আমার নতুন পরিচয়ঃ আমি ক্যাডেট

অনেক দিন ধরে ভাবছি কিছু  একটা লিখব…… কিন্তু অনেক দেরি হয়ে গেল…। শেষ কবে বসেসিলাম লিখার জন্য মনে করতে পারছি না । কিছু একটা লিখার চেষ্টা করছি ভুল ত্রুটি হলে নবীন  হিসেবে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশাকরি ।

অনেক ইনটেকের বর্ষপূর্তি দেখে কলেজ এর প্রথম দিন গুলোর কথা মনে পড়ছে। এবং আরও বেশি মনে পড়ছে ভর্তির ইতিহাসের কথা।

কলেজ এর প্রথম কথা মনে  হলেই মনে পরে যায় আইয়ুব বাচ্চুর সেই গান “হাসতে দেখ গাইতে দেখ, ………………দেখ না কেউ হাসি শেষে নিরবতা” । যখনি টয়লেটে যেতাম তখন সবার মুখে এই গানই শোনা যেত। (ভাই ও বোনেরা সাকিব কে কে আর এর পক্ষ থেকে মাঠে ব্যাট করতে নামছে একটু ব্রেক নিলাম)।

সাকিব ১ রান করে আউট হয়ে গেল। 🙂 🙂 🙂

যাই হোক, কলেজ এর কথা বলার আগে কলেজ এ ভর্তির কথা বলে নেই।হটাত করে বাসায় সিদ্ধান্ত হল যে আমি এবং আমার ভাইকে ক্যাডেট কলেজে ভর্তি করানো হবে। সেই কথা মত আব্বু, আম্মু আর আমাদের দুই ভাইকে নিয়ে টাঙ্গাইল বাসা ভাড়া করে দিলেন এবং এক ফুপির মাধ্যমে শাহীদ ক্যাডেট কোচিং এ ভর্তি করে দিলেন । ক্লাস সেকশন ‘সি’ । সকালে কি একটা স্যার ক্লাস নিতেন আর খুব মারতেন।পরে শহীদ স্যারকে বলে সেকশন চেঞ্জ করে ‘বি’ সেকশন এ চলে আসি। সকালে লাভলু স্যার আর বিকালে শহীদ স্যার…এভাবে ক্লাস চলতে থাকল। অল্প কিছু দিনের মধ্যে শহীদ স্যার এর প্রিয় ছাত্র হয়ে গেলাম।লাস্ট বেঞ্চ এ ক্লাস করা এই আমার স্থান হল আড়াআড়ি করা ফাস্ট বেঞ্চ এর একদম কর্নারে, স্যার এর সবচেয়ে কাছে। স্যার আমাদেরকে পড়াতেন আর স্যার এর বউ এসে ক্লাস এর মধ্যেই স্যার এর মুখে খাবার তুলে দিতেন। ক্যাডেট কলেজ এ ভর্তির কিছুদিন আগে স্যার ইভিনিং ব্যাচের ১১ জন ছাত্রকে দাঁড়া করালেন এবং বললেন আমার এই ১১ টা ছেলে ক্যাডেট কলেজে চান্স পাবে। পরীক্ষার সময় আসলো পরীক্ষা দিলাম। রিটেনে চান্সও পেয়ে গেলাম এবং আমরা ওই ১১ জনও চান্স পেয়েছিলাম । উল্লেক্ষ আমরা দুই ভাইই চান্স পেয়েছিলাম। আমি রংপুরে আর আমার ভাই সিলেটে। তখন আমরা ঢাকায় টিটিটিসির স্টাফ কোয়ারটারে থাকতাম। বাসার সবাই অনেক খুশি হলেন বিশেষ করে আমার আব্বু। যাইহোক হটাত করে একদিন খবর আসলো আর ২ দিন পরে ভাইভা পরীক্ষা শাহিন কলেজে। যথারীতি পরীক্ষা দিতে গেলাম এবং আমি টোটাল ৩০-৩৫ টা প্রশ্নের মধ্যে মাত্র ৩ টা উত্তর দিতে পেরেছিলাম। যথারীতি বাসার সবার মন খুবই খারাপ এবং আমি আবার বিজ্ঞান কলেজে গেলাম ক্লাস সেভেন এর ক্লাস করতে। আমি বিজ্ঞান কলেজের ক্লাস সিক্স এর ফাইনাল পরীক্ষা দেইনি কিন্তু আমাকে ক্লাস সেভেন এ তুলে দিল কারন আমি ক্যাডেট কলেজে রিটেনে চান্স পেয়েছিলাম।

ভাইবা পরীক্ষার রেজাল্ট কবে দিবে তার কোন খোঁজ খবর ও রাখিনি। একদিন সকালে আব্বু পেপার দেখে আমাকে ডাক দিলেন আর বললেন তোদের ভাইভার রেজাল্ট দিয়েছে. তোদের আর আলমের(আমার খুব কাছের বন্ধু) রোল নাম্বারটা নিয়ে আয় দেখি হল কিনা? আমি রোল নাম্বার নিয়ে আসলাম। আর দেখলাম যে বাসার সবাই জড় হয়ে আছে পেপারের উপর। প্রথমে আমার ভাইএর টা খোঁজা শুরু হল কিন্তু পাওয়া গেলনা। নাম্বার খুজতে খুজতে আলম এর টা পেলাম তাও আবার শেষের দিকে কিন্তু আমারটা তখনও পাইনি। ওর ঠিক চারটা পরে আমার রোল নাম্বার পেলাম ঠিক লাস্ট থেকে চার নাম্বার এ। আর কই যাও, বাসার সবাইত খুব খুশি । সেই দিন প্রথম এত বড় হবার পরও আব্বু খুশিতে আমাকে কোলে তুলে নিয়েছিল। সাথে সাথে আব্বু নিজে গেলেন মিষ্টি আনতে। মিষ্টি নিয়ে এসে আমাকে দিয়ে সবার বাসায় পাঠালেন। আর সেইদিন থেকে আমার আরেক পরিচয় আমি একজন ক্যাডেট। আর
আমার আব্বু-আম্মু একজন ক্যাডেটের বাবা-মা, আমার ভাইবোন  একজন ক্যাডেটের ভাইবোন।

আমার এই নতুন পরিচয়ের পেছনে আমি সারা জীবন যাদের কাছে কৃতজ্ঞ থাকব তারা হলেন। আমার আম্মু, আব্বু, শহীদ স্যার, মনা মামা, বাবলু কাকা। মহান আল্লাহতালা তাদের দীর্ঘজীবী করুন আমার এই সুন্দর একটা পরিচয়ের পথে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা ও উৎসাহ প্রদানের জন্য।

১,৬১২ বার দেখা হয়েছে

১০ টি মন্তব্য : “আমার নতুন পরিচয়ঃ আমি ক্যাডেট”

  1. লুবজানা (২০০৫-২০১১)

    আমি বিজ্ঞান কলেজের ক্লাস সিক্স এর ফাইনাল পরীক্ষা দেইনি কিন্তু আমাকে ক্লাস সেভেন এ তুলে দিল কারন আমি ক্যাডেট কলেজে রিটেনে চান্স পেয়েছিলাম।

    কি মজা!! আমাকে যদি কেউ এরকম চান্স দিতো!!! বুঝাই যাচ্ছে স্যার দের খুব পেয়ারের বান্দা ছিলেন!! 😛 😛


    নিজে যেমন, নিজেকে তেমনি ভালবাসি!!!

    জবাব দিন
  2. শরিফ (০৩-০৯)
    আমি বিজ্ঞান কলেজের ক্লাস সিক্স এর ফাইনাল পরীক্ষা দেইনি কিন্তু আমাকে ক্লাস সেভেন এ তুলে দিল কারন আমি ক্যাডেট কলেজে রিটেনে চান্স পেয়েছিলাম।

    :))
    ভাইয়া আমিও শহীদ কোচিং এ ছিলাম । সিরাজগঞ্জ শাখায় । ক্যাডেট কলেজে চান্স পাবার পর যে কি খুশি হইছিলাম তা বলে শেষ করা যাবে না ।
    লেখা সুন্দর হইছে :clap: :clap: :clap: :clap:

    জবাব দিন
  3. নাইম

    রেজাল্টের দিন ঘুমাচ্ছিলাম আম্মু এসে বলল যে টিকছি পাশে ভাই ছিল খুসির চোটে আমার পিঠে একটা কিল বসায় দিল 😮 তবে এরপর আর কোনদিন বাসায় কেও মারে নাই। বাসার লোকজন বুঝত যে কলেজে এই জিনিষের খুব একটা অভাব নাই 😛

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।