হয়ে আসা?