হটমেইল: এক আইডিয়া হতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার

(১)
সাধারণ এক ছেলে

গল্পের শুরু লসঞ্জেলস এয়ারপোর্টে। সবির ভাটিয়ার বয়স তখন ১৯। ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সিটিটিউট অব টেকনলোজিতে পড়তে এসেছে সে। পকেটে ৪০০ ডলার। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিরেকশান দিয়েছে শাটল নিয়ে ক্যাম্পাসে আসতে। শাটল কি তাও সে জানে না। যুক্তরাষ্ট্রের  একজন মানুষকেও সে চেনে না। কেউ জানত না এই ছেলে একদিন ইমেইলের ধারণাকে পালটে দেবে।

হ্যাঁ। এই সাবির ভাটিয়া হট মেইলের প্রতিষ্ঠাতা। কোম্পানী খোলার দুই বছরের মধ্যে মাইক্রোসফট হট মেইলকে ৪০০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের শেয়ারের বদলে কিনে নেয়। কিভাবে সাবির ভাটিয়া এক সাধারণ ছেলে হতে পরিণত হল এক সফল উদ্যোক্তায়?

(২)
“তুমিও পারবে”

সাবির ভাবত কোম্পানীর প্রতিষ্ঠাতারা অতিমানব। এ ধারণা ভেঙ্গেছে এ্যাপেলের স্টিভ অজনিয়াক বা সান মাইক্রোসিস্টেমের স্টিভ ম্যাকনিয়ালির মতন উদ্যোক্তাদের বক্তৃতা শুনে। সাবিরের কাছে মনে হয়েছে তারা স্মার্ট তবে অতিমানব নন। তাদের কথা ছিল একটাই তুমিও পারবে।

(৩)
সিলিকন ভ্যালির কক্টেল পার্টি

পড়াশোনা শেষ হল। সাবির ভারতে আর ফিরলেন না। চাকরি নিলেন এ্যাপেলে। হার্ডওয়ার ইজ্ঞিনিয়ার হিসেবে। চাকরি চলতে লাগল। প্রতিদিন অফিস শেষে কক্টেল পার্টি তে যেতেন। সেখানে আসত ইন্ডিয়ান উদ্যোক্তারা। সিলিকন ভ্যালির এই পার্টিতে অনেকেই আসতেন যারা কোন একটা আইডিয়া থেকে কোম্পানী বানিয়ে মিলিয়ন ডলারে বিক্রী করেছেন। সাবিরও স্বপ্ন দেখতে আরম্ভ করলেন।

(৪)
বন্ধু স্মিথ দিলেন আইডিয়া

সাবিরের বন্ধু ছিল জ্যাক স্মিথ। সাবির স্মিথকে বলত “Jack, What are we doing here, wasting our lives?” “আমরা এখানে কি করছিটা কি? জীবন নষ্ট করছি”। স্মিথের স্ত্রী ছিল- দুই সন্তানও ছিল। তাই তাঁর মত পেতে দেরি হল। একদিন সাবির স্মিথকে বলল “ এত সুযোগ থাকা স্বত্বেও যদি আমরা না পারি তবে আমরা পুরাপুরিই ব্যর্থ”।“Jack, given this enormous opportunities here , if we can’t make it, then we are complete failures”  এবার স্মিথ রাজী হল। শুরু হল আইডিয়া খোঁজা।

তারা একে অপরকে মেইল করতে চাইতেন। কিন্তু বসের ভয়ে পারতেন না। যদি বস সব ইমেইল জড়ো করে অফিসে ব্যক্তিগত কাজের অভিযোগ আনে! একদিন স্মিথ গাড়ি চালাচ্ছিল। হঠাৎ মাথায় আইডিয়াটি এল। স্মিথ সঙ্গে সঙ্গে ফোন করল সাবিরকে।সাবির শুধু একটি বাক্য শুনেই বলল ফোন রাখ। বাসায় গিয়ে সিকিউর লাইন থেকে ফোন কর।
১৫ মিনিটের মধ্যে ফোন এল।ওই রাতে সাবিরের আর ঘুম এল না। সারা রাত বসে বসে বিজনেস প্লান লিখল সাবির।পরদিন সকালে সাবির যখন অফিসে গেল রাত জাগার কারণে তাকে এত ক্লান্ত দেখাচ্ছিল যে বস বলল “তোমাক পার্টি বাদ দিতে হবে সবির”। মুখ খুললে যদি আইডিয়ার কথা বলে ফেলে এই ভয়ে সাবীর কথা না বলে শুধু মাথা নাড়ল।

(৫)
স্বপ্ন ও সন্দেহ

হটমেইল শুরু করার জন্য সাবিরের দরকার ৩০০,০০০ ডলার। বিজনেস প্লান নিয়ে সাবির ঘুরতে লাগল ভেনচার ক্যাপিটালিস্টদের কাছে। অবশেষে সবচেয়ে ভাল রেট পাওয়া গেল ১৫ শতাংশ শেয়ার।
সাবির আর স্মিথ চাক্রি ছাড়লেন। ছোট্ট অফিস নিলেন। ১৫ জন লোক পেলেন সাবির যারা বিনা বেতনে কাজ করবেন। বিনিময়ে পরবর্তীতে তারা শেয়ার কিনতে পারবেন একটা নির্দিষ্ট দামে।
একপর্যায়ে আরো অর্থের প্রয়োজন পড়ল। সাবির ব্যাংক হতে ১০০,০০০ ডলার নিলেন।

(৬)
উড়ন্ত সূচনা

আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসে যাত্রা শুরু করল হটমেইল। প্রথম ঘন্টায় ১০০ জন,  দ্বিতীয় ঘণ্টায় ২০০ জন, তৃতীয় ঘণ্টায় ২৫০ জন সাবস্ক্রাইব করল। প্রথমে যারা খুঁজে পেয়েছিল তারা তাদের বন্ধুদের মেইল করে। এতে বন্ধুরাও জানতে পারে এই মেইলের কথা। তারাও সাইন আপ করে।যারা সাইন আপ করেছিল তাদের ৮০ শতাংশই বলেছে তারা হটমেইলের কথা জেনেছে কোন বন্ধুর কাছ থেকে।

(৭)
কাকে কে- করবে পে?

হটমেইল ইনবক্সে নিউজ এবং অন্য ইন্টারনেট কন্টেন্ট দিতে লাগল। এবার নিউজ প্রোভাইডাররা টাকা চেয়ে বসল। হট মেইল বলল আমরা তোমাদের কন্টেন্ট চালাচ্ছি। তোমারা আমাদের পে করবে। অবশেষে হটমেইলের জয় হল।
হটমেইল এত দ্রুত বাড়তে লাগল যে কনটেন্ট প্রোভাইডাররা ক্রমবর্ধমান ট্রাফিকের সাথে কুলিয়ে উঠতে পারছিল না।

(৮)
দৃশ্যপটে মাইক্রোসফটের আগমন

দুই বছর পর মাইক্রোসফট হটমেইল কিনতে চাইল। তারা যে অফারটা করেছিল তাতে সবকিছু বাদ দিয়ে সাবিরের পকেটে ১০ মিলিয়নের মত থাকত।সাবির রাজী হল না। বার বার মাইক্রোসফট আস্তে লাগল এবং দাম বাড়াতে লাগল।

(৯)
বিল গেটসের মুখোমুখি সাবির ভাটিয়া

এরপর মাইক্রোসফটের কর্মকর্তারা সাবিরকে অনুরোধ করল বিল গেটসের সাথে দেখা করার জন্য। বিল গেটসের সাথে সাবির দেখা করল। বিল গেটস তাকে ওই প্রশ্নগুলোই করল যেগুলি অন্য ইনভেস্টররা তাকে করত। সাবিরের মনে হল ইনিও সুপারম্যান নন। তার আত্নবিশ্বাস বেড়ে গেল।

(১০)
“এই দাম ছুঁতে পারলে তোমার প্রতিমা গড়ে দেব”

বিল গেটসের কাছ থেকে এসে সাবির জানতে চাইল তার ইনভেস্টর কি দাম আশা করেন। সে বলল ২০০ মিলিয়ন। সাবির খানিকটা মজা করে বলল আমি এক বিলিয়ন চাই।ইনভেস্টর বলল তুমি যদি ২০০ মিলিয়নও ছুঁতে পার তোমার প্রতিমা গড়ে রাখব।

(১১)
Are u crazy?

সাবির আবার মাইক্রোসফটে গেল।দাম চাইল আধা বিলিয়ন।উত্তর ছিল Are u crazy? কিন্তু মাইক্রোসফট দাম বাড়াতে লাগল। ২০০ মিলিয়ন। ২৫০ মিলিয়ন। ৩০০ মিলিয়ন।

শেষ পর্যন্ত একদিন সবাই শুনল ৪০০ মিলিয়ন মূল্যের শেয়ারের দামে হটমেইল বিক্রি হয়ে গেছে।    (translated from readers digest)

১,১৩৬ বার দেখা হয়েছে

১৫ টি মন্তব্য : “হটমেইল: এক আইডিয়া হতে ৪০০ মিলিয়ন ডলার”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।