নোভাঃ ঝরা পাতার গল্প

কিছুক্ষণ আগে সাবিনা আপার লেখা পড়লাম। ক্ষোভ, হতাশা আর গোপন রাগ খোঁচা মেরে উঠল, হাত নিতে হল কিবোর্ডে। সময় শুধু এফোঁড়-ওফোঁড় দিয়ে চলে যায়, কিন্তু মানুষ হিসেবে আমাদের সংকীর্ণতা গুলোর কোন বয়স নেই, জেনারেশনের পর জেনারেশনের মাঝে এরা কুৎসিত সেতু বন্ধন গড়ে তোলে। ভুল থেকে কি আমরা আদৌ কিছু শিখি? বিম্পি-আম্লীগ এর ক্ষমতায় থাকার নোংরা লড়াইয়ে আমরা কেন নাক শিটকাই যখন ক্যাডেট কলেজের সামান্য প্রশাসনিক ক্ষমতায় কিছু মানুষ অসামাজিক জীবে পরিণত হয়? নোভা ছিল ১২/১৩ বছরের, কিন্তু তার চলে যাওয়ার পিছে যারা দায়ী, তারা কেউ ৩০ এর এপাশে নন। গত বছর নোভাদের ব্যাচ কলেজ থেকে বেরোলো। আশা করব ওদের কেউ এই ব্লগে লিখবে কোনদিন ওকে নিয়ে, ওর চলে যাওয়া নিয়ে। তার আগে আমি কিছু লিখি।

ওর ক্যাডেট নাম ছিল তাসনোভা, ২০০৮ এ কলেজে আসে ওদের ব্যাচ। আমরা ওই বছর এস এস সি দিয়ে বাসায় ছুটি কাটিয়ে আসলাম, তার পরের টার্ম এ জুনিওর প্রিফেক্ট ছিলাম আমি আর কলি। যেদিন অ্যাপুলেট পরানো হল, স্বাভাবিক ভাবেই রাতে হাউস মাস্টার রুমে ব্রিফিং এর ডাক পড়ল। আমাদের দুইজনের মূল দায়িত্ব দেয়া হল ক্লাস সেভেন আর এইট এর একাডেমিক্স দেখা কারন ফেলের সংখ্যা বেশি (যা খুব ই স্বাভাবিক, আমরাও সেভেন এইটে ফেল্টুস ছিলাম) এবং তিন জন হাউস টিউটর কমপ্লেইন করলেন নোভা সম্পর্কে, সে নাকি বিশাল ফাজিল। তার ডিসিপ্লিন এবং একাডেমিক্স রেকর্ড খুব ই খারাপ এবং তাকে দৌড়ের উপর রাখতে হবে এই ছিল ওই দিনের সারমর্ম। আমি আর কলি বেশ অবাক হয়েই এই মেয়ের ব্যাপারে নজর রাখা শুরু করলাম। পরের কয়েক সপ্তাহে যা যা দেখলাম, সে শুধু পানিশমেন্ট খেত তা না, যে কোন হাউস টিউটর ক্লাস সেভেন এর কোন ক্যাডেটকে ধুচ্ছেন মানে তা ৭০% সময়েই নোভা, সে আসলেই একাডেমিক্স এ খারাপ, এবং তার উপর তার ফর্ম মাস্টার (ফিজিক্সের রুখসানা ম্যাডাম) চরম ক্ষ্যাপা এবং সে খুব জেদি, যেটা একটা ক্যাডেট কলেজের ক্লাস সেভেন এর সাথে যায় না। একদিন লাইটস অফ এর পর চারতালায় থাকা আমাদের ক্যাডেট দের জন্য রাউন্ডে যাই, গিয়ে দেখি আমাদের ইমিডিয়েট জুনির ব্যাচের(তৎকালীন ক্লাস টেন) প্রায় সবাই সেখানে এক জনকে পানিশমেন্ট দিচ্ছে। আমি আর কলি যাওয়ার সাথে সাথে সেটাকে কাভার আপ করার চেষ্টা করা হয় এবং আমি দেখি ঘেমে একাকার হয়ে নোভা নিচে চলে যাচ্ছে সিঁড়ি দিয়ে। পরে শুনলাম, একাডেমী ব্লকে ও সিনিওর দের ফিল্টার থেকে পানি খাচ্ছিল যা ক্লাস টেন দেখে ফেলে। জানিনা ওর মত পুঁচকে মেয়ে কে সাইজ করার জন্য পুরো ব্যাচ কেন দরকার ছিল, নাকি আরো কিছু ছিল ব্যাপার যা অমার্জনীয় ছিল। জুনিওর ব্যাচকে এত সিনিওর হয়ে কিছু বলার আগে সব দিক দেখে নেওয়া দরকার তাই সেদিন আমরা কিছু না বলে চলে আসি।

পরের দিন নোভাকে ডাকি, এবং আনফরচুনেটলি সেদিন ওদের ফার্স্ট ক্যাডেট এসে আমাদেরকে রেজাল্ট জানায় যায়। ওটা ছিল স্পোর্টস টার্ম, হাউস চ্যাম্পিয়নশিপ নিয়ে টানাটানি, ক্লাস সেভেন চার জন ফেল যাদের একজন আবারো নোভা। ওই দিন আমি আর কলি, যা আগে করিনি, তাই করলাম, চারজনকে ডাকলাম। জানতে চাইলাম ওদের সাইডের স্টোরিটা কি। এই চারজন প্রত্যেকেই ক্যাডেট কলেজে আসার আগে তাদের নিজ নিজ স্কুলের টপার ছিল, জানতে পারলাম এখানে একজন স্যারের মেয়ে ও আছে।  নোভার জেদ, এবং প্রতিনিয়ত কলেজ থেকে চলে যেতে চাওয়ার খবর আমরা ইতিমধ্যেই জানি। সেদিন জানলাম, ওর বাবা মা তাকে নিয়ে যেতে চান না কারন তাদের একমাত্র সন্তান ক্যাডেট হবে এই তাদের ইচ্ছা। ওর ক্লাসমেট দের সাথে কথা বললাম ওরাও তাই জানালো। বলল ওরাও ওর প্যারেন্টসকে রিকোয়েস্ট করেছে ওকে নিয়ে যেতে যেহেতু ও এতদিনেও অ্যাডজাস্ট করতে পারছে না। ওর প্যারেন্টস উল্টা ওদের বুঝিয়ে গেছে কিভাবে নোভাকে কলেজে রাখতে হবে। নোভা ইচ্ছে করে নিয়ম, ভাঙ্গার কাজ করত যেন ওকে কলেজ আউট করে দেয়া হয়। ক্লাস সেভেন পানিশমেন্ট খাবে আর কাঁদবে, এটাই স্বাভাবিক দৃশ্য, কিন্তু নোভাকে পানিশমেন্ট খেয়ে চোয়াল শক্ত করে ব্লক থেকে বের হয়ে যেতে দেখেছি অনেক বার। কিন্তু সেদিন যখন কথা বলতে ডাকলাম, হেচকি তুলে কাঁদল। আমি আর কলি ওকে কাঁদতে দিয়ে রুমের ভিতরে ঢুকলাম, কান্নার শব্দ কমে গেলে আবারো বললাম কথা বলতে ওকে। ও কিছু বলতে চায় তা বুঝতে পারি, কিন্তু শেষ করে না। লাইটস অফের সময় হয়ে গেলে ওকে রুমে পাঠায় দিলাম। ওকে দেখে একটা কথাই মনে হচ্ছিল, মেয়েটা কোথাও কোন সফট কর্নার পাচ্ছে না। এবং কেউ যে ওকে পানিশমেন্ট না দিয়ে, বা অপমান করে কথা বলতে পারে এই কলেজে, এটা ওর কাছে অচিন্তনীয়। আমি আর কলি ঠিক করলাম, ওকে নরম হওয়ার সুযোগ দিতে হবে, কারন ভালো ভাবে বললে দেখেছি ও কথা শুনে।

পরদিন সকালে ও আবার আসল, এসে জানালো, যারা ফেল করেছে, তাদের সবাইকে স্পোর্টস চলাকালীন টাইমে স্টাফ লাউঞ্জে বসে পরীক্ষা দিতে হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কে জানালো এইসব রুলস? (কারন এটা আগে ছিল না, এবং স্পোর্টস এর সেই চরম উত্তেজনার দিন গুলোতে কোন ক্যাডেট মাঠে নাই, এটা কখনো হয় নাই, এবং তা মানা কষ্টকর)। আমাকে নোভা জানালো ওরা এতক্ষণ স্টাফ লাউঞ্জে সবার সামনে প্রিন্সিপাল স্যারের (ফজলুল করিম) অকথ্য বকা খেয়ে আসছে। অকথ্য এ কারনে বললাম কেননা তিনি নাকি পরিবার তুলে কথা বলতেও ছাড়েন নি। আমি এই পরীক্ষার ব্যাপারে শিওর হয়ে নিলাম একজন হাউস ডিউটিতে থাকা স্যারের কাছে। যা বুঝলাম, ফেল ছিল যাদের, তাদের কে স্টাফ লাউঞ্জে হেভি সয়েল ওয়াশ করা হয়েছে, এবং নোভাকে নাকি স্পেশালি প্রিন্সিপাল স্যার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করে দিয়েছেন তার রেকর্ডের কারনে। স্যারের এবং নোভার কথা মিলে যাওয়ায় বুঝতে পারলাম কাহিনী সত্য। ক্যাডেটরা তখন সবাই মাঠে, কলি নোভাকে নিয়ে ওর ফর্ম মাস্টার তার কাছে গেলেন, কারন ২ নাম্বার এর জন্য ওর ফেল ছিল একটা সাবজেক্টে। কলির সামনেই উনি নোভাকে যাচ্ছেতাই বলে বকলেন এবং একটা চড় মারলেন। এবং কলিকে এও বললেন ওর ফর্ম মাস্টার হওয়ার জন্য ওনাকে কত পেইন নেওয়া লাগতেছে। কলি ওকে নিয়ে মাঠে ফেরত আসল, এবং ওকে বলল আবার পরীক্ষা দিয়ে পাশ না করলে ফেল সরানোর আর কোন উপায় নাই।

যাই হোক, মিল্ক ব্রেক এর আগ পর্যন্ত নোভা মাঠেই থাকল, ওকে হাসতে দেখলাম, দৌড়াইতে দেখলাম। বিকালে যখন ক্যাডেটরা মাঠে থাকবে ওকে ওই সময় পরীক্ষা দিতে হবে, কিন্তু ওকে স্ট্রেসড আউট হতে দেখলাম না। মিল্কব্রেক শেষে হাউসে গিয়ে 9Xm এ বাদশাহ ভাইয়ের গান দেখতেছিলাম, হাউস বেয়ারা এসে জানাইল নোভা গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করে এখন হসপিটালে গেছে অ্যাডমিট হইতে, যেন স্টাফ লাউঞ্জে গিয়ে পরীক্ষা না দেয়া লাগে। আমি আর কলি শুনেই বুঝলাম কাহিনী কি, ওকে লাঞ্চ পর্যন্ত সময় দিতে চাইলাম আমরা। ওর আসলেই ব্রেক দরকার ছিল, ওর রুমমেট দের সাথেও ওর সম্পর্ক ভাল ছিল না কারন ওর ফল্টে ওদেরকে অনেক পানিশমেন্ট খেতে হত। আমরা দুইজন ই সিদ্ধান্ত নিলাম লাঞ্চের পর হসপিটালে গিয়ে ব্যাপারটা দেখব। গেলাম লাঞ্চ শেষে, গিয়ে দেখলাম ভাত খাচ্ছে, আমরা ওর ভাত খাওয়া শেষ করার সময় দিলাম, শেষ করে ও নিজেই আমাদের সামনে আসল, এবং ওকে দেখে মনে হচ্ছিল ও খুব ই লজ্জিত ওর এই কাজের জন্য। জানলাম যে ওকে ভর্তি করে নাই, তাই এখন হাউসে চলে যেতে হবে ওকে। ও আমাদের সামনে দিয়ে হেটে রুমে চলে গেল, আমি রুমে না গিয়ে সরাসরি শাওয়ারের নিচে চলে গেলাম, পুরো স্পোর্টস টার্মে দুপুরে গোসল করার সময় মিলত না আমার, রাতে নইলে সকালে করতে হইত। আমি নিজেও প্রচণ্ড টায়ার্ড ছিলাম। হঠাত শুনলাম আমার রুমের সামনে জুনিওর এসে ডাকছে আমাকে। আমার রুমমেট ওর কাছ থেকে শুনে জানালো যে নোভা রুম সিনিওর এর সাথে চিল্লা চিল্লি করতেছে, আমি আমার রুমমেট এর মাধ্যমে ওকে বললাম রুমে গিয়ে ওয়েট করতে, আমি ৫ মিনিটের মধ্যে আসব। আমি ঠিক ২ কি ৩ মিনিটের মধ্যে বের হলাম, তাতেও রক্ষা হয়নি, বের হওয়ার সাথে সাথে চিৎকার শুনে দৌড়ে গেলাম জুনিওর ব্লকে।

সেদিন নোভা চলে গেল। এর পরে অনেক কিছু হয়েছে, কিন্তু আমি যা যা না চাইলেও মনে রাখতে হয়েছে তা পয়েন্ট করে বলি, নইলে ফুরোবে না।

– আমি যখন রুমে যাই, তখনো নোভা ফ্যানের সাথে ঝুলছে, এবং ওর রুমের দরজা খোলা, এবং দরজায় একজন ম্যাডাম দাঁড়ানো, উনি খুব খারাপ কাজ করেছেন আমার দৃষ্টিতে । আমি গিয়ে নোভার পা নিচ থেকে ধরলাম, আর ওর ই ব্যাচমেট আনিকা, খুব ই সাহসী একজন ক্যাডেট ক্লাস সেভেন এর তুলনায়, চেয়ার নিয়ে উপরে উঠে কাঁচি দিয়ে ওর ওড়না কেটে ওকে নামালো। ম্যাডাম ধরেন নাই কেননা এর আগের বার পলেন আপার কেসে সবাইকে অনেক ঝক্কি পোহাতে হয়েছে তাই উনি এবার কোন কিছুতেই কোন আঙুলের ছাপ ও ফেলতে চান না। আমাকে অবাক করে দিয়ে তিনি এই কথাটা বললেন। সব কিছু এত স্প্লিট সেকেন্ডের মধ্যে হচ্ছিল যে আমি ভাবছিলাম একটু কষ্ট করলে এখনো নোভাকে ফেরানো সম্ভব, ও হয়ত এখনো দম নিচ্ছে।

– শুক্রবার জুম্মার ঠিক পর ঘটল ঘটনাটা। আমাদের হাউস মাষ্টার খাজা মাইনুদ্দিন স্যার ঘটনা ঘটার পর হাউসে প্রথম আসলেন বিকাল ৩.৩০ এর পরে, কেননা ওনাকে ইন্টারকমে ফোন দিলে পাওয়া যাচ্ছিল না। এসেই প্রথম যেই কথা টা আমাকে উনি বললেন, মা তুমি তো জানো এর মধ্যে আমার কোন দোষ নেই। একবার ও জানতে চাইলেন না বাকি সেভেন দের কি অবস্থা, বা এটা কিভাবে ঘটল ইত্যাদি ইত্যাদি। অবাক হয়ে দেখছিলাম কিভাবে সবাই গা বাঁচানোতে ব্যাস্ত, যেখানে একটা মেয়ে মারা গেছে।

– আমাদের তখনকার হাউস প্রিফেক্ট ছিলেন আমার গাইড, উনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছিলেন বারবার, আমি আপাকে বললাম যে আমি আর কলি যা পারি ক্যাডেট সামাল দিচ্ছি, উনি একটু সময় নিক। এর মধ্যে প্রিন্সিপাল স্যার সব ক্যাডেটকে মাঠে ফল ইন করতে বললেন। ফল ইনে প্রথম লাইন টা বিষের মত ঢুকল কানে, “যে গ্যাছে, সে তো গ্যাছেই, আমাদের সবাইকে এই বোঝার মধ্যে ফেলে গেল। এর জন্য এখন কাঁদার কিছু নাই।” আমি আমার কানকে বিশ্বাস করাতে পারিনি কি শুনলাম। প্রিন্সিপাল স্যার ওনার কথা শেষে মাঠ ছেড়ে গেলে কথা বলতে আসলেন অ্যাডজুটেন্ট মেজর তোফায়েল আহমেদ স্যার, যিনি একটু আগেই অ্যাম্বুলেন্সের তোয়াক্কা না করে কোলে করে দৌড়ে নোভাকে নিয়ে গিয়েছিলেন কলেজ হসপিটালে। উনি দোয়া করতে বললেন, শক্ত হতে বললেন, সবাইকে এক সাথে হয়ে থাকতে বললেন, যেমনটা আসলেই একজন স্যারের বলার কথা।

– ইনভেস্টিগেশন বোর্ড যখন আমাকে প্রশ্ন করল নোভা কেমন ছিল একজন ক্যাডেট হিসেবে, তখন আমি যা জানি বললাম, আমাকে তখন রাখাল চন্দ্র ধর স্যার (উনি ইনভেস্টিগেশনের জন্য এসেছিলেন আমাদের কলেজে) বললেন, তোমার কথার সাথে তো বাকিদের কথা মিলছে না, আমি বললাম স্যার বাকিদের বলতে কাদেরকে বুঝাচ্ছেন, উনি বললেন স্যার ম্যাডাম দের কথা। সবাই নাকি মোটামুটি বলেছে সে প্রমিসিং ক্যাডেট ছিল, ভাল ছিল, আর দশটা স্বাভাবিক ক্লাস সেভেন এর মত ছোটখাট সমস্যা তার ও ছিল।  এমন কি তার ফর্ম মাস্টার এর মতে সে নাকি ডিসিপ্লিন্ড ও ছিল, যা সে আদতে কখনোই ছিল না বলে আমরা সবাই জানি এবং এই ম্যাডাম ই ঠিক আগের দিন নোভাকে সবার সামনে চড় মেরেছিলেন। রাখাল স্যার বলছিলেন, “স্যার ম্যাডাম রা ক্যাডেট দের কোন সমস্যা পেল না, শুধু তোমরাই ওকে এত খারাপ পেলে? ওকে কত পানিশমেন্ট দিতে তোমরা?” … নোভার কেসটাকে যে কোন দিকে সরানোর চেষ্টা চলল, বুঝে গেলাম।

– ইনভেস্টিগেশন শেষ হতে হতে কয়েক মাস লাগে, আমাদের প্রত্যেকের স্টেটমেন্ট গুলো একজন আর্মি অফিসারের তত্ত্বাবধায়নে কালেক্ট করা হয়, এবং সেগুলো কে টাইপ করে নিয়ে আসা হয় অ্যাডজুটেন্ট অফিসে। আমাদের ডাকা হয়, বলা হয় সব পড়ে দেখে সাইন করতে। কলেজে ইতিমধ্যে অ্যাডজুটেন্ট বদলেছে, নতুন স্যারের এবং এইচ কিউ এর একজন অফিসারের সামনে বসে আমি আমার স্টেটমেন্টটা উলটে পাল্টে দেখছিলাম। এক জায়গায় চোখ আটকালো, দেখলাম লেখা,
প্রশ্নকর্তাঃ তোমার কথার সাথে বাকি স্যার ম্যাডাম দের কথার মিল পাচ্ছিনা নোভার বর্ণনায়, তাহলে কি তোমরা স্বীকার করবে নোভাকে অযাচিত অবস্থায় পড়তে হয়েছে তোমাদের দ্বারা?”
ক্যাডেটঃ (নিরুত্তর ছিল)
আমি অবশ্যই নিরুত্তর ছিলাম না, আমি নোভার একাডেমিক রেকর্ড এবং জেপি হওয়ার প্রথম রাতে হাউস টিউটর দের বক্তব্যের কথা উল্লেখ করি। আমি আমার অ্যাডজুটেন্টকে বলি, স্যার এখানে কিছু ভুল আছে, এবং ভুল টা অন্য কিছু দাড় করায়। উনি আমাকে বলেন, শুধু সাইন করে চলে যাও, আরো অনেক কে সাইন করতে হবে।

– নোভাকে নিয়ে আমি কখনো কোন স্যার ম্যাডাম কে দুঃখ করতে দেখি নাই, এমন কি কেউ এটা নিয়ে কথাও বলতেন না। সবার কেমন একটা গা বাঁচানো ভাব, এবং সবাই কি যেন ভয় পেত। আমি জানি নোভার বাব-মা তাদের এক মাত্র সন্তান কে হারিয়েছেন, তাদের কষ্ট আমরা কেউ বুঝব না, কিন্তু এটাও প্রশ্ন, দিনের পর দিন নোভা চিঠি লিখেছে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য, প্যারেন্টস ডে তে কাঁদত বাবা মা কে ধরে, তাও কেন সন্তানের ক্যাডেট পরিচয় লাভের আশাটা বড় হয়ে দাঁড়ালো? আমরা কেন কখনো সমগ্র ছবি টা দেখতে পারি না?

এক্স ক্যাডেট হওয়ার পর একবার কলেজে গেলাম আমরা ১২ জন ক্লাসমেট একসাথে। ক্যাডেটরা ডাইনিং এ যাচ্ছিল লাঞ্চ এর জন্য, আমাদের কেও নিয়ে গেল। ক্লাসমেট দের কে দেখলাম খুঁজে খুঁজে নিজের বংশ বের করতে। বের করে মোবাইলে ছবি তুলতে। আমি চুপ করে দেখছিলাম, কারণ আমার বংশ ছিল নোভা, জেদি, মুখ শক্ত করে পানিশমেন্ট খাওয়া নোভা, প্রতিদিন স্যার ম্যাডামের কাছে ইন্সাল্টেড হওয়া চড় থাপ্পর খাওয়া নোভা, প্যারেন্টস এর কাছে কেঁদে বিফল হয়ে ফিরে আসা নোভা। ২৮ নভেম্বর নোভা চলে যায়, আমি ক্লাস সেভেনে যেই রুমে ছিলাম ঠিক সেই রুম থেকেই ও চলে যায়। আমি এক্স ক্যাডেট হওয়ার পর ওর বাবা-মার ঠিকানা বের করেছিলাম, কিন্তু আর যাইনি। কি বলব গিয়ে? ১২ বছরের একটা মেয়ের মানসিক ভাবে মারা যাওয়ার পিছনে যাদের হাত ছিল, তারা সুকৌশলে দায়িত্ব এড়িয়ে গেছে। আরো অনেক প্রমাণ আমাদের কাছেই আছে কিভাবে গুটি কয়েক স্যার ম্যাডামের অপমান এই মেয়েকে ভেঙ্গে দিত রোজ, যা ফিজিকাল পানিশমেন্ট ও করতে পারত না। নোভার জন্য আমি প্রথম কাঁদি সম্ভবত স্পোর্টস ফাইনালের দিন, হসপিটালে গিয়ে ওর কথা মনে পড়ছিল যে কিভাবে ওর পায়ে,পেটে কম্বল চেপে ধরে মালিশ করছিলাম যদি ও ফিরে আসে। ওর কাছে আমার প্রশ্ন –

“যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?”

৬,৯৫০ বার দেখা হয়েছে

৬০ টি মন্তব্য : “নোভাঃ ঝরা পাতার গল্প”

  1. ওবায়েদুল্লাহ (৬৮-৭৪)

    যেখানে শৈশব হারায় বেদনায়
    সে ও কি জীবন ভ্রম হয়?
    সেই যে বাছা মা'র কোলছাড়া
    বুক ফাটা বেদনায়।
    ................

    কি যে অসহায় ভিজে কান্নায়
    রাত্রিতে মাথার বালিশ,
    বুক ভেঙে যেত গভীর ব্যাথায়
    করিনি কখন নালিশ।

    আজো সেই ব্যাথা হুহু কাতরায়
    বিজনে বিষন্ন মন,
    সেই যে সাথীদের খুঁজে ফিরি যত
    ফিরে কি হৃতধন?

    জবাব দিন
  2. সাহেদ (৮৯-৯৫)

    এরা শিক্ষক? পুরো স্টাফ লাউন্জ ভরা
    চাটুকার। হাতে গোনা কয়েকজনকে পিতৃ মাতৃসম শিক্ষক মনে হত। বাকীরা সবাই নিজের চাকরী বানাতে ব্যস্ত। আমরা ৮ম ৯ম শ্রেনী এক্সট্রা ড্রিলে যখন গলদঘমর্, দেখতাম টিচাররা গ্রাউন্ডের পাশেই কি আনন্দে এ্যাডজুটেন্ট কে এর প্রয়োজনীয়তা নিয়ে বক্তব্য দিয়ে খুশী করছে। আমি আমার আগের টিচারদের (ক্যাডেট কলেজ পূবর্) সাথে মিল পেতামনা। অবশ্যই কিছু শিক্ষক ছিলেন যারা পরম আদর ভালবাসায় আগলে রাখতেন, অমন তো সব শিক্ষকেরই হওয়ার কথা ছিল।

    মন টা খারাপ হয়ে গেল তোমার লেখা পড়ে। আল্লাহ্ ওকে বেহেশত নসীব করুন।


    সাহেদ (৬০৫) ১২ তম ব্যাচ পিসিসি

    জবাব দিন
  3. সাইদুল (৭৬-৮২)

    তোমার লেখাটা পড়ে ভীষণ খারাপ লাগছে। নোভার জন্যে দোয়া করি এপারের ছোট্ট জীবনে ওপারের দীর্ঘ জীবনে পরম করুণাময় যেন তার অভাব না রাখেন।
    তোমার লেখাটায় শোক, ক্ষোভ আর ক্রোধ একাকার হয়ে গিয়েছে। তিরিশের ওপারের যাদের নিয়ে তোমার অভিযোগ, আমিও একদিন তাদের দলে ছিলাম এই জন্যে নিজেকেও দায়ী মনে হয় এসব ঘটনার জন্যে।

    তবে একটি বিষয় বিবেচনা করলে, তিরিশের ওপারের মানুষগুলোর ব্যাপারেও তোমার ধারণা একটু বদলাতে পারে। এই মানুষ গুলোকে বারো থেকে আঠারো বছরের একদল ছেলেমেয়ের দেখভাল করতে হয়, যাদের মন ও মনণে বিশাল পার্থক্য।
    সেভেন এইটের ছেলে মেয়েদের অবস্থা মামা বাড়িতে আসা ফটিকের মত। নিজেদের অবস্থান, অস্তিত্ব নিয়ে তাদের প্রবল সংশয়। আর ইলেভেন টুয়েলভের ছেলে মেয়েদের মনে দুঃসাহস উকি দিতে থাকে সারাক্ষণ। দুই দলের চাওয়া পাওয়ারও বিস্তর ফারাক।

    শিক্ষকরা সাধারণত ভিন্ন ভিন্ন ক্লাশের বাচ্চাদের কাছে বিভিন্ন লেভেলের ম্যাচুরিটি আশা করেন। শুধু শিক্ষক কেন, খুব সচেতন মানুষ ছাড়াওন্য সকলেই। এই কারণেই নোভা যে শুধু শিক্ষকদের অবহেলা পেয়েছে তা নয়, ক্যাডেটদের সখ্যতাও সে পায়নি।

    অনেক সময় শুধু সাময়িক তর্ক বিতর্ক কিম্বা তুচ্ছ কিছু বিষয়ে জেতার জন্যে আমরা অনেক কিছু করি। ধরা যাক নোভাকে কেউ পানিশমেন্ট দিচ্ছে, সে যে শুধু নোভার সংশোধন চাইছে, তা নয়। ক্ষেত্র বিশেষে নোভার নৈতিক পরাজয়টাও সে প্রত্যক্ষ করতে চায়। নোভা যেহেতু পরাজিত হবার মত চরিত্র নয়, অন্ততঃ শেষ সময় পর্যন্ত, তাই পানিশমেন্ট দাতা জেতার জন্যে শাস্তি অথবা অত্যাচারের মাত্রা বাড়াতে পারে। যা সমস্যা বাড়াতে পারে আরও বেশি।

    নোভার মত ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় দায়িত্ব তার লকার পার্টনারের (আমাদের সময় আমাদের কলেজে গাইডকে বলা হত), তার পর তার ডর্ম লিডার (নতুন কলেজ গুলিতে রুম ছোট হওয়ায় ডর্ম লিডার কনসেপ্টের পরিবর্তন হয়েছে),তারপর হাউস টিউটর, ফর্ম মাস্টার, হাউস মাস্টার থেকে প্রিন্সিপ্যাল পর্যন্ত। মেয়েটার সাথে প্রতিদিন বসে কাউন্সিলিং করার খুব জরুরী ছিলো।

    ঘটনার পরের দায়িত্ব এড়ানোর চেষ্টা সবচেয়ে নিন্দা যোগ্য।

    ঝরা পাতা পড়ে বার বার মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে (সম্পাদিত)


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      আমি আপনার বক্তব্যের সাথে একমত ভাইয়া, নোভা সামগ্রিক একটা পরিস্থিতির বেড়াজাল থেকে বেরোতে পারেনি। ক্যাডেট/স্যার-ম্যাডাম সবার ভূমিকায় এখানে আছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন এখানেই, এত বছর ধরে ওনারা আমাদের মত গরু-গাধা পিটিয়ে মানুষ করছেন, চাইল্ড সাইকোলোজিতে ওনাদের অবস্থান এত কাঁচা কেন? দায়িত্তে অবহেলার কথাও যদি বলি তা শেষ হবার নয়। উপরে এক ভাইয়ের কথার উত্তরে লিখেছি, আবারো লিখি, জানি এসব শিক্ষক দের সংখ্যা হাতেগণা কয়েকজন। কিন্তু তাদের এই দায়িত্বহীনতার খেসারত গুলো নেহায়েত ছোট নয়। তাই এগুলো এড়িয়ে যাওয়া যায় না। ক্লাস সেভেন এর একটা বাচ্চা কেন সুইসাইড করবে??? সুইসাইড কি এটা বোঝার মত মানসিক অবস্থাই তো তার হওয়া উচিৎ না !

      জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      হ্যা দোস্ত, এটা নিয়েই কথা তুলেছিলাম আই সি সি এল এম এম এ তখনকার এ.এ.জি স্যারের কাছে। উনি যে কোন সদুত্তর দেন নাই তখন ই তো দেখছিলি সবাই। আমার সাথে পরে এটা নিয়ে আলাদা কথা বলার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তখন চুপ করে বসায় দিছিলেন। এবং বরাবরের মতই, উনি কথা বলেন নাই। শুভঙ্করের কি সুন্দর ফাঁকি।

      জবাব দিন
  4. সাইদুল (৭৬-৮২)

    এপারের ছোট্ট জীবনে ওপারের

    এপারের ছোট্ট জীবনে যা পায়নি ওপারের দীর্ঘ জীবনে পরম করুণাময় যেন তার অভাব না রাখেন।


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন
  5. আহমদ (৮৮-৯৪)

    খেই হারিয়ে ফেলতে পারি, তাই আমিও পয়েন্ট করে লিখছিঃ

    ১। লেখাটা পড়ে যতটা না মন খারাপ হলো, তার চেয়েও বেশি মেজাজ খারাপ হলো। আমি আমার জীবনে অনেক শিক্ষককে পেয়েছি। এঁদের মধ্যে আদর্শজনদের কথা প্রায়ই মনে পড়ে। গতকাল বসুন্ধরা সিটিতে গিয়েছিলাম একটা কাজে। কেন যেন হঠাত বাংলার ডঃ জয়েন উদ্দিন স্যারের কথা মনে হলো। প্রায় ২০ থেকে ৩০ মিনিট ধরে স্যারের সাথে ফোনে গল্প করলাম একা একা হাটতে হাটতে। অনেক অনেক অনেক ভাল লেগেছে স্যারের সাথে কথা বলে। এই ধরণের শিক্ষকদের জন্যই আমাদের জীবন আজ স্বার্থক।

    ২। গতকাল আরেকজন শিক্ষকের সাথে কথা বলতে হয়েছিল একটা বিশেষ কাজে। তার কদিন আগেও একই কাজে তাকে ফোন করেছিলাম। উনি এখনো চাকরীতে আছেন। শিক্ষকদের সাথে বরাবরই আমি স্রদ্ধার সাথে কথা বলেছি। কিন্তু এই শিক্ষকের সাথে কথা বলে মন এবং মেজাজ দুটোই বিষিয়ে উঠেছে। তিনি আগের মতই আছেন। এত বছর শিক্ষকতায় থেকেও যে মানুষ ছাত্র-ছাত্রীদের ভালবাসতে শেখেননি তার শিক্ষকতার মতন পেশায় আসাই উচিৎ হয় নি। আমার এতটাই খারাপ লেগেছিল যে বাসায় এসে আমি আমার বাবার সাথে বিষয়টা শেয়ার না করে থাকতে পারিনি, কারন আমার বাবাও তাকে চিনতেন। সেই টিন এইজ থেকে শুরু করে আজও তিনি আমাদের (আন্তত আমার) প্রকৃত স্রদ্ধা পেলেন না।

    ৩। আমি নিজেও শিক্ষক। সজ্ঞানে কখনো কোন ছাত্র-ছাত্রীকে মনে আঘাত দিয়েছি কিনা মনে পড়ে না। আমি অনেক কষ্ট করাই ছেলে মেয়েদের, একাডেমিক পেইন দেই অনেক। কারন তারা আমার ভবিষ্যত; তাদের ভেতর থেকে আমি কিছু একটা বের করে আনতে চাই; তাদের মধ্যেই আমি বেচে থাকতে চাই। কিন্তু আনিনিসার এই লেখায় শিক্ষকদের যে চরিত্র পেলাম (অন্তত লেখকের ভাষায়), কোন মন্তব্য করার মত রুচি আমার হচ্ছে না।

    ৪। আনিনিসার এই লেখার শিক্ষকদেরও সন্তান আছে। এই শিক্ষকরাও তাদের শৈশব এবং কৈশোর পেরিয়েই এসেছেন। তাহলে এমন ভুল(?) তারা কেন করেন? এটা কি আসলে ভুল, নাকি মানষিক দীনতা?

    ৫। ক্যাডেট কলেজগুলোতে গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা বেশ রেস্ট্রিক্টেড। অন্তত আমি তাইই জানি। পানিশমেন্ট তো থাকবেই, কিন্তু চড়-থাপ্পড়ের বিষয়টা আমি মেনে নিতে পারি না। একটা থাপ্পড় যখন মারা হয়, তখন তা গালে লাগে না, সারা জীবনের জন্য মনে গিয়ে দাগ কাটে। এই শিক্ষকদের সেটা কে বোঝায়? তবে রেজিমেন্টেড লাইফে পানিশমেন্ট থাকবেই, কিন্তু তাই বলে একটা ১২ বছরেরে মেয়েকে চড় মারা। সেই শিক্ষকের হাত কি একটি বারের জন্যও কাঁপলনা?

    ৬। মেয়েদের প্রতি তো বাবা শ্রেণীর শিক্ষকদের অনেক আবেগের টান থাকা দরকার। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতায় আসার আগে একটা বাচ্চাদের স্কুলে কাজ করেছি। পেটের দায়ে আর সামাজিকতার চাপে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছি। কিন্তু প্রথম প্রথম সেই ফুটফুটে বাচ্চাগুলোর চেহারাগুলো প্রায়ই চোখের সামনে ভেসে উঠত। ওদের খুব মিস করতাম। আর এখন এই চল্লিশে এসে ডিপার্টমেন্টের ছেলে-মেয়েরাই আমার বাচ্চা-কাচ্চা। আমি মেয়ে হলে হয়তো আমার ওদের বয়সী চেলে-মেয়ে থাকত। এটা চিন্তা করলেও তো কঠোর হওয়া যায় না। অবশ্য আমার অনেক কলিগের চিন্তা ভাবনায় বা আচরণে আমি ভিন্ন চিত্রও দেখেছি। বিষয়টা বরাবরই আমাকে কষ্ট দিয়েছে।

    ৭। আমি নিজেও এক মেয়ের বাবা। আননিসার লেখার বিষয়টা আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছে। নোভার চেহারায় কি সেই শিক্ষকরা একটিবারও তাদের নিজেদের সন্তানের মুখটা দেখতে পাননি। হোক না মেয়েটা এ্যারোগ্যান্ট, হোক না সে ইন্ডিসিপ্লিন্ড! তাই বলে কি তাকে একটু আদর-স্নেহ-ভালবাসা দিয়ে শুধরানো যেন না। সে নাহয় ১২ বছরের ছিল। অন্যরা কি আরো শিশু ছিলেন নাকি?

    ৮। আমি অনলাইন ব্লগ বলতে শুধু এখানেই মাঝে মাঝে মনের ভেন্টিলেশনের জন্য এসে লিখে যাই। আমার কয়েকটা লেখায় আমি এই ধরনের কিছু বিষয় লিখেছিলাম। একটা ছিল শিক্ষকদের সেলফ-মোটিভেশন নিয়ে, আরেকটা ছিল সুইসাইড নিয়ে। লিংকগুলো দিলাম; আত্মপ্রচারের জন্য নয়; বরং কেউ যদি দয়া করে পড়ে এধরণের বিষয়গুলো কিছুটা অন্যভাবে ভাবার চেষ্টা করে, শুধুমাত্র তার আশাতেই লিংকগুলো নিচে শেয়ার করলামঃ

    শিক্ষকতা এবং মোটিভেশনঃ কিছু ব্যক্তিকথন ও একান্ত চয়ন

    আত্মহননঃ আমার অভিমত – প্রেক্ষাপটঃ ক্যাডেট কলেজ কম্যুনিটি (সম্পাদিত) (সম্পাদিত)


    চ্যারিটি বিগিনস এট হোম

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      আপনার লিংক গুলোর জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া। খুব কাজের জিনিস খুঁজে পেলাম।

      এবং নোভা প্রসঙ্গে, আমার কাছে বরাবরই মনে হয়ে এসেছে, ও খুব রাগ/অভিমান/না পাওয়া নিয়ে পৃথিবী থেকে চলে গেছে। ওকে আমরা কেউ বুঝি নাই, সবাইকে এক ই ছাঁচে ফেলে যাচাই করার মত নির্বুদ্ধিতায় আমরা ওকে হারিয়ে ফেলেছি। কলেজে একবার বাংলার কামরুন নাহার ম্যাডামের কাছে ডিম ভাজি খেতে চেয়েছিলাম (ডায়নিং এ দিত না তখন), উনি পরের দিন চুপি চুপি টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি ভাত, চিংড়ি দোপেয়াজা, মাংশ আর ডিম ভাজি দিয়ে গিয়েছিলেন। এই জিনিস সারা জীবনে ভুলব না। এরকম শিক্ষকদের সংখ্যাই বেশি। কিন্তু তারপরেও, এই গুটি কয়েক মানুষের অবহেলাতেই আমাদের জীবনে নোভার মত কাহিনী এসে পরে।

      জবাব দিন
  6. লুৎফুল (৭৮-৮৪)

    মেনে নেয়া কষ্টকর ।
    নোভার চলে যাওয়া ।
    শিক্ষকদের এই স্যাডিস্ট অগ্রহণযোগ্য আচরণ ।
    পীড়া দিচ্ছে বাবা মায়ের এমন একরোখা নির্লিপ্ততা ।
    প্রিন্সিপ্যালের অমানবিক আচরণ । যা তাঁর পদ তো দূরের কথা একজন সাধারণ মানুষ যাঁর নিজেরও সন্তান থাকার কথা তাকেও এক বিন্দু মানায় না ।
    পরিপূর্ণ ভাবে বিমর্ষ করে দিলো লেখাটা ।
    বয়স ও পরিবার বিচ্ছিন্ন বলাইয়ের বয়সের বিপদজনক মনস্তাত্বিক দিকগুলো বিবেচনার এসব বিষয়ে শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রয়োজনটা খুব জোর আবেদন জানালো । অবশ্য এর বাস্তবায়নের জন্য যথার্থ পদক্ষেপ না নিলে সেট আর হয়ে উঠবে কি কখনো !

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      ঠিক বলেছেন ভাই, প্রত্যেক কলেজে একজন কাউন্সেলর বা সাইকোলজিস্ট রাখাটা আমি গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। এবং এক ই সাথে আমাদের অভিভাবক দের ও প্রায়োরিটি বেসিস এ চিন্তা ভাবনা করা উচিৎ। সম্ভবত মেজর তোফায়েল আহমেদ স্যার অ্যাডজুটেন্ট হিসেবে থাকায় আমরা মানসিক ভাবে উতরে গিয়েছিলাম ওই সময়টা। ওনার প্রতি আমি খুব ই কৃতজ্ঞ।

      জবাব দিন
  7. ড. রমিত আজাদ (৮২-৮৮)

    কি আর বলবো? নোভার জন্য মন খুবই খারাপ লাগছে!
    সাবিনার লেখাটায় অনেক ইমোশনাল কমেন্ট করেছি। এখন আর ভালো লাগছে না। অনেক দুঃখজনক ঘটনাই তো মনে পড়ে।
    আমি নিজে ক্লাস সেভেন/এইটে থাকতে খুব ইমোশনাল ছিলাম। তাই ইলেভেন-টুয়েলভে উঠে ওদের ইমোশনটা বোঝার চেষ্টা করতাম। প্রচন্ড ঝড়ের রাত্রে সেভেন/এইটের ছেলেরা ভয়ে ঘুমুতে পারেনি। প্রতিটি রুমে রুমে গিয়ে ওদের খোঁজ নিয়েছি ওরা কেমন আছে। সাহস দেয়ার চেষ্টা করেছি। ভূমিকম্পের পরে সবাই ভীষণ ভয় পেয়েছিলো। আমি নিজেও কম ভয় পাই নাই, কিন্তু নিজের ভয়টা চেপে রেখে ছোটদের শান্তনা-অভয় দেয়ার চেষ্টা করেছি।// আমরাও আমাদের অনেক সিনিয়রদের স্নেহ পেয়েছি। আমাদের কলেজের সব শিক্ষকই খুব ভালো ছিলেন, নিবেদিতপ্রাণ ছিলেন। তারপরেও সিস্টেমের কারণে (কিছুটা আবার আমাদের বাংলাদেশী কালচারের ত্রুটির কারণে) কিছু দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে।
    প্রতিটি ক্যাডেট কলেজে অন্ততপক্ষে একজন সাইকোলজিস্ট থাকা খুবই জরুরী। আর শিক্ষকদেরকেও চাইল্ড/টিন-এজড সাইকোলজির উপর প্রশিক্ষণ দেয়া উচিৎ।

    জবাব দিন
  8. Mukit rahman

    প্রতিটা কলেজে এমন কিছু ক্যাডেট প্রতিটা ব্যাচেই থেকে যায়। কেউ কেউ শক্ত থেকে সব সহ্য করে যায় আর কেউ বা নোভার মতো হারিয়ে যায়। থমকে গেলাম, চাপা একটা কষ্ট চিৎকার করে জানান দিচ্ছে আমিও ছিলাম একজন, যে হারিয়ে গেলে আর কিছুই করার ছিলো না নোভার মতো চাপা দিয়ে দেয়া ছাড়া।

    **ফযলুল করিম স্যারের ব্যাপারটা ঠিক মেলাতে পারলাম না।

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      স্যারের ব্যাপারটা মেলানো কষ্ট হওয়া স্বাভাবিক যেহেতু উনি একজন শিক্ষক মানুষ। তবে আমি যত টুকু জানি, ওনার এই মানসিক দৈন্যতা নাকি নতুন কিছু নয়, ফৌজদারহাট আর ঝিনাইদাহ তে যেসব ক্যাডেট ওনাকে পেয়েছে, তাদের অনেকের সাথেই বক্তব্য মিলে।

      জবাব দিন
  9. মেহেদী (১৯৯৩-৯৯)

    তোমার ১৭/১৮ বছরের ম্যাচিউরিটি আসলেই অসাধারন। তুমি সেই বয়সেই জেনে গিয়েছিলে যে সব তালা যেমন এক চাবীতে আনলক হয় না, তেমনি সব মানুষ এক সিস্টেমেই মোটিভেটেড হয় না। তুমি বুঝে গিয়েছিলে নোভার মোটিভেশনের জন্য কি দরকার ছিলো, এবং তুমি ঠিক পথেই এগিয়ে যাচ্ছিলে। হায়রে! তুমি যদি আরেকটু সময় পেতে, সেদিনের ছোট্ট নোভা আজ কোন ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে মাথা দুলিয়ে দুলিয়ে কত গল্পই না করত। সব মানুষ একভাবে মোটিভেটেড হয় না, কেউ বকা শুনলে মোটিভেটেড হয়, কেউ শাস্তি পেলে মোটিভেটেড হয়, কেউ বা মাথায় হাত রেখে শান্ত স্বরে ২টো ভালো কথা বললে মোটিভেটেড হয়। আমি নিশ্চিত নোভা ছিলো শেষ দলের। তুমি সেই ১৭/১৮ বছরে যা শিখেছো, আমি তা ৩০ বছর পার করার পরে শিখেছি এবং ভালোভাবে সফল হয়েছি।

    কিছুদিন আগেও আমি একজন ইনভেস্টিগেটর ছিলাম। এইতো, গত বছরই বিএমএ তে একজন ক্যাডেট আত্মহত্যা করলো যা আমি ইনভেস্টিগেট করেছি। ইনভেস্টিগেটর হিসেবে আমরা ৫টা ডাব্লি্উ এর খোঁজ নেই; হোয়াট, হু, হোয়েন, হোয়াই, হা্উ (শেষের ডাব্লিউ পেছনে)। এই 'হোয়াই' টার লক্ষ্য ২টা। এক- কেন ঘটেছে খুঁজে বের করা; দুই- ভবিষ্যতে কিভাবে এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধ করা যায় তা নির্ণয় করা। তোমাদের ইনভেস্টিগেশনকে যে প্রভাবিত করেছে, সে, নিজের অজ্ঞাতেই, হয়ত ভবিষ্যতে আরেক নোভার চলে যাওয়ার ক্ষেত্র তৈরী করে রেখেছে।

    আর তোমার সেই টিচার, যে কি না ফিংগার প্রিন্ট এড়ানোর লক্ষ্যে নোভাকে বাচানোর চেষ্টা করেনি, সে আসলে আর কেউ নয়, আমাদের সমাজের দর্পন। রাস্তায় দূর্ঘটনা কবলিত মানুষটিকে পাশে ফেলে আমরা চলে যাই যাতে আমাদের গাড়ীটা রক্তে নোংরা হয়ে না যায়, যাতে আমাদের প্রোগ্রাম দেরী হয়ে না যায়, যাতে আমাদের পুলিশী ঝামেলায় পড়তে না হয়। আরে ভাই, হাসপাতালে নিয়ে যাবেন, থানায় না। আমরা ইনভেস্টিগেটররা সুইসাইড কেস ইনভেস্টিগেট করার সময় ফিংগার প্রিন্ট নিয়ে অতটা মাথা ঘামাই না। সুইসাইড বা হোমিসাইডের পার্থক্য বোঝার জন্য ফিংগার প্রিন্টের দরকার হয় না। সেই টিচার আসলে জীবিকা অর্জনের টিচার, শিক্ষা বিস্তার তার মূল লক্ষ্য নয়।

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      আমাদের ও এটাই মনে হয় ভাইয়া, আরেকটু সময় পেলে হয়ত ওকে বুঝাতে পারতাম যে আমরাও ওকে বুঝি। ওকে হয়ত কিছু ট্রিকস শিখিয়ে দিতে পারতাম ৭/৮ এর মত টাইমটা কিভাবে উতরে যেতে হয়, ১১স তে এক্সকারশন এ কত মজা হয়, কিংবা স্পোর্টস ফাইনাল এই হাউস চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলে কত লাফালাফি হয়। ও ধরেই নিয়েছিল এই কলেজে খারাপ ছাড়া ভালো কিছু নেই বা ওর মাথায় হাত দেয়ার কেউ নাই।
      She was taken from life, when life was new.

      জবাব দিন
  10. মুক্তাদির (২০০৪-১০)

    আশ্চর্য!!!!! নোভার ব্যাপারটা আজ প্রথম জানলাম। আমারও ছোট বোন আছে। তাই আমি এই ব্যাপারগুলো নিতে পারি না। হ্যালুসিনেশান হয়। যাই হোক। আমার জেপিশিপ আর এ এইচ পি থাকাকালীন আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে খারাপ জায়গার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম। "স্টাফ লাউঞ্জ।" গীবত করলে নাকি মৃত ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া হয়। ওইখানে মৃত জীবিত সব ভাইয়ের গোস্ত খাওয়া চলে। মন খারাপ দিয়ে দিনটা শুরু করাইলিরে আন্নিসা।

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      আমি স্টাফ লাউঞ্জ দুইটা কারণে পছন্দ করতাম না, একটা তো তুই বলেই দিলি, দুই নাম্বারটা হল ওখানে মিল্ক ব্রেকে ভাল ভাল খাবার দিত, গন্ধে লোভ লাগত।

      একটা পার্মানেন্ট চেঞ্জ দরকার ওই জায়গাটার। সবার ই দেখি তিক্ত অভিজ্ঞতাই বেশি, যেটা খুব ই এলার্মিং।

      জবাব দিন
  11. বয়স আমার ২০ ছারিয়েছে। তবু আজ কান্নাটা থামাতে পারি নি। কিভাবেই ববা পারি? আমি সেই হতভাগির ছোট্টবেলার বন্ধু। আমিই যে তাকে দেখেছি অনুশীলন ক্যাডেট কোচিং (কুষ্টিয়া) এ সেরা রেজাল্ট করতে, আর সেই আমিই যে শুনেছি সে পরিক্ষায় ফেলের লজ্জা নিয়ে তাকে শেষ ত্যাগ করতে। আমি কোনোদিন কোচিং এ তার থেকে ভাল রেজাল্ট করতে পারিনি। সেই আমি আজ ক্যাডেট কলেজ ছেড়েছি ২টা গোল্ডেন নিয়ে।
    আপু আমি আসলে ঘটনার পেছনের রহস্য জানার চেষ্টা করেছি বহু জায়গায়। টিচার, ব্যাচমেট, ওর বাবা মা। কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আজকেই আমি সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত উত্তরটি পেলাম। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। সাথে পরম কৃতজ্ঞতাও।
    আমার ক্যাডেট লাইফেও আমি কয়েক রকম টিচার দেখেছি। এখনো মাদার্রস ডে তে আমার মায়ের আগে আমাদের ফর্রম মাষ্টার সুমনা মেডাম আর হাউস মাস্টার জাহানারা মেডামকে উইশ করি। আর আজ তারটার কথাও জানলাম।
    আমি নোভার চলে যাওয়ার খবর পায় আমার মায়ের কাছে। ও যেদিন চলে যায়, আমার মা সে দিন সন্ধায় হাউসে ফোন করে কান্নাকাটি শুরু করের বিধায় হাউস টিউটর আমাকে মায়ের সাথে ফোনে কথা বলতে দেন (তখন সপ্তাহে একবার কথা বলার নিওম ছিল)। আমার মা আমার ভাল থাকার কথা শুনে যার পর নেই খুশি হলেন। আমার একটা ছোট বোন আছে। নোভার মায়ের নোভা ছাড়া যে কেউ ছিল না। ভ্যাকেশনে ওর মায়ের সাথে দেখা করি। কিন্তু সেটিই ছিল শেষ বারের জন্য। জানি না নোভার মৃত্যুর জন্য তিনি কতটা দায়ি, কিন্তু তিনি আসলে কতটা হারিয়েছেন মগককতে তা হয়ত একটু বুঝতে পেরেছিলাম।
    ক্যাডেট কলেজে একটা সময় জুনিয়র ছিলাম একটা সময় সিনিয়র। ওইদিন সন্ধায় যখন হাউস বেয়ারা মায়ের সাথে কথা বলার যন্য আমাকে ডাকতে আসে তখন আমি হুনাইন হাউসের আপস্টেয়ার্রস কমনরুমে জেপি আসিফ ভায়ের কাছে বেধড়ক মার খাচ্ছি। কিন্তু আমি নিচে গিয়ে মাকে বলতে পেড়েছিলাম 'মা আমি ভাল আছি'। কারণ ভায়ের চোখে আমার প্রতি ঘৃণা ছিল না। ছিল দায়িত্ববোধ। এর আগেও মেড়েছিলেন আমাদেরই কোন ফল্টে আবার ক্যান্টনে খাইয়েছেন, কিম্বা ইম্প্রুভ ডিনারে সুইট পাঠিয়েছেন। আমি বলছি না আমি ম্যান হ্যান্ডেলিং এর পক্ষে, বরং এটি উঠে যাওয়ায় খুশিই হয়েছি। শুধু বলছি ধন্যবাদ আমাদের সেই সব সিনিয়রদের যারা আমাদের শত অপরাধ সত্যেও কখনও ঘৃণার চোখে দেখেনি। আপু যেমনটি আপনি।

    জবাব দিন
    • প্রশাসনিক লীলাখেলা বরাবরই পীড়া দেয় । পিতা-মাতার পরের স্থানটাই হল শিক্ষকদের । জানিনা তাঁরা কেন ভুলে যান এরাও তাদের সন্তান । কেনই বা এই সন্তানদের উপর চড়া হয়ে মৃত্যু এর দিকে ঠেলে দেন । আশা করি আর কোন ক্যাডেট ভাই-বোন এরকম নির্মম পরিস্থিতির শিকার না হয় ।। ধন্যবাদ আন্নিসা আপুকে সুন্দর করে তুলে ধরবার জন্য ।

      জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      কিছু বলার নাই ভাইয়া। তুমি ওকে এত কাছ থেকে দেখেছ আমাদের চেয়ে হয়ত ভালো চিনবে ওকে।

      তুমিও অনেক দূর এগিয়ে যাও এই দোয়া করি। নোভা আমাদের ছোট বোনের মতই ছিল।

      জবাব দিন
  12. এই গল্পটা আমার... প্রতিটা ঘটনা, প্রতিটা বর্ণনা আমার ক্যাডেট লাইফের সাথে মিলে যায়। প্রতিটা দিন ভাবতাম যারা ক্যাডেট, , যারা আর্মি অফিসার তারা কঠোর, কিন্তু যারা টিচার তারা কেন??? কেন তারা বুঝবে না একটা বাবা মা ছেরে থাকা ১২-১৩ বছরের শিশুর আআর্তনাদ? হাউজ থার্ড হবে? কিন্তু আপ্নারা কবে মানুষ হবেন? অনেক ভাল শিক্ষক আছেন আমি অস্বিকার করব না। কিন্তু গোয়াল নোংরা করতে একটা দুষ্ট গরুই যথেষ্ট... আমি আমার ক্লাসের সব চাইতে বেশি বার ফেল করসি, কিন্তু কই আমিতো ক্লাস ৭ এর আগে কখনো ফার্স্ট প্লেস হাতছাড়া করি নি.... আজ এত বছর পর আমার ক্লাসমেট দের খুব মিস করি... কিন্তু বলতে দিধা নেই, এদের এক জন ও আমার পাশে ছিল না। আমি দোষ দেই মা তাদের। দোষটা সিস্টেমের... এখন সময় আসছে। সিস্টেমটা ঢেলে সাজানোর.....

    জবাব দিন
  13. মোস্তফা (১৯৮০-১৯৮৬)

    তোমার লেখায় পুঞ্জীভূত রাগ-ক্ষেদ-ক্ষোভ-ঘৃণা-লজ্জা-ভালোবাসা-হতাশা সমানে মিশেছে। ক্ষেত্রবিশেষে এগুলো বেশ প্রকটিতও বটে। ফলে ব্যক্তি কিংবা সমষ্টি চরিত্রের উন্মোচন না ঘটে সেখানে ব্যক্তিবিশেষের প্রতি ঘৃণা, ক্ষোভ ও ভালোবাসার প্রকাশ ঘটেছে বেশি। অথচ এটুকু এড়াতে পারলে লেখাটি অমিত সম্ভাবনার অনুসন্ধানী, বিশ্লেষক ও পথনির্দেশক হতে পারতো। কিন্তু ক্ষোভের খরস্রোতে লেখাটি তার নির্মোহ চরিত্র হারিয়ে নির্দেশনা প্রদানে ব্যর্থ হয়েছে। অথচ নিশ্চয়ই তোমার উদ্দেশ্য এমনটি ছিল না।

    এখন যা করা যেতে পারে, সেটি হল, তুমি একটি সম্পুরক লেখা লিখতে পার। সেখানে আতশি কাঁচ হাতে আরো বেশি অনুসন্ধানী হয়ে ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমের এইসব খুঁতগুলো খুঁজে বের কর। কারণগুলোকে বিশ্লেষণ কর, সমাধানের পথ নির্দেশ কর। ব্লগের একটা সুবিধা হলো এই যে, আমরা সবাই মন্তব্য-পাল্টা মন্তব্যের মধ্য দিয়ে তোমার চিন্তা প্রবাহের অনুষঙ্গ হয়ে উঠতে পারব। রোগাক্রান্ত যে বৃক্ষটি থেকে কিছু পাতা ঝরে গেছে, আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তার যদি কোন নিদান মেলে, তবে তা সকলেরই পুরনো ক্ষতে প্রলেপ বুলোবে।


    দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ

    জবাব দিন
  14. আননিসা,আমি নোভার মতো ছিলাম।বেচে আছি এখনো। তুমি যদি আরেকটা দিন হাতে পেতে!!!!
    নোভা,সেই সব দুর্লভ মানুষদের একজন যারা একটু ভাল কথার বিনিময়ে সব কিছু করতে পারে। এরা সব পারে।সব।যে কোন কিছু।এই মানুষ গুলই কম।।।
    Gutts.
    মেয়েটা অভিমান নিয়ে চলে গেল,আফসোস এটাই।
    আমার সামরিক জিবনে আমি অনেক সময়ই আপস করি নাই।ভালটার জন্য থেকেছি।
    অই ম্যাডাম টাকে ভুলে যাও। তাকে ঘ্রনা কর।কিন্তু তিনি বিপদে পরলে সাহায্য কর।
    তাসানোভা,আল্লাহ তোমার সহায় হউন।

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      ঘৃণা কারো জন্য নেই ভাইয়া, কারন রেখে লাভ নেই। আমি চাই পরিবর্তন আসুক। আমূল পরিবর্তন। সারা দেশ থেকে বেছে বেছে ছেলে মেয়ে নেয়া হয়, তারা তাদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই কলেজে যায়। এতটা হিউমিলিয়েশন এর ধাক্কা একটা ছোট মনে যে তীব্র প্রভাব ফেলবে, এই কথাটা ভুলে যাওয়া উচিৎ না। অধিকাংশ স্যার/ম্যাডাম ই ভালো দিকটা তুলে ধরেন, তবে এই গুটি কয়েক জনের জন্য খেসারত গুলো দিতে হয়।

      জবাব দিন
  15. জুনাঈদ (২০০০-২০০৬)

    ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া একজন কিশোর বা কিশোরীর ছোট্ট মনে যে কৈশোরসুলভ আবেগ লুকিয়ে থাকে, তা বোঝার ক্ষমতা অনেক শিক্ষকের মধ্যেই ছিলনা। ক্ষমতার দন্ড হাতে নিয়ে ভুল করলেই সাজা দেয়ার মধ্যে কোনো সাথ'কতা নেই।কলেজে কেউ অপরাধ করেছে আর তাকে ডেকে ভাল ব্যবহার করে তার ভুলটা বুঝিয়ে দেয়ার মত শিক্ষক ছিলেন হাতেগোনা। ভুল করে গভীর ঘুমের কারনে সকালে পিটিতে যেতে না পারলে, বাবা মায়ের কাছে ১০০০ টাকা জরিমানার একটি ছিঠি আর তার মানসিক আঘাত একজন স্কুল পড়ুয়া কিশোর কতটুকু সহ্য করতে পারে! এটা বোঝার ক্ষমতা অনেকেরই নেই।
    সকলের মেধা ও মননশক্তি সমান নয়। ক্যাডেট কলেজের সেই তথাকথিত দুব'ল ও দুষ্ট ছাত্রদের কি লেখাপড়ার জন্য কখনো extra সময় দেয়া হয়েছে! হাউসের পেছনের গাছ থেকে আম কাঁঠাল পেড়ে খাওয়াটা কি স্কুল পড়ুয়া ছাত্রের শুধুই অসৎ গুণের পরিচায়ক!
    মা বাবা, দুজনের প্রত্যক্ষ তত্ত্াবধানে একজন সন্তানের যখন বেড়ে ওঠার কথা, ক্যাডেট কলেজের ৩০০ ক্যাডেট এর জন্য ৫০ জন শিক্ষক কতজন বাবা মা এর স্থান পূরন করেন! একজন শিক্ষক এর একটু বাড়তি সময় কি নোভার হতাশা দূর করতে পারত না!
    No doubt, cadet colleges are the best educational institution. And there is no end of improvement.

    জবাব দিন
  16. আহসান আকাশ (৯৬-০২)

    মাত্র গত পরশুই এক বর্তমান ক্লাস সেভেনের ক্যাডেটের অভিভাবকের কাছে শুনলাম সে বাসায় ফোন দিয়ে বাবা মা কে আলটিমেটাম দিয়েছে তাকে কলেজ থেকে নিয়ে না আসা হলে সুইসাইড করবে। একটু ডিটেলস শুনে কারনগুলো যা জেনেছিলাম তার সাথে তোমার বলা কারনগুলোর মাঝে খুব একটা পার্থক্য নেই।

    ক্যাডেট কলেজের কোন সমালোচনা , সিস্টেমের কোন অসঙ্গতি নিয়ে কথা বললে সেখানে ক্যাডেট কলেজ আমাদেরকে কত টুকু দিয়েছে, আমরা কতটা ভাবে ক্যাডেট কলেজ সিস্টেমের কাছে ঋনি এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে ঘটনা কার্পেটের নিচে লুকিয়ে ফেলার চেষ্টা না করে সেটা নিয়ে আলোচনা করা, সমাধান বের করার চেষ্টা করাই আমাদের ফোকাস হওয়া উচিৎ। ক্যাডেট কলেজের প্রতি ভালবাসার সত্যিকারের প্রকাশ বা কলেজের প্রতি ঋনের প্রতিদান সেভাবেই দেয়া সম্ভব। খারাপ বিষয়গুলোর থেকে চোখ সরিয়ে রেখে প্রসংসা বাক্য আউড়িয়ে নয়।


    আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
    আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

    জবাব দিন
  17. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)

    এখনো কেউ বলে নাই, এইসব কথা বাইরে বলার কি দরকার ছিলো!!!
    বাইরের ওরা জানলে আমাদের মান ইজ্জত কোথায় যাবে???


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন
  18. আন্দালিব (৯৬-০২)

    লেখাটা পড়ে প্রচণ্ড মন খারাপ হয়ে গেছে। কলেজে থাকাকালীন দুই-তিন ব্যাচ জুনিয়র একটি ছেলে এসেছিল, যে কিছুতেই খাপ খাওয়াতে না পেরে সম্ভবত ক্লাস এইটে উঠার আগে বা পরপরই কলেজ ছেড়ে চলে গিয়েছিল। সে ভাগ্যবান, নোভার মতো পরিণতি বেছে নিতে হয় নি। স্মৃতি এতই দুর্বল হয়েছে যে নাম মনে করতে পারছি না। সম্ভবত ৯৯-০৫ কিংবা ২০০০-০৬ ব্যাচের, ঝকক। সমসাময়িকদের কারো মনে আছে?

    ছেলেটাকে দেখে দুয়েকবার মনে হয়েছিল কলেজে খাবি খাচ্ছে। কিছু কিছু সিচুয়েশনে, যেমন পুরো ক্লাসের ফল-ইন বা সিনিয়র ডর্মে গ্যাদারিংয়ে তাকে পানি থেকে তুলে আনা মাছের মতো মনে হতো। তখন হয়তো বুঝার বয়স ছিল না। এখন মনে হয় কেউ যদি তাকে একদিন ডেকে একটু বুঝিয়ে বলতো, কিংবা তার কোথায় সমস্যা হচ্ছে সেটা ধরিয়ে দিতো, তাহলে হয়তো তাকে চলে যেতে হতো না।

    এটাও মনে আছে সে চলে যাওয়ার পরের কিছুদিন তাকে উদাহরণ করে তোলা হতো, যে সে "প্রপার ক্যাডেট" না (এটা ঘটতো অন্য কাউকে শান্টিং অথবা "খুতবা" দেয়ার সময়)। এখন এই কথাগুলো মনে পড়লে লজ্জা আর ক্ষোভের মিশেলে একটা অনুভূতি হয়। ক্যাডেট কলেজ সিস্টেম ক্যাডেটদের মনোজগতে যে গভীরতম ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে, তা এই "প্রপার ক্যাডেট" ব্যাপারটার সাথে জড়িত। বয়ঃসন্ধির সময়ে কাউকে জোর-জবরদস্তি করে একটা প্রতিক্রিয়াশীল এবং রক্ষণশীল চারকোনা খোপে আঁটাতেই হবে! আর এটা করতে গিয়ে যদি কেটে-ছিঁড়ে যায়, মনের কাঠামো আর দেহের চামড়া জায়গায় জায়গায় থেঁতলেও যায়, তাও সই!!?

    জবাব দিন
    • আননিসা (২০০৪-১০)

      ভাই ঠিক বলেছেন। কোন ক্যাডেটকে সামান্য ভালো ভাবে কথা বলা বা বুঝিয়ে দেয়ার মধ্যে মনে হয় কোন আনপ্রফেশনালিজম আছে, অনেক শিক্ষক এমন ব্যাবহার করেন। ক্যাডেট কলেজ গুলোতে এই আগ্রাসী মনোভাবটা বন্ধ হওয়া উচিৎ, আর্মি ওরিয়েন্টেড ইন্সটিটিউশন মানে এই না যে বি এম এ তে একজন ক্যাডেট কে যেই হার্ডশিপে টিকতে হবে, ১১/১২ বছরের একজনকেও সেই সমান মানসিক দৃঢ়তা দেখাতে হবে।

      জবাব দিন
    • সাকেব (মকক) (৯৩-৯৯)

      বড় তিতা সত্য কথা বলছ।

      এই সিস্টেম আমাদেরকে শিখায়- যা কিছু খাপে আটকায়না, তার প্রতি নির্মম হতে। আমরা নিজেরাই কি কম নিষ্ঠুর আচরণ করি আমাদের সতীর্থ "ইম-প্রপার" ক্যাডেটদের প্রতি?
      আমাদের এক ক্লাসমেটকে মেট্রিক পরীক্ষার আগেই কলেজ থেকে চলে যেতে হয়েছে প্রায় অর্ধ-উন্মাদ অবস্থায়। ভাবতে লজ্জা লাগে যে,আমরাও প্রতিনিয়ত ওকে পরোক্ষ/প্রত্যক্ষ বিভিন্ন ভাবে উত্যক্ত বিরক্ত করতাম শুধু এই কারণে যে ও আমাদের আর পঞ্চাশজনের মত ছিলনা। তাল মিলায়ে উঠতে পারে নাই হয়তো। ওর পাগলামির প্রথম লক্ষণ যখন প্রকাশ পেতে শুরু করে, আমরাও উপহাস আর ঠাট্টার ছলে প্রায়ই আরো উশকে দিতাম অর অসংলগ্ন আচরণকে। ওর কলেজ থেকে চলে যাবার পরেও তেমন কোন হা-হুতাশ করতে শুনি নাই আমাদের কোন ক্লাসমেটকে।

      এই সিস্টেম ভার ভিত্তি হচ্ছে ১২-১৩ বছরের কচি মনে এলিটিস্ট এটিচ্যুড শক্তপোক্ত ভাবে গেঁথে দেবার উপরে, গভীরতম দাগ রেখে যায় হয়তো বাকী জীবনেও।


      "আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
      আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"

      জবাব দিন
  19. কুষ্টিয়াতে আমরা একসাথে কোচিং করতাম। নোভা আমার সহপাঠী এবং বন্ধু ছিল। ২৮ নভেম্বর রাতে ভাবছিলাম ও যদি একটু কম দারুণ হত (ও দারুণ ছিল, এক বিশেষণে ওকে বিশেষায়িত করার জন্য এছাড়া শব্দ নেই আমার কাছে) ভাইভায় খারাপ করত, চান্স না পেত - বেঁচে থাকত! আমি এতদিনেও এই কাহিনীগুলা জানতাম না। আজকে জানলাম। লেখকের প্রতি কৃতজ্ঞতা। একটা কথাই মাথায় কাজ করে,
    একটা মানুষ নাই হয়ে গেছে! একটা মানুষ। যার আরো অনেকটা সময় থাকার কথা ছিল আমাদের মাঝে।

    শিরোনামটা এডিট করার বিনীত প্রার্থনা করছি, একটু বানান ভুল আছে।
    ঝরা পাতার গল্প, হবে।

    জবাব দিন
  20. Don't know what to say. It's such a sad story for which words are not enough to reconcile. I can say only this much from my past bad experiences from Sylhet Cadet College (91-97) that a bad teacher or a group of teacher can make a cadet's life hell the way they did for Nova and push her / him to take extreme path like this. It is their duties as teacher to hold the cadets together as these kids are away from their families. As an ex-cadet i and we also have experienced such extreme harsh conditions from our teachers and specially a particular Army principal name Lt.Col Shorab Ali Talukdar for whom some of our own cadets almost went mad. Fortunately we did not have to loose anyone like Nova. God bless her soul and may god never forgive those monstars in the name of teachers.

    জবাব দিন
  21. ফাহমিদ (০৯-১৫)

    এতদিন এখানে ওখানে শুধু স্যার ম্যাডামদের নামে রূপকথাই শুনে গেছি আর কলেজে গিয়ে বাস্তবতার সাথে মেলাতে গিয়ে দেখেছি কী ভীষণরকম অমিল | প্রথমবারের মত একটা লেখা পড়ে মনে হল বহুবছর নিজের চেপে রাখা কথাগুলোই কেউ সাজিয়ে গুছিয়ে লিখেছে | ধন্যবাদ আপু | ভাবতে খারাপ লাগে, বাবা মা ছেড়ে আসা বার তের বছরের ছেলেগুলোর কাছে যে স্যার ম্যাডামরা মমতায়, শাসনে- খুব সহজেই আপন হতে পারতেন তারা সে জায়গাটা নিতে পারেননি কিংবা কে জানে আঙুলের ছাপের মত ইচ্ছে করেই এড়িয়ে গেছেন হয়ত | ছয় বছর কাটিয়ে আসা কলেজের কথা ভাবতে গেলে হাউস বেয়ারা, ওয়েটারদের মমতার কথা ভেবে আপ্লুত হই অথচ প্রিয় শিক্ষকের তালিকায় এতদিন একসাথে কাটানো কলেজের কোন স্যার ম্যাডামের নাম চাইলেও বলতে পারি না - এর চেয়ে বেদনার আর কি হতে পারে !!

    জবাব দিন
  22. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    এই দুঃখজনক ঘটনাটা পড়ে ভেবে অবাক হচ্ছি, ক্যাডেট কলেজ গুলোর এতটা অধঃপতন কবে থেকে শুরু হলো? আমাদের সময় আমি অন্ততঃ কলেজে কোন সিনিয়র ক্যাডেট তো দূরের কথা, কোন শিক্ষক কর্তৃকও কোন ক্যাডেটের গায়ে হাত তোলার কথা শুনিনি। সিনিয়র ভাই এরা অনেকটা গাইডের মতই ছিলেন। তারা কখনোই কোন ক্যাডেটের গায়ে হাত তোলেন নাই। আমরাও সিনিয়র হয়ে তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি।
    বিএমএ'র ক্যাডেট আর ক্যাডেট কলেজের ক্যাডেট এক কথা নয়। মনে হচ্ছে, ক্যাডেট কলেজের শিক্ষক নিয়োগের প্রক্রিয়ার মধ্যেই হয়তো কোন গলদ ছিলো। নইলে ফিঙ্গার প্রিন্টের ভয়ে একজন শিক্ষিকার পক্ষে মৃত্যপথযাত্রী ক্যাডেটকে উদ্ধারে এগিয়ে না আসাটা ক্যাডেট কলেজের বেসিক স্পিরিটের পরিপন্থী।

    জবাব দিন
  23. ওয়াহিদা নূর আফজা (৮৫-৯১)

    অথোরিটির নির্মমতার পাশাপাশি ক্যাডেটদের নিজেদের ভেতরকার বুলিংটা একদমই সহ্য করতে পারছি না।


    “Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
    ― Mahatma Gandhi

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।