১.
এসএসসি, এইচএসসি-তে দুইবার বোর্ডে স্ট্যান্ড করার পর ভর্তি হয়েছিলাম ভার্সিটিতে। বেশ ভালই কাটছিল দিনগুলো। পড়াশুনাটা খুব ভালই চলছিল প্রথম দিকে। কিন্তু আজ? হায়, এ আমি কি করলাম!!!
২.
স্কুলজীবন থেকে চলে আসা আমার আর নিনতার প্রেমটা ততদিনে বিশালত্বের রূপ নিয়েছে। ইস, দুজনের কত স্বপ্ন! জীবনটাকে তখনো খুব রঙিন মনে হত। ভার্সিটির এক-একটা দিন মনে হত এক-একটা স্বপ্নের মত। কিন্তু হঠাৎই এক হরতালে, বোমাবাজিতে নিনতা নিহত হল … … … …
৩.
আমার স্বপ্নের পৃথিবীতে নেমে এল চিরদিনের সূর্যগ্রহণ। বন্ধুরা কেউ কেউ বলল, “ভুলে যা ওসব, ভার্সিটিতে অমন হাজারটা সুন্দরী মেয়ে পাবি, নে ধর… …” বিষণ্ণতা ভুলতে হাতে তুলে নিলাম ওদের এগিয়ে দেয়া সিগারেট। বাবা-মায়ের সমস্ত আদেশ-উপদেশ, স্বপ্নকে চুরমার করে; হারিয়ে যাওয়া নিনতার রেখে যাওয়া সমস্ত ভালবাসা উপেক্ষা করে, আমার সিগারেট ফুলে ফেঁপে মদের বোতলে পরিণত সময় লাগল মাত্র ছ’মাস। সময়-সুযোগমত সমাজের একদল সাধু-সন্ন্যাসীর কালোথাবায় মায়ের দেয়া পবিত্র কলমের জায়গাটা লুফে নিল কিছু ভারী অস্ত্র। সময়ের অল্প ব্যবধানে আমি হয়ে উঠলাম বোর্ডস্ট্যান্ড করা সন্ত্রাসী “স্ট্যান্ড তারিক”… … …
৪.
নিনতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীটা আজও মনে আছে। সেদিনও হরতাল। অস্ত্র আর বোমা সহ আমি ধরা পড়লাম পুলিশের হাতে। কিন্তু “তাহাদের” টেলিফোন আর মোবাইলের কল্যাণে আমার জেলমুক্ত হতে সময় লাগল মাত্র তিনদিন। কিন্তু জেলের দুইটা রাতই আমার হৃদয়ে তুলে ধরল আমার ফেলে আসা দিনগুলি। বারবারই কেবল শুনতে পাচ্ছিলাম মা বলছে, “খোকা, এই কি তোর পড়াশুনা !” যেন নিনতার আত্মা আমায় ঘৃণায় ধিক্কার করছে, “ছি! এই কি আমার জন্যে তোমার ভালবাসা ?” আমি ভাল হবার পণ করলাম। সবকিছু ঝেড়ে ফেলে ছুটে চললাম বাড়ির দিকে। কিন্তু বাড়িতে আর ঢোকা হল না। কারণ, আমার সুকীর্তির চিত্রটা টেলিভিশনে দেখার পরমুহূর্তেই বাবা হার্টঅ্যাটাকে মারা যান। মা আমাকে দেখেই দূর থেকে চিৎকার শুরু করেন, ‘এমন ছেলেই কি আমি গর্ভে ধারণ করেছিলাম !!’ কিছুতেই স্পর্শ করতে দিলেন না বাবার কবরটা। ছোটবোন আশা একটু কাছে এসে বলল, “ভাইয়া, তুই চলে যা। তোকে বেশিক্ষণ চোখের সামনে দেখলে হয়ত মাও হার্টঅ্যাটাক করবে।” আর দাড়িয়ে থাকার সাহস হল না। কলঙ্কিত মুখটা কোনমতে গোপন করে বেড়িয়ে এলাম বাড়ি থেকে। কিন্তু সমাজ আমার ভাল হবার সব ক’টা পথ ততকদিনে বন্ধ করে দিয়েছে। অবশেষে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অর্ধউন্মাদ অবস্থায় ঘুরতে লাগলাম। আমার জীবন নদীর দু’কূলেই ভাঙন ধরল।
৫.
অনেক বছর পর, একুশে বইমেলার গেটে দাড়িয়ে ছিলাম অন্যমনস্কভাবে। হঠাৎ একটা মেয়েকে দেখে চমকে উঠলাম, পাশে দাড়িয়ে থাকা লোকটা বোধ হয় ওর Husband, আর সঙ্গের পিচ্চিটা মনে হয় ওর সন্তান। কাছে গিয়ে খুব জানতে ইচ্ছে করছিল, ” আশা, মা কেমন আছে?” আমার ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে হাহাকার করে উঠল, কিন্তু পারলাম না। কারণ, পাশের ঐ লোকটা যখন জানতে চাইবে ‘আমি কে’; তখন কী জবাব দেবে আশা??? তাই আজ সমাজের সকল ছদ্মবেশী সাধু-সন্ন্যাসীদের কাছে আমার অনুরোধ, “দয়া করে পবিত্র বিদ্যাপীঠগুলোকে কলুষিত করবেন না… ।” আর পৃথিবীর সমস্ত তারুণ্যের কাছে আমার আবেদন, “মাদককে না বলুন… …”
পরিশেষ:
এখন আমি বখাটে রাস্তার ছেলে। আমার ময়লা শার্ট, ছেড়া জিন্স আর উস্ক-খুস্ক চুল দেখে কেউ বুঝতে পারে না যে আমি আর সেই “স্ট্যান্ড তারিক” নই .. … কেউ বুঝতে পারে না যে আমি স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে চাই … … কেউ বুঝতে চায় না যে আমার জীবনটা নষ্ঠ করার পেছনে আমার যতটা অবদান, তার চেয়ে “ওদের” অবদান অনেক বেশি … …
[কিছুদিন আগে ঢাকা মেডিকেলের রাজিব নামে একটা ছেলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে খুন হয়। ছেলেটার মৃত্যুর পরে জানা গেল তার অতীত ইতিহাস … … আমাদের দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এরকম হাজার হাজার “রাজিব” প্রতি বছর ভর্তি হয়, কিন্তু প্রতি বছর এক হাজার “রাজিব”ও কি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হতে পারে … … অথবা যখন পাস করে বের হয় তখন কি সেই “রাজিব” থাকে … … … আচ্ছা , এই রাজিব-রাজিব খেলা কবে বন্ধ হবে ??? ??? ]
১ম
২য়
রাজিব মরছে এক বছর হয়া গেছে না!!!
এক বছর আগেই পড়ছিলাম। আবার পড়ছি কয়া গেলাম।
খুব কর্কশ শোনাবে তাও বলছি-এই ধরণের পরিণতি যে এদের একেবারে প্রাপ্য না সেটা কেউ হলফ করে বলতে পারবেন কি?ঘটনাটা হৃদয় বিদারক কোন সন্দেহ নেই-কিন্তু শুধু সমাজের দোহাই দিয়ে ব্যক্তি তারিককে সাধুবাবা ভাবতে আমি রাজী নই(লেখক অবশ্য তা দাবীও করেননি)।সমাজে কলুষতা রয়েছে এটা তো সত্য-কিন্তু মেধাবী ছেলেদের পক্ষে সেই কলুষতা থেকে গা বাঁচিয়ে সাফল্যের উচ্চশিখরে পৌঁছবার পথও কিন্তু রয়েছে।
প্রচণ্ডরকমভাবে সহমত
ঐ x-(
ঐ
মাস্ফু ভাই, আপনার সাথে আমিও একমত। তবে আমাদের দেশেতো ছাত্রদের প্রলুব্ধ করে রাজনীতিতে ব্যবহার করা হয়। আর লোভ সামলিয়ে সবাই কি সাধু থাকতে পারে? তাই এই নোংরা "ছাত্র ব্যবহারের রাজনীতি" কবে বন্ধ হবে - এটাই আমার লেখার বিষয়। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের পড়ালেখার পরিবেশ নিশ্চিত করবে- এটা বিশ্ববিদ্যায়লের দায়িত্ব। নোংরা ভার্সিটির ভিতর থেকে ভাল পথটা খুজে নিতে হবে - ছাত্রদের যদি এই দায়িত্ব পালন করতে হয়, তাহলেতো সেটা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যর্থতা ... ... আমার এই লেখাটার মূল প্রতিপাদ্য এটাই যে, আমরা শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ চাই ... ...
:thumbup:
:thumbup: :thumbup:
Life is Mad.
আরো একটা লজ্জার কথা কি জানেন? এই খুনের প্রধান আসামী হিসেবে যিনি পলাতক আছেন, তিনি একজন এক্স-ক্যাডেট। এটা শোনার পর সবচেয়ে বেশি খারাপ লেগেছিল।
ছাত্র রাজনীতি জিনিসটার এখন আর কোন দরকার আছে বলে আমার মনে হয় না। এখন এরা শুধু রাজনীতিবিদ দের দাবার বড়ে হিসেবে কাজে লাগে।