রেডমন্ড ব্লগঃ ১/৭/২০০৯

জাগতিক উষ্ণায়নের কারনে খুব শীঘ্রই নাকি বাংলাদেশের বেশ খানিকটা সমুদ্রের নীচে তলিয়ে যাবে। কক্সবাজারে অনেকদিন যাওয়া হয়নি, তাই হাতে নাতে প্রমান এখনও দেখিনি। তবে এই সাত সমুদ্র তের নদী দূরে তার প্রমাণ কিছুটা পাচ্ছি। আমেরিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল তার শীতকালীন আবহাওয়ার জন্য কিছুটা হলেও বিখ্যাত। প্রশান্ত মহাসাগর হতে ধেয়ে আসা জলীয়বাষ্প আর উত্তর হতে আসা ঠান্ডা বাতাস এই অঞ্চলকে সবসময় মেঘাচ্ছন্ন করে রাখে। ফলে শীতের প্রায় সবটা সময় সুর্যের দেখা মেলা ভার। বলতে গেলে বছরের ছয় মাসই সুর্য দেখা যায় না। তবে প্রশান্ত মহাসাগরের উষ্ণ বায়ুর কারনে তাপমাত্রা খুব একটা নীচে নামে না। বড়জোর মাইনাস ২/৩ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড। বছরে বরফ পড়ার হারও খুব কম, হাতেগোনা কয়েকদিন। বরফ পড়ে বটে তবে ঘন্টাখানেকের মধ্যেই গলে যায়। সে কারনে বৃহত্তর সিয়াটলবাসি বরফের সাথে জীবনযাপনে খুব একটা অভ্যস্ত নয়।

কিন্তু এবার জাগতিক উষ্ণায়নই হোক আর অন্য কিছু হোক, গেল সপ্তাহে যখন মাত্র এক ফুট বরফ পড়ে আর গলার নাম নেই, তখন সবার নাকাল অবস্থা। বরফ খুব একটা পড়ার ইতিহাস নেই বলে বরফ পরিস্কার করার গাড়িও এখানে কম। তারওপর এটা পাহাড়ি এলাকা। ফলাফল গত সপ্তায় বলতে গেলে অফিসে যেতে হয়নি। বাসায় বসে রিমোট লগইন করে অফিস করেছি। যাব কিভাবে, পার্কিং থেকে গাড়ি বের করাই যে অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। তারওপর রয়েছে রাস্তায় দুর্ঘটনার সমুহ সম্ভাবনা। তাই গত সপ্তাহটা ভালই গেছে। সারাদিন বাসায় থেকেছি আর বউয়ের হাতে রান্না খেয়েছি। সাথে টিভিতে সিনেমা দেখা তো আছেই।

কিন্তু কপালে কি আর বেশিদিন সুখ সয়। ক্রিস্মাস আর নতুন বছরের ছুটি কাটিয়ে এই সপ্তাহে নতুন বছরের কাজ শুরু। প্রথমেই দুই দিনের একটা ট্রেনিং ছিল। সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত ক্লাস করে বিরক্ত। প্রায় সব কিছুই মাথার উপর দিয়ে গেছে। তবে ভাগ্য ভাল কোন পরীক্ষা দিতে হয়নি। গত প্রায় একমাস ধরে কোন ব্লগ লেখা হয়নি। বউও বলে, “কি, লেখনা কেন?”। কিন্তু যে চরম আইলসা আমি, বউয়ের রান্নায় খেয়েই গেছি, লেখা আর হয় নি। আসলে লেখার কিছু খুজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু এতদিন পরে মনে হোল ব্লগের আসল মানেটাই ভুলে গেছিলাম। অন্য সবার মত নিত্য নতুন আইডিয়া, টুশকি বা গল্প কবিতা লেখার ক্ষমতা আমার নেই। তাই ভাবছি ব্লগ বলতে আসলে যা বোঝায় তাই লেখি। দিনে দিনে যা হচ্ছে/করছি টাইপ আর কি। বছর দশ/বিশ/ত্রিশ পরে এই ব্লগ পড়ে হয়ত বলতে পারব “ইন দা ইয়ার অফ ১৯৬৯, অই যে যেবার ম্যালা বরফ পড়ল…”। আল্লাহ সিসিবিকে ততদিন হায়াত দারাজ করুন, বলেন আমিন।

মরতুজা
১ ক্ষুদ্রনরম সড়ক
রেডমন্ড, ওয়াশিংটন ৯৮০৫২

১,৭৪৯ বার দেখা হয়েছে

২১ টি মন্তব্য : “রেডমন্ড ব্লগঃ ১/৭/২০০৯”

  1. আমার ২টা দাবি আছে মডারেটর আর এডু স্যারদের কাছে।

    বউও বলে, “কি, লেখনা কেন?”। কিন্তু যে চরম আইলসা আমি, বউয়ের রান্নায় খেয়েই গেছি, লেখা আর হয় নি।

    ১. দীর্ঘদিন ফাঁকিবাজি করার জন্য মরতুজা ভাইকে সিসিবি থেকে সামনের ক্রিসমাস পর্যন্ত উনার প্লাজমা টিভি সহ ভ্যান করা হউক। 😉
    অথবা
    টানা ৫০টা পোস্ট দেয়ার শাস্তি দেয়া হউক। এই ব্যপারে ফয়েজ ভাই , আহসান ভাই ও লাবলু ভাইয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 😛

    ২. ভাবিকে মরতুজা ভাইয়ের বদলে সিসিবির আজীবন সদস্যপদ দেয়া হউক। (লেখার কথা মনে করাইয়া দেয়ার জন্য) :thumbup:

    সকলের সদয় বিবেচনার জন্য প্রস্তাব উত্তাপিত হইলো। 🙂

    জবাব দিন
  2. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)
    আসলে লেখার কিছু খুজে পাচ্ছিলাম না। কিন্তু এতদিন পরে মনে হোল ব্লগের আসল মানেটাই ভুলে গেছিলাম। অন্য সবার মত নিত্য নতুন আইডিয়া, টুশকি বা গল্প কবিতা লেখার ক্ষমতা আমার নেই। তাই ভাবছি ব্লগ বলতে আসলে যা বোঝায় তাই লেখি।

    এইটাই জীবনের গল্প কবিতা হয়ে উঠতে পারে, আসলে উঠে, খুব সহজেই। :boss:
    মরতুজা ভাই, সত্যিকার গল্পগুলোই দিয়ে দিন সিসিবিতে :thumbup: এরকম সুখপাঠ্য হলেতো কথাই নেই :thumbup:


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  3. তানভীর (৯৪-০০)

    মরতুজা ভাই, দিনলিপি পড়তে আমার খুব ভালো লাগে।
    এইভাবে আপনার দিনলিপিগুলো আমাদের সাথেও শেয়ার করেন না!

    বছর দশ/বিশ/ত্রিশ পরে এই ব্লগ পড়ে হয়ত বলতে পারব “ইন দা ইয়ার অফ ১৯৬৯, অই যে যেবার ম্যালা বরফ পড়ল…”।

    😀

    জবাব দিন
  4. তৌফিক

    মরতুজা ভাই ক্যাডেট ছিলেন। ক্যাডেটরা কিরকম পিছলা সবাই জানে। সুতরাং, ভাবীর জন্য একটা পরামর্শ আছে। "লিখনা কেন?"- শুধু এই কথায় চিড়া ভিজবে না। ডাইরেক্ট একশন নিতে হবে। ব্লগ না নামলে ভাত বন্ধ কইরা দেওয়ার কথা বিবেচনা করতে পারেন। 😀

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।