নন্দিনী, হ্যাঁ ঠিক শুনেছেন। মেয়েটাকে কখনোই আমি ডাইসেক্ট করতে পারিনি। একটা মানুষ এতটা মিস্টেরিয়াস কি করে হতে পারে??? আজব নাহ! বলতে পারেন আমি সেই ভারসিটি লাইফ থেকেই তার পিছে ঘুরছি। আসলেই আমি বুঝতাম না যে সে আমাকে পাত্তা দিত নাকি এভয়েড করতো। কখনো সে নিজেই আগ বাড়িয়ে কথা বলতো অথচ ফেইসবুকে মেসেজ দিলে অনেক সময় ২ দিন পরেও সীন করতো না।কেমন যেনো একের ভিতর ২-এরকম ক্যারেক্টার ছিলো। মনে হয় ও নিজেই নিজেকে নিয়ে কনফিউজড থাকতো নয়তো মানুষকে কনফিউজড করে মজা পেতো। থাকেনা এরকম কিছু মানুষ? এদিকে বেচারা আমি তার ১ বছরের সিনিয়র হয়েও তাকে বোঝাবার নানারকম ট্রাই করেছি। শুনেছি মেয়েদের কোনো ছেলে পছন্দ করলে নাকি ১ মেইল দূরে থেকেও সে টের পায় তা। আর আমি তো নন্দিনীর পাশের ক্লাসেই ক্লাস করতাম। সো না বোঝার কোনো কারণ নেই। আবার দেখুন না, এমন মায়াভরা একটা মেয়ের নাকি আবার বয়ফ্রেন্ড ও নেই! শত মিস্ট্রির মাঝে এটাই একমাত্র আশার কথা তাইনা? সেজন্যেই হাল ছাড়িনি। তবে ওর জগত ছিলো সীমাবধ্য। চুপচাপ আসতো, ক্লাস করতো, সিনিয়র দেখলে সালাম দিতো, তারপর চলে যেতো। কি ভাবছেন, আমিও ২ রকম কথা বলে ফেললাম?? আমার সাথে তাহলে কথা বলতো কখন?
আচ্ছা, আমি ছিলাম ভালো ছাত্রদের মাঝে একজন, তাই তার নোটস লাগলেই সে চলে আসতো আমার কাছে। আর কেমন জানি অপরাধীর মতো কন্ঠে নোটস চাইতো। আমি অবশ্য মজাই পেতাম তার কনফিউজড চেহারা দেখে। আমি অবশ্য পারফেক্ট প্রেমিকের মতো আগের থেকেই তার জন্য এক কপি নোটস করে রাখতাম। ও যে আমার নন্দিনী! একদিন হয়েছে কি ও নোটস নিয়ে গেছে ঠিকই কিন্তু মুষল্ধারে বৃষ্টি এসে সব ভিজিয়ে দিয়েছে। বেচারি আমাকে বলতেও পারেনা, পরে আমি নিজেই বুঝে গিয়েছিলাম তাকে লাইব্রেরী তে দেখে। স্ট্রাকচার এক্সাম ছিলো ওদের। ও সাধারণত কখনো লাইব্রেরী যেতো না, আমি যেতাম। তো ওর পরীক্ষার আগে ওকে লাইব্রেরীতে দেখে বুঝে গিয়েছিলাম কাহিনী কিছু একটা আছে। পরে ওকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে সে এমন একটা ইনোসেন্ট লুক দিলো আহহহ! ম্যায় তো গ্য়ায়া!
নন্দিনীর উপর ক্রাশ আমার দিনকে দিন বেড়েই চলেছিলো। আবার যেদিন নবীন বরণে ও মিফতাহ ভাইয়ের চির অধরা গানটা গাইলো সেদিন তো আনি ঠিকই করে ফেলেছিলাম যে নাহ বিয়ে করলে এই মেয়েকেই করবো। এত্ত সুন্দর গান গায় ও তা আগে জানতামনা! আর কেন জানি দিনকে দিন ও আরো সুন্দর আর মায়াবিই হচ্ছিলো কেবল, ঠিক হুমায়ূন আহমেদ স্যারের উপন্যাসের নায়িকাদের মতো, যাকে দেখলে কেবল ভালোবাসতেই ইচ্ছা করে। এভাবে দিন, সপ্তাহ , মাস, বছর কেটে গেলো। আচ্ছা আপনারা কি আমাকে লুচু ভাবছেন? তা কিন্তু মোটেও না। নন্দিনী মুখে কিছু না বললেও আমার আশপাশে থাকার ব্যাপারটা যে সে অপছন্দ করতো না তা কিন্তু আমি বুঝে গিয়েছিলাম। একবার হলো কি আমি টাইফয়েডে পড়ে প্রায় ১০ দিন ক্যাম্পাসে আসিনি। তো পরে এসে শুনি যে আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সেজানের কাছে সে আমার কথা ঠিকই জিজ্ঞেস করেছে। অবশ্য সেটা নোটস এর জন্যও হতে পারে, কে জানে মেয়েদের মন বোঝা তো আমাদের মতো সাধারণ ছেলেদের কাজ নয় :p তবে সেদিন আমি দ্বিতীয়বারের মতো ঠিক করলাম যে নাহ এই মেয়ে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে নয়!
৩টা বছর অগত্যা পার করে দিলেও নন্দিনীকে ভালোবাসি বলা হয়ে উঠেনি। আপনার ভাবছেন যে কেন! আসলে ব্যাপার হলো যে নন্দিনীর বান্ধবী কাম প্রতিবেশী ছিলো প্রিয়া। ও কোন একদিন বলেছিলো কাউকে যে নন্দিনী এসব প্রেম ভালোবাসায় একদম বিশ্বাস করে না। এমনকি ওর ক্লাসের এক ছেলে ওকে প্রোপোজ করায় নাকি তার সাথে আর কথাটাও পর্যন্ত বলেনি কোনোদিন। তো সেই ভয়টা তোহ কাজ করতোই। যদি হিতে বিপরীত হয়ে যায়। তার চেয়ে বরং এই ইকটু দেখা, কথা বলা, চোখে চোখ রাখা, সেইই আমার ঢের ভালো ছিলো। কাজেই অপেক্ষা আমায় ভাবতো না তেমনটা। তবে আমাদের ফেয়ারওয়েলেরাগের রাতে আমার বন্ধু সেজান আমার ব্রেইনওয়াশটা খুব ভালোভাবেই করেছিলো। সে বললো “দেখ তুই তো চলেই যাচ্ছিস। এরপর তোদের আর সেই নোট আদান প্রদানের সম্পর্ক টা কিন্তু আর রইলো না। আর মেয়েরা নাকি মুখ ফুটে মনের কথা কখনোই বলে না। তাই এটাই শেষ সুযোগ।”
আচ্ছা আপনারাই বলেন আমি যেখানে ৩ বছর এক নন্দিনীর পিছনে ঘুরেছি সেখানে সেজান ৩ বছরে ৩x২=৬টা প্রেম সেরেছে,তো এমন এক্সপেরিয়েন্সড মানুষের কথাকে তো আর অগ্রাহ্য করা যায়না। সেদিন ও পুরানো সেই দিনের কথা গানটা গেয়েছিলো। আহা, কী মধুর সে কণ্ঠ। প্রোগ্রামের শেষে ওকে ডাকলাম-
-নন্দিনী!
-জ্বী ভাইয়া।
-অনেক সুন্দর গান গাও তুমি।
-থ্যাংক ইউ ভাইয়া।
-ওয়েলকাম।
এরপর দু’জনই চুপ,সামনাসামনি দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু কেউ কিছুই বলছি না। ২-৩ মিনিট পর আমিই নীরবতা ভাঙ্গলাম-
-নন্দিনী?
-জ্বী ভাইয়া।
-তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো।
-(মাথা নিচু করে রেখে) ভাইয়া আমারো আসলে আপনাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিলো, আর আপনাকে কিছু বলতে হবেনা ভাইয়া। আমি জানি!
আবারো সেই রহস্য। আচ্ছা এই মেয়েটার সমস্যা কোথায়। সব সময় এমনটা করে সে। কেমন জানি লাগছিলো। পরে নন্দিনী আমাকে একটা ছোট্ট নীল রঙ এর র্যাপিং করা বক্স এগিয়ে দিলো। আমার চোখের দিকে চাইলো না পর্যন্ত। আর বললো-
-ভাইয়া এটা এখন খুলবেন না প্লীজ। বাসায় গিয়ে খুলবেন।
-আচ্ছা(মনের মাঝে কেমন একটা অনুভূতি কাজ করছিলো, ভালো খারাপের মাঝামাঝি)
আবার ডেকে উঠলাম-
-নন্দিনী?
-জ্বী ভাইয়া
-তোমার গানের মতোই পুরোনো দিনগুলোকে ভুলতে পারবোনা, অনেক মিস করবো।
-ভাইয়া আমিও…
বলেই চলে গেলো সে। আররে, নন্দিনী কী কাঁদছিল??? তেমনটাই লাগলো তো। আমার আর মন ই বসছিলো না, খালি মনে হচ্ছিলো যে কখন বাসায় যাবো। তাড়াতড়ি করে বাসায় গিয়েই খুললাম বক্সটা-
তাতে I Love You Too লিখা একটা কার্ড আর নন্দিনীর মোবাইল নম্বর লেখা! <3
আর লেখা ছিলো, “প্লিজ আমার ছায়া হয়ে থাকবেন সব সময়, যেমনটি ছিলেন। এর থেকে সুন্দর করে আমি বলতে পারি না। তবে অনেক ভালোবাসি!”
১টি মন্তব্য “নন্দিনী”
মন্তব্য করুন
গল্পটা পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।