গতকাল হঠাৎ করেই মেহেদির “মা” কে নিয়ে লেখা ব্লগটি পরে একটা ব্লগ লিখতে ইছা হল। জীবনে কখনও ব্লগ লিখিনি, তাই সব সময়ই মনে হত এই ব্লগ লেখা হয়ত আমার জন্য নয়। হয়ত ব্লগ লেখার মত যথেষ্ট যোগ্যতা আমার নেই। কিন্তু আজ হঠাৎ সিধান্ত নিলাম লেখার। আদৌ জানি না কেমন হবে। ভুল ত্রুটি নিজ গুণে ক্ষমা করবেন প্রথম ব্লগ বলে। লেখার সিধান্ত নেয়ার পর প্রথমেই মনে হল যে আমার প্রথম ব্লগটি লিখবো “আমার বাবা” কে নিয়ে। বেশির ভাগ ফ্রেন্ডদের দেখেছি যে তারা বাবা র তুলনায় “মা” কেই বেশি পছন্দ করে। কিন্তু ছোট বেলা থেকেই আমি আমার বাবা কে অনেক বেশি পছন্দ করি। এর মানে এই না যে আব্বু ছোটবেলায় আমাকে খুব বেশী আদর দিয়েছে। ছোটবেলায় আব্বুর হাতে যথেষ্টই মার খেয়েছি। অবশ্য এই মার গুলো না খেলে হয়ত আজ এই অবস্থানে থাকা হত না। মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান হিসেবে যতটুকু অভাব অনুভব করা দরকার তা কখনই টের পেতে দেয় নি আব্বু আমাকে। যত কষ্টই হোক না কেন তা কখনই আমাকে স্পর্শ করেনি। কখনো কখনো আব্বুর এক্সট্রা careing কে খুব বিব্রতকর মনে হত। কিন্তু এখন বুঝতে পারি আব্বু সব সময় চাইত যেন পড়ালেখা ছাড়া অন্য কিছু নিয়ে আমাকে বা আমাদের ভাইবোনদের কোন চিন্তা করতে না হয়। আমি শুধু পড়ালেখা করবো এবং ভাল result করব। আব্বুর ছিল আমার প্রতি অগাধ বিশ্বাস বিশেষ করে পড়ালেখার ব্যাপারে। যদিও আব্বু সব সময়ই জানত যে পড়ালেখা তে ফাঁকিবাজি করার যথেষ্ট প্রবণতা আমার মধ্যে রয়েছে। এরপর ও আব্বু বলত “আমি জানি, ও অবশ্যই ভাল ফলাফল করবে।” কিন্তু আমি কতটুকু পেরেছি আব্বুর মুখে হাসি ফুটাতে? উত্তর ৫০-৫০% । ক্লাস ৫ এ বৃত্তি যখন পেলাম না তখন যতটা কষ্ট বৃত্তি না পাওয়ার জন্য পেয়েছি, তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি আব্বুর দিকে তাকিয়ে। ক্যাডেট কলেজ admission test এর সময় একমাত্র আব্বু ই বলেছিল যে আমার বিশ্বাস রায়হান অবশ্যই chance পাবে। বাকি সবাই বলেছিল আমার সিলেক্ট হওয়ার কোন সম্ভাবনাই নেই।result এর পরে অনেক কেঁদেছিলাম এবং তা শুধুমাত্র সিলেক্ট হয়েছি এই আনন্দে না, আব্বুর বিশ্বাস রাখতে পাবার আনন্দে। ssc তে যখন GPA 5 পেলাম না আব্বু আবার অনেক কষ্ট পেয়েছিল,কিন্তু আমাকে তা বুঝতে দেন নি।আমার উপর থেকে তার বিশ্বাস ও তুলে নেন নি। বরং সব সময় উৎসাহ দিয়েছেন যাতে এইচএসসি তে ভাল করতে পারি। আব্বুর সেই আস্থার প্রতিদান দিতে পেরেছিলাম এইচএসসি তে GPA 5 পেয়ে। আব্বু সেইদিন এত খুশি হয়েছিল যা ভাষায় প্রকাশ করার মত না। আব্বুর আরেকটা স্বপ্ন ছিল আমি যেন মেডিকেল এ পড়ি। কিন্তু মেডিকেল এ ভর্তি হওয়ার চেষ্টা বাদ দিয়ে আর্মি তে চলে এসে আব্বুর সেই স্বপ্ন টিকেও সার্থকতা দিতে পারিনি। এখন আব্বুর আর একটি স্বপ্ন ই রয়েছে,যা যে কোন মুল্লেই হোক কিংবা আমার নিজের যত কষ্টই হোক না কেন আমাকে পুরন করতেই হবে। কারণ আব্বুর জন্য আমি তেমন কিছুই করতে পারিনি। আব্বুর সপ্ন গুলোর সফল পরিসমাপ্তি না দিতে পারার কষ্ট আমাকে সব সময় আনেক কাদায়। এই শেষ একটা স্বপ্ন পুরন করতে না পারলে হয়ত সারা জীবনে আর শান্তি পাব না। আব্বু তোমাকে কখনো বলতে পারিনি তোমাকে কতটা ভালবাসি। তুমিও কখনই বলনি। কিন্তু আমার বুঝতে এতটুকুও কষ্ট হয়নি তুমি আমাকে কতটা ভালবাস। তাইতো এখনও ছুটি থেকে ফেরত আসার সময় আর সবার কাছ থেকে বিদায় নেয়ার পরেও তোমার কাছে বলতে গেলে তুমি যখন আমাকে জড়িয়ে ধর ,আমি নিজের চোখের পানি কে ধরে রাখতে পারি না। যদিও তুমি যাতে বুঝতে না পার এই জন্য হয় অন্য কোন দিকে তাকিয়ে থাকি নয়তো কোন কারণ ছাড়াই এমনি এমনিই হাসি। আব্বু আমি জানি ছেলে হিসেবে তোমার প্রতি যে দায়িত্ব আমার পালন করা উচিৎ ছিল তা আমি কখনই করিনি যার প্রধান কারণটিও তুমি। কারণ সেই সুযোগ তুমি কখনই আমাকে দাওনি। আজীবন আমাকে তুমি সেই ছোট ছেলেই বানিয়ে রেখেছ। তোমার কাছে এখনও আমি সেই ছোটবেলার রায়হান। তবে একটা জিনিস জেনে রেখ তোমার এই ছোট্ট রায়হান যে কোন পরিস্থিতিতেই হোক না কেন তোমাকে কখনোই কষ্ট দিতে পারবে না। আর সব শেষে একটাই অনুরোধ, তোমার প্রতি দায়িত্ব পালন করার একটু সুযোগ আমাকে দিও । (শেষে একটা কষ্টের ছবি দিলাম।কারন আমার আব্বু সারাজীবন কষ্ট করে গেছেন তার ছেলে-মেয়েদের মানুষ করার জন্য। অন্তত আমার জীবনে কখনো অভাবী সংসারের অভাবের ছাপ পড়তে দেন নি,চেস্টা করেছেন সব সময় সব কিছু পুরন করতে। তার বিনিময়ে যখন আব্বুর এই বাই-পাস অপারেশন হল তখন তার ২ ছেলের কাউকেই কাছে পান নি।ভাইয়া তখন মিশনে কঙ্গোতে আর আমি বিএমএ তে।আমার ২ বোনকে আমি আজীবন অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে সন্মান করে যাবো এই সময়ে ওদের ভুমিকার জন্য। এমনকি আমাদের কিছু জানতেও দেয় নি। তাই কেন যেন সব সময় এই ছবিটা আমাকে কাঁদায়)
৩০ টি মন্তব্য : “আব্বু’র জন্য লেখা”
মন্তব্য করুন
১ম লেখা ভালো হইসে হাত পা খুলে লিখতে থাকেন ।
আর চা খেয়ে সতেজ হন। :teacup: :teacup:
সিনিয়ররা বাকি কথা একটু পরে এসে বলবে ।
লেখা ভাল হইছে। নাম এর পাশে সাল লাগাইলে ভাল হয়। আরও লেখা চাই। ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ
এখন থেকে নাম এর পাশে সাল থাকবে
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
:awesome:
শরফুদ্দিন
ধন্যবাদ সবাইকে
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
স্বাগতম ভাই,শুভ সূচনা একটা ভালো লেখা দিয়ে :thumbup:
ভাল হয়েছে
খালেক
:boss: :boss:
:clap: রায়হান ভাই, চালিয়ে যান। ভাল হয়েছে, খালেক।।
মাহমুদ
রায়হান ভাই, আপনি আসার আগেই আহসান ভাই আপনার গ্যাগিং এর ছবি দিয়া সিসিবিবাসী কে চিনায়া দিসে আপনাকে :grr:
যাউক সেই কথা, বড় ভাই তো সিসিবি চিরকুমার প্রেসিডেন্ট পদের ইস্তফা দিয়া কই যে গেছে কোন খবর নাই....আপনি কি সেই পদ দখল করতে আসছেন ? 😉
রেজওয়ান , তিনি এখন স্টাফ কলেজ নিয়া ব্যাস্ত আছেন। এই আর কি!!!
দেখি সেই পদ খানা কিছু দিন দখলে রাখা যায় কিনা????????? 😀
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
তর আব্বার আস্থার প্রতিদান দিতে পারিস একজন দাক্তার মাইয়া বিয়া কইরা।।।।
এইডা কি তুই লেখা পইরা বুঝস নাই?
লেখা পরলে ত বোঝা উচিৎ
কারণ আমি এখন last hope.................... 😀
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
ভালো হয়েছে, রায়হান, চালিয়ে যা
ভাল লেখা।
চালিয়ে যাও।
তোমার তো দেখি এখনো ওরিয়েন্টেশন হয় নাই।
প্রিন্সিপাল স্যার কোথায়?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
ভাই দুঃখিত
আমি এলাকায় নতুন...............বুঝতাছি না কিছু............।।
"তোমার তো দেখি এখনো ওরিয়েন্টেশন হয় নাই।
প্রিন্সিপাল স্যার কোথায়?"
এই তার মানে বুঝি নাই...................
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
আগে ১০টা :frontroll: দাও। তারপরে বুঝবা।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
:frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: :frontroll: ভাই দশ টা শেষ............দেই আরও একটা দেই
:frontroll:
ভাই এবার বলবেন নিশ্চয়ই
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
এইবার বুঝতে পারছো?? =))
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
না ভাই :((
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
I also miss my dad
সবার ই কড়া উচিৎ
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
শুভ ব্লগিং।
লেখার চর্চা করার এটাই সবচেয়ে উত্তম মাধ্যম। অনেক দিন চেষ্টা করছি তোকে সিসিবি তে আনার। পারিনি। নিজে থেকে এসেছিস দেখে ভালো লাগলো। এই জায়গাটা কখনো ছেড়ে যাসনা। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লিখতে থাক। কি রকম হবে তা নিয়ে চিন্তা করবিনা। আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে ইনশাল্লাহ।
আশা করি আব্বা কোন একদিন তোর এই লেখাটি পড়বে। শুধু একটা বিষয় খেয়াল রাখিস, আব্বা আম্মাকে কখনো কষ্ট দিসনা।
ভালো থাকিস...সব সময় সিসিবি'র সাথে থাকিস।
সুন্দর লেখা।
::salute::
ধন্যবাদ
পরে আরও একটা লিখলাম
আসলে response খেব ভাল লাগে
কিন্তু সময় পাচ্ছি না ইদানিং
বহুত ফালতু তাং এর মধ্যে আছি
জাই হোক আবার ও ধন্যবাদ :hatsoff:
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
আমি আব্বু কে ভালবাসি, এই কথা টা আজও সাহস করে বলতে পারলাম না।
সুযোগের অপেক্ষায় আছি, বেশি দেরি যেন আবার না হয়ে যায়।
:thumbup:
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
আমার আব্বুও আমাকে নিয়ে ঠিক এমন করেই স্বপ্ন দেখে, বিদায় নিতে গেলে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আমারও কান্না কান্না পায়, তবু এখনো বলা হলো না, বাবা তোমাকে অনেক ভালোবাসি।
ওরে আল্লাহ, চোখ দিয়া পানি বাইর হয়ে গেলো। কি লেখা লিখছেন রায়হান ভাই :awesome: !!!!!!!!!!
অনেক ধন্যবাদ.................... :hatsoff:
একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার,সারা বিশ্বের বিস্ময় তুমি আমার অহংকার
বাবা'রা এমনই হয়, সারা জীবন নিজে সব কষ্ট করেন শুধু মাত্র সন্তাদের ভবিষ্যৎ জীবন সাফল্য এনে দেওয়ার জন্য।
লেখাটা পড়ে আমার বাবার কথা মনে পড়ে গেল, আমার বাবাও মনে করতেন সমস্ত কষ্ট তিনি একাই করবেন; সন্তানরা ভাল ফলাফল করবে, জীবনে প্রতিষ্ঠিত হবে, এতেই তিনি আত্বতৃপ্ত হবেন। বাবা নেই। আপনার বাবাকে সর্বোচ্চ সুখে রাখার চেষ্টা করবেন। আপনার বাবা'র জন্য দীর্ঘায়ু ও আপনার জন্য শুভেচ্ছা।