কমনরুমের শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র !

সেদিন অফিসে জুলহাস ভাই এর সামনে পড়েই একটা দাবড়ি খাইলাম, “তরে সিসিবি তে দেখি না কেন?” আমি কইলাম যে “ছার, (অফিসে আবার কিসের ভাই?), কলেজে ভাল কাম খুব একটা করি নাই, দুঃখের স্মৃতিও নাই। কি লিখবো?” ………… আবার ঝাড়ি। কলেজে দুই আঙ্গুল দিয়া চড়াইত, আর এখন খালি ঝাড়ি দেয়। 😡

আমিও ভাবলাম, আর কতদিন প্যাসিভ মুড এ থাকব? কিছু একটা লিখি। নাহয় এট্টু টিজ খাব।

ঘটনাটা ৯৭ এর শেষের দিকে। কারেন্ট এফেয়ার্স এর রিহার্সেল হচ্ছে। কারেন্ট এফেয়ার্স নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা সুখের না। ক্লাশ এইটে থাকতে নাজনিন ম্যাডাম কারে যেন কইছিল যে আমি ম্যাপ ভাল পাই (ম্যাপ আকার নাকি আবার ভাল আর খারাপ)। ৩ বছর ইয়া ঢাউস ঢাউস ম্যাপ আকতে আকতে জীবন কালা হয়ে গেসিল। বেলতলায় আর না। পুলাপাইন বহুত ডাকছিল, আমি যাইনি ।

কিন্তু প্রিন্সিপাল যে বেকক্কা সেকেন্ড প্রেপ এক্সকিউজ করে দিবে এইতা ত বুঝি নাই। :(( ~x( পুরা ধরা। প্রথম দিন জেদ করে যাইনি। পরেরদিন আর লোভ সাম্লাতে পারলাম না। সেকেন্ড প্রেপ এর টাইম এ হাউজে হাজির। গিয়ে দেখি এক অদ্ভুত দৃশ্য। কমন রুম ভিতর থেকে বন্ধ, আর হাউজ মাস্টার কুদ্দুস স্যার বাইরে পায়চারি করতেসেন। ভেতর থেকে “দ্য রক” সিনেমার গুড়ুম গুড়ুম আওয়াজ আসছে। আমি যেই না কমন রুম এর দরজা ধাক্কাইতে গেছি, ওমনি স্যার বাজখাই গলায় চিতকার উঠলেন, “এই ছেলে, এখানে তুমি কি চাও? নিজে ত হাউজ এর কোন কাজে নেই, আবার অন্যদের দিস্টার্ব কর? কোন চান্স নাই। ওরা ভেতরে সাউন্ড এফেক্ট এর কাজ করছে? আমি বাইরে গার্ড দিচ্ছি যেন তোমাদের মত ফালতু ছেলেরা ঝামেলা করতে না পার। যাও, প্রেপ এ যাও।” :bash:

আমি পুরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম। এইটা আবার কি? আমি বেশ মন খারাপ করেই চলেই যাচ্ছিলাম। হঠাত মনে একটা খটকা লাগলো। ব্যাপারটা ঠিক স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না। :dreamy: সামথিং ফিশি……। ভেতরে যারা আছে তাদের এত কর্তব্যনিষ্ঠা অবশ্যই সন্দেহজনক। ব্যাপারটা একটু অনুসন্ধান করে দেখতে হয়। :-B

কমন্রুম এর সাথে লাগোয়া হাউজ প্রিফেক্ট সুমন এর রুম। চুপচাপ ওর রুম এ ঢুকে গেলাম। রুম এর স্কাইলাইট দিয়ে ঢোকার চেস্টা করতেই দেখলাম ভেতরে হুড়োহুড়ি লেগে গেল। স্কাইলাইট এর ফুচকি দিয়ে আমার মাথা দেখে সবার আত্মায় পানি ফিরে এল। ফয়সাল বলল, হারামজাদা তুই? এদিক দিয়ে কেন? দরজা দিয়ে আয়। আমি বললাম যে স্যার ঢুকতে দিচ্ছে না। 😕 ও মুচকি হেসে বলল, দাড়া, ব্যাবস্থা করছি। তুই দরজার সামনে যা।

দরজার সামনে গিয়ে দেখি সুমন কুদ্দুস স্যার কে বুঝাচ্ছে যে, আমি যেহেতু গান বাজনা পার্টি, তাই আজকে আমাকে একটু দরকার। স্যার গজগজ করতে করতে আমাকে ঢুকতে দিলেন।

ভিতরে ঢুকে আমার চক্ষু চড়কগাছ। ভালই সাউন্ড এফেক্ট এর কাজ চলছে। ক্যাসেট এ “দ্য রক” এর মিউজিক হচ্ছে আর টিভি তে অপুর্ব দৃশ্যমালা। :awesome: আদিম যুগের নির্বাক চলচ্চিত্র। কলেজে যাকে “ডকুমেন্টারি মুভি” B-) বলে আরকি। আমিও মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে পরলাম। জুলাই এ আমার ১৮ বছর বয়স হল। আমি তো এখন প্রাপ্তবয়স্কই O:-) ।

আসলে হয়েছে কি, স্যাররা বুঝতেই চায়না যে আমরা বড় হয়েছি। তাই জীবনের বড় একটা প্রায়োগিক শিক্ষা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছিলাম। ব্যাপারটা আমরা তাই নিজের হাতে তুলে নিলাম। যেহেতু শিক্ষামুলক ব্যাপার, তাই স্যার এর পারটসিপেশন টাও নিশ্চিত করা হল। এই আরকি।

কুদ্দুস স্যার ছিলেন সহজ সরল, অসম্ভব ভাল একজন মানুষ। কাজটা তার সাথে আমরা ভাল করনি।

কিন্তু কি করব? …… ক্যাডেট তো :dreamy: ।

২,১১৬ বার দেখা হয়েছে

৩০ টি মন্তব্য : “কমনরুমের শিক্ষামূলক চলচ্চিত্র !”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    স্বাগতম আরিফ ভাই, শুভ লেখালেখি......

    স্যারকে কিভাবে ম্যানেজ করলেন সেইটা বুঝতে পারি নাই :no:


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    শুভ ব্লগিং ভাইয়া।

    যেহেতু শিক্ষামুলক ব্যাপার, তাই স্যার এর পারটসিপেশন টাও নিশ্চিত করা হল।

    :)) :pira: :khekz: :khekz:


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।