[লেখাটা গত ২০ এপ্রিল ২০২০ তারিখে লিখেছিলাম; আজ ১ জুলাই ২০২০ তারিখে সিসিবিতে পোস্ট করা হলো।]
খুব বোরিং এবং আনকনভেনশনাল একটা লেখা এটা। তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছে। লেখার টাইটেল-টা নিশ্চয়ই বলে দিচ্ছে, লোক-সঙ্গীত এবং তার কন্ট্রোভার্সিয়াল প্রেজেন্টেশন নিয়ে লিখতে যাচ্ছি। আমার কথাগুলো খুব বিরক্তিকর মনে হলে, নির্দ্বিধায় এই লেখা এ্যাভয়েড করে যান। আর লোক-সঙ্গীত নিয়ে কিছু ভাবনা ভালবাসায় দুচার মিনিট সময় কাটাতে চাইলে, এই লেখার সাথে থাকুন। তবে দয়া করে আংশিক পড়ে বা কেবল টাইটেল দেখেই আমাকে বা আমার এই লেখাটাকে বিচার করবেন না, তাহলে মলাট দেখেই বইয়ের ভেতরের অধ্যায় বিচার করার মতন হয়ে যাবার সম্ভাবনাই বেশি।
লেখাটার টাইটেলটা ক্লিয়ার করি। মূল প্রসঙ্গে আবার এক-দুই প্যারা পরেই আসছি। তবে পাঠকের কাছে অনুরোধ, পড়তে চাইলে, ধারাবাহিক ভাবে পড়ুন। প্যারা বাদ দিয়ে গেলে (স্কীপ করলে) লেখাটার মূল-সুর ধরতে তালগোল পাকিয়ে যেতে পারে। … … … “বড় লোকের বেটি লো” একটা অনেক পুরোনো লোকগীতি। সম্ভবত ১৯৭২ সালে রচিত; রচয়িতা রতন কাহার। যদি এই তথ্য সঠিক হয়, তাহলে তা আমার জন্মেরও বছর চারেক আগের ঘটনা। অর্থাৎ, এখন যদি আমার ৪৫ (৪৪+) বছর বয়স চলমান হয়, তাহলে এই গানটার যাত্রাকাল প্রায় অর্ধশতকের। অনেক সুন্দর একটা গান। পারিবারিকভাবে, বিশেষ করে আমার বাবার আগ্রহের কারনে, খুব ছোটবেলা থেকেই এই ধরনের লোকগীতির সাথে আমার পরিচয়। সম্ভবত এই ধাঁচের লোকসঙ্গীতকে “ভাদু গান” বলা হয়ে থাকে।
Bhadu is the social festival of South Bengal. … Songs, mainly focussing on marriage, form the main attraction of the festival in which both professional groups and amateurs take part.
Bhadu (festival) – Wikipediaen.wikipedia.org › wiki › Bhadu_(festival)
বিভিন্ন সময়ে লোকগীতির অনেক রিমেক হয়েছে। কখনো-কখনো রিমিক্স-ও হয়েছে। এর অনেকগুলোই আমার কাছে ভাল লেগেছে। কারন সেই নতুন প্রেজেন্টেশনগুলো হারিয়ে যাওয়া অনেক লোকজ কথা ও সুরকে নতুন প্রজন্মদের কাছে নতুন ভাবে নিয়ে এসে প্রায় হারাতে বসা পুরোনো দিনের সেই কথা ও সুর তাদেরকে নতুন করে শিখিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ৯০-এর দশকের একেবারে শুরুর দিকে মির্জাপুরের এক্স-ক্যাডেট আলমগিরের কথা বলা যেতে পারে। তিনি সেসময় তাদের রিইউনিইয়নে এসে আব্বাস উদ্দিনের কিছু পুরোনো গান সহ আরো বেশ কিছু হারানো দিনের গানকে কথা সুরের মোটেও বিকৃতি না করে নতুন মাত্রায় আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের ব্যাবহারে গেয়েছিলেন। সেসময় বিটিভিতেও তার গানের অনুষ্ঠান হয়। প্রবাসী এই এক্স-ক্যাডেট আলমগিরের নামটা তখন বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পায়। এবং সেইসাথে এই পুরোনো গান ও তার সুরগুলোগুলো যেন সেই সময়ে এদেশের নতুন প্রজন্মের সাধারন শ্রোতাদের মধ্য থেকে হারাতে গিয়েও টিকে যায়। সেসময়, মির্জাপুরের এক্স ক্যাডেটস এ্যাসোসিয়েশনের সৌজন্যে বাংলাদেশে আলমগিরের গাওয়া গানের একটা এ্যালবাম বের হয়। এরপর থেকেই বলা চলে পুরোনো দিনের প্রায় হারাতে থাকা লিরিকগুলোর দিকে আমাদের মিউজিক প্রমোটার ব্যাক্তি/প্রতিষ্ঠাণগুলো নতুনভাবে আলোকপাত শুরু করে। প্রকৃত উদ্দেশ্য সঙ্গীতের আরাধনা নাকি ব্যাবসা করা, সেটা যেহেতু অন্য আরেকটা দিক, সেবিষয়ে এখন সঙ্গত কারনেই যাচ্ছি না।
নিঃসন্দেহে আজকের নতুন প্রজন্মের মিউজিক ডিরেকশনে অনেক ডায়নামিজম প্রয়োগের এবং দেখানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। যন্ত্রের আধুনিকতম ব্যাবহার এটাকে আরো সহজ করেছে। এটা ভালই। এই প্রেজেন্টেশনে যন্ত্রের ব্যাবহারও আকর্ষণীয়। কিন্তু গানের মূল কথা ও সুর থেকে কখনো-কখনো এটা অনেক-অনেক দূরে। … … … মূল প্রসঙ্গ “বড় লোকের বেটি লো”-তে ফিরে আসছি। মিউজিক ভিডিও-টা ছাড়া এই প্রেজেন্টেশনটা আদৌ চলত কিনা, আমার সন্দেহ আছে। আর মিউজিক ভিডিওটাতে আসলে গানে নাকি অন্য কোথাও ফোকাস করা হয়েছে, সেটাতে আর নাই বা গেলাম। কিন্তু লোক সঙ্গীতের পয়েন্ট অফ ভিউ থেকে কিংবা লোকজ আবহের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে একজন ভাষা-সাহিত্যের ছাত্র হিসেবে এখানে কিছু কথা বলার জন্য মনের দায় এড়াতে পারছি না। একান্ত আমার হিসেবে, প্রথমতঃ “বড় লোকের বেটি লো”-তে ওপার-বাংলার একটা বাঙ্গালি কন্সেপ্টকে এই আজকের সময়ে সেল করার চেষ্টা করা হয়েছে। এই লাইনটুকু বা এই সুরটুকু ছাড়া এই গানটার অডিও-তে আর কোন কিছুই আসলে “সঙ্গীত”-ভিত্তিক কিনা, আমার সন্দেহ আছে। দ্বিতীয়তঃ মাত্র দুটো বাংলা লোকজ লাইনকে কেন্দ্র করেই গানের প্রেজেন্টেশনকে ইনিশিয়েট করা হয়েছে, এবং সেই অনুযায়ি একটা কন্সেপ্ট দাঁড় করানোর জোরপ্রচেষ্টা লক্ষণীয়, অথচ এই প্রেজেন্টেশনে বাংলার আর কোন ব্যাবহার বা উচ্চারণ কিছুই নেই, এবং সেখানে বাকি কথাগুলো কেমন যেন অন্য কোন ভাষাগত প্রভাবে কিছুটা উষ্কানিমূলক ও ইঙ্গিতপূর্ণ। তৃতীয়তঃ সার্বিকভাবে শেষ পর্যন্ত মিউজিক-ভিডিও হিসেবে এই উষ্কানিটাই সেল হয়েছে/হচ্ছে। সো, পিওরলি দ্যাট টার্গেট বিজনেস ওয়াজ গুড। বাট এ্যাজ এ প্রোডাক্ট অফ ফোক মিউজিক, “লোক সঙ্গীত” (নট এ্যাজ এ প্রোডাক্ট অফ দ্যা ইন্ডাস্ট্রি), আমার মতে, ইট ইজ নাথিং বাট জাস্ট এ ট্র্যাশ।
আমি আমার এই উল্টোপথে চলা লেখাটার উপস্থাপনের বা প্রকাশভঙ্গির যে কোন প্রকারের ত্রুটির জন্য দুঃখিত। কোন প্রকারের ইমোশন বা কারো সেন্টিমেন্ট-কে আঘাত দেয়াটা মোটেও আমার উদ্দেশ্য নয়। কিন্তু আমি বাংলার এক বড় অংশের মানুষের লোকগীতির প্রতি ভালবাসাটা বুঝি। আমার ধারনা, আমার জেনারেশনেরও অনেকেই ছোটবেলা থেকে হয়তো অরিজিনাল লিরিকটা শুনে বা চর্চা করেই বড় হয়েছেন। আমি নিজেও কোন ধোয়া তুলসী পাতা নই। হয়তো প্রতিনিয়ত জেনে বা না-জেনে আমিও অনেক ভুলই করে চলেছি। কিন্তু, এমন একটা কালজয়ী গানের অরিজিনালিটি সম্পর্কে নতুন প্রজন্ম, আমাদের এবং আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের বাংলা ভাষাভাষীরা জানবেনই না, কিংবা ভুল জানবেন, তা কি হতে পারে?
you have told very good about “বড় লোকের বেটি লো” song. thanks we came to know all about this song like on 1972 rote taran kahar and more. please writ more new blog for us and for good information.
লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অনেক দেরীতে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি, করছি, ক্ষমা করবেন। সম্ভবতঃ, প্যান্ডেমিক লকডাউনে এই ব্লগের মন্তব্যগুলো দেখা হয়ে ওঠেনি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
"ইট ইজ নাথিং বাট জাস্ট এ ট্র্যাশ" - এটাই সেই প্রেজেন্টেশন সম্পর্কে যথার্থ মূল্যায়ন।
ভাইয়া, কেমন আছেন? আপনার লেখা সামনে পেলেই পড়ি। খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি আপনার পেশাজীবিনের অভিজ্ঞতাগুলো। তবে ইদানিং কেমন যেন সোশ্যাল মিডিয়া নির্ভর পড়া বেশি হচ্ছে। নিজের জায়গা হিসেবে সিসিবিতে লেখা পোস্ট করলেও, ওটুকুই; সময়মত নিজের লেখার মন্তব্যগুলোও পড়া হয় না বা হয়ে ওঠে না। অনেক দেরিতে আপনার মন্তব্যের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি, এমন নাদান জুনিয়রকে ক্ষমা করবেন নিশ্চয়ই।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম