মূল কবিতাটি টার্কিশ কবি নাজিম হিকমেত রানের।কবিতার নাম:Ben içeri düştüğümden beri,অনুবাদ করা সবসময়ই কঠিন কাজ,আর তা যদি হয় নাজিম হিকমেতের কবিতা তা আরও কঠিনতর হয়ে ওঠে।এটাই আমার প্রথম অনুবাদ,সময় সুযোগ আর সাহস পেলে আরও টার্কিশ কবিতা অনুবাদের দুঃসাহস দেখাবো
আমি জেলে আসার পর সূর্যের চার পাশে দশ দশবার ঘুরে এসেছে পৃথিবী,
পৃথিবীকে জিজ্ঞেস করলে বলবে দশ বছর? এতো কিছুই নয়,অণু পরমাণুর মতই ক্ষুদ্র এক সময়।
আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলবো, জীবনের দশ দশটা বছর।
যে বছর আমার সাজা হলো,একটা কাঠপেন্সিল ছিল আমার,
লিখতে লিখে সাত দিনেই শেষ হলো ওর আয়ু,
ঐ পেন্সিলটিকে জিজ্ঞেস করো,ওর কাছে ঐ সময়টুকুই পুরো একটা জীবন।
খুনের দায়ে সাজা খাটা ওসমান,আমার সামনেই সাড়ে সাত বছর পূর্ণ করে ফেলল,
কিছুদিন পর চোরাচালানির অপরাধে আবারও ৬ মাসের সঙ্গী হলো আমার,
গতকাল চিঠি পেলাম ওসমানের,বিয়ে করেছে,বাবা হতে যাচ্ছে আগামী বসন্তে।
যে বছর আমার সাজা হলো,সে বছর মায়ের জরায়ুতে আশ্রয় নেয়া ভ্রূণগুলো এখন বয়সন্ধিতে,
ঐ বছরের উচু লম্বা শক্তিশালী তেজী ঘোড়াগুলোও হয়ত এখন শান্ত,বাধ্য গর্দভশাবক,
শুধু কদমের ডাল আর পাতাগুলো এখনো কচি,এখনো তাজা।
আমি জেলে আসার পর নাকি নতুন মাঠ,নতুন মঞ্চ,নতুন মার্কেট হয়েছে শত শত,
আমার পাড়া প্রতিবেশীরা নাকি অচেনা অজানা এক জায়গায় গড়ে তুলেছে বসতি।
আমি যে বছর জেলে আসলাম,রুটিগুলো ছিল ধবধবে সাদা,তুলোর মত নরম
পরে রেশনের নিয়ম করলো,রুটিগুলো হয়ে গেল কালো আর পোড়া,
আসামীদের দাবী,হাঙ্গামা,ভাঙচুরের ফলে রেশন বাদ দিল কর্তৃপক্ষ,
রুটিগুলো আর আগের রঙ,আগের স্বাদ ফিরে পেলনা।
যখন জেলে আসলাম তখনো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় নি,
ডাকাউ ক্যাম্পের চুলাও জ্বলে ওঠেনি তখনো,হিরোশিমা তখনো সবুজ আর উর্বর,
ধরবিহীন কোন ইহুদী শিশুর বহমান রক্তের মতো বয়ে গেছে সময়।
গন্তান্ত্রিক,আমলাতান্ত্রিক হ্যান ত্যান তান্ত্রিক উপায়ে ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে সেই অধ্যায়,
আমেরিকান ডলার এখন নাকি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ফন্দি আঁটছে।
এত কিছু সত্ত্বেও যেদিন আমি জেলে আসলাম সেদিন থেকেই সূর্যের আলো বেড়েছে একটু একটু করে,
অন্ধকারে বুক চিরে আলোকিত করেছে রাস্তা ঘাট আর ফুটপাতকে।
আমি জেলে আসার পর সূর্যের চার পাশে দশ দশবার ঘুরে এসেছে পৃথিবী,
আমি এখনো সেই পুরনো উদ্যম নিয়েই বার বার লিখে চলেছি ওদের কথা;
ওদের কথা যারা পিঁপড়ার সারি,সমুদ্রের মাছ,আকাশের বিহঙ্গের মত অগণিত,অসংখ্য,
যারা ভীরু,যারা সাহসী,যারা মূর্খ,যারা জ্ঞানী এবং যারা সংখ্যায় অসংখ্য,
এবং যারা ধ্বংস করে যারা সৃষ্টি করে,যারা পাপী যারা শিশু,
আমার গানে আমার কবিতায় কেবল এরাই ঠাই পায়।
যারা বাকি রইলো তারা লৌকিকতাবর্জিত,ইতিহাসের মহাকাব্যে তাদের স্থান হয়না কখনো,
তাদের চোখে আমার এই দশ বছর খামোখা, বৃথা,অন্তঃসারশূন্য।
কবিতাযুগ চলতেছে।
ভালো হইছে হুমায়ুন।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ রাজিব ভাই।নাজিমের একেকটা কবিতা পড়ি আর মনে হয় কবিতাগুলো সবার পড়া দরকার।যেহেতু নাজিম হিকমেতের সব কবিতা পড়া শেষ আমার তাই সামনে আরও কিছু অনুবাদের চেষ্টা করবো 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
অনুবাদ ভালো কাজ।
চালু রাখ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সার্থক অনুবাদ।
একবারের জন্যেও মনেহয় নাই ভিনদেশি কিছু একটা পড়ছি। বরং বারবার মনে হয়েছে খুবই চেনা কিছু একটা যেন।
চালিয়ে যাও। আরও পাঠের সুখ পেতে চাচ্ছি।
এই লাইনটা একটু পরিষ্কার করে লিখো -
"আমি জেলে আসার পর সূর্যের চার পাশে দশ দশবার ঘুরে এসেছে পৃথিবীর চার পাশে"
হয়তো প্রথম লাইনটাই লিখতে চেয়েছিলে, কি জানি?
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ধন্যবাদ ভাই।তাড়াহুড়োয় ভুল হয়ে গিয়েছিল,এডিট করে দিয়েছি 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
দারুন হয়েছে হুমায়ুন, অনুবাদ চলতে থাকুক :thumbup:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ধন্যবাদ আকাশ দা 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
পড়ার পর থেকেই মুখটা নিশপিশ করছিল সবাইকে শোনানোর জন্য।
কবিতা পাঠ ও রেকর্ড করে ফেললাম।
শোনা যাবে এখানে
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ভালো হইছে ভাইয়া :clap:
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
পারভেজ ভাই,
আপনার এই স্বতঃস্ফূর্ততাটুকু আমার খুব ভালো লাগে। মন চাইলো তো গান অনুবাদ করলেন, গান লিখয়ে ফেললেন, পাঠও করলেন।
পাঠ ভালো লেগেছে। আপনার আশপাশের সবাই আপনার সাহচর্যে প্রাণিত হবে এ আর আশ্চর্য কি।
ভাইরে, ইমোশনাল করে দিলা তো......
:shy: :shy: :shy:
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
নাজিম হিকমত এর কিছু কবিতা পড়েছিলাম সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদে।
আর শিমুল মুস্তফার কণ্ঠে দুটো অন্তত শুনেছি। তার মধ্যে এ-কবিতা ছিল।
অনুবাদ খুবই ভালো হয়েছে।
আগে শোনা কবিতাটিও এখানে দিয়ে দিলাম।
আমি জেলে যাবার পর - নাজিম হিকমত
জেলে এলাম সেই কবে
তারপর দশবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
পৃথিবীকে যদি বলো, সে বলবে-
"কিছুই নয়,
অণুমাত্র কাল।"
আমি ব'লব-
"আমার জীবনের দশটা বছর।"
যে বছর জেল এলাম
একটা পেন্সিল পেলাম
লিখে লিখে ক্ষইয়ে ফেলাতে এক হপ্তাও লাগে নি।
পেন্সিলকে জিজ্ঞেস করলে সে বলবে:
"একটা গোটা জীবন।"
আমি ব'লব:
"এমন আর কী, একটা মাত্র সপ্তাহ।"
যখন জেলে গেলাম
খুনের আসামী ওসমান
কিছুকাল ছাড়া পেল
তারপর চোরাই চালানের দায়ে
ঘুরে এসে ছ'মাস কয়েদ খেটে আবার খালাস হ'ল
কাল তার চিঠি পেলাম বিয়ে হয়েছে তার
আগামী বসন্তে ছেলের মুখ দেখবে।
আমি জেলে আসবার সময়
যে সন্তানেরা জননীর গর্ভে ছিল
আজ তারা দশ বছরের বালক।
সেদিনকার রোগা ঠ্যাং-লম্বা ঘোড়ার বাচ্চাগুলো
বেশ কিছুদিন হ'ল রীতিমত নিতম্বিনী ঘোড়ায় পরিণত হয়েছে।
কিন্তু জলপাইয়ের জঙ্গল আজও সেই জঙ্গল
আজও তার তেমনি শিশু।
আমি জেলে যাবার পর
দূরবর্তী আমার শহরে জেগেছে নতুন নতুন পার্ক
আর আমার বাড়ির লোকগুলো
এখন উঠে গেছে অচেনা রাস্তায়
যে বাড়ি আমি কখনো চোখেও দেখি নি।
যে বছর আমি জেলে এসেছিলাম
রুটি ছিল তুলোর মত শাদা
তারপর এই রেশনের যুগ
এখানে এই জেলখানায়
লোকগুলো মুঠিভর রুটির জন্যে হন্যে হ'ল
আজ আবার অবাধে কিনতে পারো
কিন্তু কালো বিস্বাদ সেই রুটি।
যে বছর আমি জেলে এলাম
দ্বিতীয় যুদ্ধের সবে শুরু
দাচাউ-এর শ্মশান-চুল্লী তখন জ্বলে নি
তখনও এটম বোমা পড়ে নি হিরোশিমায়।
টুটি-টেপা শিশুর রক্তের মত সময় বয়ে গেল
তারপর সমাপ্ত সেই অধ্যায়
আজ মার্কিন ডলারে শোনো তৃতীয় মহাযুদ্ধের বোল।
কিন্তু আমি জেলে যাবার পর
আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে দিন।
আজ অন্ধকারের কিনার থেকে
ফুটপাথে তাদের ভারী হাতের ভর দিয়ে
তারা অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে।
আমি জেলে যাবার পর
সূর্যকে দশবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
আর আমি বারম্বার সেই একই কথা বলছি
জেলখানায় কাটানো দশটা বছরে
যা লিখেছি সব তাদেরই জন্যে
তাদেরই জন্যে, যারা মাটির পিঁপড়ের মত
সমুদ্রের মাছের মত, আকাশের পাখির মত অগণিত,
যারা ভীরু, যারা বীর
যাঁরা নিরক্ষর, যারা শিক্ষিত
যারা শিশুর মত সরল
যারা ধ্বংশ করে
যারা সৃষ্টি করে
কেবল তাদেরই জীবনবৃত্তান্ত মুখর আমার গানে।
আর যা কিছু
ধরো, আমার জেলে দশটা বছর-
শুধুমাত্র কথার কথা
নুপুরদা এই অনুবাদ দেখে বুঝলাম আমাকে দিয়ে অনুবাদ হবে না 😀
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
তোমার অনুবাদ খুবই ভালো হয়েছে। কবিতা অনুবাদ করে তার মধ্যে কাব্যকে ধরে রাখা, বক্তব্য অটুট রেখে, প্রচণ্ড শ্রমসাধ্য কাজ -- অভিজ্ঞতা কাজে লাগে।
তুর্কি ভাষা বেশ ভালো রপ্ত করেছো দেখে ভালো লাগছে। আরো অনুবাদ চাই।
এইজন্যই কবিতারর অনুবাদকে রি-কম্পোজিং করাও বলে।
ভাবটা অর্থটা ধরে রেখে নতুন একটা কবিতা লিখার মতই হয় ব্যাপারটা
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
হুমায়ুন, honestly speaking, আমার কাছে তোমার অনুবাদটা বেশী ভাল লেগেছে। ঐযে তুমি নিজেই যেটা বললে, তাড়াহুড়া, ঐটা করোনা। আমার ধারনা, অনুবাদের আক্ষরিকতাটুকুকে একটু পাশ কাটিয়ে ওর ছায়াটাকে মাঝে মাঝে যদি ব্যবহার করতে পারো, তবে তুমি হয়ে উঠবে এক বিরাট প্রতিভা অচিরেই। অনেক শুভকামনা। অপেক্ষায় থাকলাম আরো অনুবাদের।
:thumbup: :thumbup: :thumbup:
ধন্যবাদ ভাইয়া,চেষ্টা করছি আরও কিছু অনুবাদ করার 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
ভালো লাগল। অনুবাদের জন্য ধন্যবাদ।
নিজের মনের আনন্দে লিখালিখি করি।
ধন্যবাদ 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
অনেক ভালো লাগলো ভাই । চালিয়ে যান । :boss:
:teacup:
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
মাথায় বুদ্ধিসুদ্ধি কিঞ্চিত কম বলে কিনা জানি না তোমার অনুবাদটাই ভাল লাগছে। বুঝতে পারছি। চমৎকার। আরো চাই অনুবাদ। :thumbup:
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মকা দা ধন্যবাদ,
আমরা কিন্তু একই দলে 😉
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
নাজিম হিকমতে মুগ্ধ আমি সেই বিশ্ববিদ্যালয় জীবন থেকে। তোমার অনুবাদ পড়ার জন্যই ব্লগে ঢুকলাম। ভালো লাগলো। অব্যাহত রাখো।
নাজিম পাঠ আমার বা আমাদের আরো অনেকেরই সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের অনুবাদ দিয়ে। 'জেলখানার চিঠি' আরেকটি প্রিয় কবিতা আমার। পড়তে পারো। ভালো লাগবে।
জেলখানার চিঠি
মুল : নাজিম হিকমত
অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায়
প্রিয়তমা আমার, তোমার শেষ চিঠিতে তুমি লিখেছ;
'মাথা আমার ব্যথায় টনটন করছে, দিশেহারা আমার হৃদয়।'
তুমি লিখেছ; 'যদি ওরা তোমাকে ফাঁসি দেয়
তোমাকে যদি হারাই, আমি বাঁচব না।'
তুমি বেঁচে থাকবে, প্রিয়তমা বধূ আমার;
আমার স্মৃতি কালো ধোঁয়ার মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাবে,
তুমি বেঁচে থাকবে আমার হৃদয়ে রক্তকেশী ভগিনী,
বিংশ শতাব্দীতে, মানুষের শোকের আয়ু বড়জোর এক বছর।
মৃত্যু...,
দড়ির একপ্রান্তে দোদুল্যমান শবদেহ_
আমার কাম্য নয় সেই মৃত্যু। কিন্তু প্রিয়তমা আমার, তুমি জেনো
জল্লাদের লোমশ হাত যদি আমার গলায় ফাঁসির দড়ি পরায়
নাজিমের নীল চোখে ওরা বৃথাই খুঁজে ফিরবে ভয়।
অন্তিম ঊষার অস্ফুট আলোয়
আমি দেখব আমার বন্ধুদের, তোমাকে দেখব।
আমার সঙ্গে কবরে যাবে শুধু আমার এক অসমাপ্ত গানের বেদনা।
বধূ আমার, তুমি আমার কোমল প্রাণ মৌমাছি
চোখ তোমার মধুর চেয়েও মিষ্টি।
কেন তোমাকে লিখতে গেলাম ওরা আমাকে ফাঁসি দিতে চায়।
বিচার সবেমাত্র শুরু হয়েছে_
আর মানুষের মুণ্ডুটা তো বোঁটার ফুল নয়
যে ইচ্ছে করলেই ছিঁড়ে নেবে।
ও নিয়ে ভেব না, ওসব বহু দূরের ভাবনা।
হাতে যদি টাকা থাকে, আমার জন্য কিনে পাঠিয়ো গরম একটা পাজামা
পায়ে আমার বাত ধরেছে।
ভুলে যেয়ো না স্বামী যার জেলখানায়
তার মনে যেন সব সময় ফুর্তি থাকে।
বাতাস আসে বাতাস যায়।
চেরির একই ডাল একই ঝড়ে দুবার দোলে না।
গাছে গাছে পাখির কাকলি পাখাগুলো উড়তে চায়
জানালা বন্ধ; টান মেরে খুলতে হবে
আমি তোমাকে চাই; তোমার মতোই রমণীয় হোক জীবন
আমার বন্ধু, আমার প্রিয়তমার মতো...
আমি জানি দুঃখের ডালি আজও উজাড় হয়নি
কিন্তু একদিন হবে।
নতজানু হয়ে আমি চেয়ে আছি মাটির দিকে
উজ্জ্বল নীল ফুলের মঞ্জুরিত শাখার দিকে আমি তাকিয়ে
তুমি যেন মৃণ্ময়ী বসন্ত, আমার প্রিয়তমা
আমি তোমার দিকে তাকিয়ে।
মাটিতে পিঠ রেখে আমি দেখি আকাশকে
তুমি যেন মধুমাস, তুমি আকাশ
আমি তোমাকে দেখছি, প্রিয়তমা।
রাত্রির অন্ধকারে, গ্রামদেশে শুকনো পাতায়
আমি জ্বালিয়েছিলাম আগুন_
আমি স্পর্শ করছি সেই আগুন,
নক্ষত্রের নিচে জ্বালা অগি্নকুণ্ডের মতো তুমি
আমার প্রিয়তমা, আমি তোমাকে স্পর্শ করছি।
আমি আছি মানুষের মাঝখানে,
ভালোবাসি আমি মানুষকে
ভালোবাসি আন্দোলন, ভালোবাসি চিন্তা করতে
আমার সংগ্রামকে আমি ভালোবাসি
আমার সংগ্রামের অন্তস্তলে
মানুষের সামনে তুমি আসীন
প্রিয়তমা আমার, আমি তোমাকে ভালোবাসি।
বেঁচে থাকার অনেক আশা প্রিয়তমা
তোমাকে ভালোবাসার মতোই একাগ্র বেঁচে থাকা
কী মধুর, কী আশায় রঙিন তোমার স্মৃতি...
কিন্তু আর আমি আশায় তুষ্ট নই,
আর আমি শুনতে চাই না গান
আমার নিজের গান এবার আমি গাইব...
আমাদের ছেলেটা বিছানায় শয্যাগত
বাপ তার জেলখানায়
তোমার ভারাক্রান্ত মাথাটা
ক্লান্ত হাতের ওপর এলানো
আমি আর আমাদের এই পৃথিবী
একই সূচ্যগ্রে দাঁড়িয়ে।
কাল রাত্রে তোমাকে আমি স্বপ্ন দেখলাম
মাথা উঁচু করে
ধূসর চোখ মেলে তুমি আছ আমার দিকে তাকিয়ে_
তোমার আর্দ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান
কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না
কৃষ্ণপক্ষ রাত্রে কোথাও আনন্দ সংবাদের মতো
ঘড়ির টিকটিক আওয়াজ,
বাতাসে গুনগুন করছে মহাকাল
আমার ক্যানারির লাল খাঁচায় গানের একটি কলি
লাঙল চষা ভুঁইতে
মাটির বুক ফুঁড়ে উদ্গত অঙ্কুরের দুরন্ত কলরব
আর এক মহিমান্বিত জনতার বজ্রকণ্ঠে
উচ্চারিত ন্যায্য অধিকার_
তোমার আর্দ্র ওষ্ঠাধর কম্পমান
কিন্তু তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে পেলাম না।
আশাভঙ্গের অভিশাপ নিয়ে জেগে উঠলাম
ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বইতে মুখ রেখে
অতগুলো কণ্ঠস্বরের মধ্যে
তোমার স্বরও কি আমি শুনতে পাইনি?
যে সমুদ্র সব থেকে সুন্দর
তা আজও আমরা দেখেনি
সব থেকে সুন্দর শিশু আজও বেড়ে ওঠেনি
আমাদের সব থেকে সুন্দর দিনগুলো
আজও আমরা পাইনি
মধুরতম যে কথা আমি তোমাকে বলতে চাই_
সে কথা আজও আমি বলিনি।
কিন্তু আমি জেলে যাওয়ার পর
আগের চেয়ে অনেক উজ্জ্বল হয়েছে দিন
আর অন্ধকারের কিনার থেকে
ফুটপাতে তাদের ভারী হাতে ভর দিয়ে
তারা অর্ধেক উঠে দাঁড়িয়েছে
আমি জেলে যাওয়ার পর
সূর্যকে দশবার প্রদক্ষিণ করেছে পৃথিবী
আর আমি বারংবার সেই একই কথা বলছি
জেলখানায় কাটানো দশটা বছরে
যা লিখেছি সব তাদেরই জন্য
তাদেরই জন্য, যারা মাটির পিঁপড়ের মতো
সমুদ্রের মাছের মতো,
আকাশের পাখির মতো অগণিত
যারা ভীরু, যারা বীর
যারা নিরক্ষর, যারা শিক্ষিত
যারা শিশুর মতো সরল, যারা ধ্বংস করে
যারা সৃষ্টি করে
কেবল তাদেরই জীবন বৃত্তান্তমুখর আমার গানে
আর যা কিছু
ধরো, আমার জেলের দশটা বছর
শুধুমাত্র কথার কথা।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
ধন্যবাদ সানাউল্লাহ ভাই,সুভাষ মুখোপাধ্যায় এর অনুবাদ অসাধারণ,কোন তুলনা চলেনা।টার্কিশ ভাষাটা বেশ ভালোই পারি,সেই সুবাদে নাজিম হিকমেত,ওরহান পামুক,এলিফ শাফাক পড়া হয় প্রায়ই।আরেকটা কবির নাম বলি "Bedri Rahmi EYUBOĞLU",নাজিম হিকমেত এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু।পড়ে দেখতে পারেন, ইংরেজি অনুবাদ আছে কিনা বলতে পারছিনা,আর না থাকলে আমিই একদিন অনুবাদ করে ব্লগে দিয়ে দিব। 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।
নাজিম হিকমত-এর 'জেলখানার চিঠি' অনেক আগেই পড়েছি। কবিতাটি আমার মুখস্থ আছে।
তোমার লেখা অনুবাদটি খুব ভালো লাগলো। অনেক অনেক সাধুবাদ।
:boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss: :boss:
সিসিবিতে আসি নাই ক'দিন... এরই মাঝে তুমি লিখে ফেললে অসাধারণ লেখাটা!
এক নিঃশ্বাসে পড়লাম। 🙂 আরো অনেক অনেক লেখা চাই তোমার থেকে, ভাইয়া!
আমার কবিতা পাঠ টা কি শুনেছো?
না শূনে থাকলে এখান থেকে শুনতে পারবে:
পারভেজের কবিতা পাঠ
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
আপনার গুণমুগ্ধ মানুষ আমি, ভাইয়া! 🙂 এই যে নিজেই উদ্যোগ নিয়ে আপনি এগিয়ে আসেন, কবিতা পড়েন, গান করেন, লেখেন অথবা মতামত জানান... এটা আমার দারুণ লাগে! বড় ভাইয়া তো এমনই হবেন! চমৎকার!! :boss: :boss:
আমার সত্যিকারে ছোট বোন থাকলে এই কথাটা হয়ত আরও আগেই শোনা থাকতো।
আর তাই এই বয়সে এসে এই কথাগুলো শুনে এতটা আবেগপ্রবন হয়ে পড়তাম না।
"বড় ভাইয়া তো এমনই হবেন! চমৎকার!!"
তাও ভাগ্য, যে দেরীতে হলেও শোনা তো হলো!
মনে হচ্ছে, সত্যি সত্যিই এতদিনে একটা ছোট বোনের দেখা পেলাম তাহলে...... (সম্পাদিত)
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
:hatsoff: :hatsoff:
ধন্যবাদ আপা,সময় সুযোগ বের করতে পারলে অবশ্যই লিখবো 🙂
তুমি গেছো
স্পর্ধা গেছে
বিনয় এসেছে।