নদীর পাড় থেকে আমাদের বাসার দূরত্ব খুব বেশী হলে ৭৫ মিটার । ছোট বেলায় অবশ্য ঐ দূরত্ব টাকেই প্রায় ৫০০ মিটার মনে হতো । ৩০ কিংবা ২৯ রোজার ইফতারটা কোন মতে শেষ হওয়ার জন্য শুধু অপেক্ষা করতাম । কোন মতে ১ গ্লাস সরবত খেয়েই ১ দৌড়ে নদীর পাড়ে । ঈদের চাঁদটা যে সবার আগে আমাকেই দেখতে হবে ! ধীরে ধীরে আমার সংগে যোগ হতো আমার বয়সের বাকী সৈন্য সামন্ত । সবার কাজটা একই । সবার আগে কিংবা আমার চাইতেও ব্যস্ত ২/১ জনের পরে পৌঁছালেও কখনওই আমি সবার আগে চাঁদ দেখতে পারতাম না । চাঁদটাকে খুঁজে পাওয়াটা আমার জন্য একটা বিরাট পরীক্ষা । অন্যরা চাঁদ দেখে তারপরে এটার বামে ওটার ডানে করে আমাকে শেষ পর্যন্ত চাঁদ দেখাতো । ঐ চাঁদ দেখে অনেকক্ষন তাকিয়ে থাকতাম আমার নদীর পাড়ের সেই চাঁদটার দিকে । এক সময় বাসায় গিয়ে তৈরী করতে থাকতাম বাসা সাজানোর জিনিষপত্র । ঐ সময়ে আমাদের মফস্বল এলাকাতে একটা জিনিষ খুব চালু ছিল । বড় একটা আর্ট পেপারের মধ্যে লাল রক্সি পেইন্ট আর জরি দিয়ে “ঈদ মোবারক” লিখে দরজার উপরে লাগিয়ে দেয়া হতো । আর খুব জোরে সাউন্ড দিয়ে টেলিভিশনে “রমজানের ঐ রোজার শেষে” গান শুনতাম সবাই মিলে । আম্মু ব্যস্ত হতো আদা,পেঁয়াজ আর বাদাম নিয়ে ।
যান্ত্রিকতা ধীরে ধীরে আমাদের বেঁধে ফেলতে থাকে । কমতে থাকে শেষ রোজার ইফতারের পরে নদীর পাড়ে মানুষের সংখ্যা । আমি কিংবা আমরাও হয়তো পড়ে থাকি অন্য কোথাও – জীবনের তাগিদে । জীবনে প্রথম বাবা – মা ছাড়া ঈদ করি ২০০০ সালে । ঈদের ২/৩ দিন পরে আমাদের বি এম এ তে জয়েনিং ডেট ছিল । বাড়তি ঝামেলা এড়াতে সিদ্ধান্ত হলো আমি ঢাকাতেই ঈদ করবো । শেষ রোজার ইফতারের পরে সেই নদীর পাড় নেই , সেই ঈদের চাঁদ খোঁজা আর না পাওয়া নেই , সেই আর্ট পেপারে রক্সি পাইন্টের “ঈদ মোবারক” লেখা নেই,আমার মায়ের হাতের সেই আদা,রসুন আর বাদামের গন্ধ নেই ………বুকে মোচড় দিয়ে কান্না আসছিলো বারবার । চাপিয়ে রাখতে হয়েছে । বড় হয়ে গেছি বলে কথা !
সেই থেকেই শুরু । চাকুরী শুরু হবার পর যে কোন একটা ঈদ থাকতেই হয় নিজের জায়গাতে । ছোট বেলাতে আমি আমার দাদার হাত ধরে বাবা আর সব চাচার সংগে ঈদের নামাজে যেতাম । দাদার সংগে যাওয়ার পর্ব অবশ্য শেষ হয়েছে অনেক আগেই । তবুও বাবা-চাচাদের সংগে যখন ঈদগাহের দিকে আগাই মনে হয় আমার চারপাশে অনেকগুলি গাছ আমাকে ছায়া দিয়ে রাখছে । যে ঈদে যেতে পারি না, ঈদগাহে যাওয়ার সময় আমি অনেক খুঁজেও সেই ছায়াগুলিকে পাই না ; নামাজের পরে সবাই যখন ফোন করে কোনভাবেই আমার কষ্টটাকে বুঝতে দেই না । মিশনে থাকতে পরপর ৩ টা ঈদ দেশের বাইরে থাকলাম । ঐ সময়ে দেশের বাইরে যারা ঈদ করে তাদের কষ্টটাকে বুঝলাম ।
যাই হোক, অনেক বারের মতো এ বারেও আমি ঈদের দিন ঈদগাহে যাওয়ার সময় সেই ছায়াগুলিকে মিস করবো,নদীর পাড়কে মিস করবো,মায়ের সেই গন্ধটাকে মিস করবো………………………সবাইকে ঈদ মোবারক ।
সব শেষে ১টা রকিং ঈদ মোবারক
http://www.youtube.com/watch?v=cFvRUCcBaDY&feature=player_embedded
অগ্রীম ঈদ মোবারক ভাইয়া
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
আমার ১৩ টা চলতেছে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ঈদ মোবারক! রুম্মান ভাই।
১১ নম্বর চলতেছে 🙁
ঈদ মোবারক । আমি হিসাব করিনাই । মোটামুটি গোটা ১৫ ছাড়ায়ে গেছে শিওর 🙁
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।
দেশের বাইরে ঈদ করা খুবই পেইন...
আজকে এখানে ঈদ...আমি ক্লাসে । বাসায় ফিরে সেমাই রান্নার একটা প্রিপারেশন নিব। দোয়া কইরেন ভাই... 😛 😛
দেশের বাইরে আবার ঈদ 'করা' কেন বলতেছস রে ব্যাটা,দেশের বাইরে তো হয় "ফেসবুক ঈদ"
আমার কি সমস্ত কিছুই হলো ভুল
ভুল কথা, ভুল সম্মোধন
ভুল পথ, ভুল বাড়ি, ভুল ঘোরাফেরা
সারাটা জীবন ভুল চিঠি লেখা হলো শুধু,
ভুল দরজায় হলো ব্যর্থ করাঘাত
আমার কেবল হলো সমস্ত জীবন শুধু ভুল বই পড়া ।