(প্রথম পর্বের পর)
পুরো ক্লাস কে নাস্তা নাবুদ করার পর ভিপি স্যার আমাকে দাঁড় করালেন। বাঘ তার শিকার কে পাকড়াও করার পর যেমন একটা বিজয়ীর হাসি/হুঙ্কার দেয়, তার মুখে তেমন এক ক্রুর হাসি। নিজেকে খুব অসহায় মনে হয়েছিল সেদিন, কমপ্লিটলী ডিফেন্সলেস 🙁 কোন উত্তর নেই আমার কাছে।ছোটবেলা থেকে ভাল ছাত্র ছিলাম, তাই অপমানটা বেশি গায়ে লেগেছিল। জানিনা অতটা অপমানিত হওয়া ঠিক ছিল কিনা। এটা হতে পারত একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা, কিন্তু না। পরে ভিপি স্যার একবার আমার বাবার সামনে আমাকে অপমান করে বসলেন। কলেজে সম্ভবত কোন ডকুমেন্ট আনতে গিয়েছিলাম।ওই ঘটনার পরে বুঝতে পারলাম, ভিপি আসলেই খুব খারাপ ধারণা পোষণ করেন আমার সম্পর্কে।আমার ও তার উপর থেকে সব শ্রদ্ধা কেমন যেন শেষ হয়ে যেতে থাকে। অথচ আমি কখনও তাকে অসম্মান করেছিলাম বলে মনে পড়ে না। খুব সম্ভবত আমাকে খুব বাজে ছাত্র মনে করেছিলেন। তাকে দেখিয়ে দেওয়ার মত কিছু করতে পারিনি হয়ত, অন্তত কলেজে থাকতে। তবে ওই অপমানের পর আমার ভিতর একটা পরিবর্তন আসে। কেমন যেন একটা জেদ চেপে বসে। খুব কঠিন পরিশ্রম করা শুরু করলাম। ফলাফল ক্লাস ১১ ইয়ার ফাইনাল এ ১ম। ক্লাসের সবচেয়ে ভাল ছাত্র আহমেদ ওই একবারই সেকেন্ড হয়েছিল। পরের বছরটা খুব দ্রুত কেটে গেল। কলেজ থেকে বের হয়েছিলাম একটি মিশ্র অনুভুতি নিয়ে, অপমানের প্রতিশোধ যে নেওয়া হল না। আঠার বছর বয়স টা খুব আভিমানের হয় সম্ভম্বত।
কলেজ থেকে বেরিয়ে আসার পর ভিপি স্যার কে দেখিয়ে দেওয়ার মত অনেক ঘটনা ঘটতে থাকে। বুয়েট এবং I.S.S.B দুইটাতেই টিকলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত কম্পিউটার সাইন্স পড়ব বলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডমিশন টেস্ট দিলাম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেট স্কুলে সবকটি বিষয়ে (৪) ১ম এবং জীববিজ্ঞান স্কুলে ২য় হয়েছিলাম– এটা সম্ভবত এখনও রেকর্ড যতদূর জানি। যাহোক ঢোল বাজানো বন্ধ করে কাজের কথায় আসি। এই ফলাফলের পর একটি চিঠি লিখে ফেললাম ভিপি স্যার এর উদ্দেশ্যে। সেই চিঠির কন্টেন্ট টা সম্পর্কে আর নাই বা বললাম 🙂 যা হোক পরে আর চিঠি টা পোস্ট করা হয়নি।মনে হয়েছিল, থাক না, কী দরকার! কৈশোরের ঘটনা গুলো বড়ই জটিল।সহজে ভোলা যায়না, আবার প্রত্যেক ঘটনার ব্যাখ্যা ও একাধিক।দীর্ঘ ছাত্র জীবনে হাতেগোনা কয়েক জন টিচার এর প্রতি এখনও বিরক্তি রয়ে গেছে।এই ঘটনার হোতা তাদের একজন।আবার মাঝে মাঝে ভাবি আমাকে অতটা অপমান না করলে আমি কি এতটা সিরিয়াস হতে পারতাম? আমাকে অপমান করার পিছনে কি স্যার এর কোন পজিটিভ চিন্তা ছিল, নাকি শুধুই প্রতিশোধ ছিল? নাকি পুরো ব্যাপারটা অন্য রকম কিছু ছিল?
তবে এই ঘটনা থেকে একটি ব্যাপার আমি ব্যক্তিগত ভাবে একটি শিক্ষা গ্রহণ করেছি– Never underestimate the capability of any student. আর দেখিয়ে দেওয়ার অভ্যাসটা দমন করা খুবই দরকার।কোন শিক্ষকের ও উচিত নয় এমন খারাপ ব্যবহার করা যাতে ছাত্র দেখিয়ে দিতে বাধ্য হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সময় দেখেছি সাধারণ মানের ছাত্ররা ও পরে অনেকে ভাল পজিসনে যেতে। একজন শিক্ষকের দায়িত্ব সম্ভবত ছাত্রের latent potential কে খুজে বের করা, এবং সেটা অপমান করে সম্ভব নয়। তা না হলে সেদিনের সেই A+ না পাওয়া সাধারণ মানের ছাত্রটি যখন সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ থেকে President Gold Medal নিয়ে অপমানকারী শিক্ষকের সামনে দাঁড়াবে, তখন এক অবর্ণনীয় বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে 🙂
শেষ
বিঃ দ্রঃ কিছু বানান ভুল থাকতে পারে, সেগুলো অনিচ্ছা বশত আর যুক্তাক্ষরে একটু সমস্যা হচ্ছে।
আমার কাছে লেখাগুলা অত্যন্ত নেগেটিভ মনে হচ্ছে।
অবশ্য একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
খুব সম্ভবত, কারণ ঘটনা টি নেগেতিভ এবং জীবন থেকে নেওয়া। তারপর ও আমি পজিটিভিটি খোজার চেষ্টা করছি এর মধ্যে। ১ম পর্ব পড়লে আরও পরিস্কার হবে।
An ordinary man with extra-ordinary ambitions
ভিপি'র কথিত অপমানটুকু ভুলে যাওয়াটাই সমীচীন হবে। সুযোগ হলে কখনো সামনা সামনি দেখা করে নিজের অপমানবোধের তীব্রতাটুকু তাকে জানানো যেতে পারে। তবে শিক্ষকদের ত্রুটি ভুলে যাওয়াটাই হবে তার ছাত্র, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, কর্তৃক একটি উপযুক্ত পদক্ষেপ।
ভাল সাজেশন, দেখি কখনও দেখা হয় কিনা ...
An ordinary man with extra-ordinary ambitions