ক্যাডেট কলেজের একটা সুন্দর সময় ক্যান্ডিডেটস টাইম। আমাদের কলেজে একই বিল্ডিং এ তিন হাঊস। তো ক্যান্ডিডেটস টাইম এ লেখাপড়ার সুবিধার জন্য ক্যান্ডিডেটস আলাদা ব্লক পেয়ে থাকে। মানে জুনিয়র ব্লক এর রাজা। এই রাজা হওয়ার আনন্দে আমরা আমাদের ব্লকে এ পাউডার ফেলে স্লিপ খেতে শুরু করলাম। দূর থেকে দৌড়ে এসে কে কত দূর যেতে পারে এই প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে গেল। আমার জুতার তলাটা মোটেই স্লিপারি হচ্ছিল না। তাই পাউডার দিয়ে স্লিপারি করতে শুরু করলাম। ভিলেন চরিত্র হাঊজের বেয়ারা মান্নান ভাই দূর থেকে নোট করে তা লাগিয়ে দিলেন হাউস মাস্টার (পেরেক = প্রফেসর রেজাউল করিম, ঝেনাইদাহ হতে উনি আমদানিকৃত) এর কাছে। আমরা কয়জন ধরা খেলাম। তার ভেতর পেরেক কি কারনে জানি আমাকে মোস্ট কালপ্রিট বলে অভিহিত করলেন। কি আর করা ? খাইলাম ক্যান্ডিডেটস ব্লক এর প্রথম ধরা।এটা ব্লক পাওয়ার ২য় দিন মনে হয়।
এর ২-৩ দিনের ভেতর আরও অনেক কাহিনী জন্ম নিল। এর ভেতর সাইকেল এর পাম ছাড়া অন্যতম। আমি,রনি,জাকারিয়া আর মঞ্জুর থাকতাম। আমি আর জাকারিয়া দুইজন দুই কোনার বেড এ থাকতাম । প্রেপ এ হাঊজে পড়ালেখা করছি। এমন সময় আবার পেরেক। যেন অপারেশন ক্লিন হার্ট। অপরাধীদের বাড়ী বাড়ী গিয়ে ধরা হচ্ছে। আমি আর জাকারিয়া জানলার পাশে বই রাখার অপরাধে আবার পাকড়াও। সেদিন ছিল বৃহস্পতিবার। আমাদের হাউস অফিসে এ হ্যান্ডস ডাঊন পজিশনে এ রেখে উনি উনার বাকি মিশন কমপ্লিট করতে গেলেন। এদিকে আমাদের লেট হয়ে যাচ্ছে। মার্চ আপ হওয়ার পর আমাদের দুইটা করে বাড়ী মেরে মুক্তি দেওয়া হল। ডাইনিং হলে স্যার ধরছিল বলে সহজেই মুক্তি পাওয়া গেল। তারপর স্পেশাল ডিনার এর জন্য সব ভুলে গেলাম। কিন্তু ডিনার এর পর বিনা মেঘে বর্জ্রপাত। পেরেক এর সাইকেলের পাম কে বা কারা ছেড়ে দিয়েছে,আর এই সন্দেহে আমি আবার গ্রেফতার। এবার তো নির্ঘাত বড় কিছু হবে এমন ভাব দেখাল পেরেক। স্টেটমেন্ট লিখতে হল। আসলে আমার মনে হয় পেরেক তার সাইকেলের পাম ছাড়ার কথা লজ্জায় কাউকে বলেনি। পরে অবশ্য পাম কে ছেড়েছিল তা জানতে পেরেছিলাম। ক্লাস টুয়েলভের আসার আগ দিন পর্যন্ত পেরেক আমার সাথে এই কারনে কখনই স্বাভাবিক ব্যবহার করেনি। আসার আগে ঊনার সাথে একটা শান্তি চুক্তির মত হ্যান্ডসেক হয়েছিল আমার।
সবচেয়ে স্মৃতিময় ধরাটাও এই সময়। ক্যান্ডিডেটস ব্লকের পাস দিয়েই রাস্তা। আর এ রাস্তা দিয়েই ইস্পাহানি স্কুল এর বাস যেত। স্যারদের ছেলেমেয়েদের ক্যাম্পাসে পৌছে দেবার জন্যই বাস আসত। আমাদের কিছু পোলাপাইন এদের টিজ করা শুরু করল। কয়েকদিনের ভেতর হুজুর পোলাপাইন বাদে আমরা সবাই যোগ দিলাম এই টিজিং উৎসবে। এর মাত্রা বাড়তে লাগলো। ৪ কি ৫ দিনের মাথায় স্টাফের (আলী কুত্তা) নজরে পরলাম আমরা। এই দিন আমাদের টিজ করার সময় মনে হয় হুশ ছিল না। দূর থেকে স্টাফের বাঁশির শব্দে আমরা হুঁশ ফিরে পেলাম। বুঝলাম কপালে শনি আছে। গেমস টাইমে ক্যানডিডেটসদের আফটারনুন প্রেপ থাকলেও আমাদের সেদিন গেমস এর ফলইন এ যাওয়া লাগলো। মার্চ আপের পর শুধু আমাদের হাউসকে(ক্যান্ডিডেটস) এডজুটেন্ট স্যার একাডেমিক ব্লকের বাস্কেটবল গ্রাঊন্ডে যেতে বললেন। আর স্টাফকে আনতে বলা হল বেত(রাখালের গরু পেটানোর মত লাঠি)। আমরা একলাইনে দাড়ালাম। লাইনের প্রথম বালক এমনই একজন যে হুজুরপার্টির নেতৃস্থানীয়।আমরা মেয়েদের + ছেলেদের টিজ করেছি। আর এই বালক কোন মেয়েকে টিজ করা তো দূরে থাক কথাও বলবে না। কথা বলতে বললে হয়ত “নাঊজুবিল্লাহ” বলবে। আর একেই কিনা এডজুটেন্ট স্যার জিজ্ঞাসা করলেন ‘হোয়াট হ্যাপেন্ড?’ বেচারার জন্য আমাদের খুব খারাপ লাগল। কিছুই করার নেই। সবাইকে হ্যান্ডস্ ডাঊন করানো হ্ল। বেচারা বালককে মারার সাথে সাথে জিজ্ঞাসা করা হতে থাকল কি হয়েছিল? এমন লজ্জাজনক একটা কর্মের কথা জান বের হয়ে গেলেও বালক মুখ খুলবে না এই প্রতিজ্ঞায় মার খেতে লাগলো। এক একটা বাড়ীর শব্দ শুনেই আমাদের জান কবজ হয়ে গেছে। আর এই বাড়ী কিনা আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে। প্রথম বালকের উপর ৫-৭ টি বাড়ী পড়ল। এর পরের জনকে একজন আবিস্কারক বলতে হবে। সে আবিস্কার করল যখন এডজুটেন্ট স্যার মারছেন তিনি জিজ্ঞাসা করছেন আমরা অপরাধটি করেছি কিনা,তখন গগন বিদারী চিৎকারে বলতে হবে ইয়েস স্যার। আর এতে তার বাড়ীর সংখ্যা কমে দাড়ালো ৩। সবাই বুঝতে পারল কি করতে হবে? গোটা এলাকা একটু পরপর ইয়েস স্যার ইয়েস স্যার চিৎকারে কেঁপে উঠতে লাগল। আর এর ফলে সবার গড় এসে দাড়ালো ২ বাড়ী। এর পরের পানিশমেন্ট গতানুগতিক ধারার ছিল কিন্তু আলী কুত্তা তাতে আরও মাত্রা যোগ করল। ফলে আমরা মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে আগে ছোটখাট একটা কমান্ডো কোর্স করে ফেললাম। কোর্স শেষে আমাদের একমাত্র সমস্যা হল ডাইনিং হ্ল এ বসার সময়। প্রায় ৭ দিন এই ব্যাথা নিয়ে আমাদের কাটানো লেগেছিল।
পানি মারা ছিল আমাদের আর একটা মজার কাজ। আমাদের পরেরদিকে সারাদিন হাউজে থাকা লাগতো আর খাওয়ার সময় শুধু ডাইনিং হ্ল। সারা হাউসের এখানে সেখানে আমরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে টেবিল বের করে লেখাপড়া করতাম। আমরা ছিলাম নিচ তলার হাউস। ২য় তলার হাউস সানসেটে নেমে বালতিতে করে পানি দিয়ে আমাদের ভেজান শুরু করল। কিছুদিনের ভেতর পানির মিসাইল যুদ্ধ শুরু হল।আমরা পলিথিন ব্যাগের ভেতর পানি ভরে মারতে শুরু করলাম। ২য় তলার একজন এই হামলার শিকার হয়ে আমাদের হাউসে কয়েকবালতি পানি মারার সিদ্ধান্ত নিল। কয়েকজনকে ম্যানেজ করে পানি আনিয়ে নিজে যখন হামলা চালাতে সানসেটে নেমেছে, তখন বাকী সবাই তার বানানো কুয়াতে তাকেই মৃত্যুদন্ড দিল।
বাটি চোর এর কাহিনী এই সময়ের আর এক আলোচিত ঘটনা। আমরা হাজার হোক জুনিয়র ব্লকের রাজা,তাই হাউসে স্পেশাল ডিনার খাওয়ার শখ হল কয়েকজনের। কিন্তু ডাইনিং হল থেকে টুয়েলভের কারনে আনা যাবে না। তাহলে কলেজ হাসপাতাল থেকেই নিতে হবে। হাসপাতালে এক ক্লাসমেট এডমিট আছে। তার কাছে একটি বড় বাটি পৌছালেই হবে। আমার একটা বড় বাটি ছিল।এই গ্রুপ এর কাছে তা দেওয়া লাগলো। তাদের এডমিট ক্যাডেটদের সাথে দেখা করতে বাধা দিলেন মেডিক্যাল এসিস্ট্যান্ট মমতাজ ভাই। তারা সরল বিশসাসে বাটি মমতাজ ভাইয়ের কাছে দিয়ে আসল যেন বাটিটা পৌছে দেওয়া হয়। আর এর পর মমতাজ ভাই বাটী চুরি করলেন।আর বাটীর খোঁজ পাওয়া যায় না। কি আর করা কারও কাছে ত কমপ্লেইনও করা যাবে না। আর একমাত্র ঊপায় তাকে টিজ করা। শুরু হল আমাদের টিজ করা। তাকে আমরা যেখানে দেখি সেখানেই বলে উঠি মমতাজ বাটীচোর,ঐ চুরা,ঐ মা*র*দ। দেখাগেল আমরা সবাই হাঊসে এক এক জায়গায় পড়ছি কি খেলছি হটাৎ খবর পাওয়া গেল মমতাজ যায়। ব্যস সবাই এক সাথে ওই বাটী চোর,মমতাজ বাটী চোর। এই সময় মমতাজের প্রতিক্রিয়া দেখার মত ছিল। হাঊসের সামনে দিয়ে সে আমাদের টিজিং এর সময় সে দৌড়ে পালাত। আর এই টিজিং আমরা এখনো কলেজ গেলে চালিয়ে যাব।
আমাদের রুম এ দারুন মজা ছিল। রনি আর মঞ্জুর ঢাকার, আমি আর জাকারিয়া খুলনা আর কিশোরগঞ্জ। এবার কাদের জায়গা ভাল? এ নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা তর্ক চলত। আমি আর জাকারিয়া জোট তৈরী করলাম। আমরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জয় পেয়েছিলাম। সেই মজার ঝগড়াগুলো আজও করতে খুব ইচ্ছা করে। এছাড়া চানাচুর পার্টি কিংবা রুম ক্রিকেট এগুলার মজা ভোলার নয়। আমাদের হাউসে অল্টারনেট ব্যাচের সাথে আমাদের খুবই খাতির ছিল। শাহেদ ভাই এর সাথে সবাই মিলে আড্ডা দেওয়া এ সময়ের আর এক মজা। আজ এক এক জন এক এক জায়গায়। কোথায় পেরেক, কোথায় মমতাজ??? আজ সবই স্মৃতি। অনেক কিছুই ভুলে গেছি। মনে পড়লে জানাব।
সাবাস ক্যাডেট ইশতিয়াক।
awesome................I am really impressed.Candidates time was really so exciting!..........NIce job my room-mate.
dhonnobad Cadet Raihan
একটার পর আরেকটা ঘাপলা বাঝাবেই। ক্যাডেটদের ক্যাডেটত্ব ঘুচানোর সাধ্য বোধহয় কারও নেই।
taratari mone kor...
tor lekhata amake agei disili..tokhno moja paisi..akhno aber pailam
kire ish prak ar khani sune moja palam. form ar kisu khani likle valo hoto
মোবারক ভাই নাই এখন আর? গোমতীর হাউস বেয়ারা ছিলেন বহুদিন।
মোবারক ভাই এখনো আছে। এবারও তার সাথে দেখা হয়েছে রিইউনিয়নে।
এডজুট্সেট সারের ১স man চিলাম আমি.......
sorry 2nd man
:)) :)) :))
কিরে হুজুরতো এখন প্রেম করে 🙁 কই থাক মামা আপডট দাও 😀 লেখা ভাল লাগছে ইশতি ভাইয়া 😉
ইশতি....ক্যান যে লিখা ছাইড়া দিলি !! :(( :((
:boss: :boss: :boss: