দি গ্রেট গ্যাটসবি: একটি উপন্যাস,একটি চলচ্চিত্র

The Great Gatsby. মুভিটা আমার কাছে খুব স্পেশাল। অনেকগুলো  কারন আছে এর পিছনে।এই সেমিস্টারে  ইংলিশ ক্লাসে The Great Gatsby নভেল টা টেক্সট ছিল।যত সুন্দর বই ই হোক না কেন ,পাঠ্যবই হয়ে গেলে কোনো জিনিসই ভালো লাগে না! কিন্তু কোনো এক অদ্ভুত কারনে খুব আগ্রহের সাথে এই বইটা পড়ি এবং তার চেয়ে দ্বিগুন উত্সাহে এর জন্য  পেপার লেখা শুরু করি। উপন্যাস টি  লিখেছেন স্কট ফিটজেরাল্ড। প্রকাশিত হয় ১৯২৫ সালে। নভেল  টাকে ইংরেজি সাহিত্যের একটি ক্লাসিক বই হিসেবে গণ্য করা হয়।১৯২৬ সালে প্রথম এই উপন্যাস টি চলচিত্রের পর্দায় এসেছিল। হার্বার্ট ব্রেননের পরিচালনায়।নির্বাক চলচিত্র। দুর্ভাগ্যবশত সেই মুভির কোনো প্রিন্ট পরে উদ্ধার করা যায় নি। ফলে সেটিকে একটা হারানো কাজ বা লস্ট ফিল্ম  হিসেবেই ধরা হয়। এরপর ১৯৪৯ সালে এলিয়ট নাগেন্ট এর পরিচালনায় আবার হলিউডের পর্দায় ফিরে আসে দি গ্রেট গ্যাটসবি। গ্যাটসবি চরিত্রে ছিলেন এলান ল্যাড। ১৯৭৪ সালে বইটা নিয়ে আরেকটা মুভি বানানো হয়েছিল।জ্যাক নিকোলসন, এলান বেটি, স্টিভ ম্যাককুইন এর মতো অভিনেতা কে কেন্দ্রীয় চরিত্রে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিল। কিন্তু সবাইকে টেক্কা দিয়ে সেবার জ্যাক ক্লেটন এর পরিচালনায়  রবার্ট রেডফোর্ড ই  অভিনয় করেছিলেন কেন্দ্রীয় চরিত্রে। রবার্ট রেডফোর্ড কে নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তার মত শক্তিমান অভিনেতার পক্ষেই সম্ভব ছিল গ্যাটসবি র মতো একটি কালজয়ী চরিত্র কে  সফল ভাবে ফুটিয়ে তোলা। মুভিটা দেখে আমার সেই ধারণা একদম সঠিক বলে প্রতীয়মান হয়। এরপর কিছুদিন আগে যখন শুনলাম যে নতুন করে  আবার পর্দায় হাজির হচ্ছে গ্যাটসবি ,সেদিন থেকেই  এই নতুন ভার্সন টার জন্য তীর্থের কাকের মত অপেক্ষা করছিলাম।

 

২০১৩ সাল ! এবার ডিরেক্টর বাজ ল্যুরম্যান। এর আগে রোমিও – জুলিয়েট ,অস্ট্রেলিয়া  ও মউলীন রোগের মতো মুভি পরিচালনা করেছেন তিনি।কেন্দ্রীয় চরিত্রে লিওনার্দ ডি ক্যাপ্রিও ! আমার জন্য এটুকুই যথেষ্ট ছিল।কখনোই অস্কার না জেতা  অভিনেতাদের  মাঝে  সর্বকালের সেরা  এই অভিনেতার নতুন মুভি মিস দেয়ার কোনো কারনই  দেখিনি । মুভিটা বেশ লম্বা। ২ ঘন্টা ২০ মিনিট।  মূল উপজীব্য বিষয় হলো রোরিং টুয়েন্টির সময় আমেরিকান পার্টি ও এলকোহল সংস্কৃতি এবং উচ্চবিত্ত সমাজে এর প্রভাব। ১৯২০ থেকে ১৯৩০ এই দশক টাকে বলা হয় রোরিং টুয়েন্টি। এই সময় চারিদিকে ছিল বিলাসিতা ও অদ্ভূত এক প্রতিযোগিতা। একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতা।সামাজিক কলুষতা ও বিশ্বাসঘাতকতার সেই সময়ে এক রহস্যময় মানুষের সবকিছু নতুন করে শুরু করার আকুতি আমাদের স্পর্শ করে। ভাবনার খোরাক যোগায়।   নিক ক্যারাওয়ে  মুভির ন্যারেটর। নিউ ইয়র্ক এর এক উচ্চবিলাসী বন্ড বিজনেসম্যান। ডেইজি তার কাজিন, টম বুকানন ডেইজির স্বামী,মার্টল টমের রক্ষিতা আর গ্যাটসবি একজন যুদ্ধ ফেরত বিশাল বিত্তশালী এক রহস্যময় লোক। সে আবার লং আইল্যান্ডে নিকেরই প্রতিবেশী।এ হলো তাদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়।যদিও গল্পের ধারাবাহিকতায় এই ক্ষুদ্র পরিচয় ক্রমশই আমাদের কাছে গৌণ হয়ে যায়।একেকটি চরিত্র যেন আমাদের নিজেদের রহস্যময় মনের একেকটা সত্তা হিসেবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। চরিত্র গুলোর মাঝে আমরা প্রতিনিয়ত খোজা শুরু করি নিজেদের ও চারপাশের মানুষ দের  ! সম্পর্কের টানাপোড়েন  কাহিনীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।কৈশোরের প্রেমের ধারাবাহিকতায়  গ্যাটসবি টমের স্ত্রী ডেইজির প্রতি একরকমের মোহগ্রস্থ হয়ে যায়। তাকে আকৃস্ট করার জন্য একের পর এক পার্টি দিতে থাকে। ঘটনাক্রমে নিকের সাথে গ্যাটসবির পরিচয় হয়। নিক ডেইজি র সাথে গ্যাটসবির দেখা করানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে রাজি হয়। এরপর আস্তে আস্তে কাহিনীর অনেক পরিবর্তন আসতে থাকে। আমরা অবাক হয়ে চরিত্র গুলোর এই পট পরিবর্তন দেখতে থাকি। ভাবতে থাকি ,আরে এরা  দেখি আমাদের চারপাশেরই  চেনা জানা মানুষ। অর্থ, বিলাসিতা যাদের সহজাত রিপু গুলোকে ঢেকে রাখতে পারেনা ।

 

মুভিটার মিউজিক ও ব্যাক গ্রাউন্ড স্কোর অসাধারণ। লানা ডেল রের গাওয়া ইয়ং এন্ড বিউটিফুল গানটা মুভিতে অসাধারণ সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে।সিনেমাটোগ্রাফি আমার কাছে ভালো লেগেছে। দেখেই বোঝা গেছে এটা একটা সত্যিকারের বিগ বাজেটের মুভি। প্রথম দিকের পার্টি সিন গুলো এর চেয়ে ভালো করা সম্ভব ছিল না। নিক ক্যারাওয়ে চরিত্রে টবি ম্যাগুইরের অভিনয় আমার ভালো লেগেছে। চরিত্রের গভীরতা তার অভিনয়ে স্পষ্ট ছিল। দেখে বেশ ভালো লেগেছে যে টবি ম্যাগুইরে অবশেষে স্পাইডারম্যান এর প্রভাব থেকে বের হতে পেরেছেন । ডেইজি চরিত্রে ছিলেন ক্যারি মুলিগান। অভিনয় কেমন করেছেন সেই তাত্ত্বিক আলাপে যাব না। তবে এটা স্বীকার করতে কোনো কুন্ঠা নেই যে মুভিতে তাকে অসম্ভব ফ্রেশ ও সুন্দর লেগেছে।  আমি ক্যারি মুলিগানের অন্য কোনো মুভি এর আগে দেখিনি। তবে এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই যে ডেইজি চরিত্রের জন্য অসম্ভব কিউট এবং ফ্রেশ মুখের কাউকে দরকার ছিল।আমার কাছে মনে হয়েছে ডিরেক্টর তাকে নিয়ে যে বাজিটি খেলেছিলেন তা সফল হয়েছে। কেন্দ্রীয় চরিত্রে ডি ক্যাপ্রিও। প্রথমেই বলে রাখি যে মুভিটা দেখার সময় আমি কিছুটা বায়াসড ছিলাম। মনের অজান্তেই বারবার উপন্যাস আর আগের ১৯৭৪ এর মুভিটার সাথে তুলনা করছিলাম। সেই কারনেই অনিচ্ছাসত্তেও  রবার্ট রেডফোর্ড এর সাথে ডি ক্যাপ্রিও এর একটা তুলনা চলে আসছিল বারবার। এক্ষেত্রে  আমার অভিমত হলো ডি ক্যাপ্রিও রেডফোর্ডের থেকে আলাদা ভাবে চরিত্র টি তে অভিনয় করেছেন। বইতে বেশ কিছু সিম্বল ব্যবহার করেছিলেন লেখক।একেকটা সিম্বল গ্যাটসবি তথা একেকজন  স্বাভাবিক মানুষের জীবনের বিভিন্ন অধ্যায় ও লক্ষ কে তুলে ধরে। পরিচালক বাজ লুরম্যান সেই সিম্বল গুলোকে ডি ক্যাপ্রিও র চরিত্রের সাথে মিশিয়ে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন। এটা দেখে ভালো লেগেছে যে ডিরেক্টর এই সিম্বল গুলোর মতো ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়গুলো কে উপেক্ষা করেননি। ডি ক্যাপ্রিও মুভিতে  খারাপ অভিনয় করেছেন এটা বলার কোনো অবকাশ তিনি রাখেননি, তবে আমার অভিমত হলো কোনো কোনো ক্ষেত্রে তার অভিনয় আমার কাছে রিপিটিটিভ লেগেছে। কিছু কিছু এক্সপ্রেশন ইনসেপসন, শাটার আইল্যান্ডে এ তার অভিনয়ের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল।সেই চোখ কুচকে ছোট করে ,ফিসফিস করে ডায়লগ ডেলিভারি গুলোর কারনে কেন জানি গ্যাটসবি কে বারবার  শাটার আইল্যান্ড এর টেডি ড্যানিয়েল কিংবা ইনসেপশনের কব এর সাথে গুলিয়ে ফেলছিলাম। অসম্ভব ভালো লেগেছে টম বুকানন চরিত্রে জোয়েল এডগারটনের অভিনয়। কখনো কখনো মনে হচ্ছিল তার অভিনয়ে তিনি  ডি ক্যাপ্রিও কেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তার চরিত্র রূপায়ণ ছিলো এক কথায় অসাধারণ। পার্শ্ব চরিত্রে আমার মতে এ বছর এই অভিনয়ের জন্য তার একটা অস্কার নমিনেশন প্রাপ্য থাকলো । অমিতাভ বচ্চনের চরিত্রটি ছিল, খুবই ছোট। সেটা নিয়ে বাড়তি আলোচনার কোনো দরকার আছে বলে আমি মনে করি না।

 

বেশির ভাগ আমেরিকান মানুষই বইটা তাদের হাইস্কুল এ পড়েছেন। তাই সবাই যাচ্ছেন মুভিটা দেখতে। বের হচ্ছেন মিশ্র অনুভূতি নিয়ে। কারো কাছে বিরক্তিকর লেগেছে, আবার কারো কাছে অসম্ভব ভালো লেগেছে। আমার কাছে বেশ  ভালোই  লেগেছে। এই ভালো লাগার পিছনে বেশ কিছু ব্যক্তিগত কারণ ছিল, তাই গ্যারান্টি দিতে পারছি না যে সবার ভালো লাগবে। তবে সবাইকে সাজেস্ট করছি মুভিটা দেখার জন্য । ভালো প্রিন্টে খুব মনোযোগ দিয়ে মুভিটা দেখতে হবে। আলাদা একটা এক্সপেরিয়েন্স হবে। এটা আয়রনম্যান, ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস এর  মতো কোনো হাওয়া মিঠাই টাইপ মুভি না যে দেখলাম, ভালো লাগলো আর উড়ে চলে গেল। মুভিটা দেখতে হবে, হজম করতে হবে। ভালো লাগার সমূহ সম্ভবনা আছে। আর মুভিটা সমালোচক দের কাছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। রোটেন টমেটো র সাথে আমি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই একমত পোষণ করলেও এই মুভির ব্যাপারে আমার মনে হয়েছে রেটিং টা অনেক কম হয়ে গেছে। আসলে এ ব্যাপারে কথা বলে লাভ নেই। আমাদের সবারই দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ আলাদা।কখন যে কোন জিনিস কার কাছে ভালো লেগে যায় আর কি যে খারাপ লেগে যায় তার কোনো ঠিক ঠাকানা নেই। তবে এটুকু অন্তত বলতে পারি, সময় নিয়ে পারফেক্ট মুডে মুভিটা দেখতে বসলে অবশ্যই মুভিটি দর্শকদের হৃদয়ে দাগ কাটবে।

৩,০৯৬ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “দি গ্রেট গ্যাটসবি: একটি উপন্যাস,একটি চলচ্চিত্র”

  1. মুহাম্মদ (৯৯-০৫)

    আমি সিনেমাটা এখনও দেখিনি, আসলে গ্যাটসবি নিয়ে হওয়া কোন সিনেমাই দেখিনি। টিভিতে কাউকে বলতে শুনেছিলাম, পরিচালকের চেয়ে ডি-ক্যাপ্রিও গ্যাটসবিকে বেশি ভাল বুঝেছেন, সেটা অবশ্য পরিচালককে পচানোর জন্যই মনে হয়। তোমার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে ডিক্যাপ্রিওর অভিনয়ও আহামরি কিছু হয়নি।

    টিভিতে শোনা আরেকটা অনুযোগ ছিল: উপন্যাসের খুব সূক্ষ্ণ ও সংবেদনশীল বিষয়গুলোকে ব্লকবাস্টার সিনেমার মত অতি-জাঁকজমকের সাথে জাহির করা হয়েছে যা বেশ দৃষ্টকটু। উদাহরণ হিসেবে "সবুজ আলো"-টার কথা বলা হয়েছিল। উপন্যাসের গ্যাটসবির সবুজ আলোকে চলচ্চিত্রের জগতে অনেক সময় সিটিজেন কেইন-এ চার্লস কেইনের "রোজবাড" নামাঙ্কিত স্কেটবোর্ড-টির সাথে তুলনা করা হয়। সিটিজেন কেইনে সেই স্কেটবোর্ড কিভাবে দেখানো হয়েছিল আর এই সিনেমায় সবুজ আলো কিভাবে দেখানো হয়েছে- এই তুলনা টেনে টিভির উক্ত "বোদ্ধা" সিনেমাটির প্রায় তীব্র সমালোচনা করেছিলেন।

    তবে তোমার রিভিউ পড়ে মনে হচ্ছে, উপন্যাসটি পড়েছে এমন কারো সিনেমাটি দেখে ভাল লাগতেও পারে। হলে গিয়ে দেখব কিনা সেটা বুঝতে পারছি না, এখানে থ্রিডি তে সিনেমাটা চলছে এখনও। তোমার কি মনে হয় ১১ ইউরো খরচ করে এটা দেখতে যাওয়া ঠিক হবে? নাকি ল্যাপটপেই কাজ সেরে ফেলবো?

    জবাব দিন
    • নাফিস (২০০৪-১০)

      উপন্যাস টা পড়ার সময় সিম্বল গুলো আমি যেভাবে চিন্তা করেছিলাম, মুভিতে আমি তার বেশ কাছাকাছি পেয়েছি। ইকেনলবার্গের চোখ, সবুজ আলো সহ আরো অনেক কিছু। আসলে পুরো উপন্যাস টা ই একটা সিম্বল , প্রত্যেক টা চরিত্রই একেকটা বিশেষ বার্তা বহন করে। এরকম একটা নভেল কে নিয়ে নিয়ার পারফেক্ট মুভি বানানো প্রায় অসম্ভব। কারন নভেল টার আরেকটা মূল বিষয় হলো আমেরিকান ড্রিম যা কিনা একেক মানুষের কাছে একেক ভাবে ধরা দেয়। সিটিজেন কেন আমি দেখিনি। আপনার কমেন্ট পড়ে দেখার ইচ্ছে জাগলো। তখন হয়তো তুলনাটা করতে পারবো।

      মুভিটা সমালোচক দের কাছে বেশ নেগেটিভ রিভিউ পেয়েছে। অনেকে অনেক কারনের কথা বলছে। তবুও আমি একটা ঝুকি নিয়ে ফেললাম। মানে আপনাকে থিয়েটারে দেখার সাজেশন টা দিয়ে দিলাম আরকি ! 😛
      গ্যারান্টি দিতে পারছি না যে , ভালো লাগবে কিনা। তবুও দেখতে পারেন। পার্সোনালি আমার কাছে, মুভিটার টোন টা ভালো লেগেছে।

      জবাব দিন
  2. সামিউল(২০০৪-১০)

    সিনেমাটা দেখি নাই। দেখতে হবে। ভাল লিখসিস।

    আরেকটা কথা, তুই একটা মুভি দেখে এত বুঝিস ক্যামনে ভাই??? আমি তো খালি এমনি এমনি দেখি......।


    ... কে হায় হৃদয় খুঁড়ে বেদনা জাগাতে ভালবাসে!

    জবাব দিন
  3. তাওসীফ হামীম (০২-০৬)

    এখনো দেখিনাই। মিসাইলাম বুঝতেছি। দুই ধরনের মন্তব্য পেয়ে বুঝতে সুবিধা হচ্ছে।
    লেখার জন্য ধন্যবাদ। সুন্দর লেখা হইসে


    চাঁদ ও আকাশের মতো আমরাও মিশে গিয়েছিলাম সবুজ গহীন অরণ্যে।

    জবাব দিন
  4. নাজমুল (০২-০৮)

    আমি খুব রিস্ক নিয়ে মুভিটা দেখতে গেসি, আমার সাথে ছিল আমাদের কলেজের মামুন আর সিলেট এর পাভেল। তাদের ইচ্ছা ফাস্ট এন্ড ফিউরিয়াস দেখবে। আমি তাদের বুঝালাম অনেকটা জোড় করে এবং নিজের রিস্কে নিয়ে গেলাম। হলে ঢুকেই মন খারাপ হয়ে গেল। বলতে গেলে পুরো খালি। ছবি শুরু হল। তিন জন ব্যাচমেট একসাথে থাকা মানে বোঝো জোক্স কি রকম হয়। এই মুভির সাথে আশেপাশের জোক্স যায়না। উইল আই এম এর ব্যাং ব্যাং আর লিটল পার্টি নেভার কিল এনিবডি শুনে তো আমরা হলেই নাচানাচি শুরু করসি। খালি হল, টাকা উসুল করে নাও, কিন্তু আস্তে আস্তে কাহিনীর ভিতর যখন ঢুকে গেলাম , তখন আর খই চাবানোর কথাও ভুলে গেলাম। মুভি দেখা শেষ হল অদ্ভুত এক অনুভূতি নিয়ে। আর লানা দেল রের ইয়াং এন্ড বিউটিফুল কানে ভাসতে থাকলো।
    আমার কাছে বেশ ভাল লেগেছে। ভাগ্য ভাল আমি মুভি বোদ্ধা না, না হলে অনেক ত্রুটি চোখে পরতো।
    বাসায় এসে, লানা দেল রের ডিস্কোগ্রাফী ডাউনলোড করলাম আর আই টিউনস থেকে মুভির মিউজিক ট্র্যাক। বোস এর স্পিকার এ গান গুল বেইজ বাড়াই দিয়ে শুনলাম। অসাধারণ
    তোমার রিভিউটাও অসাধারণ হয়েছে।

    জবাব দিন
  5. নাফিস (২০০৪-১০)

    ধন্যবাদ ভাই !
    মুভিটা শেষ করে খুব মন খারাপ হয়ে গেছিলো। কি জানি একটা আছে স্টোরি টাতে .. একদম ভিতরে গিয়ে আঘাত করে। মিউজিক ট্র্যাক টাও অসাধারণ।আর কথাটা ঠিক বলছেন, কিছু মুভি দোষ ত্রুটি উপেক্ষা করে দেখতে হয় ! তা, নাহলে দুনিয়া বিরস হয়ে যাবে !

    জবাব দিন
  6. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    রিভিউ ভাল হইছে। এখনো দেখা হয়নি, তাড়াতাড়ি দেখে ফেলে তারপর এখানে বিস্তারিত বলবো।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  7. রিভিউ চমৎকার তবে কিছু অংশে দ্বিমত পোষন করছি।

    একেকটি চরিত্র যেন আমাদের নিজেদের রহস্যময় মনের একেকটা সত্তা হিসেবে আমাদের কাছে ধরা দেয়। চরিত্র গুলোর মাঝে আমরা প্রতিনিয়ত খোজা শুরু করি নিজেদের ও চারপাশের মানুষ দের!

    পুরো মুভিতে একমাত্র গ্যাটসবি ছাড়া আর কোন চরিত্রকে কি আপনার কাছে “রহস্যময়” মনে হয়েছে? আর মুভির মূল ৪টি চরিত্র এতটাই অস্বাভাবিক যে, আমার চারপাশের মানুষদের মাঝে তাদের খুজঁতে যাওয়া বোকামী হবে।

    সম্পর্কের টানাপোড়েন কাহিনীকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়।

    আমার কাছে তা মনে হয় নি। আমার কাছে মনে হয়েছে ডেইজির প্রতি গ্যাটসবির প্রেমই মুভিকে টেনে নিয়ে গেছে শেষ পর্যন্ত।

    কৈশোরের প্রেমের ধারাবাহিকতায় গ্যাটসবি টমের স্ত্রী ডেইজির প্রতি একরকমের মোহগ্রস্থ হয়ে যায়। তাকে আকৃস্ট করার জন্য একের পর এক পার্টি দিতে থাকে।

    একেবারেই ভুল ধারনা আপনার। মুভিতে দেখা গ্যাটসবির বয়স ৩২। সে হিসেবে ডেইজির সাথে গ্যাটসবির যখন পরিচয় হয়, তখন তার বয়স ছিলো কমপেক্ষ ২৩/২৪। তাছাড়া., যুদ্ধের কুর্দিপরা অবস্থাতেই তার সাথে ডেইজির পরিচয় মুভিতে দেখানো হয়। সুতরাং কোন হিসেবে আপনি এটাকে ”কৈশোরের প্রেম” বলেছেন, আমি জানি না। আর আপনি যেভাবে কথাটা বলেছেন, যার মুভিটা দেখা নেই সে ভাবতে গ্যাটসবির বুঝি ডেউজির সাথে স্রেফ একটা চটুল পরকিয়া ছিলো। তাকে আকৃষ্ট করার চাইতে তার উপস্থিতি কাম্য করাটাই বেশী শ্রেয় শব্দপ্রয়োগ হতো।

    আমরা অবাক হয়ে চরিত্র গুলোর এই পট পরিবর্তন দেখতে থাকি। ভাবতে থাকি ,আরে এরা দেখি আমাদের চারপাশেরই চেনা জানা মানুষ। অর্থ, বিলাসিতা যাদের সহজাত রিপু গুলোকে ঢেকে রাখতে পারেনা

    টম বুচানন ছাড়া পুরো মুভিতে আপনি এই চরিত্রের পরিবর্তন কই পেলেন? তারপর বল্লেন, অর্থ, বিলাসিতা যাদের সহজাত রিপু গুলোকে ঢেকে রাখতে পারেনা - টম বুচানন (হ্যাঁ, উচ্চারন হবে বুচানন। বুকানন নয়।) - এমন চরিত্র আর কয়টা পেয়েছেন বুঝলাম না!

    জবাব দিন
    • নাফিস (২০০৪-১০)

      চারপাশের চরিত্রগুলো অস্বাভাবিক বলেই তো তারা রহস্যময়। রহস্যময়তা আর অস্বাভাবিকতা তো একে অন্যের হাত ধরেই যায়? তাইনা?
      আর দশটা মুভির সাথে এটার পার্থক্য টা ভালো মতন বুঝতে হলে আপানকে উপন্যাস টা পড়তে সাজেস্ট করবো। সাধারণ প্রেম বা সামাজিক দ্বন্দের চেয়ে এই গল্পের একটা মৌলিক পার্থক্য হলো সময় ও কালের প্রভাব। রোরিং টুয়েন্টি এর আমেরিকা কেমন ছিল এটা অনুভব করতে পারলে চরিত্র গুলোর একশন গুলো বুঝতে আরো সুবিধা হয়।

      আর গ্যাটসবি এর প্রেম টা কে আপনি কেন চটুল পরকীয়া বলছেন সেটাও আমার কাছে স্পস্ট নয়.. এই প্রেম টা অনেকাংশেই সিম্বলিক। স্কট ফিটজেরাল্ড মূলত যে বিষয়টার উপর ফোকাস করতে চেয়েছিলেন তা হলো "আমেরিকান ড্রিম" ...

      জবাব দিন
  8. মোকাব্বির (৯৮-০৪)

    একটু নাক গলাই! বেয়াদবী মাফ করবেন। 😀 😀

    ......বুচানন (হ্যাঁ, উচ্চারন হবে বুচানন। বুকানন নয়।)

    কোন নির্ভরযোগ্য সূত্র দিতে পারবেন এই কথার? শুদ্ধ উচ্চারণের হিসাবে বলতে গেলে Buchanan এর উচ্চারণ হয় বিউ-ক্যা-নন /byü-ˈka-nən, bə-/। সেই হিসেবে বুকানন আমাদের দেশী উচ্চারণে চলনসই। "ch" কে "চ" উচ্চারণ করা হয় তবে সেটা অন্য জায়গায়। মার্কিনিরা তাদের ১৫তম প্রেসিডেন্টের নাম (James Buchanan) ভুল উচ্চারণ করবে বলে মনে হয় না! 🙂


    \\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
    অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : নাফিস (২০০৪-১০)

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।