পাবলো নেরুদাকে নিয়ে নানান ব্যক্তির সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণের সংকলন এ বইটি। নেরুদাকে যাঁরা জানেন ও পছন্দ করেন, তাঁদের উদ্দেশ্যে। গ্রন্থটির ইংরেজি অনুবাদ থেকে বাংলায় অনূদিত।
Pablo Neruda: Absence and Presence
মূল:Luis Poirot
ইংরেজি অনুবাদ:Alastair Reid
১৯৭৩ এর গ্রীষ্মে আমি ও পাবলো পনের দিনব্যাপী এক আড্ডায় মেতেছিলাম। আমি ছিলাম El Tabo তে, Isla Negra থেকে সহজ হাঁটা দূরত্বে।পাবলো সিয়েস্তা থেকে ওঠার পরপরই প্রতিদিন নিয়ম করে সেখানে হাজির হতাম আমি। হুইস্কির একটা বোতল, দুটো গ্লাস আর একগুচ্ছ আইসকিউব নিয়ে আমাদের আলাপচারিতা শুরু হোত।
প্রকৃতপক্ষেই, নিজেদের দুটো জীবনের মাঝ বরাবর ছুটে চলছিলাম আমরা। না, কোন অন্তর্দৃষ্টি বা সমালোচনার ভঙ্গি নিয়ে নয়, বরং সেলুলয়েডে দেখার চোখ নিয়ে। ‘অমুককে মনে আছে?’ কিংবা ‘বেচারা তমুক’ বলে শুরু হত আর যে-লোকগুলোকে নিয়ে কথা, তারা উপস্থিত হত একেবারে সময়ের পরম্পরায়। কখনো কখনো পালা করে পরিচালকের ভূমিকায় আমি অথবা সে – একজন একটি দৃশ্য হাজির করতাম আর অন্যজনের হাতে থাকত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার আতশকাঁচ । এভাবেই আমাদের জীবনকে শুধু পেছন ফিরে দেখা হচ্ছিলোনা, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অনেক প্রিয় বন্ধুদের জীবনও, যাদের অনেকেই তখন মৃত। আর এসবের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বারংবার লাগামছাড়া হাসিতে যেমন মেতে উঠছিলাম, তেমনি চকিত বিস্বাদময়তায়ও আক্রান্ত হচ্ছিলাম যার প্রতিকার হয়ে উঠেছিল হুইস্কি,বরফ আর অশ্রু।
খুব স্পষ্টভাবে দেখতে পাচ্ছিলাম – কেমন করে পাবলোর নৈর্ব্যক্তিক পরিপার্শ্ব এবং তার ব্যক্তিজগতের অহর্নিশ সংঘাত তার কবিতায় নিয়ে আসছিল অপরিমেয় ক্রোধ আর আক্রোশ। বাইরের জগত যেন তার কবিতায় প্রবেশ করছিল আর বেরিয়ে আসছিল রূপান্তরিত হয়ে; বলা ভালো, বিকৃত হয়ে। তার জগত আবার তার বন্ধুদেরও জগত ছিল – ছিল অনুধাবনের অতীত, অগ্রহণযোগ্য। তরুণ বয়সে, আমাদের সবার কাছেই জীবনের উৎস এবং কারণ ছিল ভালবাসা – পাগলের মতন তার পেছনে ছুটে বেড়িয়েছি প্রত্যেকে। বাস্তব জগত থেকে পালিয়ে পাবলো বারবার ভালবাসার আশ্রয়ে শান্তি খুঁজে পেতে চেয়েছে, আর প্রতিবার হৃদয়কে বিদীর্ণ করে সেই নির্মম জগত তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।
তারপর সেসব শুঁড়িখানায় এসে সে হানা দিত যেখানে আমরা বাকীরা আশ্রয় খুঁজে নিয়েছিলাম। এভাবে একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে সে যেন আমাদের উপস্থিতিতেই আরো অনেক বেশি নি:সঙ্গ হয়ে পড়ত। অথচ বন্ধুদের প্রতি তার নি:সীম টান ছিল, কেননা আমাদের সঙ্গ পেয়েই সে একটু একটু করে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারত আর আনন্দে উদ্বেল হত।
Isla Negra-র পনের দিনের সেই কথা বলা শেষ হলে, পরস্পরকে বিদায় দেবার মুহূর্তে, সে বলেছিল – ‘দিয়েগো, বহু বছরে এই-ই আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
ওই দিনগুলোতে, আমাদের জীবনের সুদীর্ঘ ছায়াছবি টানা চালিয়ে নিতে পেরেছিলাম সমুদ্রের কারণে – তার ক্লান্তিহীন ঢেউগুলো দিয়ে বালুতট বারবার ধুয়েমুছে দেবার অনন্যতার কারণে; যদিও হুইস্কিরও ছিল নিজস্ব ভূমিকা।
** Isla Negra – চিলির একটি দ্বীপ। জীবনের বেশ কিছু সময় নেরুদা এ দ্বীপে বসবাস করেছিলেন। এবং এখানেই সমাহিত আছেন।
বাহ, চমৎকার হয়েছে নুপুর। ঝরঝরে। ভালো লাগলো। :thumbup: :thumbup: :thumbup:
"বিস্বাদময়তা"র জায়গায় কি বিষাদময়তা হবে?
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
অরূপ দা,
অনেক ধন্যবাদ!
ওটা বিস্বাদময়তাই।
🙂 জোশ তো।
নিজে কানা পথ চেনে না
পরকে ডাকে বার বার
এই লাইনে যারা- মানে যারা লেখালিখি করে, করেছিল, করবে এদের জীবন কাটে একাকীত্ব আর বন্ধুত্বের অদ্ভুত এক সুতা টানাটানির খেলায়। এক এক জনের এ সুতায় টান দেওয়ার ধরণ এক এক রকম। নেরুদার ধরণটা কেমন যেন! থিতু হওয়ার বয়সে তাঁর বন-জঙ্গলে অদ্ভুত দৌড়াদৌড়ি। তবে সুতায় শেষ টানটা যথার্থ ছিল, তাঁর শেষকৃত্যের দিন হাজার হাজার লোকে চিলির লোকে'রা কারফিউ ভেঙে রাজপথে! আহা! কবি'র এক জীবন!
লেখা সুন্দর হইছে ভাই। কেমন আছেন?
শাওন,
ভালো আছি। এ বইটা সদ্য খুঁজে পাওয়া। একটু একটু করে অনুবাদ করছি। তুমি কেমন? অনেকদিন এদিকে দেখিনা।
নেরুদা একটা মিথ। তাই না?
আহা নেরুদা। আহা সেই সব সৌভাগ্যবানদের ঈর্ষনীয় স্মৃতিসম্ভার যা বস্তুতই চিরন্তন এক সম্পদ।
অমন এক বিষয়ের কথা টেনে নেয় বিপ্লবের বেগবান স্রোতের মতোন। অনুবাদটি দেখামাত্রই উল্লসিত হয়েছি। পাঠে সেই সব সোনালী মানুষ আর সখ্যতার সোপান ডিংগিয়েছি ধীর ও একাগ্র অগ্রসরমানতায়।
মুগ্ধতার রেশ শুরু থেকে শেষ।
সেই সাথে দুটো পর্যবেক্ষণ :
এক। বাক্যগুলোকে মূল অনুবাদের দৈর্ঘ্যে না রেখে ভেংগে ছোট করে ফেললে আরো সুখপাঠ্য হবে।
দুই। কোথাও কোথাও মূল লেখার আংগিককে ব্যহত না করে কথাগুলোকে বাংলার প্রতিপাদ্যে আবেগ ও আংগিকে ঢেলে সাজিয়ে নিতে হবে।
আস্বাদনের তৃপ্তি তাতে পাঠক পাবে বেশী।
জানিনা ঠিক আমার ভাবনাগুলোকে কতোটা বোঝাতে পেরেছি !
খুব ইচ্ছে হচ্ছে পুরোটা এখানে ধাপে ধাপে পড়বার সুযোগ পেতে।
আবারও মুগ্ধতার স্বীকারোক্তি। (সম্পাদিত)
লুৎফুল ভাই,
পর্যবেক্ষণগুলো দুর্দান্ত।
তবে এমন করে লেখাটা ইচ্ছাকৃতই। পুরনো রেশটাকে, নস্টালজিয়াটাকে একটু ধরে রাখা। অনেকটা সেপিয়া টোনের মতন।
অশেষ ধন্যবাদ!
ডক্টর নূপুর কান্তি দাস, যথাযথ অনুমতি নেয়া আছে তো :-/
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
মোস্তাফিজ ভাই,
দু:খিত কাজের প্রচণ্ড চাপের কারণে আসতে পারিনি। আপনার প্রশ্নটি খুবই প্রাসঙ্গিক, তাই সবার আগে আপনাকে উত্তর দিচ্ছি। অন্যান্য মন্তব্যে হয়ত আজ কাজ শেষে ফিরব। প্রথম কথা -- আমার জানা ছিলনা, ব্লগে এই অনুবাদটুকু প্রকাশ করার জন্যে পুর্বানুমতির প্রয়োজন আছে কি না। সৎভাবে বলতে গেলে সিরিয়াসলি নেইনি। ইন্টারনেট ঘেঁটে (আমার অনুমতি না থাকার পক্ষে) এটা পেলাম।
প্রশ্ন : I want to translate interesting books into my language. Do I need any kind of permission from the author or from the publisher?
একটি উত্তর: If you're translating them privately for private use (that is, not publishing or publicising them), then you don't need permission.
However, you will need permission from the copyright holder (either the author or the publisher) if you intend to publish or publicise the translation. Without getting prior permission, you will be in breach of the copyright and the foreign-language rights of the work. You will become liable in civil lawsuit and criminal prosecution.
If you're translating a short excerpt from the work and publish it, you generally won't need prior permission even if you publish that translated excerpt. This is because such acts will come under the general doctrine of fair use and critique. However, you must attribute the source of the original content (i.e. author's name, title of work, publication year, etc).
It would also be a good idea to indicate somewhere in your piece that
you produced the translation yourself
in order to be clear that you didn't take a translation from somewhere.
https://www.quora.com/I-want-to-translate-interesting-books-into-my-language-Do-I-need-any-kind-of-permission-from-the-author-or-from-the-publisher
আরো কয়েকটি উত্তর আছে। দেখতে পারেন, ইন্টারেস্টিং লাগতে পারে। আপনার যদি কিছু জানা থাকে, শেয়ার করুন প্লিজ।
মোটাদাগে আমি মনে করি, যে কোন অরিজিনাল কাজে হাত দেয়ার জন্য অনুমতি নেয়াটা সবথেকে ভালো কাজ হবে। সেটা না করে, যত তুচ্ছই হোক, কপিরাইট লংঘন হয়েছে। ধরুন, আমার একটি লেখা যদি রুশ বা ফরাসীতে কেউ অনুবাদ করতে চাইত, আমি অনুমতি নিল কি নিল না তা নিয়ে খুব সিরিয়াস হতাম না --- কিন্তু যদি একটা ইমেইল ঠুকে দিয়ে জানাত তাহলে খুব খুশি হতাম এবং সানন্দে সায় দিতাম, অনুবাদকেরও ভালো লাগত।
আবার, অনেক ধন্যবাদ। (সম্পাদিত)
তোমাকে বেশ খাটিয়ে নিলাম নূপুর। তবে তাতে আমাদের অনেক কিছু জানা হল। অলপোয়েট্রির এক বন্ধুর একটা কবিতা ভাল লাগায় অনুবাদ করে সিসিবিতে প্রকাশ করতে চেয়েছিলাম। তাকে বার্তা পাঠালাম। সে বললো আপত্তি আছে এবং আনফ্রেন্ড করে দিল। বোঝো ব্যাপারটা 🙁
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
🙁 🙁
এ কেমুন কতা।
সে বিপরীত লিঙ্গের হওয়ায় কিঞ্চিত আহত হয়েছি বৎস 😛
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
একমত।
নেরুদা পাঠ সমসময়ই দারুণ। তাকে জানা বোঝা, সেই সময়টাকে জানা। ধন্যবাদ নূপুর।
"আর এসবের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে বারংবার লাগামছাড়া হাসিতে যেমন মেতে উঠছিলাম, তেমনি চকিত বিস্বাদময়তায়ও আক্রান্ত হচ্ছিলাম যার প্রতিকার হয়ে উঠেছিল হুইস্কি,বরফ আর অশ্রু।"
ভাবি, কী অদ্ভূত!
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
সানা ভাই,
অনেক অনেক ধন্যবাদ। নেরুদাকে পড়বার সুযোগ হয়েছিল অনেক ছোটবেলায় --- কিন্তু বুঝতে শুরু করলাম এই সেদিন যেন।
তোমার লেখা পড়ে এল পোস্টিনোঃ দা পোস্টম্যান মুভিটার কথা মনেপড়ে গেল, নূপুর :boss:
নেরুদাকে উত্তপ্ত চিলি থেকে নির্বাসনে পাঠানো হলো ইটালিয়ান পেনিনসুলাতে। কবির ভক্তদের থেকে এত চিঠিপত্তর আসতো যে তাঁর জন্য একজন ব্যক্তিগত পোস্টম্যান নিয়োগ করা হলো সেখানে। পোস্টম্যান মারিওর সাথে এক সময়ে কবির খুব বন্ধুত্ব হয় এবং কবির পরামর্শমত কথামালা সাজিয়ে প্রেমিকাকে কাছে পায় সে।
কবির সাহচর্যে এসে নতুন মারিওর জন্ম হয়।
জমজমাট সিসিবি দেখতে দারুণ লাগছে, নূপুর। এখন আর নিজের লেখালেখির কথা ভাবতে হয়না। মন্তব্য করতেই ভাল লাগছে বরং। তোমার এই অনুবাদের পর আরো অনুবাদ পড়তে চাইতেই পারি; কি বলো?
ঐ
এমন মানব জনম, আর কি হবে? মন যা কর, ত্বরায় কর এ ভবে...
আপা,
Il postino পড়েছি, দেখেছি। কবিতাগুলো সেদিনো শুনছিলাম মুগ্ধ হয়ে।
এ বইটির আরো কিছু অধ্যায় অনুবাদের ইচ্ছে আছে।
দারুন লাগলো অনুবাদটুকু।
নেরুদার কবিতা খুব বেশি পড়া হয়নি যদিও, যেটুকু পড়েছি মনে দাগ কেটেছে।
এমন এমন শব্দের ব্যবহার বা দৃশ্যের বর্ননা প্রতিবারই সেখানে পেয়েছি, যা নেরুদা না পড়লে জানাই হতো না।
তাই নেরুদার কিছু বা নেরুদাকে নিয়ে কিছু পেলেই আমি গোগ্রাসে গিলি। সবই যে সহজ পাচ্য হয়, তা না, তবুও গিলি।
বলা যায় গিলতে বাধ্য হই।
এটাও না গিলে উপায় থাকলো না।
তবে এটা মোটেও দুষপাচ্য ছিল না
"অতি সহজ পাচ্য" বললেও কম বলা হবে!!!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
বলেন কি পারভেজ ভাই, ভাষা কিছুটা দুরূহ হয়ে গেল? 🙂
নেরুদার জীবনটাই যেন একটা দুরন্ত কবিতা।
একে বারে পারফেক্ট ছিল...
খুবই ভাল লেগেছে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
"একজন একটি দৃশ্য হাজির করতাম আর অন্যজনের হাতে থাকত খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার আতশকাঁচ । এভাবেই আমাদের জীবনকে শুধু পেছন ফিরে দেখা হচ্ছিলোনা, এর সঙ্গে জড়িয়ে ছিল অনেক প্রিয় বন্ধুদের জীবনও, যাদের অনেকেই তখন মৃত।"
"তরুণ বয়সে, আমাদের সবার কাছেই জীবনের উৎস এবং কারণ ছিল ভালবাসা – পাগলের মতন তার পেছনে ছুটে বেড়িয়েছি প্রত্যেকে। বাস্তব জগত থেকে পালিয়ে পাবলো বারবার ভালবাসার আশ্রয়ে শান্তি খুঁজে পেতে চেয়েছে, আর প্রতিবার হৃদয়কে বিদীর্ণ করে সেই নির্মম জগত তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।"
"এভাবে একাকিত্ব থেকে বেরিয়ে আসতে গিয়ে সে যেন আমাদের উপস্থিতিতেই আরো অনেক বেশি নি:সঙ্গ হয়ে পড়ত। অথচ বন্ধুদের প্রতি তার নি:সীম টান ছিল, কেননা আমাদের সঙ্গ পেয়েই সে একটু একটু করে পুনরুজ্জীবিত হয়ে উঠতে পারত আর আনন্দে উদ্বেল হত।"
... চমৎকার লাগলো পুরো লেখাটা পড়তে। আর উদ্ধৃতিগুলো একটু বেশী ভালো লেগেছে।
অনেক ধন্যবাদ খায়রুল ভাই!
এ বইয়ের আরো কিছু অধ্যায় অনুবাদ করার ইচ্ছে আছে।
:thumbup: