জং আর জাদু

আমাদের এক স্যার এর কথা বলি।ডায়লগ পর্বে তার সেই বিখ্যাত ডায়লগ হাসনাইন বলেছে-“আই উইই…ল থ্রো ইইউ ফ্রঅঅম দা উইইন্ডো অঅর ফ্রঅম দা কলেএজ।” আমাদের বি ফরমের ফরম মাস্টার হবার পর তার সাথে আমাদের সম্পর্কের বেশ উন্নতি হয়। এর আগে তিনি প্যারেন্টস ডের পর ফর্ম এ আসে সবার ডেস্ক চেক করতেন। সিজ করার ক্ষেত্রে তার অসীম আগ্রহ ছিল। প্যারেন্টস ডের অনেক খাবারই তিনি নিজের মনে করে বাড়ী নিয়ে গেছেন। একবার হাউজ থেকে এক ক্যাডেট এর টি শার্ট সিজ করে, সেদিনই বিকালে গেমসে তা পরে হাজির।

……

ক্লাস ইলেভেন এর এক্সকারসনে আমাদের বাস টেকনাফ রেস্টহাউসের সামনে নষ্ট হয়ে গেল। ড্রাইভারের মেজাজ খুবই খারাপ। হেল্পারকে কু**র**চা,সু***র**চা বলছে।পরিস্থিতি খুবই গরম। এর ভেতর আমি বলে উঠলাম -ঐ মার মার। বলেই বাইরে তাকিয়ে আছি যেন কিছুই জানি না। স্যার একদম সামনের সিটে ছিল।পেছনে ফিরেই আসিফকে ধরল যে সে এই সাউন্ড করেছে। আসিফ আমাদের হাউস থেকে সবসময় ডিবেট এ যেত,আর যেকোন ব্যাপারেই যুক্তিতর্কের খেলা খেলত। সেও ছাড়ার পাত্র নয়। তার সাথে স্যারের বিতর্ক শুরু হয়ে গেল। পরিস্থিতি ঘোলা দেখে স্বীকার করে নিলাম যে আমিই সাউন্ড করেছি।সেদিন ফেরার পথে পাহাড়ী ঢালু রাস্তায় আমাদের বাসের স্টার্ট অফ হয়ে গেলে বাস যখন ঢাল বেয়ে নিচে নামতে শুরু করেছে,তখনই স্যার আমাদের মৃত্যুমুখে ফেলে রেখে লাফ দিয়ে রাস্তায় নেমে গেলেন।আর হাসিনের সেই উক্তি “we r going to die”.

………

আর একজন স্যার অল্পদিনের মদ্ধেই আমাদের ইনটেকে হিট।বিশেষ করে তার বল বানানোর কারখানার জন্য। ডায়াসের সামনে পড়ানোর সময় তার অজান্তেই তার আঙ্গুল নাকের ভেতর চলে যেত। আর শুরু হত বল বানানো। আর তারপর নিক্ষেপ পর্ব।ঘুমের সুবিধা পাবার আশায় ডায়াসের সামনে বসা নাসিবুল এই মানুষটার পিরিয়ডে কোনদিন ঘুম তো দুরের কথা শান্তিমত বসতে পারে নাই। আর স্যার এর কবিতা আবৃত্তি এক সরল ছন্দিত স্পন্দন। প্রথমে খুব জোরে, তারপর আস্তে ,তারপর আবার একটু জোরে ,আর শেষ শব্দটা যেন স্যার বাতাসের সাথে যথাসম্ভব মিশিয়ে দিতেন, এতেই যেন তার আবৃত্তির শিল্পমাধুর্য প্রকাশ পেত।

একদিন স্যার কবিতা পড়াতে আসছেন। আমাদেরকে আবৃতি করতে বললেন। একেক জন একেক স্টাইলে আবৃতি স্টাইলে আবৃতি শুরু করল। সবাই মুখ টিপে হাসছে,স্যার কিছুই বলতে পারছেন না। কিন্তু ভেতরে ভেতরে খুব চেতে গেছেন তা তার মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছিল।অবশেষে স্যার একটা শিকার পেলেন, আমাদের একজন নিজের আবৃত্তিতে নিজেই হেসে দিলো। স্যারের খুশি দেখে কে! ভিপির কাছে নিয়ে যাবে। কিছুক্ষণ পর আমাদের অনুরোধে ছেড়ে দিলেন। পাঞ্জেরী গাইডের সম্পাদক মনের উদারতা বুঝিয়ে দিলেন সেদিন।

আজ এটুকুই থাকল…………

১,৫৫৩ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “জং আর জাদু”

  1. এক্সারশন থেকে ফেরার পথে আমাদের বাস নষ্ট হয়ে গেলো। এডজুটেন্ট স্যারের টেনশনের সাথে সমানুপাতিক ভাবে আমাদের আনন্দ বাড়তেসিলো।
    পাশে একদম গ্রামের একটা বাড়িতে গিয়ে বসেছিলাম সবাই মিলে। ওনারা এত ভালো...আমাদের সবাইকে চা করে খাওয়ালো, আমরা উঠানে বসে গল্প করলাম সবাই মিলে।
    একদম অন্যরকম একটা অভিজ্ঞতা।

    জবাব দিন
  2. ইশতিয়াক, ভালো হয়ে যা। লিংকনের ব্যাপারটা না হয় বাদ দিলাম, আমারটা লিখলি না ক্যান তুই। তোদের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরই তো আমি লিংকনরে পাঠাইলাম রক্ষক হিসাবে।
    আর লিংকনের কাণ্ড দ্যাখ, বলছিলাম বাসের সামনে গিয়া ঠেস দিয়া দাড়াবি। আর ও গেছে পিছন দিয়া ধরতে। এই কাহিনী আগে বললি না ক্যান?

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।