ডিসক্লেইমারঃ বাংলাদেশে করোনা (কোভিড-১৯) সনাক্ত হবার প্রাক্কালে ২০২০-এর ১৬ই মার্চের পরে যখন প্রথম দফায় পুরো মাস জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধের ঘোষণা এলো, ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে থেকে ডিপার্ট্মেন্টের অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে আমার ছাত্রছাত্রীদের জন্য মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন নামে একটা লেখা পোস্ট করেছিলাম। পরে সেটাকে নিজের ওয়ালে মন্তব্য নিষ্প্রয়োজনঃ পর্ব-১ নামে পোস্ট করি। এর ধারাবাহিকতায় করোনার দিনগুলোতে আমার ওয়ালে কখনো বাংলায় আবার কখনো ইংরেজিতে এই লেখাটা একটার পর একটা পর্বে চলতে থাকে; কখনো অনুধাবনের মধ্য দিয়ে, কখনো মেজাজ খারাপের মুহূর্তে, কখনো বা আবার বাসায় বসে নেহায়েতই সময় কাটানোর উছিলায়। ক্যাডেট কলেজ ব্লগে লেখাটার প্রথম পর্বটা সময়কথনঃ পর্ব-১ (মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন) নামে পোস্ট করেছিলাম। ১লা এপ্রিলের প্রথম প্রহরে ব্লগের এই লেখাটাকে টাইটেল সহ পরিবর্তন করে আমার ওয়াল থেকে সব পর্বগুলোকে একটার পর একটা ডায়রির পাতার মতন সাজালাম। এখন টাইটেল হলো করোনার দিনগুলি। দেখা যাক, লেখাটা কতিদিন চলে।
পর্ব-১ (১৮ মার্চ ২০২০, রাত ৯টা ৪২মিঃ)
এটা মূলত আমার ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশ্যে লেখা
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ক্লাস বন্ধের এই দিনগুলোতে ভ্যাকেশনের মতন করে ঘুরে না বেড়িয়ে যতদূর সম্ভব নিজেদের বাসায় অবস্থান করার জন্য আমি আমার স্নেহের ছেলেমেয়েদের অনুরোধ করছি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এবং বিভিন্ন গ্রুপে শেয়ার করা আনভেরিফাইড যে কোন কিছুতে বিশ্বাস করতে যেও না; কোন কিছু অবজ্ঞা করো না, আবার অহেতুক আতঙ্কিতও হয়ো না। বরং, বর্তমান অবস্থায়, স্বাস্থ্য বিষয়ক সতর্কতা অবলম্বন করাই আমার কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ মনে হচ্ছে।
একান্ত প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে না গিয়ে বরং সম্মানিত কোর্স-শিক্ষকদের সাথে ফোনে বা ম্যাসেজ এ্যাপের মাধ্যমে যোগাযোগ রেখে সিলেবাসের নির্ধারিত টেক্সটগুলোকে বাসায় নিজে-নিজে পড়ে ফেলাই আপাতত শ্রেয়। এক্ষেত্রে সবাই মিলে শিক্ষকদের সাথে যোগাযোগ না করে বরং সি.আর. এই দায়িত্বটা পালন করলেই স্বস্তিদায়ক হয়। এরপরে সি.আর. নিজ-নিজ কোর্সমেইটদের সাথে নিজেদের ক্লোজড গ্রুপে শেয়ার করতে পারে।
একাডেমিক প্রয়োজনে সম্মানিত কোর্স-শিক্ষকের অনুমতিক্রমে বিভিন্ন কোর্সের সকল ছাত্র এবং কোর্স-শিক্ষক সহকারে, সাময়িকভাবে, আলাদা-আলাদা ম্যাসেজ-কমিউনিকেশন গ্রুপ ক্রিয়েট করা যেতে পারে। তবে এটাতে সংযুক্ত হবার বিষয়ে রাজি হওয়া বা না হওয়া সম্মূর্ণভাবে কোর্স-শিক্ষকের উপরেই নির্ভর করছে।
নিচে আজকের (১৮-০৩-২০২০) দুপুর পর্যন্ত আমার গত কয়েকদিনের অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি শেয়ার করছি; দয়া করে একটু পড়ে দেখোঃ
আমার নিজের লেখা
শেয়ার্ড নয়
১. ডিনায়াল
২. প্যানিক
৩. ফিয়ার
৪. এক্সেপ্টেন্স
… আমার এক বন্ধুর কাছে শিখলামঃ সাধারণত যে কোন সোশ্যাল ক্রাইসিস এই চারটা ধাপ ফলো করে।
আমরা এখন পর্যন্ত প্রথম দুটো ধাপের মধ্যে আছি বলেই আমার মনে হচ্ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে, যে কোন সামাজিক সমস্যায় বা সমস্যার মুহূর্তে ডিনায়াল এবং প্যানিক দুটোই ক্ষতিকর, যদিও বাস্তবে এই দুটো আবার উল্টো পথে চলে। অসেচতন থেকে উড়িয়ে দেবার প্রবণতা আমাদের সহজাত। আবার, অসেচতন থাকার প্রবণতার ফলস্বরূপ যখন বিপদ ঘনিয়ে আসে, আমরা প্যানিকড হই।
আজকে জরুরি কাজে বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। ব্যাঙ্কে গিয়েছিলাম। মিরপুরের রাস্তায় এবং সোনালি ব্যাঙ্কের মত ব্যাস্ততম সরকারি অফিসে চোখে পড়ার মত কম লোকজন। প্রায় সবার মুখেই মাস্ক পরা। অথচ ব্যাঙ্কের লাইনে লোকজন ফাঁকা-ফাঁকা হয়ে দাঁড়াচ্ছে না। আবার কাউন্টারের এক কোনায় দেখলাম, কেউ একজন একটা ব্যাবহার করা টিস্যু পেপার ফেলে গেছে। কি নির্দ্বিধায় আমরা সচেতনতাকে নির্বোধের মত অবজ্ঞা করে প্যানিকড অবস্থাতে যাচ্ছি। অথচ সতর্ক এবং হাইজিনিক জীবন-যাপনেই আমরা সবাই মিলে সামাজিকভাবে ভাল থাকার চেষ্টা করতে পারি।
সবাই সুস্থ থাকুক। ভাল থাকুক। আমরা যেন সবাই দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থার মধ্য দিয়ে ক্লাসরুমে ফিরে যেতে পারি।
পর্ব-২ (২১শে মার্চ ২০২০, বিকাল ৫টা ২০মিঃ)
১. মানুষ দেশ সেবা করার জন্য বিদেশে পাড়ি জমায় না। এটা মানুষ কেবল নিজ স্বার্থেই করে। বিনিময়ে দেশেরও লাভ হয়।
২. আমরা শিক্ষিত হলেও রিউমার প্রিয়তার বিচারে মূর্খ। আমরা নিজেরা আসন্ন বিপদের গুরুত্ব অনুধাবন করতে চাই না, যার ফলশ্রুতিতে যখন বিপদ দরজায় চলে আসে আমরা পারি কেবল আনভেরিফাইড রিউমারকে ফলো করেতে এবং সেটাকে ছড়িয়ে দিতে। এতে সমাজের কি ক্ষতি করে ফেললাম, তা বুঝতে চাওয়ার সামান্য বোধ শক্তিও আমাদের অনেকেরই নেই।
৩. ক্রান্তিলগ্নে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি, এটা আমরা মানতে শিখিনি, অভ্যাসে তো একেবারেই নেই। বরং বিপদকালে আতঙ্কিত হবার এবং আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে অহেতুক ভুল করা এবং তার মধ্য দিয়ে কোন না কোন ভাবে জনজীবন ও সমাজকে অস্থির বানানোর প্রয়াস আমাদের মজ্জাগত।
পর্ব-৩ (২১শে মার্চ ২০২০, সন্ধ্যা ৭টা ৩৯মিঃ)
My dear friends, relatives and also to whom I’m connected through social media,
Please, please, please,
1. Don’t invite me to any page or group, not even if it’s related to CORONA/COVID-19.
2. In the present global context of internet facilities, each and every common human being like me, more specifically, any moderately literate common citizen of the country like me, has got his/her own ways of learning, which may not be the same as others often prefer.
3. Let me choose the way I want to learn with my own minimum intelligence and abilities, which might not be of others’ standard, but at least it’s purely mine.
4. If possible, let’s refrain ourselves from passing, forwarding and sharing any unverified news, which even might be fully correct.
5. Until and unless, a piece of news is verified with authentic sources, in my concern, it’s nothing for any kind of social awareness, rather it works more for creating and spreading panic in the society.
পর্ব-৪ (২২শে মার্চ ২০২০, রাত ১১টা ৭মিঃ)
1. “If Winter comes, can Spring be far behind?” — Ode to West Wind by Percy Bysshe Shelley.
2. Joy and sorrow are inseparable in life; good and bad days always come by turn. Better, we learn to accept it with patience.
3. Sometimes staying aloof to let others work is more contributive in a society.
পর্ব-৫ঃ (২৩শে মার্চ ২০২০, দুপুর ২টা ৫মিঃ)
এখনো যারা পাড়ায়-পাড়ায় কিংবা রাস্তার মোড়ে আড্ডায় মত্ত, জনস্বার্থে…
১. এদের থাপড়ানো যাবে না। আর একান্তই থাপড়ানোর প্রয়োজনে থাপড়ানোর আগে থাপ্পড় প্রদানকারির ফেইস-মাস্ক এবং হ্যাণ্ড-গ্লাভস পরিধান অত্যাবশ্যক।
২. তবে এদের উপরে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে গরম পানি (সাবান মেশানো হলে ভাল হয়) ছিটানো যেতে পারে। ছত্রভঙ্গও হবে আবার জীবানুও কিছুটা ধ্বংস হলে হতেও পারে।
৩. আর নাগালের মধ্যে থাকলে সুবিধাজনক লম্বা লাঠি ব্যাবহার করে তাদের পশ্চাৎদেশে কষে কয়েকটা (যে কয়টা পারা যায়) বাড়ি দেয়া যেতে পারে।
পুনশ্চঃ সেইফটি ফার্স্ট
পর্ব-৬ঃ (২৪শে মার্চ ২০২০, রাত ১টা ৫৩মিঃ)
1. PPE is required to all who are serving others staying outside the home almost for the whole day or night shift, irrespective of any job description, I believe.
2. Most people, who are busy trolling others of different professions, are not responsible at all, and I can’t call them patriots.
3. As a sensible loyal citizen of the country, I strongly believe, even a cleaner on the road is also an important professional to keep our daily life smooth.
4. These days, trolls are crossing all limits, which can logically be compared to the teenage bullies at schools, where an irresponsible, bad-mannered, ill brought-up, arrogant and uncared so-called teenage hero makes odd fun of the apparently weaker ones just to hide his/her own deficiencies.
পর্ব-৭ঃ ২৫শে মার্চ ২০২০ (রাত ২টা ৯মিঃ)
আমার কেন যেন মনে হচ্ছে সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং-কে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে ঘর ফেরত এই মানুষগুলোর অনেকেই একটা আতঙ্কের মধ্যে আছে। কিন্তু সচেতনতার ধারে কাছেও তারা নেই।
এখন এর ফলে কি দাঁড়ালো? যার সত্যিকারের কোন অতি জরুরি কাজে জার্ণি করা প্রয়োজন, কিংবা যিনি ঢাকা এসেছিলেন জরুরি কোন কাজে, হয়তো ফেরাটাও জরুরি, তিনিও সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেইন্টেইন করতে ব্যার্থ হবেন। আর সার্বিক ভাবে কমিউনিটি ট্রান্সমিশনের ঝুঁকি বহুগুন বেড়ে গেল।
একটা গ্রুপ হয়তো এখনো মনে করছে, করোনা কেবল উন্নত বিশ্ব এবং এদেশের রাজধানী কেন্দ্রিক রোগ। আবার কেউ হয়তো ভাবছে, “আরে ধুর, এসব আবার কি, কিচ্ছু হবে না।” বড় ভয়ানক পরিস্থিতি আমরাই তৈরি করছি। বড় ভয়ানক! এই মুহূর্তেই প্রত্যেককে নিজের নিজের রাশ টেনে ধরতে হবে। অন্যথায় মহাবিপদ আসন্ন।
আমাদের একটা বাজে রকমের জাতিগত অভ্যাস হচ্ছে রাষ্ট্রযন্ত্র এবং প্রশাসনের উপরে দায়ভার চাপানো। সাইকলোজির ভাষায় সম্ভবত এধরণের মানসিক অবস্থাকেই বলা হয় “প্রজেকশন প্রব্লেম”; নিজেরটা ঢাকতে সব সময় অন্য কারো উপরে বা অন্য কোন কিছুতে দোষ দেখানো।
সবাই তো খুব সহজেই বলছি, লক ডাউন দরকার, কারফিউ দরকার। একবারো কি ভেবেছি আমরা, ১৭ কোটি প্রায় অশিক্ষিত এবং আধাশিক্ষিত মানুষের এই ক্ষুদ্র দেশে লক ডাউন এবং কার্ফিউ মানে কি দাঁড়াবে? তবে এখন আমারো মনে হচ্ছে ওটাই আমাদের সর্বশেষ লাইফ সেভিং টুল। তখন যে পদে পদে ডান্ডার বাড়ি পরবে, এই জাতিকে তা কে বোঝায় এখন? এর চেয়ে যে সেল্ফ কোয়ারান্টাইন এবং সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং কতটা সহজতর পন্থা, সেটা এই ১৭ কোটিকে হাতে পায়ে ধরে এখন কে বোঝাবে?
টিভি খুললেই যে কোন দেশীয় চ্যানেলে এত যে সোশ্যাল ডিস্টেন্সিঙের গ্রাফিক্যাল নোটিস এবং প্রেজেন্টেশন একেবারে সহজ বাংলায় ঘন-ঘন প্রচার করা হচ্ছে, তা কি আদৌ এই ১৭ কোটির মাথায় ঢুকছে? এটাই যে মহামারি ঠেকানোর আমাদের একমাত্র ইহজাগতিক করণীয়, তা কি আদৌ কেউ বুঝছে?
এই ১৭ কোটি প্রায় মূর্খ ধর্মান্ধ আতঙ্কিত অথচ ড্যাম-কেয়ার জাতিকে এখন কিভাবে এটা বোঝানো যায়? মুখে তো না হয় বলেই দিলাম, “মরতে তো একদিন হবেই”… আরে ব্যাটা, মরবি তো ভাল কথা, নিজে মর, একলা মর, তাই বলে সবাইকে নিয়ে মরার এত জোর প্রচেষ্টা কেন?
পর্ব-৮ঃ (২৬শে মার্চ ২০২০, রাত ৯টা ৩১মিঃ)
1. Please stop sharing anything unverified in the group/private messages, not even in your newsfeed, even if it’s true.
2. One single misleading unverified false message/news may lead the whole society to a much more devastating state in the present CORONA/COVID-19 situation.
3. I consider my social media acquaintances truly knowledgeable. Please help yourself and let my belief be true. Else, many ordinary human beings, like me, with the simplest amount of knowledge, may start considering you nothing but a stupid.
পর্ব-৯ঃ (২৭শে মার্চ ২০২০, রাত ১১টা ৩৪মিঃ)
১. সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা এবং ট্রল এখন একটা ফ্যাশন বা ট্রেণ্ড-এ পরিণত হয়েছে, এবং সেটা আমজনতাই করছে। কেউ ট্রল করছে, সমালোচনা করছে, কেউ একটা আনভেরিফাইড ইনফরমেশন দিচ্ছে, আর সেটাও শেয়ার/ফরোয়ার্ড অপশনে মুহূর্তে চাউর হয়ে যাচ্ছে। আর সমালোচনাগুলোর অনেকগুলোই অন্তত আমার কাছে গঠনমূলকের চেয়ে অনেক বেশি পার্সোনাল মনে হচ্ছে।
২. পৃথিবীজুড়েই ইতিহাস এবং ইতিহাসের সাথে চলমান সাহিত্য (সাহিত্যকে সমাজ-জীবনের দর্পন বলা হয়ে থাকে) এটাই স্বাক্ষী দেয় যে, আমজনতা বা যে কোন সমাজের সাধারণ জনগন বড়ই খেয়ালি এবং আবেগতাড়িত; যেটাকে ইংরেজিতে এককথায় হুইমজিক্যাল (whimsical) বলা হয়ে থাকে। মানুষ খামখেয়ালি মন্তব্য করবে, এটাই যেন স্বাভাবিক।
৩. তবে দায়িত্বের আসনে যিনি থাকবেন, এসবে কান না দিয়ে তাঁকে কেবল কাজ করে যেতে হয়। আর কাজ শুধুমাত্র টেক্নিক্যাল নলেজ দিয়েই নয়, সেইসাথে পারিপার্শ্বিক বিষয়াদিকে বিবেচনায় নিয়ে বুদ্ধিমত্তা দিয়ে করে যেতে হয়। তবে সচেতন নাগরিকের দায়িত্ব হলো ক্রান্তিলগ্নে রাষ্ট্রযন্ত্র ও তার প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে তাদের কাজ করতে দেয়া। সেই কাজের পদ্ধতি অনেকেরই পছন্দ নাও হতে পারে, কিন্তু যাঁরা কাজ করছেন, তাঁরা তাঁদের যোগ্যতা এবং অভিজ্ঞতার বলেই তাঁদের পরিকলনা ও কাজের পদ্ধতি অনুযায়ীই কাজ করবেন, এটাই বাস্তবতা। দায়িত্বভার অন্য কাউকে দেয়া হলে তিনিও একইভাবেই কাজ করতে থাকবেন, এটাও আরেক বাস্তবতা।
৪. সমালোচনা হলো আতি সহজ কাজগুলোর মধ্যে অন্যতম। আর এত ছোট একটা দেশের এমন এক নির্বোধ আধাশিক্ষক/অল্পশিক্ষিত হুইমজিক্যাল এত বিশাল জনসংখ্যার বৃহৎ এক সমালোচক জনগোষ্ঠির জন্য ক্রান্তিলগ্নে কাজ করে যাওয়া হলো অনেক বড় একটা চ্যালেঞ্জ।
পর্ব-১০ (২৯শে মার্চ ২০২০, রাত ৮টা ১১মিঃ)
এই আগামীকাল কথাটা গত বেশ কয়েকদিনের ফরোয়ার্ডেড বিভিন্ন ম্যাসেজ থেকে পেয়েই পাচ্ছি। কিন্তু এগুলোর সঠিক রেফারেন্স/ভেরিফিকেশন কেউই দিচ্ছেন না। আমি ব্যাক্তিগতভাবে এ্যাওয়ারনেস জেনারেশনের এমন আনভেরিফাইড নিউজ/ম্যাসেজ প্রচারের পক্ষে নই। এতে করে সোশ্যাল প্যানিক বেড়ে যায় বলেই আমার কাছে মনে হয়।
মাত্র কদিন আগেও অনেকের বেশ কিছু তাপমাত্রার সাথে করোনার টিকে থাকা বা না থাকা বিষয়ক ভাইরাল ভিডিও মানুষকে অতিরিক্ত ডিনায়াল স্টেজে নিয়ে গিয়েছিল। আবার এরপরে বিভিন্ন শেয়ার্ড পোস্ট থেকে শুরু হলো প্যানিক স্টেজ।
ব্যাক্তিগতভাবে আমিও মনে করছি, আর্লি স্টেইজের সোশ্যাল ডিস্ট্যান্সিং মেইন্টেইন করেই হয়তো আপাতত দৃশ্যমান করোনার ব্যাপক হারে সংক্রমণের অবস্থা থেকে বাংলাদেশ এখনো অন্য অনেক দেশের তুলনায় কিছুটা বা অনেকটাই বেটার অবস্থায় আছে। এবং আরো কিছুদিন এটা মেইনটেইন করা হোক, সেটা আমিও আমার ক্ষুদ্রজ্ঞানে চাই। কিন্তু এই আগামীকাল থেকেই টাইপের ম্যাসেজগুলো আমার কাছে তেমন জোরালোভাবে যৌক্তিক মনে হচ্ছে না।
উপরের কথাগুলো একান্তই আমার ব্যাক্তিগত অভিমত। আশাকরি কেউ আমার প্রকাশ ভঙ্গীর ত্রুটিতে আহত হবেন না।
পর্ব-১১ (১লা এপ্রিল ২০২০, রাত ৯টা ২মিঃ)
একেজন মানুষের জীবনের গন্ডি একেক রমকের। সবারটাই সমান ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এমন একটা ক্রাইসিসে আমরা কেউই অভ্যস্ত নই। আমরা হয়তো অঞ্চলভিত্তিক বিভিন্ন প্রাকৃতিক দূর্যোগের সাথে পরিচিত। কিন্তু বর্তমান অবস্থাটা আমাদের কাছে একেবারেই অপরিচিত ছিল। বিভিন্ন দেশের এত খারাপ খবর জেনেও কিন্তু আমাদের টনক অনেক দেরিতে নড়েছে। কারন আমরা বর্তমান অবস্থায় আগে কখনোই পড়িনি।
এখন তো তাও স্যাটেলাইট চ্যানেল, ইন্টারনেট আর সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ। তাই হয়তো খুব দ্রুতই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম আর নিউজ মিডিয়ার বদৌলতে অনেকের অনেকে কাজ-কর্ম ঘরে বসেই অবলোকন করছি। এমন একটা অবস্থায় আমরা আসলে কিছুটা হলেও দিশেহারা। কি করব, কেমনে চলব, কিভাবে ঠেকাবো, সময়ই বা কাটাব কিভাবে, সব কিছু মিলে কেমন যেন তালগোল পাকানো একটা অবস্থা। কেউ বিপদে আছেন, কেউ সময় কাটানোর কোন কিছুই পাচ্ছেন না, এসব কিছু মিলেই আমাদের এই মুহূর্তের চলমান জীবন।
আমি নিজেই গত ১৮ই মার্চের পর থেকে বাসার বাইরে যাচ্ছি না। দুসপ্তাহ হয়েই গেল। একান্ত জরুরি না হলে বাইরে যাব না, এই পরিকল্পনাতেই আপাতত স্থির আছি। এরই মাঝে যেভাবে পারা যায় সময় পার করে যাচ্ছি। আমার ৭২ বছরের বৃদ্ধ বাবা আর ৭ বছরের ছোট্ট মেয়েকে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছিলাম প্রথম থেকেই। দাদা-নাতনি দুজনেই কিভাবে যেন তাদের ইচ্ছা এবং অভ্যাসের অনেক কিছুই কম্প্রোমাইজ করে বর্তমান গৃহবন্দী দশা পার করে যাচ্ছে।
সবাই ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক, বিপদমুক্ত থাকুক, এবং খুব শীঘ্রই আবার হাসিখুশি কর্মব্যাস্ত দৈনন্দিন জীবনে ফিরে যাক, এই কামনাই করছি।
পর্ব-১২ (১৬ই এপ্রিল ২০২০, রাত ২টা ২৫মিঃ)
১। “একেজন মানুষের জীবনের গন্ডি একেক রমকের,” এই কথাটা দিয়ে আগের পর্বটা শুরু করেছিলাম। আজ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখলাম একই ভাবে আমার এক পুরোনো ছাত্রী, যে নিজেও বর্তমানে একজন শিক্ষক, লিখেছে, “এক একটা মানুষের গল্প এক এক রকম।” কিছুটা মনের কষ্ট থেকেই যে সে এই কথাটা লিখেছে, তা সহজেই বোধগম্য। তার হাসব্যাণ্ড-ও আমার পুরোনো ছাত্রদের একজন, যে কিনা এই লক-ডাউন মুহূর্তে তার কর্মক্ষেত্রে দেশের আরেক প্রান্তে আটকা পড়ে আছে। দুটো ছোট বাচ্চা তাদের। যৌথ পরিবারে মেয়েটি তার বাচ্চাদের নিয়ে আছে। নিশ্চয়ই বাচ্চারা তাদের বাবাকে এই মুহূর্তে অনেক বেশি মিস করছে। এমন অবস্থায় “বাবা বাসায় আসে না কেন? বাবা কবে আসবে?” বাচ্চাদের এমন সব প্রশ্নের উত্তর দেয়াটা একজন মায়ের জন্য যে কতটা কষ্টের, তা সহজেই অনুমেয়। পরিবার সমেত বাচ্চাদের নিয়ে ১লা বৈশাখের দিনে বাসায় কিছুটা ভাল সময় কাটানোর চেষ্টা করেছিল আমার সেই ছাত্রী। হয়তো অন্য দিনের মতন খুব সাদামাটা পরিবেশনের জায়গায় সবার কিছুটা আনন্দের জন্য আলাদা ভাবে কিছু একটা রেঁধেছিল। অথবা হয়তো দীর্ঘদিন ধরে বাসায় বন্দি থেকে সবাই মিলে একসাথে বসে আনন্দ ভাগাভাগির জন্য দুয়েকটা সাদামাটা ভর্তা-ভাজি করেছিল। আর সেই আনন্দের মুহূর্তের ছবিগুলো সে তার ফেসবুক প্রোফাইলে শেয়ার করার পরে সম্ভবত তার পরিচিত মহলেরই অনেকে বিষয়টাকে নেগেটিভলি ইন্টারপ্রিট করেছে, এবং সম্ভবত তা বেশ কটাক্ষের সাথেই করেছে। তবে, আমি পুরো বিষয়টাতে কাউকেই দোষারোপ করছি না। বরং একটু ভিন্ন মাত্রায় বিষয়টাকে ভাবার চেষ্টা করছি। আমি আমার সেই ছাত্রীকে মন খারাপ না করার পরামর্শ দিয়েছিলাম অনেকটা এভাবে, আসলে আমরা কেউই এমন পরিস্থিতির সাথে পূর্বপরিচিত নই। কিভাবে আমরা কোনটা সামাল দেব, এটাই একটা বড় সমস্যা। প্রায় অখণ্ড অবসর যে কতটা ভয়াবহ, তা এবারে সবাই হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছে। সেই সাথে সবাই নতুন করে জীবনটাকে নিয়ে ভাবতে শিখছে, এটা একটা বড় পাওয়া তো বটেই। একদিকে এত তীব্র আতঙ্ক, আবার অন্যদিকে প্রাকৃতিক পরিবেশের সাবলীল উন্নতি, সব মিলে এক মিশ্র অবস্থা। তাই মানুষের প্রতিক্রিয়াগুলোও হয়তো এখন অনেকটাই মিশ্র ধাঁচের। … … তবে আমার মনের মাঝে পুরো বিষয়টা দাগ কেটেছে, তাই এই গভীর রাতে কিছু লিখতে ইচ্ছে হলো।
২। আমি ১লা বৈশাখের দিন শুরুর আগের মাঝ রাতে আমাদের ৭ বছরের ছোট্ট মেয়েটাকে দিয়ে “এসো হে বৈশাখ” গানটা গাইয়ে, সাথে আমি নিজে বাজিয়ে সবার সাথে শেয়ার করেছিলাম। আমার স্ত্রী মেয়েকে অতীতে কেনা একটা শাড়ি পরালো, সাথে আমার স্ত্রী তার নিজের একটা লাল রঙের মালা, মাথায় দেবার একটা সাদা লেসের ব্যাণ্ড এসব পরিয়ে বাচ্চাকে সাজিয়ে দিল। এক মিনিটের সেই ভিডিওটা পাঠিয়ে অন্যদের উইশ করলাম। এই ছিল আমাদের এবারের পহেলা বৈশাখ। এখানে ব্যাপারটাতে একটা ইন্টারপ্রিটেশন এমন হতে পারে, অনেকের ঘরেই খাবার নেই, অনেকের পরিবার সাথে নেই, অনেকেই আমার মতন ওয়ার্ক ফ্রম হোমের পরিবর্তে সরাসরি ফ্রন্ট লাইনে কাজ করছেন, আর এমন মুহূর্তে বাংলা নববর্ষে এভাবে উইশ করা! আবার, এই সত্যিটার অপ্রকাশিত অন্য দিকও কিন্তু আছে। এই লক-ডাউন দিনগুলিতে সকালে প্রায়ই দেরিতে ওঠা হয়। কোন তাড়া নেই বলে আলসেমি করেই বেশ কিছুক্ষণ অতিরিক্ত সময় ধরে বিছানায় গড়াগড়ি দেয়া হয়। এর একটা বড় সুবিধা হলো, তিনবেলার পরিবির্তে প্রায় সময়ই আমরা মাত্র দুবেলা খেয়ে থাকছি। কি খাচ্ছি? পহেলা বৈশাখের দিনে আর সব দিনের মতই সাধারন ভাবে যে ভাতের চাল সিদ্ধ হচ্ছিল, তাতে দুটো ডিম আর খোসা ছাড়িয়ে কয়েকটা আলু ছেড়ে দেয়া হলো। সাধারন সাদা ভাত, ডিম আর আলুর ভর্তা, এই ছিল মেন্যু। এমনটা নয় যে, একবেলা রুচি পাল্টাতে এটা করেছি আমরা। প্রায় প্রতিদিনই আমরা এখন এরকমের খাবারই খাচ্ছি। কারন, সেই গতমাসের ১৮ তারিখে কেনা দুটো মুরগি ফ্রিজে আছে; আমরা ঠিক করেছি আমাদের ছোট্ট মেয়েটা যখন শুধুমাত্র ডিম দিয়ে ভাত খেতে-খেতে বিরক্ত হয়ে যাবে, তখনই কেবল ফ্রিজের সেই দুটো ছোট সাইজের মুরগির মধ্যে একটাকে বের করে অনেকখানি ঝোলের তরকারি হিসেবে রান্না করা হবে, যাতে করে সেটাকে কিছুদিনের ইন্টারভালে বাচ্চাকে বেশ কয়েকদিন ধরে খাওয়ানো যায়। আবার, একটা বাটিতে সামান্য পরিমানে রান্না করা বাশি ডাল ফ্রিজে থাকতে থাকতে প্রায় বরফ হয়ে গেছে। আমরা খাচ্ছি না, কারন কোনদিন হয়তো এই ডালটুকু দিয়েই এক বা দুইবেলা কাজ চালিয়ে নেয়া যাবে। এই সবগুলো ঘটনাই কিন্তু পুরোপুরি সত্যি। এখন ফেসবুকে আমার ঘনিষ্ট জনদের সাথে একটু ভালমন্দ শেয়ার করার জন্য কোনটা ভাল ছিল? আমার ওয়ালের আমার মেয়ের গাওয়া এক মিনিটের “এসো হে বৈশাখ গানটা”? নাকি বাসায় বর্তমান লক-ডাউন প্রেক্ষাপটে প্রতিদিনের কোন রকমে আহারের চিত্রটা? প্রতিনিয়ত বইয়ের কাভার দেখেই কন্টেন্ট জাজ করে অনেক ক্ষেত্রেই ভুল করে ফেলছি নাতো? আমরা তো এটাও জানি, দেয়ার ইজ অলওয়েজ এনাদার সাইড অফ দ্যা সেইম স্টোরি।
৩। আমি ফেসবুকে নেগেটিভ প্রচারণার পক্ষে নই। আবার ব্যাক্তিগত পাব্লিসিটিও পছন্দ করি না। কখনো যদি বুঝতে পারি, আমার কোন একটা কাজে এমন ভুল রয়েছে বা হয়ে গেছে, হয় শুধরে নেই, কিংবা অন্ততঃ এটুকু চেষ্টা করি যাতে করে এমন ভুল আর না হয়। তবে আজ একটু অন্যভাবে লিখছি। আমার অনভিজ্ঞ প্রকাশভঙ্গির ত্রুটিকে দয়া করে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখা হোক। … … আমিই শুধু নই, আমার পরিচিত অনেকেই কিন্তু এই ক্রান্তি লগ্নে কোথাও না কোথাও নিজ সামর্থ্যে কন্ট্রিবিউট করছেন। তাদের কাউকেই আমি প্রচারণায় দেখিনি। কে কোথায় কি বা কত ডোনেট/সাহায্য করলেন, সেটা তাদের মতন মানুষের ক্ষেত্রে অপ্রকাশ্যই রয়ে যায়, আর সেটাই হওয়া উচিত। আমার যোগ্যতা এবং সামর্থ্য সামান্যই। তারপরেও নিজের কোন একটা বাড়তি খরচ (যেটা না হলেও চলে) বাদ দিয়ে হলেও চেষ্টা করি অন্যের বেসিক নিড পুরনের প্রচেষ্টার পাশে থাকতে। তবে একবারে এক জায়গায় বেশি কিছু করি না বা করতে চাই না এবং করতেও পারি না। এর দুটো কারন, প্রথমতঃ আমার সীমিত সামর্থ্য, দ্বিতীয়তঃ এক জায়গার তুলনায় বিভিন্ন জায়গায় অংশ নেয়াটাই আমার কাছে প্রেফারেবল। কেন এমনটা প্রেফার করি, সে প্রসঙ্গে এখন না হয় নাই বা গেলাম। … … গতদিনের সকালে বা দুপুরে আমাদের গ্রামের এক ছেলে ফোন করেছিল। একটা আত্মীয়তার সম্পর্কও তার সাথে আমাদের আছে। তাদের আর্থিক অবস্থা ভাল নয়। “ভাইয়া, কেমন আছেন?” “আছি রে ভাল, তবে টেনশনে আছি। তোরা কেমন আছিস?” “ভাইয়া, কয়েকদিন থেকে খুব কষ্টে আছি।” বুঝতে পারছিলাম, বর্তমান সময়ে কাজকর্ম হাতে নেই এবং আর্থিক সমস্যায় আছে; হয়তো বাসায় কোন খাবারই নেই। ভাবতেই বুকটা মোচড় দিয়ে উঠল। “কি হয়েছে, বল।” “ভাইয়া একমাস থেকে কোন কাজকর্ম নাই। হাতে একদম টাকা-পয়সা নাই।” “কি করিস তুই ইদানিং?” “ভাইয়া পাথর ভাঙার জায়গায় কাজ করি। গত দুয়েকদিন কাজে যাবার চেষ্টা করেছিলাম। পুলিশ সবাইকে সরিয়ে দিচ্ছে। কাজ হচ্ছে না।” কি যে কষ্ট হচ্ছিল ছেলেটার কথা শুনে। এই মুহূর্তে তাকে সাহায্য করার অবস্থায় থাকলেও কিভাবে করব সেই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আসেপাশের বিকাশ আউটলেটগুলো বন্ধ। আমার বিকাশ একাউন্টে সামান্য কিছু টাকা আছে, সেখান থেকেই পাঠানোর প্লান করলাম। টাকার পরিমানটা নিতান্তই সামান্য হলেও হয়তো এটা দিয়ে তাদের স্বল্প আহারে কয়েকটা দিন চলে যাবে। টাকাটা পেয়েই সে আমাকে ফোন করে জানালো টাকাটা পেয়েছে। তার এই ফোনে টাকা চাওয়ার কষ্টটা যেন আমাকেই গ্রাস করে ফেলল। এখন ভাবছি, মানুষের ঘরে খাবার নেই, মানুষ যথেষ্ট কষ্টে আছে এই লক-ডাউন সিচুয়েশনে, এসব আমাদের সবারই জানা। প্রতিদিন মানুষের কোভিড-১৯ সংক্রমনের সংখ্যা বাড়ছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে, সেটাও আমাদের সবারই জানা। কিন্তু বারবার সবাই মিলে ফেসবুকের মতন সোশ্যাল মিডিয়ায় হতাশার কথা ছড়াতে থাকলে, সেটা কি আমাদেরকে এই মুহূর্তে মানসিকভাবে ভাল রাখবে? নাকি, কিছুটা ভাল কথা, ভাল মুড শেয়ার করলে তা সাময়িক হলেও আমাদের চাঙ্গা রাখছে/রাখবে? আমার সাথে অনেকেরই দ্বিমত থাকতে পারে। আমি শুধু আমার চিন্তাগুলো সামনে নিয়ে আসলাম। গতকাল বা পরশু আমার ছোট চাচাকে দেখলাম চাচী এবং আমার দুই চাচাতো বোন সহ বাসায় ঘরোয়া পরিবেশে মেঝেতে বসে খেলছেন। সুদূর দিনাজপুরে চাচার পুরো পরিবারকে একসাথে এভাবে সময় কাটাতে দেখে আমার মনটা হঠাত করে বেশ ভাল হয়ে গেল। তবে, আমি কিন্তু কোন ভাবেই শো অফ করার কারো কোন প্রচেষ্টার পক্ষে সায় দিচ্ছি না। কিন্ত কেউ যদি নিজে কিছুটা ভাল বোধ করে, এমন কোন কিছু সামনে নিয়ে আসে, সেটাতে লাগামহীন নেগেটিভ সমালোচনা, ব্যাঙ্গ, তিরস্কার এই মুহূর্তে তাকে হয়তো অনেক যন্ত্রণায় ফেলে দিতে পারে, এটাই আমার কথার মূল সুর। কারন এই মুহূর্তে সেই ভাল-লাগার মুহূর্তকে শেয়ার করা মানুষটাও হয়তো মনের দিক থেকে ভাল নেই। আর এমন একটা সামাজিক এবং অনেকের অপ্রকাশিত মানসিক বিপর্যয়ের মুহূর্তে কারো দ্বারা প্রকাশিত অন্যের কাছে অপছন্দের বিষয়টাতে প্রকাশ্যে কটাক্ষ বা আক্রমণ না করে বরং সুন্দর এবং সাবলীল ভাবেও তো তাকে বোঝানো যায়।
৪। আচ্ছা, এই যে আমি ফেসবুকে ঘুরছি, সে তো আম জনতার সেবা করার জন্য নয়। এ তো নেহায়েতই নিজের মনের খোরাক মেটানোর জন্য। অনেকেই যে এই মুহূর্তে খাবারের অভাবে আছে, এটাতে আমার যেমন খারাপ লাগছে, অন্যদেরও নিশ্চয়ই খারাপ লাগছে। আমি কিভাবে কনফার্মড হলাম যে, এসবে আমার চেয়ে আরেক জনের খারাপ লাগাটা কোন অংশে কম? যাকে ফেসবুকের মতন ভার্চুয়াল প্লাটফর্মে অন্যদের সামনেই তিরস্কার করছি, তার জীবনের সবকিছুই কি আমার জানা? যে বিষয়গুলো নিয়ে কথা হচ্ছিল, এর কোনটাই কিন্তু উস্কানিমূলক বিবৃতি বা রাষ্ট্রযন্ত্রের পরিপন্থি কিংবা সমাজকে বিপথে পরিচালনার মতন কোন কাজ ছিল না। তাহলে এমন কারো কোন ব্যাক্তিগত শেয়ার করা মুহূর্তকে আমার পছন্দ না হলে আমি তো নিরবেই তা এ্যাভয়েড করে যেতে পারি। কারো ওয়াল তো আর বিশেষ কোন কমিউনিটি বেইজড কনফাইন্ড গ্রুপ বা ম্যাসেজ শেয়ারিং বা চ্যাটিং প্লাটফর্ম নয় যে অহেতুক কারো ব্যাক্তিগত কোন শেয়ারিং আমাকে ডিস্ট্র্যাক্ট করছে বা বারবার টুং-টুং শব্দে বিরক্ত করছে। কারো কোন ব্যাক্তিজীবনের শেয়ার করা মুহূর্ত পছন্দ না হলে অনেক বিকল্প পন্থা অবলম্বন করা যায়। এ্যাভয়েড করা যায়, আনফলো করা যায়, কখনোই মতের সাথে না মিললে আনফ্রেণ্ড করা যায়, আবার একান্তই ইরিটেটিং মনে হলে তো ব্লক করাও যায়। সর্বোপরি কারো কোন কিছুই পছন্দ না হলে তো আমি আমার নিজের ফেসবুক একাউন্টকেই ইনএক্টিভ/ডিএক্টিভ করে রাখতে পারি। অপশন তো হাতে রয়েছেই। তাহলে আর কাউকে আহত করে অস্বস্তি আহবান করা কেন?
৫। তবে হ্যাঁ, ব্যাক্তিজীবনের কোন পোস্ট শেয়ার করার স্বাধীনতা যেমন আমার আছে, সেইসাথে আমার এটাও বিবেচনায় নিতে হবে ভার্চুয়াল জগতে আমার বন্ধুত্ব কাদের সাথে, এবং আমার শেয়ার্ড ফিলিংস কাউকে কষ্ট দেয়/দিচ্ছে/দেবে কিনা। যদি আমি উদারতার খাতিরে সবার সাথেই ভারচুয়াল বন্ধুত্বে আগ্রহী হই, তাহলে নানান জনের নানান রকমের মন্তব্যের সম্ভাবনার বিষয়টি মাথায় রাখার দায়িত্বও কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার কাঁধেই এসে বর্তায়।
পর্ব-১৩ (১৭ই এপ্রিল ২০২০, সন্ধ্যা ৬টা ২২মিঃ)
১। কোথায় যেন পড়েছিলাম, প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুহূর্তে মানুষ একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়, আর মহামারির দুর্যোগে মানুষ থেকে মানুষ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে এবং সম্পর্কগুলো নষ্ট হয়ে যায়।
২। আমাদের দেশে মানুষ না খেয়ে যত না মারা যায়, তার চেয়ে বেশি মারা যায় অবিবেচনা প্রসূত কার্য্যকলাপের কারনে। (এটা আনভেরিফাইড, আমি ধারনা বা বয়সের অভিজ্ঞতায় লিখেছি।)
৩। এই সময়ে এসে, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে কঠোর লক-ডাউন/আইসোলেশন/সোশ্যাল-ডিস্ট্যান্সিং চাপিয়ে দেয়ার আর দেরি করা মনে হয় ঠিক হবে না। একটা জনগোষ্ঠি যখন মোটিভেশনে লাইনে না আসে, তখন প্রাতিষ্ঠানিক কঠোরতা আবশ্যক হয়ে পড়ে।
পর্বঃ ১৪ (২১শে এপ্রিল, বিকেল ৫টা ৩৯মিঃ)
মাকে মনে পড়ে
আমি ছোটবেলায় প্রচুর মার খেয়েছি। ফ্যামিলিতে এবং পাড়ায় রেকর্ড ছিল আমার মার খাওয়ার। একমাত্র সন্তান হওয়া স্বত্বেও কোন ছাড় পাইনি। আমি তো আমার ক্লাসের ছেলেমেয়েদের প্রায়ই বলি, “আমি খুব ছোটবেলাতেই যে পরিমান মার খেয়েছি, তোমদের সবার কপালে একত্রে সারাজীবনের সম্মিলিতভাবে তার সিকিভাগও জোটেনি।” মা-ই বেশি পেটাতেন। বাবা পেটাতেন কম, তবে বাবা যেদিন ধরতেন, খবর করে ছেড়ে দিতেন। মায়ের কাছে খাওয়া মারগুলোই বেশি মনে পড়ে, কিল, চড়, চিরুনি, হাতপাখা, ডালঘুটনি, মাঝে-মাঝে স্যাণ্ডেল, অর্থাৎ তাঁর হাতের নাগালের মধ্যে যেটাই থাকত, এগুলোর সাথে অনেক ছোটবেলাতেই আমার বিশেষভাবে সখ্যতা গড়ে ওঠে। এমনকি ক্যাডেট কলেজ থেকে ছুটিতে এসেও মার খেয়েছি। সর্বশেষ যেটা মনে পড়ে, সেটা ছিল ১৯৯২ সালে, এসএসসি পরীক্ষার পরের সেই দীর্ঘ ছুটিতে। ওহ! হোয়াট এ লাইফ!
মা ছিলেন পার্ফেক্ট এক্সাম্পল অফ এ ফ্যামিলি ডিক্টেটর। তাঁর বাপের বাড়ি, শ্বশুর-বাড়ি, দুপক্ষই তাকে সমঝে চলত। সকল কাজেই তাঁর পার্ফেকশন থাকতেই হবে। আর আসেপাশের মানুষগুলোকেও সেই পার্ফেকশন আনুযায়িই চলতে হবে। বাসায় মেহমান এলে তাকেও সকাল-সকাল সময়মত ঘুম থেকে উঠে নিখুঁতভাবে নিজের মশারি নিজেকেই গুছাতে হবে, এবং টানটান করে তার নিজের বিছানা-বালিশও গুছাতে হবে, এবং তারপরে সবার সাথে একসাথে নাস্তার টেবিলে বসতে হবে। আমার নানুর-বাড়ি তো অনেক দূরের কথা, দাদু-বাড়ির কোন ধূমপায়ী মুরুব্বী আত্মীয়েরও সাহস ছিল না আমাদের বাসায় বেড়াতে এলে বাসার ত্রিসীমানায় স্মোক করার। এমনই ছিল আমার মায়ের পার্সোনালিটি। ঘাড়ত্যাড়া কিংবা অকর্মণ্য বা সাদা-সিধা টাইপের কোন আত্মীয়-স্বজনদের কেউ আমার মায়ের কাছে কিছুদিন থেকেছে/থেকেছেন, অথচ সোজা মানুষ হয়ে যায়নি/যাননি বা কিছুই শেখেনি/শেখেননি, এমনটার কোন স্বাক্ষ্যপ্রমান নেই। বাসায় যেই আসুক, খাওয়ার পরে তার নিজের প্লেট তাকেই ধুতে হতো, সেইসাথে কোন একটা খাবারের পাত্র সেই মুহূর্তে ফাঁকা হয়ে গেলে সেটাও। ধোয়ার সময় আবার বেসিন/সিঙ্কের আসেপাশে পানি পড়া চলবে না, পড়লে সেটাও তাকেই মুছতে হবে। বাসার ময়লা খুব সুন্দর করে প্যাকেট করতেন, যেন বোঝাই না যায় সেটা একটা ময়লার প্যাকেট। যে যখন বাসার বাইরে যাবে, ময়লার প্যাকেট সুন্দর ভাবে ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে, তা সে আমি, কিংবা বাবা, কিংবা বাসায় দুচারদিনের জন্য বেড়াতে আসা কোন মেহমানই হোক। অনেক দিন তো এমন গেছে যে, বাবা কলেজে/অফিসে যাওয়ার পথে ডাস্টবিনে ময়লার প্যাকেটটা ফেলে তারপরে গেছেন। আর মজার কথা হলো, আমাদের বাসায় কেউ বেড়াতে এলেও এসবে মাইন্ড করেছেন বলে আমার মনে হয়নি, কারন সবাই জানতেন, এই বাসায় সবাই এভাবেই থাকে, এভাবেই এখানে থাকতে হবে। তবে আন্তরিকতার ঘটতি কখোনই ছিল না, মা সবার জন্য করতেন প্রচুর, হৃদয়ের ভালবাসা নিংড়েই করতেন। একারনেই বেড়াতে আসা মেহমানরা এসব মেনে নিত/নিতেন। মহিলা কেউ বেড়াতে আসলে অলস বসে থাকার সুযোগ ছিল না। বাইরে কোন কাজে বা কোথাও ঘুরতে না গেলে বাসায় থাকার মুহূর্তটাতে মায়ের সাথে ঘরের কাজে বা তরকারি কুটাবাছায় তাদেরকেও হাত দিতে হতো। তবে রান্নাটা সামলাতেন মা একা হাতে। সম্ভবত ওই পার্ফেকশন-প্রিয়তার কারনেই এই একটা কাজ তিনি অন্যের হাতে ছাড়তেন না।
আমি যখন অনেক ছোট, ক্লাস ওয়ানে পড়ার সময় কিংবা হয়তো তার কিছু আগে-পরে, তখন থেকেই বাসার অনেক কাজই আমাকে করতে হতো। বিছানা-মশারি গুছানো তো নস্যি, স্কুল থেকে নিয়ে এসে, বাসায় সেই মুহূর্তে যে খাবারই থাকত, মা আমাকে পেট ভরে খাইয়ে দিয়ে হাতে একটা ন্যাকড়া ধরিয়ে দিতেন, পুরো বাসার যাবতীয় ফার্নিচার মোছার দায়িত্ব ছিল আমার। পরে আবার সেসবের ইন্সপেকশন হতো; ফার্নিচারের কোনায়-চিপায় অসম্ভব সব জায়গাতে আঙ্গুল দিয়ে টেনে দেখতেন, হাতে ধুলা লাগে কি না, অর্থাৎ আমি ঠিকমত দায়িত্ব পালন করেছি কিনা। মেহমান এলে নাস্তা দেয়া, চা বানানো, তাদের আপ্যায়নের পরে বাসন ধুয়ে-মুছে গুছিয়ে রাখার দায়িত্বও ছিল আমারই। কালের প্রবাহে ঘর ঝাড়া-মোছা, নিজের কাপড় ধোয়া, এসবও আমার ঘাড়েই এসে বর্তায়।
সেই তুলনায় ক্যাডেট কলেজটা আমার কাছে অনেক আরামের জায়গা ছিল। একবার আমি পঞ্চগড়ে আমার ছোট চাচার বাসায় বেড়াতে গিয়েছিলাম; তাঁকে আমি বাবুজি ডাকি। কবে সেটা সঠিক মনে নেই, ক্যাডেট কলেজে পড়ার সময় কোন এক ছুটিতে, কিংবা ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হবার পরপরই হয়তোবা। ছোট চাচা বর্তমানে পেট্রোবাংলার গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা; তবে সেসময় তিনি আরেকটা জবে ছিলেন, পোস্টিং ছিল পঞ্চগড়ে, তখন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পাট চুকিয়েছেন জিওলজি এণ্ড মাইনিং-এ প্রথম শ্রেনীতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী সম্পন্ন করে। সেই মুহূর্তে তিনি ছিলে ব্যাচেলর। থাকতেন থানা লেভেলের সমবয়সী কয়েকজন অফিসিয়ালের সাথে একটা বাসা ভাড়া করে। ছুটা বুয়া এসে তাঁদের রান্না করে দিয়ে যেত। আমিও সেদিন তাঁদের সাথে লাঞ্চের পার্টনার। জেলা শহরের উঠোন সহ একতলা বাসার টানা-বারান্দায় একটা সাধারন মানের কাঠের টেবিল, সেটাতেই রান্না করা খাবার ঢাকা দেয়া, সেদিন ছিল মুরগির রান্না। আমি খাওয়ার মাঝখানেই খাওয়া থামিয়ে মুরগির হাড় চিবিয়ে হাতে নিয়ে বসে আছি, হাতের ময়লাটা ফেলার জন্য বোন্স-প্লেট খুঁছিলাম। চাচা আমার অবস্থা দেখে বললেন, “তোর যেখানে খুশি ফেলে দে; এখানে তোর মা নাই।” এই ঘটনাটা চাচার মনে আছে কিনা জানিনা, কিন্তু আমার যখনই মনে পড়ে হাসি আটকাতে পারি না। আমার জন্মের সময় আমার এই চাচা নাকি ক্লাস সিক্সে পড়তেন, এবং সবচেয়ে ছোট দেবর হিসেবে আমার মায়ের সাথে তাঁর খুব সুন্দর বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল। আমার এই চাচা এইচএসসি-তে পড়ার সময় আমাদের বাসায় থেকেছেন, এবং বলাবাহুল্য আমার মায়ের কঠোর শাসনের চ্যাপ্টারে তাঁকেও থাকতে হয়েছিল। হা হা হা … তবে একটা কথা না বললে, লেখার এই অংশটা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে; আমার মায়ের শেষ জীবনে হাস্পাতালের সময়গুলোতে সময়ে ছোট চাচা আমার মায়ের সুযোগ্য সন্তানের মতই দায়িত্ব পালন করেছেন।
মায়ের জন্ম তারিখ আমার জানা নেই। উনি মারা যান ২রা সেপ্টেম্বরে, ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মাত্র ৪১/৪২ বছর বয়সে। বাবাও কম যান না। বাবাও আগের থেকেই মায়ের মতনই ছিলেন। কেমন করে যেন এই দুজন অতি খুঁতখুঁতে পার্ফেকশন-প্রিয় মানুষের এ্যারেঞ্জড ম্যারেজ হয়েছিল কোন এক ১৩ই নভেম্বরে। মায়ের মৃত্যুর পরে বাবা যেন দুইজনের দায়িত্ব একাই নিলেন, শুরু হলো “একলা চলো রে” অভিযান, দুজন মানুষের কালেক্টিভ খুঁতখুঁতানি সহ। ক্যান ইউ ইমাজিন? হা হা হা … আমাদের পরিবারে আমার দ্বিতীয় মায়ের আগমনের পরে আমার গৃহস্থালির কাজে হাত বাটানোতে আমার ছোট-মা মনে হয় প্রথম দিকে বেশ অস্বস্তিতে পড়ে যান। তখন আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি। আমার ছোট-মা মনে হয় তাঁর এই হঠাৎ পাওয়া ছেলেটার কাছে এতটা সাহায্য নিতে প্রথম দিকে বেশ আনকফর্টেবল ছিলেন। আমার একমাত্র ছোট বোনটার জন্মের সময় আমার বয়স ২২ বছর। সে-ও বাসায় সেই একই নিয়মেই চলছে। আমাদের বিয়ের সময় সে ক্লাস ফোর-এ পড়ত, এবং সেই বয়সেই তার ছোটখাট কাজগুলোকে গুছিয়ে করার প্রবণতা দেখে আমার বৌ-ও তখন বেশ অবাক হতো। আমাদের ছোট্ট মেয়েটা যখন মাত্র দুছরের মতন বয়স, সে-ও বাথরুমে যাবার আগে তার খেলনাগুলো গুছিয়ে তারপরে বাথরুমে যেত। হা হা হা … জেনেটিক্স বোধহয় একেই বলে।
যাহোক, সংসারে আমার বৌ-এর শাসন তো আমার এধরনের চাইল্ডহুড ওরিয়েন্টেশনের তুলনায় কিছুই না। কাজেই, সে আমার উপরে খুব একটা ছড়ি ঘুরানোর সুযোগ পায় না। কালেভদ্রে সামান্য যা একটু ঘরের কাজে সাহায্য করি, সেটাই সম্ভবত তার কাছে অনেক বেশি মনে হয়। সে নাকি সারা জীবনে তার মা-বাবার কাছে একবারও মার খায়নি। আমি তো বলি, “তোমার জীবন তো দেখি ষোল আনাই মিছে”! কাজেই সে-হিসেবে সামান্য ঘরের কাজে হাত বাটানো, এ আমার কাছে মোটেও নতুন কিছু না। আমার মা যা ছিলেন, সেই লেভেলের ফ্যামিলি-ডিক্টেটর হতে হলে আমার বৌ-কে মহাবিশ্বের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বারবার জন্মাতে হবে, তাও তার দ্বারা তেমনটা হওয়া হবে কিনা, আমি সন্দিহান। কাজেই এই লক-ডাউনের দিনগুলোতে গৃহস্থালির সামান্য কিছু কাজে তাকে এ্যাসিস্ট করা, এতো আমার কাছে পুতুল খেলা।
এত কিছুর পরেও এই লক-ডাউনের গৃহবন্দিদশা আর ভাল লাগছে না। এখন মনে হচ্ছে এর চেয়ে সকাল-সন্ধ্যা মায়ের কাছে মার খাওয়াই অনেক ভাল ছিল। তারপরেও বলি, সবাই বাসায় অবস্থান করুন; সবাই ভাল থাকুন।
পুনশ্চঃ মা-কে আমি মামনি ডাকতাম, আর বাবাকে এখনো বাপিমনি ডাকি। ছোটবেলার প্র্যাক্টিসগুলো হঠাৎ ছেড়ে দেয়া যায় না। অবশ্য ছেড়ে দিলে মনে হয় মেকি-মেকি শোনাবে। যে যেটাতে প্র্যাক্টিসড/অভ্যস্ত, সেটাই সাবলীল। আর এগুলোর জন্য ক্যাডেট কলেজের বন্ধুরা এখনো আমাকে টিজ করে। করুক! টিজ করা ছেড়ে দিলে মনে হবে আন্তরিকতা কমে গেছে। ওই ব্যাটাদের বয়স যত বাড়ছে, ফাজলামির মাত্রাটাও সমান তালে বাড়ছে। বাড়ুক! লাইফ ইজ রিয়েলি সো বিউটিফুল।
পর্ব-১৫ (২৫শে জুন ২০২০, সন্ধ্যা ৭টা ৫৮মিঃ)
প্রাইভেসি ম্যাটার্সঃ আরিশার আজকাল
ক্লাস ওয়ানের আরিশা আর তার এক/দেড় বছরের বড় একমাত্র মামাতো বোন ক্লাস টুয়ের নাবিলা, এই দুয়ে হলো হরিহর আত্মা। টুইন্স ফ্রম ডিফারেন্ট প্যারেন্টস। দুজনের কবে ক্লাস, কবে পরীক্ষা, তার চেয়েও বড় কথা কখন দুজনেরই একসাথে মোটামুটি দুচারদিনের ছুটি থাকে, এসবের হিসেব-নিকেষ একেবারে টনটনে। কারনটা সহজেই আনুমেয়, হয় মামাবড়িতে নয়তো ফুপির বাড়িতে তাদের যে কোন একজনকে তখন দুচারদিনের জন্য শিফট হতেই হবে।
বেচারা এই দুই ইঁচড়ে পাকা লক ডাউনের প্রথম দিকে বেশ ঝামেলায় পড়ে গিয়েছিল। কিন্তু ওই যে, এনি প্রব্লেম হ্যাজ ইটস অউন ওয়ে টু এ প্রস্পেক্ট! তারা দুজনেই নিজেদের মা-বাবা-র মোবাইল ফোনের ম্যাসেঞ্জারের ভিডিও কনফারেন্স অপশনে হাত পাকা করে ফেলেছে। দজনই এই বয়সে ভালই ট্রিক শিখে গেছে। প্রথমেই তারা ভিডিও কল দেয় না, আগে মামাকে কিংবা ফুপিকে অডিও কল করে দেখে নেয় ফোনটা এই মুহূর্তে কোথায়, এবং ফোনের অপর প্রান্তের বড়দের মেজাজ-মর্জি কেমন। যদি খালি টের পায়, অবস্থা পজেটিভ এবং সিচুয়েশন আণ্ডার কন্ট্রোল, ব্যাস সাথে সাথে অডিও কল কেটে দিয়ে ম্যাসেঞ্জারে ভিডিও কনফারেন্স শুরু। এমনি-এমনি তো বলে না, নেসিসিটি ইজ দ্যা মাদার অফ ইনভেনশন!
নাবিলার ফোন আসলেই আরিশা দেখি আস্তে করে ফোন নিয়ে তার ঘরে চলে যায়। বাপরে বাপ! এই ১৮/২০ কেজি ওজনের পিচ্চিগুলোও প্রাইভেসি মেইন্টেইন করা শিখে গেছে। হুমম, বলতেই হচ্ছে, করোনা অনেক কিছুই শেখাচ্ছে। পোস্ট-করোনা জগতটা কেমন হবে সেটাই ভাবছি।
পর্ব-১৬ (ঈদ-উল-ফিতর-এর আগের রাত)
এবারের এই লকডাউনের ঈদ কতটা আনন্দের আর কতটা বিষাদের, তা প্রত্যেকের নিজের কাছেই বিচার্য। আজ ৬৭তম দিন শুরু হলো আমাদের পুরো পরিবারের কমপ্লিট লকডাউনের। কষ্ট করেই দিনগুলো পার হচ্ছে। কোনরকমে বাসার সবাই স্বল্পাহারে দিন পার করে চলেছি। কিন্তু যখন মনে হয় কতজনের চেয়েও আমরা অনেকেই কত ভাল আছি, সেটাই এই মুহূর্তের স্বান্তনা। মার্চের ১৮ তারিখ বিকেলের পর থেকে আমাদের বাসার কেউই বাইরে পা দেইনি। দেখতে দেখতে একটা পুরো রোজার মাস পার হয়ে গেল। করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, সেই সাথে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। সবার মঙ্গলের জন্য যে শুধু আমিই প্রার্থনা করছি, তাইই নয়, আমার বিশ্বাস, এদেশের শুধু না, বিশ্বের প্রতিটি মানুষ আজ চাইছে এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে। আমরা কেউই নিশ্চিত নই, এর শেষ কিভাবে-কোথায়।
এই করোনার দিনে আমরা বড়রাই আতঙ্কে দিশেহারা। বড়রাই যেখানে এমন এক মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে লকডাউনের দিন পার করছি, সেখানে আমাদের বাচ্চারা, বিশেষ করে আমার সাত বছরের মেয়েটা যে কিভাবে বড়দের মতন এতটা মানসিক শক্তি নিয়ে গৃহবন্দী দিনগুলোতে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে, সেটা ভাবতেই আমি বেশ অবাক হচ্ছি। পরম করুনাময় সকলের মঙ্গল করুক, এটাই এই মুহূর্তের দোয়া, একান্ত চাওয়া।
আগামীকাল ঈদ, পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর। আমাদের দেশে উদযাপিত সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে নিঃসন্দেহে এটা অন্যতম। আজ ইফতারের পরে যথেষ্ট ক্লান্ত লাগছিল। স্বাভাবিকভাবেই মনটাও বিচ্ছিন্ন। এবারের ঈদে কোন রঙ নেই, নেই কোন উচ্ছাস। তারপরেও তো ঈদ। আগামীকাল বাসাতেই ঈদের নামাজ পড়ব বলে আমরা ঠিক করেছি। এখন পর্যন্ত কষ্ট করে বাসাতেই অবস্থান করে দিন পার করছি। নিজের জন্য, নিজের পরিবারের জন্য, পাড়া-প্রতিবেশীর জন্য, দেশের মানুষের জন্য, সকলের জন্য আমাদের এই বাসায় থাকা। আমি পরিচিত মহলে আরো অনেকের কথাই জানি, যারা আমার বা আমাদের পরিবারের মতই প্রয়োজন-চাহিদা এসবকিছুকে সংক্ষিপ্ত করে বাসায় অবস্থান করছেন।
সন্ধ্যার পরে বাচ্চাকে নিয়ে “রমজানের ওই রোজার শেষে” এই নজরুল-গীতিটা গাওয়ানোর চেষ্টা করছিলাম। উদ্দেশ্য ছিল, দুটো, এত কিছুর মাঝেও বাচ্চাটাকে কিছুটা ঈদের আমেজ দেয়া, আর বাচ্চাকে দিয়ে গাওয়ানো এই গানটা দিয়েই সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানানো। বেশ কয়েকবার ট্রায়াল-এরর হলো। আসলে মন ভাল না থাকলে কোন উচ্ছাস সহজে আসে না, আসার কথাও না। বাচ্চার সেই রিহার্সেলগুলোকে কম্পাইল করেই এই পোস্ট। ইফতারের পরে ক্লান্ত এবং অবশ্যই কিছুটা বিষাদগ্রস্ত অবস্থাতেও আরিশার মা Monira Akhter যথেষ্ট ধৈর্যের সাথে এই রিহার্সেলের পুরো সময়টাতে ক্যামারায় সঙ্গ দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রে ভুলগুলো আমারই হচ্ছিল। আরিশাই আসলে আমাকে সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছিল। এখানে প্রতিটা ছোট-ছোট ভিডিও-ক্লিপই আমার কাছে অমূল্য।
সময়ের বিচারে হয়তো অনেকের কাছেই আমার এমন উপস্থাপন পজেটিভ বিবেচনায় যাবে না। আমি প্রত্যেকের নিজস্ব অবস্থান এবং বিচারকে বরাবরই সম্মান করেছি, এবং করি। কিন্তু তারপরেও বলছি, এসবকিছুই আমার একান্ত মনের খোরাক, এসবকিছুই আমার এই মুহূর্তের সম্বল। যে কেউ চাইলেই এই পোস্টটাকে এ্যাভয়েড করে যেতে পারেন, এবং সে স্বাধীনতা তো সকলের আছেই।
সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন, এবং ঘরে থাকুন। বিনা প্রয়োজনে বাইরে যাবার কি দরকার? … … … সবাইকে পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর-এর শুভেচ্ছা … … … ঈদ মোবারক।
পর্ব-১৭ (২০শে নভেম্বর ২০২০, প্রথম প্রহরের ঘন্টাখানিকের মধ্যে কোন এক সময়)
আমি মার্চের ১৮ তারিখ থেকে পরিবারের সবাই মিলে বাসার ভেতরেই থাকছি। ৭ মাস পরে বাসা থেকে প্রথম বাইরে বেরিয়েছিলাম, তাও আবার ইউনিভার্সিটিতে মিটিং ছিল বলেই (এর মধ্যে ওয়ার্ক ফ্রম হোম সিচুয়েশনে আছি, বাসা থেকেই ক্লাস/পরীক্ষা এসব কন্ডাক্ট করছি, ডিপার্ট্মেন্টের জুনিয়র কলিগদেরকেও পরামর্শ দেই বাসায় থাকার জন্য, এবং সর্বোচ্চ প্রচেষ্টায় নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য)। বাসা থেকেই অনলাইনে অর্ডার দিয়ে প্রয়োজনীয় কেনাকাটা সারছি। বড়জোর বাসার নিচে সব্জিবিক্রেতা এলে বাসার দারোয়ান মাস্ক পরে সব্জি কিনে বাসার দরজায় দিয়ে যাচ্ছে। লোকে হাসাহাসি করছে, আমি জানি।
আমার বাবার এঞ্জিওগ্রাম হয়েছে একবার, তিনি প্রায় ১৮/২০ বছর ধরে এ্যজমার সমস্যায় আছেন, একবার মাইল্ড স্ট্রোক হয়েছে উনার, এবং বর্তমানে তিনি আর্লি সেটেইজের পার্কিন্সন ডিসঅর্ডারে ভুগছেন, তাই নিজের এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের বাইরে যাওয়া, এবং আমাদের বাসায় বাইরের কাউকে প্রবেশের ব্যাপারে যথেষ্ট কড়াকড়ি অবস্থান নিয়েছি। আজ যদি আমার একবার করোনা হয়েও যায় (আল্লাহ মাফ করুক), আল্লাহ যদি আমাকে বাঁচিয়ে রাখেন, তারপরেও আমি মাস্ক পরেই কেবলমাত্র একান্ত প্রয়োজনেই বাইরে যাব। “মাস্ক কেউ এখন আর পরে নাকি” কিংবা “এত ভয় পেলে কি চলে” এমন কথা বলা নিকট আত্মীয়দেরকেও এড়িয়ে চলছি।
আমার আপন চাচা (বাবার ছোট ভাই) এবং চাচী ডাক্তার। তাঁরাও একই শহরে বসবাস করা সত্বেও সঙ্গত কারনেই আমাদের বাসায় আসেন না গত ৮ মাস যাবত, ফোনেই আমার বাবার শারীরিক বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন। আল্লাহ-আল্লাহ করছি, যেন কারো হঠাৎ দাঁতের সমস্যা না হয়, কারন সেক্ষেত্রে তো আর ডেন্টিস্টের চেম্বারে যাওয়া ছাড়া আর কোন গতি থাকবে না। এর মাঝে আমার বাবাকে এবং আমার স্ত্রীকে কয়েকবার ডাক্তার দেখানোর প্রয়োজন হলে অনলাইনে/ফোনে/ভিডিও-কলে দুজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কন্সাল্টেন্সি নিয়েছি (একজনকে জোর করেও কোন ফি দিতে পারলাম না, আরেকজন বেশ কয়েকবার ফি নেননি, আমার জোরাজুরি সত্বেও, আমি তাঁদের এই মহানুভবতায় কৃতজ্ঞ)।
রেস্টুরেন্টে যাই না, দোকানপাট, পাব্লিক প্লেস কোথাও যাচ্ছি না। তাহলে কি আমি ভীতু? যদি হই, তবে তাই-ই সই। আমি প্রয়োজন ব্যাতিরেকে বাইরে যাচ্ছি না এই মহামারিকালে, এটাই আমার সিদ্ধান্ত। বেঁচে থাকলে, সুস্থ থাকলে, আবার আমরা আগের জীবনে ফিরে যেতে পারব। জানি না, এরই মধ্যে কোন ফাঁক-ফোঁকর দিয়ে আমি বা আমাদের পরিবারের কেউ আক্রান্ত হয়ে পড়ব কিনা (পরমকরুণাময় সকলের প্রতি সদয় হোক); কিন্তু চিন্তা যখন আমার পরিবারকে নিয়ে, আমার আসেপাশের এবং সমাজের মানুষজনদের নিয়ে, তখন আমি এই ত্যাগ স্বীকার কিরে নিচ্ছি। আমাকে যদি এর পরেও কেউ ভীতু ভাবে, আমি নিরবে তা মেনেও নেব।
পুনশ্চঃ
১. এর মাঝে জরুরি কাজে প্রথম যেদিন ভার্সিটিতে গিয়েছিলাম, একজনকে স্টাফকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছিলাম, কারন তার কাছে মাস্ক ছিল না। আর সুশিক্ষিত(??) সমপর্যায়ের কলিগদের কারো মাস্ক না থাকলে অন্ততঃ মুখের উপরেই একবার জিজ্ঞেস করি, মাস্ক পরেননি কেন?
২. একদিকে যেমন কেউ-কেউ হাসাহাসি করছে, আবার অপরদিকে দুয়েকজন বন্ধু, যাদেরকে নিয়মিত অফিস করতে হচ্ছে, তারাও আমাকে বারবার সতর্ক করছে পারতঃপক্ষে বাইরে না যাবার জন্য, আর বাসার মুরুব্বিদের বিষয়ে অতিরিক্ত সতর্কতা বজায় রাখার জন্য।
As a personal chronicle, this is a good post. But as a blog post, I would think it’s rather too long!
মাকে মনে পড়ে - এটা একটা পৃথক পোস্ট হলে ভাল হতো। কেননা এত সুন্দর কথাগুলোর এখানে এই দীর্ঘ পোস্টের শব্দাধিক্যের আড়ালে চাপা পড়ে যাবার সমূহ সম্ভাবনা।
ক্যাডেট কলেজের মেধাবী ছেলেগুলো কেন যে এ ব্লগটাতে কিছু লিখছে না, বলছে না, তা বুঝতেই পারছি না। অথচ, কেউ যে এখানকার লেখাগুলো পড়ছে না, তা কিন্তু নয়। একেকটা পোস্ট প্রচুর সংখ্যায় পঠিত হচ্ছে, কিন্তু মন্তব্যের ঘর শূন্য! অথচ বছর পাঁচেক আগেও এ ব্লগটা কতই না সরগরম থাকতো!
তোমার পোস্টের মতই আমার এ মন্তব্যটাও ইংরেজী-বাংলায় মেশানো হয়ে গেল!
ভাইয়া, ২০ দিন পরে খেয়াল করলাম যে, কেউ একজন আমার লেখা পড়েছেন। তাও আবার আপনার মতন একজন উঁচু মানের লেখক আমার লেখা পড়েছেন, এটা যে আমার জন্য কত বড় পাওয়া! অনেক অনেক ভাল লাগায় মন ভরে গেল ভাইয়া। ব্লগে আজকাল আর আসাই হয় না। কোন লেখা মাথায় এলে তখনই কেবল এসে পোস্ট করে চলে যাই। নিজের লেখাটাও প্রায়ই নিজের কাছেই যেন অবহেলিতই থেকে যাচ্ছে। হায়রে জীবন!!
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
আহমদ, তোমার এই পোস্টের আগেও ধারাবাহিকভাবে আমি অনেকগুলো পোস্টে মন্তব্য রেখে গিয়েছিলাম। সিসিবি'র মন্তব্যের এই খরার দিনে আমার মন্তব্যগুলো অনাদরে অপঠিত থাক, এটা আমি চাই না, নিশ্চয়ই তুমিও চাইবে না। তাই অনুরোধ, একবার সময় করে এসে পড়ে যেও।
ভাইয়া, সিসিবিতে আসলেই খরা চলছে। এক যুগ আগের সেই সিসিবির আমেজটা কোথায় যেন হারাতে বসেছে। আগে সারারাত জেগে বিভিন্ন পোস্ট পড়া হতো। পোস্টগুলোতে কমেন্ট, পাল্টা-কমেন্ট, এসবে কি সুন্দর সময় পেরুতো। এরপরে শুরু হলো ফেসবুক ভিত্তিক পোস্ট-রিডিং। আমার কাছে সিসিবির মতন প্লাটফর্মের রুগ্নদশার পেছনে ফেসবুকের প্রতি আমাদের এই আসক্তিটাকেই প্রধান দায়ী মনে হয়।
সফট-কপির টেক্সট-বই বা পিডিএফ অনলাইনে এ্যাভেইলেবল হবার পরে যেমন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছেলেমেয়েদেরও পড়াশুনার প্রতি একটা শর্টকাট মনোভাব তৈরি হইয়েই চলেছে, ঠিক তেমনিভাবে, ফেসবুকের মতন সোশ্যাল কমিউকেশন প্লাটফর্মের আকর্ষণ আমাদের ব্লগ রাইটিং-রিডিং অভ্যাসকেও হার হার মানিয়ে দিচ্ছে। আগে একেকটা লেখায় শতখানেক মন্তব্যের ঝড় উঠত। আর এখন মন্তব্য তো দূরের কথা, লেখাই যেন না থাকার মতন একটা অবস্থা। আমি নিজেই করোনার সময়ের দিনলিপি টাইপের একটা সিরিজ শুরু করেও কোথায় যেন মাঝপথেই হারিয়ে গেলাম।
তবে ভাইয়া, আপনাকে একটা কথা আগের মন্তব্যের জবাবে ক্লিয়ার করা হয়নি। আসলে সিসিবিতে জমা পড়ার বা ছাপানো লেখার স্বল্পতার কারনে আমার করোনাকালীন লেখার বেশ কিছু দেখছিলাম ড্রাফট-চ্যাপ্টারেই রয়ে যাচ্ছিল, কারন ব্লগের ফার্স্ট পেইজে একই লেখকের একাধিক লেখা থাকার বিষয়ে বাধা আছে। তখন থেকে ধারাবাহিক ভাবে একই ব্লগের লেজ ধরে আপডেট হিসেবে লিখে যাচ্ছিলাম। তবে আমিও ফিল করেছিলাম, "মাকে মনে পড়ে" লেখাটা আলাদা হলেই ভাল হতো।
যাহোক, সুস্থ লেখার চর্চা চলুক। আমরাও আমাদের সত্যিকারের পড়ার অভ্যাসে ফিরে যাই। এটাই কামনা করছি।
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম