যে শিশু ভূমিষ্ট হল আজ রাত্রে
তার মুখে খবর পেলুমঃ
সে পেয়েছে ছাড়পত্র এক,
নতুন বিশ্বের দ্বারে তাই ব্যক্ত করে অধিকার
জন্মমাত্র সুতীব্র চীৎকারে।
খর্বদেহ নিঃসহায়, তবু তার মুষ্টিবদ্ধ হাত
উত্তোলিত, উদ্ভাসিত
কী এক দুর্বোধ্য প্রতিজ্ঞায়।
সে ভাষা বুঝে না কেউ,
কেউ হাসে, কেউ করে মৃদু তিরস্কার।
আমি কিন্তু মনে মনে বুঝেছি সে ভাষা
পেয়েছি নতুন চিঠি আসন্ন যুগের-
পরিচয়-পত্র পড়ি ভূমিষ্ট শিশুর
অস্পষ্ট কুয়াশাভরা চোখে।
এসেছে নতুন শিশু, তাকে ছেড়ে দিতে হবে স্থান;
জীর্ণ পৃথিবীতে ব্যর্থ, মৃত আর ধ্বংসস্তুপ-পিঠে
চলে যেতে হবে আমাদের।
চলে যাব- তবু আজ যতক্ষণ দেহে আছে প্রাণ
প্রাণপণে পৃথিবীর সরাব জঞ্জাল
এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি-
নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
অবশেষে সব কাজ সেরে,
আমার দেহের রক্তে নতুন শিশুকে
করে যাব আশীর্বাদ,
তারপর হব ইতিহাস।।
ছাড়পত্র – সুকান্ত ভট্টাচার্য
সুকান্ত আজ বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৯১। দুঃসাহসী বিপ্লবী এই কবি জীবন সায়াহ্নে এসে ব্যর্থতার গ্লানি নিয়ে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে থাকতেন, ব্যাপারটা কতখানি হতাশাজনক তা আর না বললেও চলে। যে বিষয়ে লিখতে যাচ্ছি তাতে কি মনে করে সুকান্ত চলে এলো বুঝতে পারলাম না। আপাতত সুকান্তকে অনাহুত আগুন্তক বলেই ধরে নেয়া যাক আমার নির্বোধ কথামালায়।
গতকাল ঠিক এইসময়ই রাতে টিভির নিউজ গুলো সদ্যই ফ্রান্সে ঘটে যাওয়া ভয়াল বোমা হামলার খবরে গরম হয়ে আছে। বিষাদের ছায়া সবার চেহারার মাঝে পরিলক্ষন করতে পারছি। ফেসবুকে ঢুকতেই দেখি পরিস্থিতি আরো খারাপ। এদিকে জুকারবার্গ ভাইয়া ফ্রান্সের জাতীয় পতাকা দিয়ে সবার প্রোফাইল পিক রঙিন করে দেয়ার ব্যবস্থাও করে দিয়েছেন। তারি ব্যবস্থাপনায় সবাই নিজের ছবিকে নতুন আঙ্গিকে রাঙানোতে মত্ত। কেউ কেউ অন্তর থেকে সমবেদনা জানাচ্ছে, আবার কাউকে দেখা যাচ্ছে ছবি রাঙানোতেই খুশি- কারন জানার কোনো আগ্রহই নেই।
কি অদ্ভুত আমরা, আসলেই আমরা এই হোমোসেপিএনসরা বরই দুর্বোধ্য। ডিজিটাল পৃথিবীতে সব কিছুই আজ বড় যান্ত্রিক মনে হয়। চারপাশের মানুষগুলোকে ঠিক চেনা যায়না। অন্তঃসারশূন্য এই প্রানীসকল কতইনা অনুভূতিহীন। ছোটবেলায় আমার খুব প্রিয় একটা সিরিয়াল ছিল রোবোকপ। আমি নিশ্চিত, এই আধা যন্ত্র-আধা মানুষ আমাদের মত ফুলটাইম মানুষদেরকে নিয়ে ভীষণ লজ্জিত।
অমানুষের নিকৃষ্ট উদাহরণ নিতে গেলে সবার আগে চলে আসে হিটলারের নাম। আর এই বর্বরকে শায়েস্তা করার জন্য স্টালিন রাশিয়ার মহানায়ক। মানবতার কি প্রকৃষ্ট উদাহরণ!!! আসলেই কি তাই?? অথচ বিশ্বযুদ্ধ শুরুর প্রাক্কালে এই স্টালিন ই ছিল হিটলারের ঘনিষ্ঠ মিত্র (http://www.theguardian.com/books/2014/aug/06/devils-alliance-hitlers-pact-stalin-1938-1941-roger-moorhouse-review)। ইতিহাস আজো যাকে The Devil’s Alliance হিসেবে সাক্ষ্য দেয়। বিপত্তিটা লাগলো যখন গাধা হিটলার বেয়াক্কেলের মতো রাশিয়া আক্রমন করে বসে। আসলে মানবতা কিছুনা, সবাই স্বার্থপর; স্টালিন ও ব্যতিক্রম কিছু ছিলোনা। এরপর বিশ্ব মানবতাকে সুরক্ষা করার নিমিত্তে গঠিত হলো UN। মানবতা রক্ষায় প্রতিষ্ঠানটি কতোটুকু নিরপেক্ষ আর কতোখানি নিজ নিজ স্বার্থে ব্যবহৃত সেই প্রসঙ্গে আজ না যাই।
নিচের খবরটি এইতো কয়েকদিন আগের, জানি সবাই হয়ত জানবেনা ইরশেইদ নামক কিশোরীর কথা, জানার কথাও না। যুগ যুগ ধরে লক্ষ্য লক্ষ্য ইরশেইদ হারিয়ে গেছে মানবতাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলা মানুষদের বুলেটের আঘাতে। কার্তুজের গগনবিদারী হুঙ্কারে চাপা পরে গেছে অসংখ্য রায়েদ জারাদাতদের মৃত আর্তনাদ। সে আর্তনাদ কারোও কর্ণকুহরে পৌছার কারণও নেই। এই অন্তঃসারশূন্য প্রানীগুলোর এসব নিয়ে ভাববার সময় কোথায়???
Schoolgirl killed
On Sunday, Israeli soldiers summarily executed a 17-year-old Palestinian girl near the Ibrahimi mosque in the Old City of Hebron.
Israel said the girl, Dania Irsheid, had a knife, but witnesses contest this.
One witness told Ma’an News Agency that she saw soldiers cover Irsheid, who was lying on the ground bleeding, without giving her medical aid.
An eyewitness told Wattan TV he was standing just meters from Irsheid waiting to pass through the same checkpoint where she was shot.
He said the girl was surrounded by seven or eight soldiers who searched her book bag. They made her pass through the metal detector and then one demanded, “Where is the knife?”
“I’m not carrying a knife,” Irsheid said, according to the witness. Soldiers then fired between her feet and the terrified girl leapt backwards. She raised her hands in the air and repeated, “I do not have a knife.” Then, according to the witness, the soldiers fired about seven or eight bullets at her.
Irsheid’s schoolmates and teachers held an emotional memorial and tree-planting for her at her high school on Monday.
Lethal checkpoints
Raed Jaradat in an image circulated on social media.
On Monday, Israeli forces shot dead Raed Saket Abdulrahim Jaradat, a 22-year-old student at al-Quds University, from the village of Sair near Hebron.
Al-Araby al-Jadeed reported that the shooting took place at the Beit Einoun junction.
Israeli soldiers fired dozens of bullets at Jaradat after he allegedly stabbed a soldier in the neck.
One witness said soldiers refused to allow the Palestine Red Crescent to reach him and provide medical care.
According to Palestinian media, Jaradat had posted a picture of Dania Irsheid covered in blood on his Facebook account hours before he died. “Imagine she was your sister,” he wrote under it.
Hours later, Israeli forces shot dead another youth from Sair.
Iyad Rawhi Hijazi Jaradat was hit in the head with live ammunition during confrontations with Israeli forces near Beit Einoun, the Palestinian health ministry said. Ma’an News Agency, citing medical sources, gave his age as 17.
Saad al-Atrash in an image circulated on social media.
Also on Monday, Israeli forces shot and fatally injured 19-year-old Saad Muhammad Yousif al-Atrash outside the Ibrahimi Mosque in Hebron. Israeli media claimed he had tried to stab a soldier, but this is disputed.
(Ref: https://electronicintifada.net/blogs/charlotte-silver/schoolgirl-executed-israeli-soldiers)
আমার প্রায়শই মনে হয়, আমাদের ভিতরে হৃদয় নামক বস্তুটা হারিয়ে গেছে। অথবা হয়ত লুকিয়ে আছে কোথাও, আমরা খুজে পাচ্ছিনা। হয়ত আমরা খোজার চেষ্টাও করতে চাইনা, হারিয়ে গেছে তাতে কি? সমস্যা তো কিছু হচ্ছেনা, আমার ব্যবসা বাম্পার ফলন দিচ্ছে, চাকরিটাও কতো সুখের মনে হচ্ছে। ঘুষ নিতে তো এতটুকুও বাজছেনা, কাজের লোককে পেটানোতেও তো কতোইনা ভালোলাগা অনুভুতো হচ্ছে। রাজন কে পিটিয়ে মারার সময় যে আনন্দ পাচ্ছিল ওরা, হৃদয়-বিবেক থাকলে এই আনন্দ অধরাই থেকে যেত। হৃদয়, বিবেক নামক অর্থহীন জিনিস গুলো না থাকলেই ভালো।
আজ ফ্রান্সের অলি-গলির ঘুপচির মাঝে শোকের নিঃশব্দ মাতম। প্রিয় মানুষ হারানোর আহাজারি হাজার হাজার মাইল পেরিয়ে আমার মতো আরও অনেককেই ব্যথায় ব্যথাতুর করে তুলছে। অনেক চেষ্টা করছি একটা পার্থক্য খুজে বের করার। ফিলিস্তিনে, সিরিয়ায়, লিবিয়ায়, ইরাকে, মিশরে, আফগানিস্তানের ধুলোমাখা রাস্তায় ইরশেইদ এবং আরো হাজারো মানুষদের রক্তাক্ত পদদলিত লাশকে ঘিরে জীর্ণ আহাজারি যেভাবে সাইমুম হয়ে হৃদয়কে এফোঁড় ওফোঁড় করে দিয়ে যাচ্ছে, সে ব্যথার সাথে এ ব্যথার পার্থক্য নিরন্তর খুঁজেই যাচ্ছি। খুঁজে না পাবার ব্যর্থতা আবার অন্য আরেক গ্লানিতে মনকে ভাসিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। সারা দুনিয়া যেখানে বিভাজনে বিভাজনে মত্ত, যেখানে আবেগও বিভাজিত, সেখানে আমিই বা কেন ব্যতিক্রম? সবার ভিতরে যা নেই, আমার ভিতরেও সেই হৃদয়-আবেগ থাকার দরকার নেই।
আমি কোনো বোদ্ধা নই, বিষয় বিশ্লেষণ করে কোন মতবাদ দেবার দুঃসাহস ও করিনা। আমি রাজনীতি বুঝিনা, ধর্ম বিশ্লেষকও নই; আমার জ্ঞানের পরিধি সিমীত। আমার চিন্তা ভাবনা নিতান্তই সাধারন, যে রকম সাধারন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানদার ফজল ভাই, তার কাছে সন্ধ্যার পর গেলে গরম গরম মাল্টা মিক্সড রঙ চা পাওয়া যায়, খাতির থাকলে বাকিতেও। আমি জানি পৃথিবীর কোনোও ধর্মগ্রন্থ বলেনাই নিরীহ মানুষকে হত্যার কথা, বলেনাই প্রতিশোধ নেবার কথা, বলে নাই বিচারে পক্ষপাতিত্ব করার কথা। তাহলে এ কোন ধর্ম যা সবাই মেনে চলছে এখন?? যে ধর্ম ক্ষমার কথা বলেনা, যে ধর্ম নিজ জাতি ছাড়া অন্য কাউকে মানুষ বলে মনে করেনা, যে ধর্ম কার্তুজের ঝাঁঝালো গন্ধে বিশ্বাসী, যে ধর্ম রক্তসম্পাতে বিশ্বাসী- এ কোন ধর্ম? আমি জানি, আজ সবাই মুখে মুখে কেউ খ্রিষ্টান, কেউ মুসলিম, কেউ ইহুদী, কেউ হিন্দু- আদতে সবাই এক ধর্মেরই লোক, যে ধর্ম মানবতা, ক্ষমা, ঔদার্য, সহমর্মিতা, সহানুভুতি, বন্ধুত্ব নামক বস্তাপচা শব্দগুলোকে প্রত্যাখ্যান করেছে। আর সে ধর্মকে কেন আমি মনে স্থান দিতে পারছিনা? যা সবাই করছে আমার কি তা করা উচিত নয়?
আজ যে শিশুটি এলো, সে মায়ের কোলে কি আদরেই না ঘুমিয়ে আছে। তার জন্য আমার করুনা হয়, হয় আফসোস, আর আফসোস সুকান্তর জন্য, যে স্বপ্ন দেখেছিল একটি বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার।।
মূল বক্তব্যটা যে কি, ধরতে পারলাম না...
তবে মনটা যে বিক্ষিপ্ত ছিল, তা বুঝলাম।
অবশ্য, মন বিক্ষিপ্ত না থাকারও তো কোন কারন দেখি না!!!
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
২য় বিশ্বযুদ্ধের আগে হিটলার অনেক দেশের সাথেই চুক্তি করেছিলো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সহমত, এবং অবশ্যই দুঃখজনক সত্য.
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
মাহমুদ ভাইয়ার সাথে একমত 🙁