ভাল আছি …. ভাল নেই

জীবন বড়ই বিচিত্র। খুব কম সময়ই আমরা নিজ নিজ অবস্থানে থেকে খুশি থাকি, ভাল থাকি। সেই সাথে জীবনের নিরাপত্তা নিয়েও সদাসংশয়। এই উইকএন্ডে আম্মার কথায় চাপা ঊৎকন্ঠা, অদূর ভবিষ্যতে ভূমিকম্পে ঢাকা দাঁড়িয়ে থাকবে কিনা তা নিয়ে। ক্যান্সার সার্ভাইবার মা আজ অপরিকল্পিত নগরায়ণের ভয়ে নিজেই সদাকম্পিত।

ব্যক্তি আমি হয়তবা ভূমিকম্প হতে নিরাপদ (ভৌগলিক অবস্থানগত কারনে)। কাগজে কলমে জীবনের নিরাপত্তাও আছে।আসলে কি তাই ……

ঘটনা একঃ স্প্রিং ব্রেকে ০৪ দিনের ছুটিতে আমার স্ত্রী বেড়াতে এসেছে। আমিও অফিস থেকে তাড়াতাড়ি বাড়ি ফিরে ওকে বললাম চল ঘূরে আসি। রাতে একটা দাওয়াত আছে তবে হাতে ঘণ্টা দুয়েক এর মত সময় আছে। অ্যামারিলো গ্রামে একটা মল আছে ওইটাই দেখে আসি। আমার বাসা থেকে ১০ মিনিটের পথ। তা মলের রাস্তার ঠিক আগের সিগনালে লাল বাতিতে আমরা বসা। আর ২০০ ফিট যেয়ে ডানে ঘুরলেই পৌঁছে যাব। যেহেতু ডানে যাব তাই আমি আগে থেকেই ওই লেনে, সবুজ বাতি জ্বলে ওঠায় সামনের গাড়িগুলো নড়তে শুরু করেছে। আমিও কেবল ব্রেক ছেড়ে আক্সিলেটরে চাপ দিয়েছি, হটাত বাম পাশ থেকে র‍্যাংলার জীপ আমার প্রিয়াসে গুঁতো। ফলাফল, আমার আমার গাড়ির বাম্পার, হেড লাইট, প্যাসেঞ্জার সাইডের টায়ার-এক্সেল ক্ষতিগ্রস্থ। অনেক কষ্টে পাশের পার্কিং লটে পৌঁছে যেই গাড়ি থেকে বেড়িয়েছি অবস্থা দেখতে অমনি ওই জীপের চালক (২২/২৩ বছরের আফ্রিকান আমেরিকান ও আর শ্বেতাঙ্গ বান্ধবী) আমাদের দিকে তেড়ে আসে। তাদের কথাবার্তা উত্তেজিত হলেও ভায়োলেন্ট ইন্টেন্ট ছিল না। আমার স্ত্রীকে ওদের গাড়ির ছবি তুলতে বলে আমি ৯১১ এ কল করলাম। পুলিশ আসতে সময় লেগেছে প্রায় ৩০ মিনিট, এর মাঝে ওই জীপ পলায়ন করেছে। যদিও যাবার আগে, নিজেদের দোষ স্বীকার করে নিজেদের নাম আর ইন্সুরেন্স ইনফো দিয়েছে।

পরে অবশ্য তারা নিজেদের বক্তব্য পরিবর্তন করে আমার ঘাড়ে পুরো দোষ চাপানোর চেষ্টা করে। কিন্তু দীর্ঘ ২১ দিনের বিচার-বিশ্লেষণ শেষে আমি ক্ষতিপূরণ পাই (ওদের পয়সায় সবকিছু ঠিকঠাক)।

ঘটনা দুইঃ আমার পাশের আপার্টমেন্টে থাকা ছেলেটির ঘটনাটা একটু ভিন্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফার্মাসিতে পাশ করে বর্তমানে পি.এইচ.ডি. অধ্যয়নরত। বায়োলোজিকাল সাইন্সের ল্যাবগুলোতে অনেক সময় দিতে হয়। মাঝে মাঝে ওকে দিনে ১৪/১৬ ঘন্টাও ল্যাবে থাকতে দেখেছি। এই সেইদিন, একটা পার্টি ছিল, শনিবারে। কিন্তু ছেলেটি ল্যাবে জটিল রিঅ্যাকশন চলছে। তাই হাতের কাজ গুছিয়ে শুধু খাওয়ার টাইমে এসে আমার ল্যাবে ফেরত যাবে। তখন রাত ১০.৩০, ও খাওয়ার পর ল্যাবে ফেরত যাচ্ছে। মাত্র ১০ মিনিটের পথ, তাও লোকাল রোডে। কিন্তু ল্যাবে আর যাওয়া হয়না ছেলেটার। এক প্রটেক্টেড গ্রিনে লেফট টার্নের সময় অপর পাশ থেকে ৭০/৭৫ মাইলে ছুটে আসা সেমিট্রাক দুমড়ে মুচড়ে দিয়ে ইঞ্জিনের উপর উঠে যায় ওর ক্যামরির। সুধু প্যাসেঞ্জার সাইডে ইম্প্যাক্ট আর জাপানি ইঞ্জিনিয়ারিং জানে বাঁচিয়ে দেয় ছেলেটিকে। কিন্তু না, ওই সেমিট্রাকের চালক তা হতে দিবে না। এয়ারব্যাগে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা ছেলেটিকে বের করে আনে গাড়ি থেকে। তারপর দমাদম ঘুষি চালিয়ে দেয় ছেলেটির মুখে। চশমা খুলে পড়ে, চোখের নিচে ফুলে উঠে। আক্সিডেন্টে জানে না মরে কি অপরাধটাই না করেছে এই ছেলেটি। ভাগ্য এবার ছেলেটির সহায় হয়, এক আমুলেন্স এই পথে যাচ্ছিল বলে ঘটনাটি দেখেতে পায়। তারা ছুটে এসে ছেলেটি বাঁচায় আর মার খাওয়া থেকে, এমনকি ৯১১ এও কল করে। ইতিমধ্যে খবর পেয়ে আমরাও হাজির হই ঘটনাস্থলে। ছেলেটিকে নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ভাবি, ভাগ্যিস লোকটার কাছে বন্দুক ছিল না। টেক্সাসে যেখানে স্কুলে পর্য্যন্ত ওপেন ক্যারি, সেই সময় গুলি না খেয়ে ঘুষি খাওয়াটাত ভাগ্যই বটে।

তাই সময় অসময় ভাবি, বেঁচে আছি এই কি বেশি না।

৪ টি মন্তব্য : “ভাল আছি …. ভাল নেই”

    • ইসতিয়াক আহমেদ (৯৮-০৪)

      ... আমরা সবসময় ভাবি, আমারা বাঙ্গালিরাই খারাপ। আসলে কিন্তু বিদেশিরা আমাদের চেয়ে কোনদিকে কম না। ওদের শুধু সু্যোগের অভাব। সুযোগের অভাবে সৎ ওরা, পাছে সিসি ক্যামেরায় সব ধরা পড়ে যায়।


      শ্রান্ত পথিক আমি, বেলাশেষে-
      চারপাশে অভেদ্য-দুর্গম পাঁচিল তুলে
      বসে থাকি নষ্ট ঘরে
      হিসাবের খাতা মেলে খুঁজি কতোটা অপচয় হলো।

      জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।