ইয়ুনিভার্সিটির পূব পাশে “টেক গেটো” বা বস্তি, সেখানে রাজ্যের পুরোনো জরাজীর্ন বাড়িঘর আর এপার্টমেন্ট। আসার পরপরই সাবধান করে দেয়া হয়েছিল যেন শহরের ওদিকটায় বেশি একটা না যাই। ওটা অপরাধ প্রবন এলাকা। ছিনতাই রাহাজানি খুন সবই চলে। আর আছে ড্রাগস- কতগুলো বাড়ী তো রীতিমত “ক্র্যাক হাউস” হিসাবে পরিচিত। এই মহল্লায় থাকে যত নিম্ন আয়ের লোকজন, বেশির ভাগই কালো আর হিস্পানিক। আর থাকে যত বিদেশী ছাত্রছাত্রী, যার মধ্যে ভারতীয় ও চীনেরাই বেশি।
জীবন এখানে অবিমিশ্র সুখের নয়। গ্রীষ্মকালে বেজায় গরম, ফারেনহাইটে একশ ডিগ্রী ছাড়িয়ে যায়। আর শীত বসন্ত জুড়ে কনকনে ঠান্ডা বাতাস- মাংস ভেদ করে হাড় অবধি চলে যায়। শীতকালে আবার অল্পবিস্তর বরফও পড়ে। সেটা তেমন খারাপ না, গরম কাপড়চোপড় পরলেই হল। বরফ দিয়ে তূষার মানবের পুতুল বানিয়ে তার পাশে ছবি তোলার একটা মচ্ছব চলে তখন। বরফ ছাড়া “বিদেশে আছি” ব্যাপারটা ঠিক বিশ্বাস করানো যায় না, নিজের কাছেও তেমন বিদেশ বিদেশ লাগে না। তবে বরফে পা পিছলে আছাড় খাওয়ার বিপদ আছে। মুশকিল হয় বসন্তে। এই দেখছি সুন্দর ঝকমকে দিন, হাল্কা পোশাকে দিব্যি ফুরফুরে মেজাজে ক্যাম্পাসে এসেছি। হঠাৎ বলা নেই কওয়া নেই ঠান্ডা হাওয়া বইতে শুরু করলো- যাকে বলে কোল্ড ফ্রন্ট। কেঁপে ঝেঁপে কাতর দশা- কোন মতে ঘরে পৌছাতে পারলে বাঁচি। মার্কিন দেশে এমনিতেই হাঁটা দূরত্ত্বে কিছু নেই, টেক্সাসে তো আরো না। গাড়ি না থাকলে সমূহ বিপদ।
আবহাওয়ার পাগলামির উপরে আছে ছেলে ছোকড়ার উৎপাত। এই মহল্লার ছেলেপিলে সব মহা বিচ্ছু। অকারনেই গায়ে পড়ে গোলমাল করে। হয়তো একাকি বাইরে দাঁড়িয়ে সিগারেট টানছি- কাছে এসে সিগারেট চাইবে, নয়তো পয়সা। গালাগাল মারপিটের ঘটনাও বিরল নয়। একবারতো খামকা এক ভারতীয় ছাত্রকে মেরে অজ্ঞান করে গলির ভেতরে ফেলে রেখেছিল, আমাদের বাসার ধারে কাছেই। আর কিছু না করলে নিদেনপক্ষে গাড়ি গুলোর উপরে কিছু কেরামতি করবেই। হয়তো লাঠির ঘায়ে কাঁচ ভেঙ্গে দিল, কি ভেতরের রেডিও চুরি করলো, বা পেরেক দিয়ে গাড়ির গায়ে দিল আঁচড় কেটে। দরজা ভেঙ্গে ঘর সাফ করার ঘটনাও দেখেছি। এসব বাঁদরামোর কোন প্রতিকার অবশ্য নেই। বলতে কি , এদের যন্ত্রনায় বিদেশি আমরা বেশ ক’বার ডেরা বদলেছি।
তো এরকম পরিবেশে বেশিদিন থাকলে মানুষ কিছুটা ডিফেন্সিভ হতেই পারে। তারি নমূনা দেখলাম একদিন নিজের বাসায়। ৯ নং সড়কের এক বাসায় কয়েকজনের সাথে থাকি তখন। কয়জন মানে সঠিক কয়জন তা বলা কঠিন- কখনো তিন, আবার কখনো ছয়। বাংলাদেশ এমব্যাসি নামে পরিচিত এই বাড়িটার বিশেষ মহিমা ছিল। সে কথা আরেকদিন হবে।
এক রাতে ঘরে শুধু আমরা দুজন। কাউচে বসে টেলিভিশন দেখছি। হঠাৎ মনে হল জানালায় কে যেন উঁকি দিয়ে নিমেষে সরে গেল। সাথে সাথে আমাদের ইন্দ্রিয় সজাগ। সোজা চেয়ে আছি জানালার দিকে। হ্যাঁ- আবার। একটা বিকট মুখ পলকের জন্য জানালায় আবার দেখা গেল। এরপর টের পেলাম কে বা কারা যেন গুটি গুটি বারান্দায় উঠে আসছে। আমার বন্ধুর একটা গাড়ি ছিল, বাইরে খোলা জায়গায় রাখা। ওর ধারনা হল গাড়ি চুরি বা কোন শয়তানী মতলবে কেউ এসেছে। অমনি রান্না ঘর থেকে সবচেয়ে বড় ছোরাটা হাতে নিয়ে দরজার আড়ালে- যাকে বলে, পজিশন নিল। আমি তো হা হা করে ওকে ঠেকাতে গেছি। পাগল নাকি! ছুরিছোরা নিয়ে আবার কি কান্ড হবে কে জানে। চুপচাপ মাথা ঠান্ডা করে দেখ আসলে ব্যাপারটা কি। দরজার উপরের ভাগে কাঁচ, সেটা আবার কাগজ দিয়ে ঢাকা। সেই কাগজের ফুটো দিয়ে দেখি জনা কয়েক ছেলে ছোকড়া, একজনের মুখে বীভৎস মুখোশ। আবছা আলোয় অন্যদের ঠিক ঠাহর করা যাচ্ছে না। ওরা বারান্দায় উঠে এসেছে- দরজায় হাত দিল বলে। ঠিক তখন আমার বন্ধুর দেহে যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। চোখের পলকে এক ঝটকায় দরজাটা খুলে ছোরা বাগিয়ে বিকট এক হুঙ্কার। ছেলেগুলি ভয়ানক চমকে গিয়ে আঁ আঁ শব্দ করে পেছন বাগে দিল লাফ। একজন তো টাল সামলাতে না পেরে পড়েই গেল লনে। কয়েক মহূর্ত সবাই কাঠ। তারপর শুরু হল হাসির হররা। ওরা আসলে আমাদের সহপাঠি, ভারতীয় ছাত্র কজন। স্রেফ মজা করতে এসেছিল। আমার বন্ধুও খানিক অপ্রস্তুত। তারপর সবাই ঘরে বসলাম। কফি ও সিগারেট যোগে বেশ একচোট আড্ড হলো। বলা বাহুল্য ঐরকম মজা করার বিপদ আমরা বেশ বুঝে গেছি তখন।
মজা পাইলাম। 😛
ধন্যবাদ!
তোমার আগের লেখাগুলোর তুলনায় এ লেখাটা পড়ে এটাকে একটা ফাঁকি দেয়া লেখা বলেই মনে হচ্ছে, মাহবুব!
আগের লেখার মত লেখা চাই।
চেষ্ঠা করছি, খায়রুল ভাই 🙂
হ্যালুইন ছাড়া ভয় দেখানোতেও বিপদ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
একটা সত্য ঘটনা বলি, তা হলে বোঝা যাবে কত বিচিত্র উপায়ে এখানে বিপদ আসে। স্কটিশ ব্যাবসায়ী ভদ্রলোক হিউষ্টনে এসেছেন, সন্ধ্যায় ডাউন টাউনে কিছু সময় কাটিয়ে মোটেলে ফেরার সময় পথ ভুলে ঢুকে গেছেন এক অভিজাত আবাসিক এলাকায়। পথের সন্ধান জানার আশায় গাড়ী থেকে নেমে এক বাসার দরজায় ঘন্টা বাজিয়েছেন। অম্নি ভেতর থেকে গুলি, ভদ্রলোক মারা গেলেন। এ নিয়ে সেই সময় মিডিয়াতে বেশ হৈ চৈ হয়েছিল।
:-B
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
হ্যালুইনেও বিপদ হতে পারে। ১৯৯২ সালে লুইজিয়ানায় এক হ্যালুইন পার্টিতে যাবার সময় ভুল বাড়িতে চলে গিয়েছিল এক জাপানী এক্সচেঞ্জ ছাত্র। বাড়িওয়ালা দরজা খুলে গুলি করে মেরে ফেলে তাকে।
সামান্য ঘটনার অসামান্য বিবরণ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂
অনেকদিন পর এসে সবগুলো লেখা পড়ার মজাই আলাদা। ভাল লাগলো মাহবুব ভাই ।
আপনার আরো অনেক 'সামান্য' গল্প পড়বার অপেক্ষায় রইলাম, ভাইয়া!
ঘটনা সামান্য হলেও জ্ঞানটা কিন্তু বেশ ভালই বাড়ল।
এরকম কোন কিছুর কথা ঘুনাক্ষরেও জানতাম না।
আমার তো ধারনা ছিল, ওরা খুবই সভ্য নির্বিরোধ এবং হেল্পিং।
দড়জায় কড়া নাড়ার শাস্তি গুলি করে, এটা আসলেই ভাবনার অতীত একটা ব্যাপার বলে মনে হচ্ছে...
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
কেরামতির কতো রকম তেলেসমতি !
হাসতে হাসতে কতো জটিল কঠিন বিপদজনক ঝামেলার গপ্প কথা অভিজ্ঞতা হয় পড়া !
কি যাদুতে এমন সব কথা গল্প আর ভাবনা ব্যাখ্যার কল্পলোক গড়া ।
:boss: :boss:
মাহবুব ভাই একটা ফাটাফাটি প্রোফাইল পিক চাই। please.
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল