সেলফোনটা ঘুমিয়ে পড়ছিলো। অবশ হয়ে ওর পাশে আমিও শুয়ে ছিলাম রাত দুটো পর্যন্ত। চোখ মেলে দেখি বারান্দার আলো ঘরের ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বললেই এক দৌড়ে চার্জারটা এনে দেবে, ভেতরের ঘর থেকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে।
দু’দিন আগে পৃ বলছিল এই দৃশ্যের কথা – আগাম। ছুটির দিন সারা দুপুর এঁটো হাতে বসে রইলো — অনেকক্ষণ আমাকে দেখতেই পাচ্ছিল না যেন। আমি টিভিতে একটা অখাদ্য নাটকের সুখাদ্য নায়িকার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেখিয়েও ওর ধ্যান ভাঙাতে পারলাম না।
একসময় আমার দিকে স্বচ্ছচোখে তাকালো,’ক’টা বাজে?’
‘পৌনে চারটা, কেন?’
‘এমনিই। আজ থেকে দু’দিন পর অনেক রাতে তোর মাথার কাছে বারান্দার আলো এসে অনেকক্ষণ অপেক্ষা করবে। কিন্তু সেলফোনের চার্জার খুঁজে দিতে নয়।’
আমি টিভি অফ করে দিয়ে, মুখচোখ থেকে রাজ্যের বাঁদরামি কোন রকমে লুকিয়ে শান্তস্বরে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে কি জন্যে?’
‘জানিনা!’ বলে মহারাণী বেরিয়ে গেলেন।
তারপর থেকে একটা ফোন না, মেসেজ না। পৃ-র ফেসবুকও বন্ধ। অগত্যা উজবুকের মত মাথা গুঁজে এ দু’দিন অফিসে পড়ে রইলাম।
ল্যাপটপের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে একসময় চোখ লাল হয়ে এলো, শীত করতে লাগলো।
সেলফোনটা ঘুমিয়ে পড়ছিলো। অবশ হয়ে ওর পাশে আমিও শুয়ে ছিলাম রাত দুটো পর্যন্ত। চোখ মেলে দেখি বারান্দার আলো ঘরের ভেতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে। যেন বললেই এক দৌড়ে চার্জারটা এনে দেবে, ভেতরের ঘর থেকে তন্ন তন্ন করে খুঁজে।
বাতাসে দুলে ওঠা পর্দাকে পৃ-র আঁচল বলে ভুল হলো একবার। ঢাকা শহরের কড়া প্রসাধনের আলো বারান্দা হয়ে সোফার কাছে এসে হয়ে উঠেছে নতুন বৌয়ের মত নরম আর অভিমানী। আমি ওকে সেলফোন-চার্জার খুঁজে দেবার কথা বলি কি করে। বরং ও-ই আমাকে ফিসফিস করে আবুল হাসানের ‘একলা বাতাস’ শোনায়।
নোখের ভিতর নষ্ট ময়লা,
চোখের ভিতর প্রেম,
চুলের কাছে ফেরার বাতাস
দেখেই শুধালেম,
এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?
হঠাৎ তাহার ছায়ায় আমি যেদিকে তাকালেম
তাহার শরীর মাড়িয়ে দিয়ে
দিগন্তে দুইচক্ষু নিয়ে
আমার দিকে তাকিয়ে আমি আমাকে শুধালেম
এখন তুমি কোথায় যাবে?
কোন আঘাটার জল ঘোলাবে?
কোন আগুনের স্পর্শ নেবে
রক্তে কি প্রব্লেম?
এবার আমি টলতে টলতে ড্রিঙ্ক বানাতে উঠি। এখন একটা ড্রিঙ্কের বড় প্রয়োজন। পৃ-র খুব আপন ড্রিঙ্ক Chocolate Rum Kiss বানাবো। আশ্চর্যের ব্যাপার বেশিরভাগ জিনিসই আজ বাসায় আছে।
২ আউন্স Bacardi Rum
১ আউন্স White Chocolate Liqour
২ আউন্স Coconut cream
৪ আউন্স দুধ
২ স্কুপ ভ্যানিলা আইসক্রিম
২ আউন্স Milk Chocolate
১০-১৫টা পেস্তা বাদাম, খোসা ছাড়িয়ে, গুঁড়ো করে নেয়া
Vanilla extract
মিল্ক চকোলেট ভালো করে grate করে, পেস্তার সংগে মিশিয়ে নিলাম।
ককটেল গ্লাসের কিনারা Vanilla extract এ আলতো ছুঁইয়ে নিয়ে মিল্ক চকোলেট-পেস্তার মিশ্রণের ওপর উপুড় করে বসিয়ে দিলাম একটু।
দুটা গ্লাসে ভ্যানিলা আইসক্রিমের দুটো স্কুপ বসিয়ে দিলাম।
উপরের প্রথম ৪টি উপকরণ shaker এ নিয়ে বার দশেক ঝাঁকিয়ে আইসক্রিম এর উপর ঢেলে দিলাম।
সবশেষে উপরে খানিক পেস্তার গুঁড়ো ছড়িয়ে দিয়ে গ্লাস দুটো কাউন্টারে রাখতে গিয়ে হঠাৎ আমাদের প্রথম চুমুর গল্পটা মনে পড়ে গেল।
ইউটিউবে গানটা চালিয়ে দিতে দিতে মনে হল বারান্দার পর্দাটা পৃ-র আঁচলের মতই আরেকবার নেচে উঠল।
চমৎকার...
(সম্পাদিত)
অনেক ধন্যবাদ মাহমুদুল। সিসিবিতে নতুন করে আবার শুরু করলাম। বহুদিন পরে।
আমি টিভিতে একটা অখাদ্য নাটকের সুখাদ্য নায়িকার প্রতি বিশেষ মনোযোগ দেখিয়েও ওর ধ্যান ভাঙাতে পারলাম না - 🙂
ব্যক্তিগত রেসিপি – ১৩ - চমৎকার লাগলো। সাথে আবুল হাসানের অনবদ্য কবিতা পড়ে আবারো মুগ্ধ হ'লাম।
সকালে তোমার এ লেখাটা পড়ে একটা মন্তব্য করেছিলাম, নূপুর। কিছুক্ষণ পরে দেখি লেখাটাই গায়েব! এখন আবার সেটাকে যথাস্থানে দেখতে পাচ্ছি, কিন্তু আমার মন্তব্যটা "ব্লগ এডজুট্যান্ট" এর নামে এসেছে।
অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই। অনেকদিন পর এসে জড়তা ভাঙতেও যেন সময় লাগছে। আমিও সাত সকালে উঠে এডজুটেন্ট স্যারের মেসেজ দেখে ঘাবড়ে গেলাম। প্রথমে ভেবেছি দীর্ঘ অনুপস্থিতির অপরাধে কি না কি শাস্তি জুটে গেল! ভালো আছেন? ভালো ছিলেন?
আবুল হাসানের এই কবিতাটা আমার খুব খুব প্রিয়।
লিখাটা আগেই পড়েছি মোবাইলে।
কিন্তু লগড ইন ছিলাম না বলে কমেন্ট করতে পারি নাই।
পরে ঢুকে দেখি লিখা নাই।
এখন আবার পেলাম। তাই লিখছি...
"সেই পুরনো ককটেল, সেই পুরনো গন্ধ-বর্ন-স্বাদ সহযোগে পরিবেশনের মতই মনে হলো লিখাটিকে..." (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
পারভেজ ভাই, কেমন আছেন? আবার ফিরে আসা আর কি। নিয়মিত হবার প্রচেষ্টা।
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়লাম নূপুর দা। ভালো আছেন আশা করি।
আর আপনার রেসিপি দেখে হা হুতাশ ছাড়া কিছু করার নেই।
পুরো লেখাটাই কবিতার মত মনে হলো।
সাতেও নাই, পাঁচেও নাই
জিহাদ,
কেমন আছো? দিন কেটে যাচ্ছে। কতগুলো বছর চলে গেল, বল তো? এর মধ্যে কাজের কাজ যেটা হলো, তা হচ্ছে attention span কমে যাওয়া।
আহ্ বহুদিন পর তোমার ব্যক্তিগত রেসিপি! দারুণ লাগলো নূপুর। চুমুক দিতে দিতে আবুল হাসানের কবিতা আর হুইটনি হিউস্টন এর গান।
তোমার জন্যই আজ অনেকদিন পর সিসিবিতে ঢুকলাম। ভালো থেকো।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
মিস করি লাবলু ভাই। দেশেও যাওয়া হয়না, দেখা হয় না। এদিকে বুড়িয়ে যাচ্ছি প্রতিদিন।
কতদিন পর! আপনাকে খুব মিস করি, নূপুরদা! ব্যক্তিগত রেসিপি এখনো চলছে দেখে ভাল লাগল।
আমার বন্ধুয়া বিহনে
আহা, কবে পাব সেই আইসক্রিম। :dreamy:
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
পড়তে পড়তে দেখি একা তো নই, আলোকরশ্মি আছে ক'জন সাথে। পর্দাটা কিংবা আঁচলটা দুলে উঠছিল বার ক'বার, যেনো সম্ভাবনার বড়শিতে ঢেউ তুলে কেউ দিচ্ছিল দোলা ফাৎনাতে।
রেসিপি পড়ে কি আর শুধু হয় !
আরে জোশ ...... মুগ্ধ মুগ্ধ মুগ্ধ। কত্তদিন পর তোমার লেখা পড়লাম।
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার