২৩শে আগস্ট ২০২০, রাত ৩টা [ব্লগের প্রথম পাতায় বেশ কিছুদিন আমার একাধিক লেখা থাকায় এবং সেগুলোর কোন একটি পরের পাতায় না যাওয়া পর্যন্ত অন্য লেখা দিতে পারছিলাম না। খসড়টা আগেই লেখা ছিল। আজ শুধু এই প্রথম অংশটুকু সংযোজন করে লেখাটাকে পোস্ট করছি।]
এই পোস্টে সংযুক্ত ছবিটা ক্যাডেট কলেজ ক্লাব আয়োজিত ২০১৮ সালের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় বিচারক মৃণাল হকের কাছে আমাদের কন্যা আরিশা সহ প্রতিযোগী সকল বাচ্চার ব্যাক্তিগত ভাবে উপহার গ্রহনের মুহূর্তে তোলা। আরিশা এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে যোগ্যতায় কোন পুরস্কার পায়নি। তবে সেদিনের ক্লাবের আয়োজনে বাচ্চাদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার সম্মানিত বিচারক, ক্যাডেট কলেজ ক্লাবের মেম্বার, রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেট মৃণাল হক ভাই তাঁর ব্যাক্তিগত উদ্যোগে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহনকারী সকল বাচ্চাকে বেশ উন্নতমানের একসেট পোস্টার কালার উপহার দিয়েছিলেন। গতকাল চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়া এই শ্রদ্ধেয় এক্স-ক্যাডেট ভাষ্করের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি।
মৃণাল ভাইকে ক্লাবের চত্তরে বেশ ক’বার দেখেছি, যদিও তাঁর সাথে আমার ব্যাক্তিগত আলাপচারিতা হয়েছে মোটে একবারই। গ্রাউন্ড ফ্লোরের সুইমিং পুলের পাশের ছোট্ট গেইটের কাছে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষণ সৌজন্য বিনিময়ের আলাপ হয়েছিল। নিজে যেচে পরিচিত হয়ে তাঁর সাথে কিছুক্ষণ কথা বলেছিলাম। তিনি ক্লাবের কাছাকাছিই কোথাও তাঁর সেসময়ে তৈরি করা নতুন মিউজিয়ামে বেড়াতে যাবার নিমন্ত্রণ দিয়েছিলেন, যদিও আজ অব্দি আমার সেখানে যাওয়া হয়নি।
তিনি আমাদের অনেক সিনিয়র একজন এক্স-ক্যাডেট। যদিও অন্য কলেজের সিনিয়র, এবং ক্যাডেট কমিউনিটির প্রথা অনুযায়ী তাঁকে আমার আপনি-হিসেবে সম্বোধন করার কথা এবং তাঁর পক্ষ থেকে আমার মতন একজন জুনিয়রকে তুমি-হিসেবে সম্বোধন করার কথা। কিন্তু আমি বেশ অবাক হয়েছি এটা দেখে, নব্য পরিচিত জুনিয়র এক্স-ক্যাডেটদের অনেককেই কিংবা হয়তো সবাইকেই তিনি নিজেই আপনি-বলে সম্বোধন করতেন। ক্ষণিকের আলাপচারিতায় তাঁকে আমার কাছে একজন মানসম্মত ভদ্রলোক বলেই মনে হয়েছে।
ভাষ্কর মৃণাল হকের কাজ নিয়ে প্রশংসা ও সমালোচনা দুটোই আছে। তবে তাঁর অনেকগুলো কাজই আমার কাছে শৈল্পিকভাবে বেশ ভাল লাগে। আমি তাঁর ব্যাক্তিজীবন সম্পর্কে জানিনা। তবে তাঁর সাথে কিছুক্ষণের আলাপ-স্মৃতি আমার জন্য একটা মনে রাখার মতন অভিজ্ঞতা ছিল।
গতকাল, একই দিনে (২২/০৮/২০২০) আরেকজন এক্স-ক্যাডেটের মৃত্যু-সংবাদ ক্যাডেট কমিউনিটিকে নাড়া দিয়েছে। অনেক জুনিওর এক তরুণ-প্রান, ফৌজদারহাট ক্যাডেট কলেজের এক্স-ক্যাডেট ওয়াস্ফি, বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ক্যাডেট হিসেবে প্রশিক্ষণরত অবস্থায় সুইমিং পুলে প্রান হারায়। এই ছোট ভাইটির আত্মা যেন শান্তিতে ঘুমায়, সেটাই প্রার্থনা করি। ফেসবুকে ক্যাডেট কমিউনিটির এক পোস্ট থেকে জানলাম, মাত্র তিন বছর আগে ফেনি গার্লস ক্যাডেট কলেজে অধয়নতর অবস্থায় যে মেয়েটি আত্মহত্যায় মারা গেছে, সেই ক্যাডেট তুবা এই ওয়াস্ফিরই আপন বোন। তাদের মা-বাবা দুজনেই ক্যাডেট কলেজেরই শিক্ষক। আরো যেটা জানলাম তা হলো, আমাদের এই শিক্ষক দম্পতির বর্তমানে জীবিত একমাত্র পুত্রসন্তান একজন স্পেশাল চাইল্ড। … আর কিছু লিখতে পারছি না। কিভাবেই বা আর লিখি! চিন্তাশক্তিও যেন লোপ পেয়ে যাচ্ছে। শুধু এটুকই চাই, সকল মরহুমের আত্মা শান্তি পাক, সকল জীবিতরা ভাল থাকুক।
আমি যখন অনেক ছোট, তখন থেকেই আমার বাবা আমাকে একটা কথা বোঝানোর চেষ্টা করতেন। নিজের কোন ভাল জুতো না থাকায় যেন দুঃখে হা-হুতাশ না করি। কারন এমনও অনেকেই আছেন, যাদের তো পা-ই নেই।
মৃণাল হক ভাইয়ের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। ক্ষণজম্মা এই ভাস্কর তার স্বভাব-সুলভ গুণে আমাদের পরিচিত ক্যাডেট অঙ্গন পেরিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরসিরেও দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিয়েছিলেন। আমরা তার জন্য গর্বিত। ২০০৬/৭ খ্রীঃ দিকে আমি সৈয়দপুর থাকাকালীন সময় তার প্রথম স্বাক্ষাত পাই। নিপাট ভদ্র ও অমায়িক এই মানুষটি প্রথম দর্শনেরই আমাদের সকলের দৃষ্টি কাড়েন। আমি তার শোকার্ত্ত পরিবারের প্রতি জানাই আমার সমবেদনা।
ওয়াস্ফির অকাল মৃত্যূ আমাদের সকলের জন্য ভীষণ বেদনার। মহান বিধাতা তাকে বেহস্ত নসীব করুন।
সকল মৃত্যুই কষ্টের; কাছের কিংবা পরিচিত জনের ক্ষেত্রে সেটা স্বাভাবিক ভাবেই একটু বেশি। (সম্পাদিত)
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
মর্মস্পর্শী দুটো চিরবিদায়ের ঘটনায় মনটা বিষাদে ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। ভাষ্কর মৃণাল হকের এবং ওয়াস্ফির জন্য প্রার্থনা রইলো, আল্লাহ রাব্বুল 'আ-লামীন যেন তাদের উভয়কে ক্ষমা করে দেন এবং বেহেস্ত নসীব করেন!
ওয়াস্ফির পরিবারের চরম বেদনাদায়ক এই দুর্ঘটনা দুটোর কথা জেনে একেবারে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম!
জীবনটা খুবই ছোট্ট আর বড়ই অদ্ভুত, তাই না ভাইয়া!
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম