পাঠ প্রচেষ্টা : এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি

এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি – ১
———————–
সৈয়দ শামসুল হক

বারান্দায় বসে আছি আমরা। রাত ১১-৩০।
ছাইদান রাখো না ঘরে, তাই পিরীচ
দিয়েছিলে। ছাই উড়ছে মৃত জোনাকির মতো ।
লোকে যা জানে না, মেলে ধরছি প্রণয়ের ক্ষত;
যেন তুমি চিকিৎসক জোছ্‌নার ক্লিনিকে আজ, তোমার সমুখে।
থামের অন্ধকারে, হাতের চাঁদনামা চিবুকে
কি সাবধানে ধারণ করে আছো মমতা
যা তোমার। কিন্তু অক্ষমতা
যেন পাথর, তা দিয়ে দেয়াল উঠছে প্রতিমুহূর্তে
আমি আর চাই না পুড়তে।

তুমি তো সোনার মতো। তোমাকে বললাম,
‘কি আমার নাম?’
‘কেন, তা জানোনা? তুমি নিজেই বলো।’
এত কষ্টে চোখে জলও
আসে না। বললাম, আমি দুঃখ, শোক।’
তুমি মাথা নাড়ো। বললাম, ‘আমি সেই লোক
যে বুনেছিল গাছ, যার উপহার বিষ।’
তুমি মাথা নাড়লে তবু। চাঁদের বার্ণিশ
দাঁতে হাসলে তুমি। ‘চেষ্টা করে দ্যাখো না আবার।’
‘পরাজিত, রিক্ত, নষ্ট, প্রতারিত, হাহাকার,
ফসিল, কামুক, বুঝিনা তো কি নাম আমার।’

জঙ্ঘার নীচে গুটিয়ে সনখ সুন্দর দুটো পা,
বাম হাতে খুলে দিলে খোঁপা —
যেন এক জাহাজডুবির পর নোনাজলে ভাসছি সারারাত,
সুদীর্ঘ চুলের রশি ছুঁড়ে দিলে তুমি অকস্মাৎ
তারপর দু’চোখে সাগর ডেকে বললে, ‘অ-বি-
রাম তোমার জন্ম হয়। তুমি কবি।।’

৩,৭৫২ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “পাঠ প্রচেষ্টা : এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি”

  1. অরূপ (৮১-৮৭)

    :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
    অতিরিক্ত ভালো হইছে নুপুর ...
    প্রথম অনুভূতি "স্পীচলেস " ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক, কন্ঠ সব মিলিয়ে দারুন।
    তোমার আগের পাঠগুলিতে সামান্য তাড়াহুড়ার ব্যাপার ছিল কিছু একটা।
    এটা সেই সামান্য থেকেও মুক্ত।
    সব মিলিয়ে " এক আশ্চর্য সঙ্গমের স্মৃতি " :thumbup:


    নিজে কানা পথ চেনে না
    পরকে ডাকে বার বার

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      আব্দুল কাফি,
      মন্তব্যের জন্যে অশেষ ধন্যবাদ। সৈয়দ শামসুল হকের লেখা এটা -- আমার তো নয়, তাই এ 'ভালো না হওয়ার' দায় আমার নয়। 🙂 🙂
      এবারে একটু ভাবুন তো, ছাইও তো উড়ে, বাতাসের ধাক্কায় --- তাই বলে কি তার প্রাণ আছে? এখানে মৃতপ্রায় স্ফুলিঙ্গ নিয়ে সিগারেট থেকে যে ছাই উড়ে বেড়াচ্ছে এ দুজন মানব মানবীর আশেপাশে, কবি তাকেই আঁকতে চেয়েছেন। আসলে ছাই ওড়াটা বড় কথা নয় --- কথা হচ্ছে, মুখোমুখি দুজন মানুষের আপাতস্থিরতার আড়ালের চাঞ্চল্য আর ভাবনার বিক্ষিপ্ততাকে বোঝাতে এ দৃশ্যটি এনেছেন। এখানে দেখবেন আর অনেক অবাস্তব ছবি আছে --- যেমন নোনাজলে চুলের রশি ছুঁড়ে দিয়ে কবিকে জাহাজডুবি থেকে উদ্ধার করার দৃশ্যটির কথাই ধরুন।

      জবাব দিন
  2. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    বছর পনের আগে হোয়াইট অলিয়েনডার নামের একটা উপন্যাসের মাঝে আটকে গেলাম হঠাৎ করেই। ওপরাহ উইনফ্রির বুক ক্লাবের এই বইটি নানা কারণে আমার পছন্দের। হোয়াইট অলিয়েনডারের পাতায় পাতায় আমি অলিখিত কবিতার সুরভি পাই। জেনেট ফিচের এই বইটির কাহিনী অবলম্বনে হলিউডে হোয়াইট অলিয়েনডার নামে একখানা মুভিও পরে তৈরি হয়। তোমার পাঠ শুনে বইটি থেকে কোট করবার লোভ সংবরণ করতে পারলাম না, নূপুর!

    'His voice was cloves and nightingales, it took us to spice markets in the Celebs, we drifted with him on a houseboat beyond the Coral Sea. We were like cobras following a reed flute'

    :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. সাবিনা চৌধুরী (৮৩-৮৮)

    🙂 🙂 🙂 🙂

    লান্চ খেতে খেতে আবারও শুনছিলাম তোমার পাঠ। মেহেদি হাসানের গজল ফিরে ফিরে আসছে মনে। অল আই ক্যান সে, তেরি হার চাপসে জালতে হ্যায় খায়ালু ম্যায় চেরাগ!

    জবাব দিন
  4. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    আচ্ছা তোমার স্টুডিওতে এসে কথা বললে, পাঠ করলে ... এমনই মন্ত্রমুগ্ধতার মায়াজাল কথা ও কাব্যের বিস্তারে ভাঁজে ভাঁজে মিলে যাবে বুঝি !!

    আমার একটা কবিতা সিরিজ আছে ... সেই কবে থেকে ভাবছি দেবো ফেসবুকে বা কোনো ব্লগে ।
    প্রতিবারই ভাবনাটা আঁটকে যায় এই চিন্তায় যে সাথে পাঠ জুড়ে না দিলে ওটার পূর্ণতৃপ্তি পাঠকের কাছে যথার্থ সাজানো হবে না উপস্থাপনের রেকাবিতে ।

    যখনই পড়ি ... বন্ধুরা বলে আবার পড় ... যখনই তা ধারন করতে চাই ... শুনি নিজের আওয়াজ নিজে তখুনি সব তুলে রাখি দেরাজে ।
    ভাবি বন্ধুরা কতোটাই উদার ...

    সবশেষে তাই কেবলি মনে হচ্ছে এখন তোমার স্টুডিওর কথা ...

    অনেকবার শোনবার মতো ... বার বার শোনবার মতো পাঠ ... পেতে চাই অবিরত ... (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)

    জবাব দিন
    • নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

      স্টুডিও! হা হা লুৎফুল ভাই। স্টুডিও বলতে তো একটা রুমে দরজা বন্ধ করে সেলফোন আর কবিতার বই দুহাতে জার্গলারি করতে করতে পড়া। মেয়েকেও সঙ্গে রাখা ক্রিটিক হিসেবে -- আসল উদ্দেশ্য, তার আওয়াজটাকে বন্ধ রাখা। 🙂 🙂

      এই সেদিন কি হল শুনুন --- আমাকে একটা প্রেমের কবিতা আওড়াতে শুনে জিজ্ঞেস করলো, Daddy, is he jelaous? Did he make it all up? He sounds upset. সাড়ে পাঁচ বছরের বাচ্চার এহেন প্রশ্ন শুনে আমি বিষম জোরে বিষম খেলাম। তারপর ভাবলাম রিহার্সেল তাহলে খারাপ হচ্ছেনা। ইমোশান ঠিকঠাক মতনই আসছে। :)) :))

      আর আপনার কবিতা সিরিজ পড়তে শুরু করে দেন প্লিজ! কবির স্বকন্ঠে কবিতা শোনার আমেজই আলাদা।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।