নস্টালজিয়া-২

নস্টালজিয়া-১

সাপ
অষ্টম শ্রেনীর শেষের দিকের ঘটনা। আসাদ ভাই তখন জুনিয়র প্রিফেক্ট।

আমার প্রিয় বন্ধু নাঈম আমাকে মজার এক তথ্য দিল। তথ্য চমকপ্রদ কিছু নয় কেবল ভেড়ার আচরন সম্পর্কিত, ভেড়ার পালে পশ্চাদগামী ভেড়া তার অগ্রগামী ভ্রাতাকে যথাযথ অনুসরণ করে থাকে। উক্ত তথ্য জেনে আমি ভেড়া, বড়ই আশ্চার্যান্বিত হলাম। বন্ধু আমাকে একটা উদাহরন দিয়ে ব্যাপারটা খুব ভালভাবে বুঝিয়ে দিল। যেমন ধর, ভেড়ার লাইনের একটা ভেড়া কোন গর্ত দেখে লাফ দিয়ে এগিয়ে গেল, পরবর্তী ভেড়া গর্ত দেখুক বা না দেখুক সেও আগের ভেড়ার মত যথা স্থানে যথাযথ ভাবে একটা লাফ দিবে।

মাথায় বিষয়টা কেবল ঘুরপাক খাচ্ছিল। মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি চাপল। ভাবলাম প্রয়োগ করে দেখি কি হয়। ভাবনামত আমি সাহস সঞ্চয় করে প্রস্তুতি নিলাম। রাতের প্রেপ, ডিনার শেষে ডাইনিং থেকে সবাই লাইন ধরে শেষ প্রেপের জন্য একাডেমী বিল্ডিং এর দিকে যাচ্ছি। বাস্কেট বল গ্রাউন্ডের কোনায় এসে একটা শুকনা লাঠি মত পড়ে থাকতে দেখে টুক করে একটা লাফ দিলাম। খেয়াল করলাম আমার পেছনের জনও টুক করে একটা লাফ দিল। এভাবে একর পর এক সবাই ভেড়ার পালের মত লাফাতে লাগল। আমি চরম মজা পেলাম। কিন্তু আচমকা কে যেন চিৎকার দিয়ে উঠল “সাপ”।

বাস্‌ যে যেদিকে পারল দৌড়। লাইন ভেঙ্গে একেকজন একেক দিকে ছুটল। জে পি আসাদ ভাই আমার কাছাকাছিই দু-লাইনের মাঝে দিয়ে হাটছিলেন। “সাপ” চিৎকার শুনে উনিও দিলেন দৌড়। কিছু দূর দৌড়ে গিয়ে তারপর প্রচন্ড জোরে চিৎকার “Who breaks the line?” অন্যান্য জে পি রাও লাইন ঠিক করা নিয়ে চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিল। উনাদের গগনবিদারী চিৎকারে নাইটওয়াকরত এ্যাডজুটেন্ট মাকসুদ স্যার স্পটে হাজির। তারপর যা তুলকালাম কান্ড হল তা আর এই টুশকি পোষ্টে শেষ করা সম্ভব নয়।

আবারো ভুত
হয়ত অষ্টম শ্রেনীর শেষের দিকের ঘটনা, ঠিক মনে করতে পারছি না।

মাহিন, হিসাম ভাইরা তখন টেন এ। আমি আর মশি রুমমেট ছিলাম ৩১৮ নম্বর রুমে। আসিফ আর সালমান ভাই ছিল রুম সিনিয়র।
টার্মের শেষ দিকে পরীক্ষা শেষ ব্যস্ততা কম। রাতের বেলা লাইটস অফের পরেও সিনিয়ররা ঘুরাঘুরি করে। আমার মাথায় আবার দুষ্ট বুদ্ধি চাপল। ভাবলাম ভাইয়াদের সাথে একটু মজা করি।

একটা পাঞ্জাবি হ্যাঙ্গারে টানিয়ে ফ্যানের সাথে ঝুলালাম। বই সেলানোর সুতা বেধে পাঞ্জাবির ভিতর থেকে লম্বা করে খাটের তলায় নিয়ে গেলাম। সুতার মাথায় ধরে আমিও ঢুকে পরলাম খাটের তলায়। রাত তখন সাড়ে এগারোটা বাজে। মাহিন ভাই, হিসাম ভাই আরো কয়েকজন সামনের করিডর ধরে ৩০৭ থেকে ৩১৯ এর দিকে এগিয়ে আসছেন। আমি মোটমুটি জোরে মায়া কান্না জুড়ে দিলাম। ঠিক যেভাবে ভুত কাদেঁ।

ভাইয়ারা টের পেয়ে থমকে দাড়ালেন। দরজা হালকা ভেজানো ছিল। হিসাম ভাই দরজা ঠ্যালে ভিতরে ঢুকে দেখেন মাথার উপর সাদা পাঞ্জাবী তিড়িং বিড়িং করে নড়ছে। আমি কান্না থামিয়ে চুপ। এমন সময় হিসাম ভায়ের চিৎকার “ঐ আমার বাচ্চাটা কান্দে, তোরা এই দিকে আয়।”

অন্ধকারে হাতড়ে আমাকে খাটের তলা থেকে বের করা হল। তারপরে আর বেশি কিছু না, ছোটখাট একটা গণ খেলাম।

আকাশ ঠেলা
একই সময়ের ঘটনা।

সকাল বেলা পিটির বাঁশি দিল। ঘুম থেকে চোখ কচলাতে কচলাতে উঠে দেখি পাশের বেডে মশি নেই। সম্ভবত মুখ ধুতে টয়লেট এ যেতে পারে। আমিও আমার নিত্যকর্ম সম্পাদন করতে ব্যতিব্যস্ত হলাম। সব কাজ শেষে আমি মোটামুটি রেডি হয়ে আছি, মশির অপেক্ষা করছি। কিন্তু মশির ফেরার নাম নেই। এদিকে সময় আর বেশী নেই। বাথরুমে গেলাম মশিকে ডাকতে। না মশি কে খোজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমি অস্থির হয়ে আবার রুমে ফিরে আসলাম। আসিফ ও সালমান ভাইকে বলতেই দুজন খেয়াল করল মশি খাটের তলায় উপরের দিকে হাত দিয়ে শুয়ে আছে। মশিকে টেনে খাটের তলা থেকে বের করা হল। মশি চোখ খুলে হয়ত কিছু বুঝে উঠতে পারছিল না। ও বলে উঠল “আমি এতো ঠেলছি, তবুও আকাশ উপরে উঠে না কেন?”

শেষ পর্যন্ত জানা গেল, মশি খাট থেকে ঘুমের মাঝে পড়ে গিয়েছে। তারপর খাটের তলায় দিব্যি ঘুমে নানান স্বপ্নে সে নিমগ্ন ছিল, তার মধ্যে একটা স্বপ্ন ছিল এই রকম।

“আকাশ অনেক নিচে নেমে গেছে, বার বার তার মাথায় লাগছে আকাশ। অনেক চেষ্টা করছে আকাশকে ঠেলে সে উপরে তুলে দিবে। কিন্তু আকাশ আর উপরে উঠছে না।”

আসলে ঘুমের ঘোরে মশি মূলত খাট ঠেলছিল উপরের দিকে।

নস্টালজিয়া-৩

২,০৪৪ বার দেখা হয়েছে

২০ টি মন্তব্য : “নস্টালজিয়া-২”

  1. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    ভাল লাগলো মহিউদ্দিন ভাই, সিরিজ চালাতে থাকেন। সাপ কাহিনির দিন আমরাও দৌড় দিছিলাম 😀


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।