প্রারম্ভিকঃ
১। আজ অবধি সামরিক বাহিনীর কার্যসম্পাদনের জন্য সামরিক বাহিনীর কোনো বিকল্প খুজে পাওয়া যায়নি। এডাম স্মিথ এর মতে, “First duty of the sovereign, that of protecting the society from violence and invasion of other independent societies can only be performed by means of military force.” বর্তমানে পৃথিবীর প্রতিটি রাষ্ট্রই এই মতের সাথে একমত পোষণ করে, যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করার জন্য নিজেদের এই প্রথম এবং দায়ীত্ব পালনের জন্য প্রস্তুত করেছে। পাশাপাশি রাজনীতিবিদ এবং জনগনের মাঝেও দ্বিপাক্ষিক সমস্যার সমাধানে প্রায়শই সামরিক পদক্ষেপকে সমর্থন করতে দেখা যায়। আমাদের পৃথিবীটা বিভিন্ন দেশের মধ্যে বিরাজমান অর্থনৈতিক এবং সামরিক সংঘাতে ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ থাকে সর্বদাই। এই সংঘাতে বিবদমান খেলোয়াড়রা অধিকাংশ ক্ষেত্রে সমস্যা নিরসনের আদিমতম পন্থা সামরিক শক্তির প্রয়োগে আগ্রহী হয়ে থাকে।
২। বিশ্বের যে অংশটাকে আমরা ৩য় বিশ্ব বলে জানি তা খুবই অশান্ত। এই দেশগুলো এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাষ্ট্রগুলি সদ্যস্বাধীন এবং প্রতিপক্ষকে নিরস্ত করতে এখানে গ্রেফতার, নির্যাতন, দমননীতি বহুল প্রচলিত। এবং আশ্চর্য্যের বিষয় হলেও সত্য যে কেবলমাত্র এ অঞ্চলেই সামরিক সরকারের দৌরাত্ম্য লক্ষ্যণীয়।
৩। ৩য় বিশ্বের রাষ্ট্রগুলোতে ধনিক শ্রেণীগোষ্ঠি সর্বদাই পরিবর্তনশীল। নব্য ধনিক শ্রেণী উত্থান এবং পতনের মধ্যবর্তী সময় কয়েক মাস থেকে কয়েক বছর হয়ে থাকে। এসময় এই রাষ্ট্রগুলোর নেতৃত্বে দেখা দেয় শুণ্যতা। কারণ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর মতই এখানে রাষ্ট্রক্ষমতায় ধনিকশ্রেনী অধিষ্ঠিত থাকে। তাই এই অঞ্চলে রাজনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন একটি নৈমিত্যিক ব্যাপার।
৪। তাই এ অঞ্চলের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের কারণও বহুবিধ যা আলোচনা করতে হলে উদাহরনের প্রয়োজন হবে অনেক বেশী। যেমন মেক্সিকান জেনারেলরা দেশের রাজনীতিতে প্রভাবশালী ছিলেন বিপ্লবের পরেও ১৯৪০ সাল পর্যন্ত। পরবর্তিতে ধীরে ধীরে তারা অপসারিত হয়েছেন প্রেসিডেন্ট কার্ডেনাস, তার সমর্থক এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যবর্তী এক চমকপ্রদ সংঘাতের মধ্যদিয়ে।
৫। ৩য় বিশ্বের রাজনৈতিক পটপরিবর্তন একটি দুর্গম পদ্ধতি। অধিকাংশ দেশগুলোই স্বাধীনতা অর্জন করেছে তাদের ইউরোপীয়ান শাসকগোষ্ঠির সাথে রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের মাধ্যমে। যার ফলে তাদের ইউরোপীয়ান প্রভুরা বাধ্য হয় তাদেরকে স্বাধীনতা প্রদান করতে।
একারনে ৩য় বিশ্বের দেশগুলোর রাজনীতি খুবই সামরিক হস্তক্ষেপপ্রবন। ২য় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তি সময়ে এসকল দেশসমুহ বিভিন্ন মাত্রায় সামরিক হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। তারা অধিকাংশই এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার অন্তর্গত। সবগুলো দেশের সংস্ক্রৃতি, ঐতিহ্য এবং রাজনৈতিক ইতিহাস বৈচিত্র্যময়।তবে তাদের মধ্যে অনেক মিলও খুজে পাওয়া যায়। যেমনঃ ভারত- পাকিস্তান, ঘানা- নাইজেরিয়া, মালয়শিয়া-ইন্দোনেশিয়া ইত্যাদি।
উদ্দ্যেশ্যঃ
৬। আমার এই প্রয়াশের উদ্দেশ্য ৩য় বিশ্বের দেশসমুহের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের কারন, শর্তাবলী এবং ফলাফল সম্পর্কে আলোচনা করা।
*পরবর্তি অংশ আগামীকাল
==========================================================================
সামরিক বাহিনীর বৈশিষ্ট্যঃ
৭। সামরিক বাহিনী হল একটি শৃংখলাবদ্ধ রাষ্ট্রীয় সংগঠন যা উক্ত রাষ্ট্রের তুলনামুলক সামর্থ্য এবং দুর্বলতাকে নগ্নভাবে প্রকাশ করে।
কিছু বৈশিষ্ট্য সারা বিশ্বের সকল সামরিক বাহিনীর জন্য একেবারেই এক। এর মধ্যে অন্যতমঃ
ক। সামরিক বাহিনীর সদস্যদের জন্য সেনানিবাস নামক স্থানের আয়োজন করা হয় যেখানে বেসামরিকদের উপস্থিতি অত্যন্ত নগন্য।
খ। তারা সেনানিবাসের মধ্যেই তাদের জীবনের সিংহভাগ কাজ করে থাকে যার ফলে তাদের নিজেদের মাঝে একটি দৃঢ সম্পর্ক গড়ে উঠে।
গ। তারা অত্যন্ত কড়াভাবে চেইন অব কমান্ড মেনে চলে। সামরিক আইন, আদালত ও সুনির্দিষ্ট নীতিমালা এই কাজকে সহজ করে।
ঘ। সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ণ হল সংকটের সময় সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরে মতের দ্বৈততা থাকে না যা সামরিক বাহিনীর সমষ্টিগত স্বার্থকে অর্জন করতে সর্বাপেক্ষা সাহায্য করে।
৮। সামরিক বাহিনীর ক্ষমতাসমুহঃ
ক। সাংগঠনিকঃ এর মধ্যে প্রথমেই আসে সামরিক বাহিনীর আকার। এটাই নির্ধারন করে কি পরিমাণ অফিসার রাজনৈতিক কাজে নিয়োজিত হতে পারবে। তবে অফিসারদের শিক্ষা-প্রশিক্ষন, চরিত্র এবং নৈতকতাও সাংগঠনিক ক্ষমতার নিইয়ামক হিসাবে কাজ করে।
খ। ঐক্যঃ যেহেতু সামরিক বাহিনী একটি সশস্ত্র সংঠন, প্রায়শই তা সরকার এবং তার বাইরের সংগঠনের ঐক্যের প্রতি হুমকি সৃষ্টি করতে পারে। বিশেষ করে যেসব দেশে সেনাবাহিনী অন্য যে কোনো বেসামরিক সংগঠনের চেয়ে বেশী বিকশিত হয়েছে। এবং সামরিক বাহিনীর মধ্যকার এই ঐক্যই বেসামরিক গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে বড় ভুমিকা পালন করে।
গ। রাজনৈতিক অংশীদারীত্বঃ একটি দেশের সামরিক বাহিনীর সাংগঠনিক শক্তি এবং ঐক্যই নির্ধারন করে তা দেশের রাজনীতিকে কতটা এবং কিভাবে নিয়ন্ত্রন করবে। যেমন সামরিক বাহিনীর বিভিন্ন সিদ্ধান্তগ্রহনকারী কমিটিতে অংশীদারীত্ব এবং দেশের জনগনের মধ্যে সামরিক বাহিনীর প্রতি যে সমর্থন তাও রাজনীতিতে সামরিক বাহিনীর অবস্থানকে করে সুশংহত। এমনকি সামরিক বাহিনী জনগনের সমর্থন অর্জনের জন্য ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক দলও সৃষ্টি করতে পারে।
B-)
দাদা, স্টাডি পিরিয়ড ছিল নাকি রিসেন্টলি ??? ;))
দেখ দেখ, তোর পোস্ট গুলায় আমি ই ফার্স্ট হইতেসি লাগাতারে.. B-)
ননীগোপালের মিস্টি পাঠায়া দিস ;;; আর লগে আমার জিনিসগুলা 😡
২য় তাইলে 🙁
ভাই,সত্যি অসাধারণ,আপনি কি থিসিস করতেছেন? :boss:
চেষ্টা চলছে... =))
ফেরদৌস ভাই, দারুন হচ্ছে :thumbup:
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
ভালো সূচনা ফেরদৌস। পরের অংশের জন্য অপেক্ষমান। 🙂
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
কী বলতে চাইলা কিছু বুঝলাম না।
খালি প্রারম্ভিকা দিয়ে পোস্ট দেয়াতে বোধহয় এমন হল। আরেকটু বড় করলে হয়তো বুঝতে পারতাম।
এই ধরনের লেখা লিখতে হলে একটু গুছিয়ে, সময় নিয়ে, সচেতন হয়ে লিখতে হয়। আশা করি তোমার সেটা আছে।
খুব সাধারণ কিছু বানান ভুল করেছ। দেখতে খারাপ লাগছে।
---------------------------------------------------------------------------
বালক জানে না তো কতোটা হেঁটে এলে
ফেরার পথ নেই, থাকে না কোনো কালে।।
ভারত- পাকিস্তান এ দুটি দেশের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপে কিভাবে মিল পেলা বুঝলাম না।পাকিস্তান এমন একটি দেশ যেখানে সেনাবাহিনী ইতিহাসের অধিকানহশ সময় নিয়ন্ত্রন করেছে,পক্ষান্তরে ভারতে এখনো পর্যন্ত সামরিক হস্তক্ষেপের কোন উদাহরণ নেই।জেনারেল স্যাম মানেকশকে নিয়ে একবার গুজব উঠেছিল যে তিনি ভাকি ভারতের ক্ষমতা দখল করতে যাচ্ছেন,ইন্দিরা গান্ধী এটা নিয়ে ঠাট্টাচ্ছলে তাঁকে একবার জিজ্ঞাসাও করেছিলেন।উত্তরে জেনারেল স্যাম মানেকশ বলেছিলেন- "ম্যাডাম,আপনার নাক লম্বা,আমার নাকও যথেষ্ট লম্বা-কিন্তু তার মানে এই না যে আমি আপনার কাজে আমার নাক গলাতে চেষ্টা করব।"
বিশ্ব-রাজনীতি এবং উন্নয়নে দুটি দেশের যে অবস্থান(ভারত নতুন সুপার পাওয়ার হবার পথে আর পাকিস্তান দেশটার অস্তিত্ব থাকে কিনা সন্দেহ)- দুই দেশের জেনারেলদের মনোভাব পর্যবেক্ষন করলে এর একটি অন্যতম কারণ খুব চমকপ্রদভাবে ফুটে ওঠে।ভারতের জেনারেলরা যেখানে গণতন্ত্রের প্রতি আপাদমস্তক শ্রদ্ধাশীল,সেখানে পাকিস্তানের এক সেকেন্ড লেফটেনেন্টও স্বপ্ন দেখে যে সে একদিন দেশটির প্রেসিডেন্ট হতে পারে।
আমি আশা করি বাংলাদেশ এই দুটোর মধ্যে ভাল উদাহরণটি বেছে নেবে।
আমারও আশা ঠিক সেটাই।
আশাটার প্রতি আমার দৃষ্টিভঙ্গি আজও বদলায় নি MD B-)
"বিশ্বের যে অংশটাকে আমরা ৩য় বিশ্ব বলে জানি তা খুবই অশান্ত। এই দেশগুলো এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকা এবং মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই রাষ্ট্রগুলি সদ্যস্বাধীন এবং প্রতিপক্ষকে নিরস্ত করতে এখানে গ্রেফতার, নির্যাতন, দমননীতি বহুল প্রচলিত। এবং আশ্চর্য্যের বিষয় হলেও সত্য যে কেবলমাত্র এ অঞ্চলেই সামরিক সরকারের দৌরাত্ম্য লক্ষ্যণীয়"
- একটা প্রশ্নঃ ভারত কি ৩য় বিশ্বের দেশ না? এখানে সামরিক সরকারের দৌরাত্ন্য চোখে পড়েনা কেন?
রেশাদ ভাই,ঠিক এ জিনিসটাই আমি এই মাত্র বললাম! গ্রেট মেন থিঙ্কস এলাইক 😛
অফ টপিক-ভাইয়া ভালো আছেন?অনেক দিন আপনার কোন খোঁজ খবর নেই...
লেখাটার পর্যবেক্ষন ভারতের ক্ষেত্র ভাদে মোটামুটি ঠিক বলেই মনে হয়েছে আমার কাছে।অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক আলোচনা পাওয়া যাবে আশা করি।সামরিক বাহিনীর একজন সদস্যের চোখে তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপের কারণ,শর্তাবলী ও ফলাফল নিয়ে আলোচনা নিঃসন্দেহে খুব ইন্টারেস্টিং একটি প্রয়াস।পরবর্তী অংশের প্রতীক্ষায় রইলাম।
তুই যে সিসিবিতে লেখা শুরু করছিস আরো আগে এইটা আমি জানতাম না, দিন দিন সিসিবিতে সময় কম দিচ্ছি~
সাব্বাশ হাউজমেট,চালায়া যা, কি আছে জীবনে? (যদিও এখনো লেখাটা পড়িনি)...........তবে পড়বো একটু পরেই ইনশাল্লাহ! :thumbup:
@মাসরুফ ভাই- একটু ভাল করে খেয়াল করলে দেখবেন আমি যে তিনটি জোড়া রাষ্ট্রের কথা উল্লেখ করেছি তার একটি বহুবার রাজনীতিতে সামরিক হস্তক্ষেপ সহ্য করেছে এবং অপরটি করে নি। নাইজেরিয়া, মালয়শিয়া এবং ভারত না করাদের দলভুক্ত। পাকিস্তান, ঘানা এবং ইন্দোনেশিয়া করাদের দলভুক্ত। ধন্যবাদ।
@কামরুল ভাই-সময় একটা জিনিস যেটা যোগার করার মত সাধ্য আমার নেই। তবে আশা রাখি চিন্তার মেলবন্ধন চালু রাখতে সক্ষম হব।বানানের ব্যাপারে আমি বরাবরই কাচা। ভবিষ্যতে এব্যাপারে সচেতন হওয়ার চেষ্টা থাকবে। অমার্জনীয় হলেও মার্জনা কামনা করলাম। 😀
নাইজেরিয়া সামরিক শাসন সহ্য না-করাদের মধ্যে নয়,১৯৬৬ থেকে ১৯৯৯ পর্যন্ত প্রায় তেত্রিশ বছর এটি সামরিক শাসনের অধীনে ছিল।এখানে দেখতে পার।
এখানে*
🙁 @রেশাদ ভাই- ভারতের মত চীন, জাপান ও কোরিয়াও এশিয় দেশ। কিন্তু তারা নিশ্চয়ই ৩য় বিশ্বভুক্ত নয় ! সব প্রশ্নের উত্তর যদি অক্ষরে লেখা থাকে, পাঠকের চিন্তার জন্য কিইবা রইল???
২য় পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম। তথ্য আরো যাচাই করে দিলে লেখার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে। পারলে তথ্যসূত্র দিও।
লেখা ভাল হইছে...কিন্তু আমি এইটা বুঝলাম না, এত তাত্বিক লেখা লিখার মতো রিলাক্স টাইম পাইলি কোথায়??? 😕 😕 😕
আরে ওসি চিটাগং গেছে। আমি ইউনিটে একা। so.... B-)
আমি তো নিজেই রিয়ার ও.সি B-)
তুই কোন খানায় ভাব মারোস ? :grr:
হ্যা ভাই...ওসি মানুষ!!!! :boss:
দোস্ত তোর ওসি জীবন আনন্দের হোক 😀 😀 😀
এই নিয়ে আমি আগে একটা পোস্ট দিছিলাম।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত হচ্ছে সামরিক বাহিনীর রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দুর্বলতা প্রকাশ করে।
------------------------------------------------------------------
কামলা খেটে যাই
সঠিক।
এই আ্রটিকেল এর পরবর্তী পার্টগুলো দরকার।