MIRC এবং একটি ক্যাডেট সংক্রান্ত কাহিনী

তখন MIRC বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে আমাদের মাঝে। DU তে কলাভবনে class করি, দিনে দুইটার বেশি class নাই বাকি সময়ে বাসায় ফিরে IRC তে বসে থাকি। আড্ডা ও বন্ধ IRC র ঠেলায়। তো এমনি একদিন বসে আছি। দেখি একজন message দিচ্ছে main window তে “is there any ex-cadet here right now please message me”. বেশ ইন্টেরেসটিং লাগল দেখে তো মেসেজ দিলাম। প্রথমেই যথারীতি নাম ধাম বয়স জানতে চাওয়া। মন বেশ নেচে উঠল যখন শুনলাম তার নাম রুমকি, একটা প্রাইভেট ইউনি তে পড়াশুনা করছে। তো এক কথা দুই কথায় জানতে পারলাম তার এক্স ক্যাডেট খুজতে চাওয়ার রহস্য, তার কাজিন যে কিনা এক্স ফৌজিয়ান সে রুমকি র সাথে বাজি ধরেছে রুমকি যদি তার ক্যাডেট নাম্বার বের করতে পারে তো তাকে সে আইসক্রীম খাওয়েবে। তো আমাকে সে জিজ্ঞাশা করল তাকে আমি এই ব্যাপারে সাহায্য করতে পারব কিনা? একটা মেয়ে সাহায্য চাইছে আমি তখন পারলে আকাশ থেকে মেঘ নিয়ে আসতে পারি, আর এতো সাধারণ একটা ক্যাডেট নম্বর। তো আমি তাকে বল্লাম “কোনোই সমস্যা নাই আমি বের করে দিব তার কাজিন এর নম্বর, আমাকে খালি বলতে হবে তার কাজিন কবে এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে, আর কি নাম”। আমাকে সে বল্লো তার কাজিন এর নাম আর এস এস সি র বছর,তারপর আমার ফোন নম্বর নিয়ে সেইদিনের মতো সে বিদায় নিলো। আমি মহা উতসাহে ঝাপিয়ে পরলাম নম্বর উদ্ধার অভিযানে। আমার ছয় কাজিন ফৌজদারহাটের (আমিই খালি আর সি সি র), তো সহজেই আমার এক কাজিন কে জিজ্ঞাশা করে জ়েনে নিলাম রুমকি র কাজিন এর ব্যাচ নম্বর, যেহেতু রুমকির কাজিন আমার কাজিন একই ব্যাচ না তো ক্যাডেট নম্বর টা আর বলতে পারল না। ব্যাচ নম্বর পাওয়া গেছে তো এখন ক্যাডেট নম্বর ও পাবো আমি আশা ছাড়লাম না। আমি জানতাম ওফার অফিস আছে ইস্টাৱন প্লাজায়, আমার সাথে DU তে ঝিনাইদহের একজন পড়ত ওরে বললাম দোস্ত এই ব্যাপার তোর এখন যেই করেই হোক আমাকে এই লোকের ক্যাডেট নম্বর বের করে দিতে হবে। ও বল্লো “কোনো ব্যাপার না, আমি কালকেই যাবো ওফার অফিসে আর নম্বর বের করে আনব তুই চিন্তা করিস না”। সেইদিন রাতে রুমকি ফোন দিল ওর গলা শুনে আমি পুরা শেষ এত্তো সুন্দর গলা, আমাকে জিজ্ঞাশা করলো “কি অবস্থা নম্বর যোগার হইসে কিনা?” আমি জানালাম হয় নাই তবে হয়ে যাবে চিন্তা নাই, তারপর কখন দেখি কথা বলতে বলতে দুই ঘন্টা সময় চলে গেছে, ও বললো রাখতে হবে ফোন, কি আর করা। পরের দিন আমার ঝিনাইদহের সেই ফ্রেইন্ড নম্বর উদ্ধার করে আনল। ওফার পিয়ন নাকি নম্বর দিতে চায নাই বলে যে দেওয়া যাবে না, হেন তেন, তো আমার বন্ধু ক্যাডেট এইটা ত কোনও ব্যাপারই না, ও বল্লো ওকে জ়েসকা র অফিস থেকে পাঠাইসে এই নম্বর এর জানতে না দিলে জ়েসকার প্রেসিডেন্ট ফোন করবে যা মোটেও ভাল হবে না। তো এই কথা শুনে সে তাড়াতাড়ি নম্বর বের করে দিল। ব্যাস নম্বর পেয়ে আমাকে আর পায় কে, আমার বন্ধুরে খাওয়ালাম বিগ বাইটে (তখন আমাদের কাছে বিগ বাইট বেশ পপুলার ছিল)।ওইদিন রাতে আবার রুমকি র ফোন আসলো তাকে যখন নম্বর টা বললাম সে পুরা খুশি। যাইহোক এর পরের ঘটনা ওর সাথে নিয়মিত কথা হতো দুইজনের অন্তরংগটাও বাড়লো, ভাবলাম একদিন দেখা করবো কিনতু তার আগেই সে বললো ওর বিয়ে ঠিক হয়েছে দুই দিন পড়েই বিয়ে। ওইদিনই শেষ কথা হয়েছিল এর পর আর কথা হয়নি কয়েকবার মেইল করেছিলাম কোন উত্তর দেয় নাই। আশা করি সে ভালো আছে, সুখে আছে।

২,৩৫৬ বার দেখা হয়েছে

২৬ টি মন্তব্য : “MIRC এবং একটি ক্যাডেট সংক্রান্ত কাহিনী”

  1. কাইয়ূম (১৯৯২-১৯৯৮)

    সারোয়ার ভাই, বস্ নাম্বারটা দেন, জিগায়া দেখি ক্যান এরকম পাষান ঘটনা ঘটাইলো B-) B-)

    বস্, আপনার কাজিনগুলা ক্যাডা ক্যাডা আছিলো?


    সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!

    জবাব দিন
  2. সামি হক (৯০-৯৬)

    ফয়েজ ভাই,
    IRC চিনলেন না?ভাই মজা করলেন নাতো আমার সাথে? আর আসলেই গলা অনেক মিষ্টি ছিলো, আর বুঝেনইতো মাত্র কিছুদিন আগে তখন কলেজ থেকে বের হইসি তখন অনেক গলাই মিষ্টি লাগে।

    কামরুল
    এইটা প্রেম আর হলো কই। অকালে সব ভেসে গেলো 😛 । প্রথম প্রেম নিয়ে পি কে পাল স্যারের কাছে ধরা খাইসিলাম। একদিন লিখব দেখি সেই ঘটনা।

    ফৌজিয়ান
    নম্বরটা কেন জানি কখনো চাই নাই ভাবতাম একদিন সে নিজেই দিবে। আর আমার কাজিন রা সব অনেক সিনিয়র সব সেই নব্বইয়ের দিকে কলেজ থেকে বের হয়ে গেছে।

    পলাশ
    হ রে ভাই যা কইস পুরাই কুফা নম্বর 🙁

    জবাব দিন
  3. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)
    নম্বরটা কেন জানি কখনো চাই নাই ভাবতাম একদিন সে নিজেই দিবে

    মামা নো অফেন্স-আমাদের সেই পুরাতন শিভালরির যুগ আর নাই।এখন যুগ হইলো কে কত শো অফ করতে পারে আর কতটা তেলাইতে পারে(তোমারে দেবতা/দেবীর মত দেখায়,তুমি ছাড়া আমার জীবন বৃথা ইত্যাদি ইত্যাদি)...

    ট্রিক্স গুলা জানি না তা না কিন্তু যতই নিম্নমানের ক্যাডেট হই ক্যাডেট তো ছিলাম তাই ব্যবহার করতে গিয়াও কেন যানি করা হয়না।

    আর "আমার বিয়া ঠিক হয়া গেসে","আমার বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড ইউ এস থাকে এই ডিসেম্বরে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট" এইগুলা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়া গেসে।এইগুলার সরল অর্থ হইল-"তোমার সাথে ঘুরাঘুরি বা তার চেয়েও বেশি কিছু করতে আপত্তি নাই কিন্তু বন্ধনে জড়ামু না"।প্রথম প্রথম খুব গুরুত্ব দিয়া অনার মেইন্টাইন করতাম-"না, সে অন্যের বাগদত্তা তার সাথে সম্পর্ক করা জেন্টেলমেন ক্যাডেটদের অলিখিত অনার কোডে নিষেধ"।

    অনার কোড আজো মেইন্টেইন করি কিন্তু ভিতরে ভিতরে জানি যে আমার আশ পাশ অনার কোড না বরং ডিজঅনার কোড ফলো করতেই বেশি উৎসুক।

    কাউরে অফেন্স করার জন্যে কইতেসিনা কিন্তু আশে পাশে যা দেকসি অধিকাংশই এই গ্রুপে পড়ে।আর এক্সেপশন যা আছে সেইগুলারে উদাহরণ হিসেবে না নেওয়াই উত্তম।

    একজন ডাই হার্ড ক্যাডেট হিসেবে আমার জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে আমি এই অনার কোড ফলো করতে চেষ্টা করি নিজের অজান্তেই।সেই ক্যাডেট হিসেবেই নিজের অভিজ্ঞতাগুলা যাদেরকে ভাইদের চেয়েও আপন মনে করি তাদের সাথে শেয়ার করলাম।আশা করি বাকিরা তাদের অভিজ্ঞতা দিয়ে আমার এই অভিজ্ঞতাকে নগন্য ব্যতিক্রম বলে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে।

    আহ,ভিতরে ভিতরে কতই না স্বপ্ন দেখি একটা পারফেক্ট ওয়ার্ল্ডের!

    জবাব দিন
  4. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)
    অনার কোড আজো মেইন্টেইন করি কিন্তু ভিতরে ভিতরে জানি যে....

    তোমাকে :salute: ।
    কিন্তু ঐ যে এক্সেপশনের কথা বললা না? ঐটা এখনও আছে।

    আচ্ছা, তুমি শেষ কবে ব্লগ লিখছ বল তো?


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  5. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    @ মরতুজা ভাই,
    পেরেম ভালবাসার লগে আমার পরিচয় হইল ভিকটরিয়ান যুগের নভেলে-সেই ত্যাগ তিতিক্ষা,"আ টেল অব টু সিটিজ" এর সিডনি কারটন মার্কা অথবা "গিফট অফ ম্যাজ়াই"(আমাগো পাঠ্য ছিলনা,বড়ভাইগো কাস থিকা পড়ছি)এর দম্পতির মতন।মাগার পড়াশুনাটা হইছে নসুতে(অনেকে পার্ট লয়া এ্যান অ্যাস ইউ ও কয়) ,যেইখানে আশেপাশের ম্যালা পুলাপাইনেরই কাক আর গার্লফেরেন্ড বা বয়ফেরেন্ডের সংখ্যা সমান।শুরুতেই কালচারাল শক যেইটা খাইছিলাম সেইটা বড় জব্বর ছিল।পরে দেখি এইটা খালি নসুর কেস না,ডিজুস প্রজন্মের এইটাই এখন ইশটাইল।ক্যাডেটের অভিযোজন ক্ষমতার সাথে পাল্লা দেয় দুইন্নাতে এমন প্রজাতি খুব কমই আছে-তাই পল্টি খায়া খায়া নিয়ম কানুন অল্প দিনেই শিইখা ফালাইলাম।কলেজের লাইব্রেরিতে গড়ে ওঠা সেই ভিক্টরিয়ান পিউরিটিতে অন্ধ বিশ্বাসী আমার জন্য রিয়েলিটিটা কঠিন ছিল কমুনা মাগার বড়ই কর্কশ ছিল।সামি ভাইয়ের এত চমৎকার লিখাটাতে এই যুগের মোবাইল কালচারের ছোঁয়া দেখে(যার সাথে আমার বিশাল কমেন্ট গুলা প্রায় ইররেলেভ্যান্ট বলা চলে,খালি আপন মানুষ দেইখা শেয়ার করার সাহস পাইছি-অন্য ব্লগ হইলে গাইল্লায় রাখতো না)সেই বহুদিনের পুরানো কালচারাল শকের জায়গাটা টনটন কইরা উঠল।আর সেই থিকাই এই সব আজাইরা কমেন্ট।

    ভাইজান মাপ কইরা দিয়েন।(সামি ভাই,কমেন্ট ডিলিট করলে মাইন্ড খামুনা-ঈমানে কইতাছি বস!)

    আপনের ক্ষুদ্র-নরম কোম্পানিতে কাজ কারবার কেমুন যায়?বিল্লু মামু তো রিটায়ার কইরা গেল...

    জবাব দিন
  6. মাসরুফ (১৯৯৭-২০০৩)

    @ সায়েদ ভাই,মামা আপনারে ইয়াহুতে দেওয়া আমার লাস্ট মেসেজটা কি বেশি ভারি হয়া গেছিল?কেন যে আমি এমুন 🙁
    বস সামনে পরীক্ষা তো তাই ব্লগ লিখা বন্ধ।সিসিবি তে ঢুকুমনা ঢুকুমনা কইরাও রেগুলার ঢুকি-কিছু করার নাই।আর ঢুকলেই কমেন্টাইতে ইচ্ছা করে।এইটা আপন মানুষের ব্লগ দেইখা একটু যে রাখ ঢাক করুম বা আগ পিছ চিন্তা করুম সেইটাও করি না।মডারেটর আর বড় ভাইরাও মনে হয় ইচ্ছা কইরাই আমার এইসব পাগলামি বরদাশত করেন।

    আর একসেপশনের কথা কইলেন-মাইন্ড না খাইলে এট্টু সাহিত্য করি।"বিধাতার রাজ্যে ভাল জিনিসের সংখ্যা এত কম বলেই তার এত কদর নইলে তা নিজেরই ভীড়ের ঠেলায় হয়ে যেত মাঝারি"...শতভাগ সহমত আপনার সাথে।

    বাই দা ওয়ে-উর্দু শিখা শুরু করেন।১৯৭১ নিয়া ওই মুভিতে বাঙ্গালী দরদী পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের চরিত্রে অভিনয় করবেন না?আর মামীর জন্য কাশ্মিরি পোশাক অর্ডার দেন...ফ্ল্যাশব্যাকে উনি আইবো কিন্তুক...

    জবাব দিন
  7. রবিন (৯৪-০০/ককক)

    আর “আমার বিয়া ঠিক হয়া গেসে”,”আমার বয়ফ্রেন্ড/গার্লফ্রেন্ড ইউ এস থাকে এই ডিসেম্বরে আমাদের এঙ্গেজমেন্ট” এইগুলা শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়া গেসে।এইগুলার সরল অর্থ হইল-”তোমার সাথে ঘুরাঘুরি বা তার চেয়েও বেশি কিছু করতে আপত্তি নাই কিন্তু বন্ধনে জড়ামু না”।

    আমি মাসরুফের সাথে এক মত, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এগুলা বলা এখনকার ফ্যাশন। এখন বেশিরভাগই চায়, শুধু টাইম পাস। কোনো রিলেশন এর টাইম নাই,

    জবাব দিন
    • জিহাদ (৯৯-০৫)
      আমি মাসরুফের সাথে এক মত, বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এগুলা বলা এখনকার ফ্যাশন। এখন বেশিরভাগই চায়, শুধু টাইম পাস। কোনো রিলেশন এর টাইম নাই,

      একেবারে যাকে বলে বিশেষজ্ঞের ডেস্ক থেকে। পিরা যেতে যেতেই আসলে মানুষ একসময় হাঁটা শিখে। :frontroll: :gulti:


      সাতেও নাই, পাঁচেও নাই

      জবাব দিন
  8. সায়েদ (১৯৯২-১৯৯৮)

    মাসরুফ,

    এইখানে তোমার কমেন্টটা দেখতে দেখতে একটু দেরী হয়া গেল। না, ইয়াহুতে পাঠানো তোমার মেসেজ খুব বেশি ভারী হয় নাই। আগারা বাগারা ম্যালা কিছু করতেছি কিন্তু তোমাকে লেখা হয়ে উঠছে না 😛 । তবে নিশ্চিত থাক লিখব।

    আমার অবস্থাও তোমার মতোই। এইখানে খুব প্রিয় মনে হয় সবকিছু, বড় আপন আপন লাগে :hug: । দিনের ভিতর কত ঘন্টা যে এর পিছনে চলে যায় তার হিসেব আপাতত নাই আমার কাছে। আমি আমার ফেলে আসা হিরম্ময় সময়ে চলে যেতে পছন্দই করি 😡 ।

    আমি সারাটা জীবন ক্যামেরার পিছনের মানুষ :bash: । সিনেমার লাইগা আমারে নিয়া টানাটানি ক্যান 😮 😮 😮 ??


    Life is Mad.

    জবাব দিন
  9. আহ্সান (৮৮-৯৪)

    কয়েক ঘন্টার মধ্যে দুইটা ব্যর্থতার কাহিনী পইড়া মেজাজ চরমতম গরম। আল্লাহ ই জানে আজকে দিনটা কেমন যাবে। ওই পোলাপানেরা,মনটারে শক্ত কইরা ত্যানা দিয়া বাইন্ধা রাখতে পারোনা। এমনভাবে বাইন্ধা রাখবা যেন রিনরিনে গলা শুনলেও মনডার কিছু না হয়...। এত দুঃখ ছুড ভাই গুলার... ধ্যাত, খালি গিয়াঞ্জাম...।

    মাসরুফ,
    তোমার কমেন্টগুলা অনেক মনোযোগ দিয়া পড়লাম।
    কেন জানি মন থেকে বিশ্বাস নামক বস্তুটা উঠে গেছে...।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।