আজ আকাশটা এখানে বেশ মেঘলা।হয়ত চলমান নিম্নচাপের কারণেই। একা বসে থাকাটা একটা পানিশমেন্টের মত লাগছে। নেটে বসে হাবিজাবি ব্রাউজ করতে করতে কাহিল হয়ে পড়েছি। একটু আগে Cast away ( Tom hanks ) দেখলাম। এর আগে কত বার দেখেছি মনে নেই। গুনে রাখা হয়নি। মনটা খারাপ কেন তার কারণটা এতক্ষনে আবিষ্কার করলাম।
মুভির একটা দৃশ্যে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছিল। দেখে বিএমএ এর কথা মনে পড়ে গেল। তখন আমরা ফার্স্ট টার্মে। বৃষ্টির দিন মাত্র শুরু হয়েছে। আর সাথে আমাদের সারারাত বৃষ্টিতে ভেজা… যাই হোক ক্যাডেট কলেজে যেমন বৃহস্পতিবার সবচেয়ে favourite রাত ছিল, বি এম এ তে ছিল ঠিক তার উলটা। Thursday night was hell in BMA.
এরকমই কোনো এক বৃহস্পতিবার রাতে আমরা ফার্স্ট টার্মার রা কর্পোরালের ( কলেজের জুনিয়র প্রিফেক্টের সমতুল্য ) ফল ইন এ কোম্পানি লাইনের ( হাউসের ) সামনে অপেক্ষা করছি। আকাশে প্রচন্ড মেঘ। লাল হয়ে আছে মাথার উপরের আকাশটা। সাথে প্রচন্ড ঝড়োবাতাস। জাভেদ স্যার আর পারভেজ স্যার ( দুজনেই এখন ক্যাপ্টেন, পারভেজ স্যার আবার আমারই ইউনিট অফিসার ) কালো ডাংরী পরে স্বভাবজাত দানবাকার ধারন করে আমাদের কোতল করতে আসলেন। সবাইকে ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে বাস্কেটবল গ্রাউন্ডে যেতে বললেন। আর আমরা নিমিষেই উধাও হয়ে গেলাম। সবাই বাস্কেট গ্রাউন্ডে জড়সড় হয়ে ফলইন হলাম । খুব ঠান্ডা লাগছিল। এদিকে ঝিরিঝিরি বৃষ্টিও শুরু হয়ে গেল। ঠকঠক করে কাপছিলাম সবাই। পারভেজ স্যার বললেন আজ তোমাদের punishment দিব না।
আমরা ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না। “পারভেজ স্যার পাঙ্গাবে না???” NO way, it can’t be happening.
কিন্তু ঠিকই সেরাতে আমাদের কেউই পাঙ্গালো না। আমরা শুধু বিশাল ঝড়ের আকাশের নিচে ঠকঠক করে কাপতে থাকলাম। সিনিয়ররা ততক্ষনে সবাই যারযার মত রেইনকোট গায়ে জড়িয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। আর আমরা অসহায়ের মত দাঁড়িয়ে কাপছি। Band of Brothers এ দেখা জার্মান Concentration camp এর কথা মনে পড়ে গেল। সব ইহুদিরা বরফের মধ্যে জড়াজড়ি করে আছে এরকম একটা দশ্য ছিল। তখন বুঝিনি ওরকম জড়াজড়ি করে থাকার মানে টা কি? কিন্তু সেই রাতে বুঝলাম একজনের দেহের তাপে আরেকজন গরম থাকার চেষ্টা করেছিল ওরা, আমাদেরই মত। Pathetic but fact.
রাত বেড়ে তখন হয়ত ২ টা ৩০ এর মত বাজে। ধৈর্য্য ধরতে না পেরে কে যেন ওই মানব কুন্ডলির মধ্যেই একটা সিগারেট ধরালো। আর সবার হাতে এক এক করে তা হাত বদল হতে থাকল। আমি ভাবলাম সিগারেট খেলে হয়ত একটু গরম লাগবে…তাই এক পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নিলাম smoking debut আজই করব। মাকে দেয়া ওয়াদার কথা বেমালুম মাথায় ছিল না। পরে অবশ্য আর ওই একটা মাত্র টান আর দেয়া হয়নি আমার। আম্মুকে যখনি এই গল্পটা বলেছি আম্মুকে আচলে চোখ মুছতে হয়েছে।
যাই হোক রাত বেড়ে ৪ টা বাজে হয়ত। পারভেজ স্যার আসলেন অন্ধকারে, তার গায়ে রেইনকোট জড়ানো। আকাশে বিজলি চমকাচ্ছে আর তার হঠাৎ আলোয় স্যারকে ব্যাটম্যান এর মত লাগছিল। এত কষ্টের মাঝেও আমার মাথায় ব্যাটম্যান এর চেহারা মনে আছে দেখে অবাকই হলাম। ত্রানকর্তার মত বললেন “Everyone get infront of the company line and lie down on the road”। আমরা তাই করলাম।
এদিকে বৃষ্টিও বেড়ে গিয়েছে অনেক। স্যার বললেন আমরা যেন ভোর হওয়ার আগে রুমে না যাই। আমি ভাবলাম এই বৃষ্টির মাঝে কিভাবে ঘুম আসবে? আর যাই হোক এর মাঝখানে ঘুম আসবে না আমার।
ভোরবেলা ৫ টা ৩৫ এ আমার ঘুম ভেঙ্গেছিল। উঠে দেখি সাথের প্রায় সবাই আগে উঠে চলে গিয়েছে। বুঝলাম ধরা খাওয়ার ভয়ে ডাক দেয় নি। নিজের অবস্থা দেখে মনে মনে মুচকি হাসলাম। আমি সত্যি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম??? কিভাবে??
কিছু কথা আমরা যতই মুখে বলি, কলমে লিখি কোনোভাবেই বোঝানো যাবে না, কি দিন গুলো আমরা অতিক্রম করে এসেছি। আমাদের যত কাছের মানুষই সে হোক না কেন, কিছু অনুভুতি থেকে যাবে যা শুধুই আমাদের। আমরা কেবল নিজেদের চোখেই অনুভুতিগুলোর গভীরতা খুজে পাব।
😀
অসাধারণ ফেরদৌস, অসাধারণ!
আমিও তোমার/তোমাদের সংগে গিয়ে ভিজে এলাম।