২০০৯ সাল থেকেই শুরু বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া।ক্যাডেট কলেজের বন্ধু,বড় ভাই,ডিপার্টমেন্টের বন্ধু,অন্য কলেজের বন্ধু…সবার সাথে একের পর এক ট্যুরে বেড়িয়েছি।কখনো পাহাড়ে,কখনো চরে,কখনো বা নির্জন দ্বীপ,সমুদ্র সৈকতে।২০১৫তে এসে ঠিক করলাম আমরা কয়েকজন,লেভেলটা এবার বাড়িয়ে নিতে হবে,ট্যুরে যাবো দেশের বাইরে।
সবাই স্টুডেন্ট আমরা,টিউশনি করে চলি।আমাদের পক্ষে থাইল্যান্ড-সিঙ্গাপুর যাওয়া সম্ভব নয়,অবধারিত ভাবেই ডেস্টিনেশান প্রতিবেশী দেশ,ভারতবর্ষ।কাশ্মীর যাওয়া অনেক খরচ,প্ল্যান হোল তাই,ঘুরে আসবো সিমলা-মানালি-দিল্লী-কোলকাতা। প্রায় একবছর ধরে প্ল্যানিং আর স্টেপ বাই স্টেপ আগানোর পর গত ২২ডিসেম্বর পা বাড়াই আমরা ইন্ডিয়ার পথে।সেই ট্যুরের অভিজ্ঞতা নিয়েই এই ব্লগ লেখা।আশা করি কারো হয়ত কাজে আসবে।
প্রথম কাজ- পাসপোর্ট ও ভিসাঃ-
যে চারজন আমরা যাবো তাদের মধ্যে শুধু আমার আগেই পাসপোর্ট করা ছিলো,কিন্তু সেটা খুইয়ে ফেলেছি,বাকিদের একদমই নেই।হাটুবাহিনীর বন্ধু মেহেদির(আরসিসি) সহযোগীতায় করে ফেললাম সবাই পাসপোর্ট।এমসিসির বন্ধু নোমানের সহযোগীতায় মিললো ইন্ডিয়ান এম্বেসির এপয়েন্টমেন্ট ডেট।এবেলা বলে রাখি,ভিসা এপ্লিকেশান ফর্মটা পূরণের সময় অবশ্যই আগে করেছে এমন কারো হেল্প নিতে হবে।আমরা ফর্ম পূরণের সময় পিতার পূর্ববর্তী জাতীয়তার ঘরটা ফাঁকা রেখেছিলাম,কারণ তাদের সবার জন্মই বাংলাদেশে।কিন্তু বর্তমানের মত সেইখানেও নাকি বাংলাদেশি লিখতে হবে।যে কারণে প্রথম বার আমাদের কারোরই ভিসা হয়নি।দ্বিতীয়বারে সবার হলেও আমার হোল না,কারণ আমার হারানো পাসপোর্ট থাকায় লস্ট সার্কুলার কপি নামের একটা পেপার জমা দিতে হত,যা আমার কাছে ছিলো না।যাই হোক তৃতীয় চেষ্টায় আমার হোল।এরপর দিন গোণা শুরু।কবে শেষ হবে এক্সাম,পা বাড়াবো অজানার উদ্দেশ্যে।
সস্তায় কোলকাতায় পৌঁছানোঃ
আমরা যে ভাবে কোলকাতায় পৌঁছেছি,আমার জানামতে এটাই সবচেয়ে কম খরচে কোলকাতায় যাওয়ার উপায়।দেশে অনেক ট্যুর অপারেটররা সিমলা-মানালি’র ট্যুর আয়োজন করে থাকে,যেগুলোর কোনটাই ৩৫হাজারের নিচে না,তাও খাওয়ার খরচ বাদে।আর আমাদের ১৩দিনের ট্যুর আমরা শেষ করেছি মাত্র ২৫হাজারে,তাও আবার রুপির জন্য স্মরণকালের সবচেয়ে কম রেট পেয়ে!!!তাই যাদের সস্তায় ভ্রমণের ইচ্ছা,তাদের ব্লগটা পড়া উচিত বলে মনে করি।
আমাদের আগে থেকে কোথাও কোন রিজার্ভেশান করা ছিলোনা।না হোটেল,না বাস-ট্রেন।ঢাকা থেকে বেনাপোল পর্যন্ত টিকেট কাটলাম হানিফ পরিবহনের।ভাড়া নিলো ৫০০/-।যারা সরাসরি কোলকাতা পর্যন্ত বাসের টিকেট কাটতে চান,তাদের জানিয়ে রাখি,শুধুমাত্র শ্যামলী-বিআরটিসি পরিচালিত “সৌহার্দ্য” নামের বাসটি ছাড়া দেশের আর কোন বাসই ইন্ডিয়ার মাটিতে যায়না,আপনাকে বর্ডারে বাস বদল করতে হবে,তাই ভুলেও কখনো বাস কাউন্টারের লোকের কথায় ভুলবেন না।খুটিয়ে খুটিয়ে জেনে নিন,কোথায় তারা কি করতে বলবে,হিডেন কস্ট আছে কিনা।কারণ ওপারে সাধারণত যে বাস থাকে,তাতে আপনাকে আবার ভাড়া দিতে হবে ২৭০ থেকে ৩০০ রুপি,সময় লাগবে ৪-৫ঘন্টা।নামিয়ে দেবে মারকুইস স্ট্রীটে।যাইহোক,ভোরে বেনাপোল নেমে সরাসরি অটো নিয়ে চলে গেলাম ইমিগ্রেশান অফিসে।দালালে গিজগিজ করছিলো সেই ভোরবেলাতেই।একটা ফর্ম,যেটা ফ্রিতেই দেওয়ার কথা,দালালের কাছ থেকে সেটা নিতে হোল ১০/- দিয়ে।এরপর পাশেই থাকা সোনালি ব্যাংকের বুথে ট্রাভেল ট্যাক্স জমা দিলাম ৫০০/-।এরপর এক পুলিশ সদস্য এসে বললেন তাকে প্রতিজন ১০০/- দিলে তিনি কোন ঝামেলা কিংবা লাইনে দাঁড়ানো ছাড়াই বর্ডার পার করে দিবেন।দিলাম সবাই,কারণ আমাদের টার্গেট যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কোলকাতা পৌঁছানো।সত্যি সত্যিই করে দিলেন পার,কোন চেকিং ছাড়াই।পাসপোর্টে ডিপারচার সিল নিয়ে নো ম্যান্স ল্যান্ড পার করে পা রাখলাম ভারতের মাটিতে।সেখানেও দালালরা সেই ফর্ম বিক্রি করছে,দাম ও একই,পুরণ করে ঢুকলাম ইমিগ্রেশান আর কাস্টমসে।দাদাবাবুরা স্মিত হেসে অভ্যর্থনা জানিয়ে এন্ট্রি সিল দিয়ে দিলেন পাসপোর্টে।বের হয়ে পা রাখলাম হরিদাসপুরে।
এবারের গন্তব্য,হরিদাসপুর থেকে কিছুটা ভিতরে বনগাঁ রেল স্টেশান।বর্ডারের পাশেই অটো স্ট্যান্ড। অটো নেওয়ার আগে গেলাম শ্যামলী কাউন্টারে,সাথে থাকা কিছু টাকা ভাঙিয়ে রুপি করতে।যাওয়ার সময় এন্ডোরস করা এমাউন্টের সমপরিমাণ ডলার সাথে নিয়েছিলাম,বাকিটা বাংলা টাকা,কারণ বাংলা টাকা এখন বেশ তেজী।তবে সবাই পরামর্শ দিয়েছিলো বর্ডারে না ভাঙিয়ে কোলকাতায় ভাঙাতে।তবে দেখলাম,কোলকাতা আর বর্ডারের রেট একই,কোথাও এমনকি বর্ডারেই বেশি।তখন এমনটা জানা ছিলো না,থাকলে তখনই হয়ত পুরোটা ভাঙ্গাতাম,যার খেসারত আমাদের পরে দিতে হয়েছে।যাই হোক,সবাই ৬০০০/- ভাঙিয়ে পেলাম ৫০৪০ রুপি করে।সেটা নিয়ে অটো ঠিক করলাম,প্রতিজন ২০রুপি করে।বনগাঁ স্টেশানে নেমেই জানলাম,কোলকাতার ট্রেন মাত্রই একটা ছেড়ে গিয়েছে,পরেরটা আধা ঘন্টা পর।হোটেল ওয়ালা এক দাদাবাবু একপ্রকার জোর করেই নিয়ে গেলেন তাঁর রেস্টুরেন্টে,ব্রেকফাস্টের জন্য।খেয়ে দেয়ে বিল দিতে যাওয়ার সময় দেখি বেচারা শফিক ৫০ রুপির বদলে ৫০ডলার দিয়ে দিচ্ছে হোটেলওয়ালাকে।হই হই করে তাকে থামালাম।পুরো ট্যুরে শফীকের নানান কীর্তি ট্যুরকে বারবার ইন্টারেস্টিং করে দিয়েছে।যার জন্য আমরা সবাই ওর প্রতি কৃতজ্ঞ।
২০রুপি করে টিকিট কাটলাম ট্রেনের,যাবো বিবাদীবাগ পর্যন্ত।জানা ছিলো,হাওড়ার কাছেই ফেয়ারলি প্লেস,যেখান থেকে ট্যুরের সমস্ত ট্রেনের টিকিট বুক দিবো আমরা,আর এই ট্রেন হাওড়া না গেলেও বিবাদীবাগ যাবো,যেখান থেকে নদী পার হলেই হাওড়া।যদিও ট্রেনে উঠে একজন কে যখন জিজ্ঞেস করলাম,তিনি জানালেন,ফেয়ারলি প্লেস এপারেই,গঙ্গা পার হতে হবে না।
অফিস-যাত্রী দিয়ে বোঝাই ট্রেন।ইন্ডিয়ার সবচেয়ে সুলভ ও সময় সাশ্রয়ী ভ্রমণ মাধ্যম এই ইলেক্ট্রিক ট্রেনগুলো।একদম টাইম কাঁটায় কাঁটায় মেপে চলে,কোন স্টেশানেই ১০সেকেন্ডের বেশি দাঁড়াচ্ছে না।ভিড় বাড়তে বাড়তে একসময় আমাদের দুই পায়ের ফাঁকে এসেও মানুষ দাঁড়ানো শুরু করলো।একসাথে এত মানুষ এক কামরায়,ছেলে-বুড়ো-মহিলা,একেকজন একেজনের উপর উঠে দাঁড়ায় পারলে,এমন অবস্থা।টায়ার্ড থাকায় একচোট ঘুমিয়ে নিলাম।আড়াই ঘণ্টা পরে দেখি ট্রেন ঢুকছে দমদম স্টেশানে।বুঝলাম,এসে পড়েছি অবশেষে কোলকাতায়।তাঁর ১৫মিনিট পর এলো আমাদের স্টেশান,বিবাদীবাগ।সাকল্যে আমাদের কোলকাতা পর্যন্ত পৌঁছানো খরচ-
হানিফ এন্টারপ্রাইজ, ঢাকা টু বেনাপোল-৫০০/-
অটো (হরিদাসপুর টু বনগাঁ) ২০ রুপি
ট্রেন(বনগাঁ টু কোলকাতা) ২০ রুপি।
টোটাল,৫০০ টাকা ও ৪০ রুপি।আর ট্রাভেল ট্যাক্স,যেভাবেই যান না কেন,আপনাকে দিতে হবে,পরিমাণ ৫০০/-,তো,আমার মনে হয়,বাজেটে টানাটানি থাকলে আর লাগেজ কম থাকলে সবার এইভাবেই যাওয়া উচিত।
(চলবে)
:thumbup:
চমৎকার! সিরিজটা কন্টিনিউ করো। মার্চ এপ্রিলে যাওয়ার ইচ্ছে আছে। তখন কাজে লাগবে।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
খুব ভালো লিখছিস। কমেন্ট করার জন্য অনেকদিন পর লগ ইন করলাম।
ব্লগে "ট্রাভেল ব্লগ" দেখলে ভালো লাগে। সিরিজ টা চলতে থাকুক।
ভ্রমনটা তো মনেহয় এখনো চলছে।
কতদুর?
গল্পচ্ছলে নানান তথ্য পাওয়াটা বাড়তি লাভ।
পরবর্তি পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম.........
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
কাজে লাগবে অনেকের।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আপনার এই লেখাটা (//cadetcollegeblog.com/protik3141/42649) প্রথম পড়ি। তারপর, আশায় ছিলাম দ্বিতীয় সিরিজের। কাঙ্খিত সিরিজ না পেলেও ট্রাভেল সিরিজ তো পেয়েছি। ধন্যবাদ, অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য। 🙂
দারুণ এবং গোছানো লেখা। 🙂 ভালো লাগল পড়ে। আমি ভ্রমণ পিপাসু মানুষ তাই ভ্রমণ নিয়ে আমার ছোট একটা ব্লগ (www.goarif.com) সাইটে লিখার চেষ্টা করি।