ঈশ্বরচিন্তা-২

নিয়ন্ত্রন, শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ন । কারন সবাই নিয়ন্ত্রন করে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রন হতে পারে জাগতিক অথবা ঐশ্বরিক অলৌকিকতা পূর্ন। আমরা যেকোন স্বাভাবিক সিস্টেমের মতই নিয়ন্ত্রন চাই। নিজের দায়িত্ব কারো ঘাড়ে দিতে পারলে আশ্বস্ত হই। স্থুলবুদ্ধিরা পীর ফকির ধরে থাকে, পরলৌকিক দায়ত্ব নেবার জন্যে। এজন্যেই যুগে যুগে মানুষ এবসোলিউট অসম্ভব কথা শুনিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। এখনও যুক্তরাষ্ট্রে আছে মোর্মেন ধর্মালম্বীরা, সায়ান্টোলজির অনুসারীরা। এই মহাবিশ্ব জটিল এবং বিভ্রান্তকারী। যখন ছোট অবস্থায় ভাবতাম এই আকাশের কোন শেষ নেই তখন শরীর কেপে উঠত। ভেবে পেতাম না কিভাবে অসীম কে চিন্তা করা যায়। তাই আমরা দুর্বল। আমাদের বৌদ্ধিক এবং দার্শনিক দায়িত্ব অনেক ভারী মনে হয় আমাদের কাছে। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত।

নিয়ন্ত্রন মানব সমাজের প্রধান বিল্ডিং ব্লক। মানব সমাজ তৈরী হয় ব্যাক্তি মানুষ কে অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই। সামাজিক সম্পর্ক সেখানে ব্যাক্তি মানুষের চেয়ে বেশী গুরুত্বের অধিকারী। একারনেই তৈরী হয় গাবদা সাইজের আইনের বই। যদিও এটা সাধারন ধারনা যে সমাজ ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব, কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ধারনাটি সমাজের প্রতি অতিপক্ষপাতে আক্রান্ত। যেখানে আমজনতা নানা নিয়ন্ত্রনের চক্করে পরে অন্ধকার দেখার পরেও ভেবে নেয় ননসেন্স নিয়মকানুন তার ভালোর জন্যেই তৈরী করা, সেখানে আমরা দেখতে পাই ব্যাক্তি মানুষের করুন মৃত্যু। এই শতাব্দীতে সমাজের প্রথম কাজ মানুষ কে সার্ভ করা নয়, তার নিজের পেট ভরা। এবং তার সুফল ছোট্ট একটি দলকে প্রদান করা। কিছু মানুষ বুঝে যেতে পেরেছে মানুষের সমাজ কে যারপরনাই বিশ্বাস করে, তাই সমাজের নাম ধরেই নিয়ন্ত্রনের জাল বসানো সম্ভব। এই কতিপয় মানুষরাই যুগে যুগে দেখা দিয়েছে কখোনো রাজনৈতিক নেতা, কখোনো ধর্মবেত্তা রুপে।

মানব সমাজে ঈশ্বরের নামে নিয়ন্ত্রন অনেক পুরোনো ইতিহাস। সেই পুরাতন যুগের গ্রাম্য পুরোহিত থেকে যার শুরু। সকল আধুনিক ধর্মই যখন মুলধারায় মাথা তুলে দাড়িয়েছে তখন তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে। আমরা দেখতে পাই কিভাবে গীর্জাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্লজ্জভাবে দখল করে নিত, কিংবা আধুনা হিজবুত তাহরীর কিংবা জামাত যা চায়। ইসলাম শুরু থেকেই পলিটিক্যাল ছিল। কারন মুলধারায় এটি অনেক দ্রুত আসতে পেরেছে। অন্যদিকে ক্রিশচিয়ান ধর্ম দীর্ঘদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের আগে। এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় কিভাবে ঈশ্বর মানব রাজনীতির এত বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। তিনি একের পর এক ওহী পাঠাতে থেকেন রাষ্ট্র পরিচালানার উপর। যদি ওহী না পাঠান তাহলে তার প্রতিনিধিত্বকারী যাযকেরা জিওর্দানো ব্রুনো পুড়িয়ে মেরে রাজনৈতিক ক্ষমতার ষোলকলা পূর্ন করে। মধ্যযুগের ইনকিউজিশনের কথা মনে হয় মানব ইতিহাসে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবচেয়ে কুৎসিত প্রচেষ্টার একটি। হিটলার বাবাজী যেটি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো ধরে ৪০০ বছর পর আবার করে দেখিয়েছে।

ধর্মের মানবিক হতে গিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক হয়ে জিজিয়া কর উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে পরে এটির বিশ্লেষনে গেলে সমাজের নিয়ন্তা হবার যে সুপ্ত বাসনা মানব মনে লুকিয়ে থাকে, অথবা অসংখ্য ব্যাক্তিস্বত্তাকে হত্যা করে যে আমোদ লাভ করা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি যায়। সকল ধর্মই শুরু হয় আধ্যাত্নিক মুখোশে। কিন্তু একজন চতুর রাজনীতিবিদের মত ধর্মের কাঠামোও নিয়ন্ত্রন লোভী হয়ে উঠে। প্রকারান্তে ঈশ্বর হয়ে উঠেন “পাওয়ার হাঙ্গরী”। সর্বশক্তিমানের এরকম শক্তির লোভ কেন যেন বেমানান দেখায়।

কোন ধর্মের মাঝে সত্যিকার সাম্যের কথা থাকে না, বিভেদ বিভাজন, বর্নবাদ প্রত্যেক ধর্মের সুন্দর অনুশাসনের নীচে লুকিয়ে থাকে। কারন যে সমাজে মানুষের ব্যাক্তিতার মূল্য আছে সে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করাও কঠিন। এজন্যেই ধর্ম দেয় বিভাজনের রুপরেখা, নিয়ন্ত্রনের প্রধান হাতিয়ার যে বিভাজন। ধর্ম মানুষে ধার্মিক এবং বিধর্মী এই দুইভাগে বিভক্ত করে দেয়। ঈশ্বর বিশ্বাসের পুরস্কার স্বরুপ ধার্মিকদের হাতে পরে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। তারা নিয়ন্ত্রন করবে বিধর্মীদের। কারন তারা বিশ্বাস করে ভিন্ন কোন ঈশ্বরকে।

মানুষ ব্যাক্তিস্বত্তা কে সামাজিক চাপে অস্বীকার করে অনেক সময়। কিন্তু সকল নিয়ন্ত্রনের প্রধান শত্রু এই ব্যাক্তি মানুষটি। যারা সম্মান করে নিজস্ব চিন্তাকে তারা নিয়ন্ত্রকের চোখে অপরাধী। টুকরা টুকরা করা হয়েছিল মনসুর হাল্লাজকে। কোপানো হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। সকল পত্রিকায় কমিউনিস্ট পার্টির জয়জয়কার ছাপানো হত লেলিনের রাশিয়ায়। বিরোধী দলের পার্থীদের নির্বাচনে প্রচারনা করতে দেয়া হত না বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সিটিউশন সম্ভবত ডানপন্থী লোকদের তৈরী। ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদ মিশিয়ে নতুন নতুন বিভাজনের খসড়া আর নিয়ন্ত্রনের নীলনকশা প্রতিনিয়তই তৈরী হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিততম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যাক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।

বিজ্ঞান ঈশ্বর সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি, তাই ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা সম্পর্কে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমি ব্যাক্তিস্বত্তা কে সম্মানের জন্যে অনন্ত নরকই যদি সেই স্বৈরাচারী স্কাইড্যাডি আমার জন্যে বরাদ্দ করেন তাহলে আমি বলব ব্রিং ইট অন।

১,৮২৬ বার দেখা হয়েছে

৩১ টি মন্তব্য : “ঈশ্বরচিন্তা-২”

  1. সাব্বির (৯৮-০৪)

    চমতকার পোষ্ট। কঠিন বিষয় সুন্দর করে গোছানো লেখা।

    নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিততম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যাক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।

    তোমার পরের পোষ্ট কী নিয়ে হবে বলতে পারছি না। ভালো হয় এখান থেকে শুরু করলে।
    তোমার এই কথা সার্ব জনীন না।

    নিয়ন্ত্রিত হওয়ার বা না হওয়ার সুফল কুফল নিয়ে লিখতে পারো। নিজের নিন্ত্রন নিজের হাতে নেয়া কখনোই আরামদায়ক কোনো ব্যাপার নয়।
    রিচার্ড ডকিন্স এর কোনো একটা সাক্ষাতকারে দেখেছিলাম উনি বলছেন, "এটা ভাবতেই আমার মাথা গরম হয়ে যায় যে ওই লোকগুলা প্লেনের ককপিট থেকে বিল্ডিং দেখে ভাবছিলো যে আধ ঘন্টার মধ্যে সে ৭০ জন হুর পরী বেষ্টিত অবস্থায় থাকবে!"(বাংলা করলে অনেকটা এরকম হয়)।

    Pretend করাটা কী আমাদের অস্থি মজ্জায় নেই?

    জবাব দিন
    • কামরুল হাসান (৯৪-০০)
      নিজের নিন্ত্রন নিজের হাতে নেয়া কখনোই আরামদায়ক কোনো ব্যাপার নয়।

      এটা ঠিক বুঝলাম না। নিজের নিয়ন্ত্রন তাহলে কার উপর ছেড়ে দেব?


      ---------------------------------------------------------------------------
      বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
      ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

      জবাব দিন
      • সাব্বির (৯৮-০৪)

        এটাইতো সমস্যা। আধুনিক যুগ আপনাকে আরামে থাকতে দেবে না।
        আপনাকে ক্রমাগতভাবে দৌড়াদৌড়ি করতে হবে যোগ্য থেকে যোগ্যতর হওয়ার জন্য। কিছু করার জন্য, চিহ্ন রাখার জন্য, নায়ক হওয়ার জন্য, অমর হওয়ার জন্য।আপনিও দৌড়াবেন যেহেতু কেউ আপনাকে বেহেস্ত গিফট দিচ্ছে না।

        জবাব দিন
      • হোসেন (৯৯-০৫)

        আমাদের কারোরই নিজের নিয়ন্ত্রন নিজের হাতে নেই। আমরা সচেতনভাবে বা অবচেতনভাবে কারও না কারও দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হই। নিয়ন্ত্রন যখন ব্যাক্তি সিদ্ধান্তের অনেক উপরে উঠে যায় তখনই মৃত্যু ঘটে ব্যাক্তিমানুষের। মানুষ বেচে থাকে সমাজের চাহিদা পূরনের যন্ত্র হিসেবে।


        ------------------------------------------------------------------
        কামলা খেটে যাই

        জবাব দিন
    • হোসেন (৯৯-০৫)
      Pretend করাটা কী আমাদের অস্থি মজ্জায় নেই?

      আছে, অস্থি মজ্জায় পাকাপাকিভাবে বসে আছে। এজন্যেই তো এত মুখোশের ছড়াছড়ি।

      জানি সেটা আনন্দদায়ক নয়, বরং একা বা দলছুট অনুভুতি আক্রমন করতে পারে।

      কিন্তু এই দুর্বলতা থেকেই কিন্তু মেনে নেয়া শুরু মানুষের। মেনে নিতে নিতে আজ সুতা নিয়ন্ত্রিত পাপেট হয়েছি।

      অ.ট.: গেছেন কবে? চাকরী বাকরী করতেছেন? অনেকদিন পরে দেখলাম


      ------------------------------------------------------------------
      কামলা খেটে যাই

      জবাব দিন
  2. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)
    নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিততম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।

    ভালো লিখেছ হোসেন। কিন্তু এটা কি কোনোভাবেই সম্ভব? বিশ্বের সবচেয়ে বুদ্ধিমান দাবিদার দ্বিপদ এই প্রাণীর পক্ষে কি কোনোভাবে নিয়ন্ত্রণের বাইরে যাওয়া সম্ভব? ধর্ম-সমাজ-রাষ্ট্র-আইন-গোয়েন্দা সংস্থার বাইরে স্ত্রী-সন্তান-বাবা-মা-পরিবার, চাকরি-অর্থ-মোহ-লোভ-ক্ষমতা; এতোকিছুর জাল ছড়ানো! সম্ভবত পাগলই পারে সব নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেতে!! সুস্থ মানুষের পক্ষে কি তা সম্ভব??

    "কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।" তোমার এই কামনাটুকু অনেকটা অর্জন সম্ভব। এটা নিজের ওপর নির্ভর করে। চেষ্টা করে যাও। সব শুভকামনা তোমার সঙ্গে থাকবে।


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন
  3. কোন ধর্মের মাঝে সত্যিকার সাম্যের কথা থাকে না, বিভেদ বিভাজন, বর্নবাদ প্রত্যেক ধর্মের সুন্দর অনুশাসনের নীচে লুকিয়ে থাকে

    মানুষ যদি কোন ধর্মকে বিকৃত করে ফেলে, তবে সেই মানুষগুলোর জন্য সেই ধর্ম কলংকিত করা অনুচিত বলে আমার মনে হয়। অন্তত একটি ধর্মে নিশ্চিতভাবেই সাম্য বিদ্যমান, যেই ধর্ম স্রষ্টা নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

    মানুষ নিয়ন্ত্রিত হতে না চাইলে তাকে কে ঠেকায়? বিশ্বাস করতে না চাইলে কে ঠেকায়? স্বেচ্ছাচারী মানুষদের জন্য তো কোন বাধাই বাধা নয়।

    বাধা-বন্ধনহীন জীবন তো আনন্দেরই বটে! ধর্ম মানুষকে পৃথিবীর চোখে দেখা জিনিসটুকুর বাইরের কিছু ব্যাপারে আশ্বাস দেয় বলে আমার মনে হয়। নয়ত চরম "অস্থির" জীবনের কোন স্বস্তি আসবে না এই ব্যাপারে আমি নিশ্চিত।

    সব ধর্মই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত। বিশ্বাস করলেই তো অনেক দায় চলে আসে...... সেই দায় পছন্দ না করে স্বেচ্ছাচারিতায় ডুবে থেকে কেউ কোন সমাধান আনে না। নিজে সংশয়ে ভুগে অপরকেও ভুগানো যায়। পৃথিবীতে খুব কম অংশই মানুষের হাতে নিয়ন্ত্রিত; উপায় না পেয়ে একসময় কিছু জিনিস "প্রকৃতির" হাতে ছেড়ে দেয় অনেকেই......

    দোস্ত, বানানের দিকে একটু খেয়াল করিস। অস্বস্তি লাগে......

    জবাব দিন
    • হোসেন (৯৯-০৫)

      কোন ধর্মেই সাম্যের কথা থাকে না। সব ধর্মই ধর্মে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসী এই দুই দলে সুষ্পষ্ঠ বিভাজন করে।

      স্যাম্পল হিসেবে ইসলাম কে নেই(যেহেতু তোমার ইংগিত ও সম্ভবত ইসলামের দিকেই)।

      ইসলাম কিন্তু মানুষকে পরিষ্কার দুইভাগে ভাগ করে দেয়, আল্লাহ বিশ্বাসী/আর অবিশ্বাসী । খেয়াল কর ইসলামের রাজনৈতিক ক্ষমতা(আদর্শ ইসলামী রাষ্ট্রের) কিন্তু প্রথমভাগের হাতেই থাকে, চুক্তি সম্পাদন বা অন্যান্য সকল গুরুত্বপূর্ন দায়িত্ব অইসলামী মানুষের কাছে দেয়া হয় না। খিলাফত কিন্তু মুসলিমদের জন্যেই। অমুসলিমরা সেখানে জিজিয়া কর দেয়া ছাড়া আর কোন কাজ করে না। এটাকে অবশ্য ইসলামিক জ্ঞানীরা বৈষম্য বলতে নারাজ। তারা বলে যেহেতু এই ধর্ম সেরা সেহেতু ক্ষমতা এদের কাছে থাকাই সবার জন্যে ভালো। কিন্তু একইরকম তো বাকি ধর্মের ব্যাটারাও ভাবে। শেষ পর্যন্ত কিন্তু আধ্যাত্নিক শক্তি দিয়ে পাওয়ার সেন্টার দখল হয় না, দখল হয় পেশী আর সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েই। এটাকে যদি ঐশ্বরিক বিচার বলা হয় তাহলে আমি দু:খিত কারন এখানে ঐশ্বরিকতার চেয়ে পার্থিব ক্ষমতালোভের নিশান ই বেশী দেখা যায়।

      আর এটাও খুব আজব ধারনা যে রিলিজিয়াস নিয়মকানুন ছাড়া মানুষ স্বেচ্ছাচারী জানোয়ার হয়ে যায়। মানুষএর মূল্যবোধ বলে একটা ব্যাপার আছে। মানবতা বলে ব্যাপার আছে। বাস্তব জীবনের কাজকর্মে একজন ধর্মে বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীর মাঝখানে বিশেষ কোন পার্থক্য দেখাতে পারবা না। দুইজনই দেখবা মানুষ বিপদে পরলে সাহায্য করতে এগিয়ে গেছে। পার্থক্য শুধু থাকে যে অবিশ্বাসী ব্যাটার পরলৌকিক লাড্ডু খাবার শখ থাকে না।


      ------------------------------------------------------------------
      কামলা খেটে যাই

      জবাব দিন
    • রায়হান আবীর (৯৯-০৫)
      অন্তত একটি ধর্মে নিশ্চিতভাবেই সাম্য বিদ্যমান, যেই ধর্ম স্রষ্টা নিজেই নির্ধারণ করে দিয়েছেন।

      এই কথাটাই কী বর্নবাদী, বিভেদ বিভাজন করা কথা হয়ে গেলো না?

      আচ্ছা ফয়সাল খালি একটা কথা ভাব। তুই মুসলমান কেন? কারণ তুই মুসলমান ঘরে জন্মগ্রহন করছিস। তুই যদি আজকে খ্রিস্টান ঘরে জন্ম নিতি তাহলে অবভিয়াসলি তুই বলতি খ্রিষ্টান ধর্মই সেরা। সব ধর্ম নিজেদের সেরা সেরা বলে দাবী করার কারণেই এতো ভ্যাজাল।

      জবাব দিন
  4. জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

    তোমার এই পোস্ট ভালো লেগেছে। এটাও ভালো লাগলো যে তুমি এটা সিরিজ করে লেখা শুরু করেছো। তোমার বক্তব্য উপস্থাপনের কৌশল নিঃসন্দেহে প্রসংসার যোগ্য। কষ্ট পেলাম দেখে তোমার এতটা টলারেবল এবং সহিষ্ণু একটা পোস্টে ৩ জন ফাইভ স্টার রেটিং দেওয়ার পরও কোন একটা প্যাথেটিক ট্রল এসে ওয়ান স্টার দিয়ে গিয়েছে। অবশ্যই এটা তার স্বাধীনতা। তবে, ধার্মিকদের এসকল ফাউন্ডেশনাল বায়াস দ্বারা প্রভাবিত জাস্টিফিকেশন বিহীন কার্যকলাপ দেখে আমি সচেতন ভাবেই নির্ধারন করি নিজের সহিষ্ণুতা বিসর্জন দিয়ে কিছুটা বিষোদ্গারী হতে। তোমাকে ধন্যবাদ তোমার চিন্তাভাবনা আমাদের সাথে ভাগাভাগি করার জন্য। তোমার সিরিজের কোন একটা পর্যায়ে- ভালো হয় পরবর্তী পর্যায়টাতে হলেই- আশা করছি স্বর্গ-নরক বিষয়ক একটা আলোচনা।

    জবাব দিন
    • হোসেন (৯৯-০৫)

      ধন্যবাদ পড়ার জন্যে

      সচেতন ভাবেই নির্ধারন করি নিজের সহিষ্ণুতা বিসর্জন দিয়ে কিছুটা বিষোদ্গারী হতে।

      হা হা । আমারও ওধরনের একটা স্বভাব ছিল, যখন ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি তখন বিষাদগার করতে গিয়ে কিছু ঝামেলাও পড়েছিলাম। তবে পরবর্তীতে চুপচাপ হয়ে গেছি বিশেষত ক্লান্তির জন্যে। আপনি লজিক্যাল ফ্যালাসীর উপর একটা পোস্ট দিয়েছিলন সেটা যে জিনিসগুলোর ফর্মাল নাম আমাকে শিখিয়েছে,সেগুলোর লক্ষ্যবস্তু আমি দীর্ঘদিন থেকেই। তবে সবচেয়ে একা ছিলাম এ ব্যাপারে ক্যাডেট কলেজে। দুই দিন পরপরই পোলাপান সব এক হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করত যে আমি ধ্বংসের পথে চলে যাচ্ছি। আমাদের বর্তমান মুহাম্মদ তখন ছিলো নজরুল হাউসের ডাকসাইটে মুসল্লী, প্রেয়াররুমের ইমাম। সে সুবাদে মুহাম্মদের কাছেও অনেক ছবক শুনছি 😀 😀


      ------------------------------------------------------------------
      কামলা খেটে যাই

      জবাব দিন
      • মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

        অর্ণবের লজিকাল ফ্যালাসির পোস্টটা ক্যাডেট কলেজে পাইলে ডিবেটের সময় খুব সুবিধা হইত কারণ হরহামেশা এইসব ফ্যালাসি ব্যবহার কইরা প্রতিপক্ষ পিছলায় যাওয়ার চেষ্টা করত।

        জবাব দিন
        • হোসেন (৯৯-০৫)

          আরে না ভাই জোক্স করুম ক্যান। ক্লাস নাইন টেনে আমিও ব্যাপক মুসল্লী ছিলাম। গুন গুন করে গান গাইলে নিজেরে দশবার অভিশাপ দিতাম। নামাজও পড়াইছি অনেক। যাউকগা এসএসসির ছুটিতে ভাবলাম ধর্মটারে আরো ভালো জানি, অনুবাদ টনুবাদ আইনা ,তাফসীর তর্জমা যোগাড় কইরা ম্যাসাকার কইরা ফেললাম, অনুবাদ পড়তে গিয়াই সমস্যা হইল। আরবীতে কত মহিমান্বিত লাগত, বাংলা পইড়া কমপ্লিট ননসেন্স লাগা শুরু করলো। তাফসীর পাল্টাইলাম, হুজুরের কাছে দৌড়াদৌড়ি করলাম, বুঝলাম হুজুরগো আমার থেকে খুব একটা বেশী নাই। তারপর হাদীস ঘাটা শুরু করলাম ব্যাখ্যার আশায়, কেচো খুড়তে গিয়া সাপ বাহির হইল, দেখলাম হাদীসে অযৌক্তিক, এবং ক্ষেত্র বিশেষে আজব কথাবার্তায় ভর্তি। মাথাগরম হইয়া গেল। উল্টাপাল্টা সিদ্ধান্ত হীন অবস্থায় অনেকদিন ঘুরাঘুরি করছি। সিগারেট খাওয়া ধরলাম তখন। তারপর একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ছাদএ গেলাম। তখন চিটাগাং থাকতাম। ছাদ থেকে কর্নফূলী দেখা যেত(পতেঙ্গায় বাসা ছিল)। সেদিকে তাকিয়ে মনে হল আসলেই এই পৃথিবীটা অনেক বেশী সুন্দর!!

          মজার ব্যাপার হচ্ছে আমি এই রিয়ালাইজেশনের পর রাসেল/ডকিন্স/আরজ আলি/আজাদ/ এইসব পড়ি। সাধারনত উল্টা ঘটে বেশী।


          ------------------------------------------------------------------
          কামলা খেটে যাই

          জবাব দিন
    • কামরুল হাসান (৯৪-০০)
      কষ্ট পেলাম দেখে তোমার এতটা টলারেবল এবং সহিষ্ণু একটা পোস্টে ৩ জন ফাইভ স্টার রেটিং দেওয়ার পরও কোন একটা প্যাথেটিক ট্রল এসে ওয়ান স্টার দিয়ে গিয়েছে। অবশ্যই এটা তার স্বাধীনতা। তবে, ধার্মিকদের এসকল ফাউন্ডেশনাল বায়াস দ্বারা প্রভাবিত জাস্টিফিকেশন বিহীন কার্যকলাপ দেখে আমি সচেতন ভাবেই নির্ধারন করি নিজের সহিষ্ণুতা বিসর্জন দিয়ে কিছুটা বিষোদ্গারী হতে।

      অর্ণব
      এটা ঠিক না। সব লেখা সবার পছন্দ নাও হতে পারে। আর অপছন্দ হলে যদি কেউ ১ রেটিং দেয় তাকে তুমি 'প্যাথেটিক ট্রল' বলতে পারো না। রেটিংটা প্রত্যেকের ব্যাক্তিগত স্বাধীনতা। সেটার জন্যে কাউকে বিশ্রী ভাষায় সম্বোধন করাটা কি আদৌ সৌজন্যের মধ্যে পরে?

      ধর, হোসেনের এই লেখাটা আমার ভালো লাগেনি, আমি ১ দিলাম, তুমি এবার বলো, আমি কি প্যাথেটিক ট্রল ?


      ---------------------------------------------------------------------------
      বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
      ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

      জবাব দিন
      • জুবায়ের অর্ণব (৯৮-০৪)

        রেটিং করতে দেওয়ার ক্ষমতাটা অন্যান্য সকল ক্ষমতার মতই একটি দায়িত্ববোধ সূচক অবস্থান (a position of responsibility)। যার যা খুশী তাই রেটিং সে দিয়ে যাবে এটা বোধহয় কারো কাছ থেকে আশা করা হয়না। আশা করা হয় বরং এটা যে, তার দেওয়া রেটিং একটি জাস্টিফিকেশন দ্বারা সমর্থিত হবে। আর ভালো না লাগা ব্যাপারটা সম্পুর্ণ ব্যক্তিক কোন ব্যাপার না, এটা বরং বেশ খানিকটাই নৈব্যক্তিক; আমরা মাপতে পারি একটা লেখা কতটুকু ভালো বা খারাপ। এই প্রবন্ধটিকে আমি মনে করি এই প্যারামিটারগুলোতে মাপা যায়- কতটা তথ্যসম্বৃদ্ধ এটা, কতটা বেশ্লেষণধর্মী এবং কতটা সুশৃঙ্খল এইসব প্যারামিটার ধরে as long as এটা একটা প্রবন্ধই, কোন কবিতা, গল্প বা কৌতুক নয়। এই জাগায় রেটিংকারী কোন ধরণের বাছ-বিচারে যদি না গিয়ে সোজা-সম্মুখে একটা ওয়ান স্টার রেটিং যদি বসিয়ে দেয়- রেটিংকারির এই আচরণটিকে কি আমরা বেদনাদায়ক (pathetic) বলতে পারি না? আপনি আমার ব্যাবহৃত ট্রল শব্দটা যতটা নেতীবাচক মনে করছেন এটাকে ততটা নেতীবাচক আমার কাছে মনে হয়নি। তবে, যেহেতু একজনের কাছে হলেও এটাকে নেতীবাচক মনে হয়েছে এটা আমি মেনে নিচ্ছি যে এর চেয়ে কোন সহিষ্ণু শব্দ ব্যাবহার করা যেত। এখন থেকে সেটাই করবো। আপনার পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ। আশা করি আমার অবস্থান ব্যাখ্যা করতে পারলাম।

        জবাব দিন
        • কামরুল হাসান (৯৪-০০)

          হয়তো বাছ-বিচার করেই কারো মনে হয়েছে যে লেখাটি ১ পাবার মতো, তাই সে তার মতো রেটিং করেছে। সবার কাছে তো আর ভালো/মন্দের বা পছন্দ/অপছন্দের মাপকাঠি এক নয়, একেক জনের একেক রকম।

          সেজন্যেই কিন্তু রেটিং/ ভোটিং এইসব ব্যাপারগুলো গোপনীয়তা রক্ষা করে করা হয়।

          আর ভালো না লাগা ব্যাপারটা সম্পুর্ণ ব্যক্তিক কোন ব্যাপার না, এটা বরং বেশ খানিকটাই নৈব্যক্তিক; আমরা মাপতে পারি একটা লেখা কতটুকু ভালো বা খারাপ।

          এটা একেবারেই ভুল বললে। ভালো লাগা বা মন্দ লাগা একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার। তোমার আর আমার ভালোলাগার মাপকাঠি তো এক নাও হতে পারে। আর ভালোলাগাটা না মিললেই যে কাউকে ভৎসনা করতে হবে এমন কিন্তু নয়। অন্যের পছন্দ/ মতামতকে শ্রদ্ধা জানানোটা সাধারন সৌজন্যবোধের মধ্যেই পড়ে।

          কম নেতিবাচক হোক আর বেশি নেতিবাচক, যারা রেটিং অপশনটা ব্যবহার করেন তাদের সবার জন্যেই তোমার মন্তব্যটা কষ্টদায়ক।

          আসলে তোমার কাছ থেকে এটা আশা করিনি। আগেও বলেছি, আবারো বলছি, তুমি মাঝে মাঝে খুব মুগ্ধ করার মতো কথা বলো কিন্তু আবার মাঝে মাঝেই খুব হাস্যকর কথাও বলো।


          ---------------------------------------------------------------------------
          বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
          ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।

          জবাব দিন
  5. আমিন (১৯৯৬-২০০২)

    পড়লাম পোস্ট টা। বুঝছি ও মনে হয় কিছুটা। গোছানো লেখা ভাল্লাগছে। তবে আগের পর্বের চেয়ে বুঝতে একটু বেশি কষ্ট হইছে।
    পোস্টের কন্টেন্ট নিয়ে বলার কিছু নাই। জাস্ট একটা ব্যাপার,
    তোর লেখাগুলো কি নিজের বোধ থেকে, নাকি বিভিন্ন বই থেকে অনুবাদ করে তার ভাবার্থ। যদি দ্বিতীয়টা হয় তাহলে একটু সোর্স উল্লেখ করলে বড়ই উপকৃত হতাম।

    অ ট : গতকালকে চতুষ্কোন পড়ে শেষ করলাম। সুন্দর একটা সাজেশনের জন্য ধন্যবাদ।

    জবাব দিন
  6. মোস্তফা (১৯৮৮-১৯৯৪)

    সিরিজটি পড়ছি। তোমার বক্তব্য উপস্থাপনের পদ্ধতিটি ভাল লেগেছে। সাথে আছি, লিখে যাও।

    আমি কোন লেখায় রেটিং দেই না। রেটিং পদ্ধতিটি আমার কাছে বিশেষ উপযোগী মনে হয় না নিজের মতামতটুকু জানানোর জন্য। পড়ে যদি মনে করি ভালো লাগা বা না লাগাটি জানানো দরকার এবং সেটি কেন তা জানানো দরকার তবে মন্তব্য করে জানিয়ে দেই।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।