এক
……………………………………………………………………………………………………
ইউ এন মিশনের ছুটি থেকে ৯ দিনের ছুটি জমিয়ে রেখেছিলাম। হিসাবটা এরকম- ৫ দিন ইজিপ্ট যাবো আর ৪ দিনের জন্য ঈদের সময় দেশে গিয়ে সবাইকে সারপ্রাইজ দিব। সারপ্রাইজ জিনিষটা জীবনে আমি কখনও দিতে পারিনা; হয় কিছু একটা ঝামেলা লাগে, নয়তো আগেই লোকজন জেনে যায়। পরিবারকে ঈদের সারপ্রাইজ দিতে গিয়েও একই অবস্থা। আমি নিজেই সারপ্রাইজড! প্রায় ৩ মাস আগে কাতার এয়ারওয়েজের ১টা অফার ছিল। অনেক হিসাব করে, ক্যালেন্ডার আর ইন্টারনেট দেখে বের করলাম ঈদ হবে ১৫ জুন। তাই ১৬ জুন দিনটাকে হাতে রেখে ১৭ জুনের রিটার্ন টিকেট কেটে ফেললাম একরকম পানির দামেই (৩৭৫ ইউ এস ডলার)। ১৭ জুন কাটলাম যাতে করে ঈদ ১৬ তারিখে হলেও কোন সমস্যা হবে না। কিন্তু ইন্টারনেট আর ক্যালেন্ডারকে ভুল প্রমান করে যখন দুই দিন পরে সন্ধ্যায় চাঁদ দেখা গেল, তখন আমার মাথায় এক রকম আকাশ ভেঙে পড়ার মতো অবস্থা। কারণ, এর অর্থ হলো রোযা শুরু হবে ১৮ মে থেকে। আর যদি রোযা ত্রিশটি হয় তাহলে শেষ রোযা হবে ১৬ জুন। ঈদ তাহলে ১৭ জুন যেদিন সকাল ০৩০০ টায় আমার রিটার্ন ফ্লাইট! কেউ কেউ বললো, চাঁদ যেদিন দেখা যাওয়ার কথা সেদিন যেহেতু দেখা যায়নি, তাহলে রোযা ২৯ টা হবে। সেক্ষেত্রে ঈদ ১৬ তারিখে হবে, চিন্তা করোনা। কিন্তু চিন্তা করোনা বললেই কি আর হয়? আমার মন খারাপ আর টেনশন স্বভাবতই আমি লুকাতে পারলাম না পরিবারের কাছে। এক সময় বলতে বাধ্য হলাম- এই হচ্ছে অবস্থা। ইতিমধ্যে আমি খোঁজ খবর নিয়ে ফেলেছি। ১ দিন পরিবর্তনের জন্য আরো প্রায় ১৩০০ ইউ এস ডলার দিতে হবে আমাকে !!! কিন্তু ঈদে যেতে পারবো শুনে আমার পরিবার সেই টাকা দিয়েই আমাকে টিকেট পরিবর্তন করতে বলছে !!! আমি কি বিল গেটস নাকি? যাই হোক, শেষ পর্যন্ত একটা উপায় বের করলাম। কাতারের ফ্লাইটে ফেরত না এসে একটা ওয়ান ওয়ে টিকেট কাটলাম ঢাকা-কায়রো। আরেকটা কাটলাম কায়রো-খার্তুম। সর্বমোট ৭০০ ইউ এস ডলার (মাত্র!!!) গচ্চা দিয়ে রিটার্ন ফ্লাইট ১৮ জুন করলাম। মোটামুটি এই হচ্ছে আমার ইজিপ্ট ট্যুরের প্রারম্ভিকা। হাতে খুব একটা টাকা নেই, এর মধ্যে আবার ঈদের সময় দেশে ঘুরে যাচ্ছি। সবকিছু মিলিয়ে আমার ট্যুর যে কতদূর ভাল হবে সে বিষয়ে আমি নিজেই যথেষ্ট সন্দিহান ছিলাম।
রিয়াদ এয়ারপোর্টে মোটামুটি দীর্ঘ এক ট্রানজিট শেষে প্লেনে গিয়ে বসলাম। উইন্ডো সিট। পার্শ্বের সিটটা খালি পড়ে আছে। বোর্ডিং মোটামুটি শেষ পর্যায়ে; তাও কেউ এসে আমার পার্শ্বে বসছেনা। শেষমেশ একদম পেছনের থেকে এক ভদ্রলোক এসে পার্শ্বে বসলো। চেহারায় ইজিপশিয়ান, মনে হচ্ছে বেশ সম্ভ্রান্ত। শুরুর হাই হ্যালোর পর বেশ খানিকক্ষন নিরবে কাটলো। এক পর্যায়ে নিরবতা ভাংলো। আমার ধারনা ঠিক; ভদ্রলোক একজন ইজিপশিয়ান। পেশায় ডাক্তার। বিভিন্ন কাজে প্রায়ই সৌদি আরব যেতে হয়। সেই সূত্রেই এবারো আসা। ঈদটাও করতে হয়েছে পরিবার থেকে দূরেই। এখন ফেরত যাচ্ছেন। যথেষ্ট সদালাপী, মার্জিত, শিক্ষিত এবং সর্বোপরি ইংরেজী বলতে পারেন। আরবী ভাষাভাষী দেশগুলিতে ইংরেজী বলতে পারা লোক পেলে খুশী হওয়াই উচিৎ। মোটামুটি ভাল গল্পে গল্পে ফ্লাইট টাইম কেটে গেল। ল্যান্ডিং এর ঠিক আগে ও আমাকে বললো, “তুমি যতগুলি দেশ ঘুরেছ, তার মধ্যে কোন শহরটার রাতের এরিয়াল ভিউ তোমার কাছে ভাল লেগেছে?” প্রশ্নের সংগে সংগেই চিন্তা করা শুরু করলাম। কিন্তু চিন্তা করে ঠিক বের করতে পারলাম না। আসলে ওভাবে ঠিক খেয়ালই করিনি। আবার দুবাই, মস্কো, ইস্তাম্বুল কিংবা সিংগাপুরে আসলে আমি ল্যান্ড এবং ফ্লাই-দুটোই করেছি দিনের বেলায়। কিছু কিছু এয়ারপোর্টে খেয়ালই করা হয়নি। ও তখন দাবী করলো, রাতের কায়রো কয়েকটা সুন্দর শহরের মধ্যে একটা। কিন্তু ততক্ষণে আমার কায়রোর ভিউ অনেকখানিও কাটা পড়ে গেছে; আমরা ল্যান্ডিং এর কাছাকাছি প্রায়। কায়রো এয়ারপোর্টে যখন নামলাম তখন রাত ১১টার মতো বাজে। এয়ারপোর্ট রিসিপশনে ট্যুর গাইড আমাকে রিসিভ করার পর ইমিগ্রেশন শেষ করে গাড়ীর কাছে পৌঁছালাম; গন্তব্য হোটেল। সারাদিনের জার্নি আর লম্বা ট্রানজিট। শরীর যথেষ্টই ক্লান্ত। আর পরবর্তী ৫ দিনের জন্য শক্তি সঞ্চয় করার জন্য আজ রাতটাই। একটা ভাল ঘুম দরকার।
……………………………………………………………………………………………………
(চলবে)
ভালো সারপ্রাইজ।
চলুক।
কিন্তু ২ মাস হয়ে গেছে। এখনো কি কায়রোতেই আছেন ভাই? 😉
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
বেশ লাগল। তোমার জীবনের নতুন নতুন সারপ্রাইজের আগাম সাফল্য কামনা করছি।