বোধোদয়

ছাদ ঢালাই গতকাল শেষ হল।

ক’টা দিন যা গেলো! বছর খানেক ছোটাছুটি করেও হয়তো এতোটা ক্লান্ত হতেন না আশরাফ। একতলা এই বাড়িটা তার কাছে একটা অবসেসন! একটা স্বপ্ন! যা আজ বাস্তবে রূপ পেলো। কম তো কষ্ট করেননি। তারপরও ফ্রেশ একটা সন্তুষ্টির অনুভূতির বদলে মনের ভিতরে কিসের যেন একটা কাঁটা বিঁধে থাকার অনুভূতি পাচ্ছেন।

নতুন বানানো সিঁড়ি দিয়ে ছাদে উঠে গেলেন। ছাদের চারপাশে শক্ত মাটি দিয়ে বাঁধের মতো বানানো হয়েছে। ভিতরে পানি এবং কচুরিপানা রাখা হয়েছে। ছাদের ঢালাই আরো দৃঢ় করার জন্যই হয়তো এই ব্যবস্থা।

চারপাশে চোখ বুলালেন। আশেপাশে আরো কয়েকটি বাড়ি। সেগুলোকে ঘিরে রয়েছে গাছপালা। বেশীরভাগই নারিকেল গাছ। কিছু কাঠ গাছও আছে। এগুলোর ভিতর দিয়ে কয়েক সারি সুপারি গাছ তাঁদের নিজস্ব অবয়ব নিয়ে দৃষ্টিতে ধরা দিচ্ছে। সবুজ এই দৃশ্য আশরাফের সব সময়ই ভালো লাগে। আজও দৃষ্টিকে সতেজ ও কোমল এক অনুভূতি এনে দিলো।

পশ্চিম দিকে তাকিয়ে এল-শেপ বিল্ডিঙটার কিছু অংশ গাছপালার ভিতর দিয়ে দেখতে পায়। এটাই তার কর্মস্থল। এই স্কুল এন্ড কলেজের একজন জুনিয়র লেকচারার হিসেবে কর্মরত রয়েছেন। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারে এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব অর্থায়নে পরিচালিত। এম পি ও ভুক্ত না হলেও শিক্ষক -প্রভাষকদেরকে বেশ সম্মানজনক ভাতা দেওয়া হয়।

ঠোটের কোণে একটু অবজ্ঞার হাসি কি ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেলো? ‘সম্মানজনক’ শব্দটাই কি হাসি এনে দিলো? সে নিজে কি একজন শিক্ষক হিসাবে তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করছে… সম্মানের সাথে?

হয়তো… হয়তো না।

কোমলমতি শিক্ষার্থীদের কথা ভিন্ন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বাহিরের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে তার অন্য একটি পরিচয় রয়েছে। এটা এখন প্রায় ওপেন সিক্রেট। রাস্তায় চলার পথে কিংবা স্কুলে আসা-যাওয়ার সময় যখন তাঁদের সাথে দেখা হয়, মুখে সালাম প্রদান এবং স্বাভাবিক কুশল বিনিময়ের পরে যখন আর কিছু বলার থাকেনা- সেই সময়টিতে তাঁদের দৃষ্টিতে অনুচ্চারিত আরো কি যেন ভেসে বেড়ায়। যেটা তিনি স্পষ্ট বুঝতে পারেন। সেখানে তার প্রতি না অবজ্ঞা না অমর্যাদাকর- এ জাতীয় এক মিশ্র ভাবনার মিশেলে কিছু একটা থাকে। আশরাফ স্যারকে অবজ্ঞাও করা যায় না- আবার সম্পূর্ণ সম্মানও দেয়া যায় না।

যদিও শিক্ষক হিসাবে তিনি প্রথম শ্রেণীর। তবে তাঁকে অভিভাবকদের বেশী প্রয়োজন হয় বছরের বিশেষ একটি সময়ে। স্কুলের প্রথম শ্রেনীতে ভর্তিযুদ্ধের সময় ‘আশরাফ স্যার’ সকলের কাছেই অপরিহার্য হয়ে উঠেন। তিনি চুক্তিতে ‘এডমিশন টেস্টের’ জন্য কোমলমতি শিশুদেরকে ‘প্রাইভেট’ পড়ান। তার কাছে ভর্তি পরীক্ষার আগে নির্দিষ্ট মেয়াদে পড়াতে পারলেই এই বিখ্যাত শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে চান্স পাওয়া নিশ্চিত! এটা সবাই জানে। কিন্তু সবাই তো আর তার চাহিদা মিটিয়ে পড়ানোর সুযোগ পায় না। তাই বেশ মোটা অংকের টিউশন ফি দিয়ে যে সব সৌভাগ্যবান (?) শিশুরা তার কাছ থেকে শিক্ষা লাভ করে, তাঁদের সবার নামই এডমিশন টেস্টের ফলাফল ঘোষণার দিনে নোটিশ বোর্ডে দেখা যায়।

তিনি একাধারে শিক্ষক এবং প্রশ্নপত্র প্রণয়ণ কমিটির সদস্যও। তবে সরাসরি তিনি প্রশ্নপত্র ফাঁস করেন বা বিক্রী করেন এটা বলাটা শোভন হবে না। যাদেরকে তার কাছে দু’মাসের ঐ স্পেশাল টিউশন করতে পাঠানো হয়, তাদেরকে প্রয়োজনীয় সাজেশনটুকু দিতে তিনি কখনোই কার্পন্য করেন না। আর আশ্চর্যজনকভাবে প্রতিবারই তার প্রদত্ত সাজেশন এর ৯৫%-ই কীভাবে যেন মূল প্রশ্নপত্রের সাথে মিলে যায়।

তবে পি এস সি বা জে এস সি পরীক্ষার বেলায় কেন জানি তার এই ক্যারিশমা খাটে না।

তারপরও তার পসার ভালো। সারা বছরই অষ্ঠম শ্রেণি পর্যন্ত তার বাসায় ব্যাচের পর ব্যাচ ছাত্ররা কোলাহলমুখর পরিবেশ তৈরী করে রাখে। তিনি ইংরেজী বিষয়ের শিক্ষক। এটাও একটা কারণ হতে পারে। ইংরেজী এবং গণিত বিষয়ের উপরই বেশীরভাগ ছাত্র-ছাত্রীরা টিউশন নিতে চায়।

ছাদে বসে এতোক্ষণ এগুলোই ভাবছিলেন। তখন ঐ ‘সম্মানজনক’ শব্দটি তার দৃশ্যমান চেহারার গহীন কোনো এক কোন থেকে বের হয়ে নিজের সাথে কিছুটা দ্বন্দের সৃষ্টি করে। তার মনের ভালোলাগাটা ক্ষণিকের জন্য খারাপ করে দিয়ে যায়। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নীচে নেমে আসেন। ভাড়া বাসায় একমাত্র ছেলে পাপন ওর পড়ার টেবিলে তার অপেক্ষা করছে। এবার সেও প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি হবে। ক্যাম্পাসে টিচারদের ওয়াইফরা মিলে একটি কেজি স্কুল করেছেন। পাপন সেখানেই কেজি পর্যন্ত পড়ালেখা শেষ করেছে। এবারে আসল ভর্তিযুদ্ধে নামার পালা।

নতুন বাড়ি থেকে ভাড়া বাসাটি অনেক কাছেই। পায়ে হাঁটা দূরত্ব। এতোগুলো বছর এই বাসাটায় কাটিয়েছেন। কেমন মায়া পড়ে গেছে বাসাটার উপর। ছেড়ে যেতে বেশ কষ্টই হবে। বাসার দরোজা যাবার সময় খোলা রেখেই গিয়েছিলেন। এখনো সেভাবেই খোলা পেলেন। ভিতরে পাপন ও মিতার কথা শোনা যাচ্ছে। দুজনে নিজেদের ভিতর খুনসুটিতে ব্যস্ত। অথচ তিনি বাসায় এসে পড়ার টেবিলে পাপনকে পাবেন ভেবেছিলেন। মা-ছেলেকে এভাবে দেখতে পেয়ে একটু বিরক্ত হলেন। তবে সেটা প্রকাশ করলেন না। এটাও তার একটা বিশেষ গুণ। সহজে নিজেকে অন্যের কাছে প্রকাশ করেন না। সবসময় নিজেকে শামুকের মতো গুটিয়ে রাখেন।

মিতা আশরাফকে দেখে ফিরে তাকায়। পাপন ‘ বাবা’ বলে আশরাফের কাছে চলে আসে। সোফায় বসে ছেলেকে কোলে তুলে নেন। কচি শরীরের আদর উপভোগ করেন। ছেলে একবারে মায়ের মতো হয়েছে। তবে ন্যাওটা বেশী বাবার। সেই পরিমানটাও মায়ের থেকে অনেক বেশী। ছেলেকে আদর করা শেষ হলে মিতাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ ওকে নিয়ে পড়ার টেবিলে বসলেও তো পারতে?’ মিতা আশরাফের প্রশ্নের টোন ভালোভাবে অনুভব করে। শেষে বলে, ‘এটা কি অভিযোগ না কেবলই প্রশ্ন?’ তবে মুখের হাসিটা জিইয়ে রাখে মিতা। আশরাফ ও হাসে। একজন শামুক শ্রেণির মানুষ নিজেকে কখনোই অন্যের কাছে প্রকাশ করবে না। শেষে বলে, ‘ ওর ভর্তি পরীক্ষা কাছে চলে এসেছে… তাই বলা।’ মিতা ওদের কাছে আসে। আশরাফের চোখে চোখ রেখে বলে, ‘এতোদিন তো পাপনের দায়িত্ব আমার একার ছিল। আজ থেকে তোমার কাছে হ্যান্ডওভার করলাম।’ আশরাফ কিছু বলে না। পাপনের মাথার চুলে হাত বুলাতে থাকে। মিতা জিজ্ঞেস করে, ‘ চা খাবে?’ প্রসংগ পালটে যাওয়াতে ঘরের পরিবেশটাও একটু হাল্কা হয়। আশরাফ খুশী হয়। সেটা কি চায়ের জন্য বুঝতে পারে না। বলে, ‘ দিতে পারো।’

মিতা কিচেনের দিকে চলে যায়। খুব সুন্দর ভাবে বাসাটা গুছিয়েছে সে। নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে একটি বাসাকে বাড়ি বানানোর অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছে। সেই সাথে পাপনের দেখাশোনা থেকে শুরু করে লেখা-পড়ার সকল খুঁটিনাটি একাই করে এসেছে। আশরাফকেও আগলে রাখতে হয়। সব ভাবে। স্কুলে যাবার সময়ে সব থেকে বেশী ঝামেলা হয়। প্রতিদিন কিছু একটা হারিয়ে ফেলে। অবশ্য জিনিসগুলো সব চোখের সামনেই থাকে। কিন্তু সে দেখতে পায় না। চায়ের কাঁপে চিনি মিশিয়ে চামচ দিয়ে নাড়তে থাকে মিতা… সে ভাবে… নিজেও কি সে চোখের সামনে অনেক কিছু হতে দেখেও ওভারলুক করছে না? এই যে আশরাফের ভর্তির সময়ের ‘স্পেশাল কোচিং’… এটা নিয়ে সব মহলে কত সমালোচনা হয়… পরিচিত ভাবীদের সাথে কথা বলার সময়ে কখনো কেউ কেউ এই প্রসঙ্গ তুলে ফেলে… হয়তো ভুলে… কিংবা ওকে কষ্ট দেবার জন্য ইচ্ছাকৃত। তবে মিতা কি একবারও আশরাফকে এই কাজ না করার জন্য বলেছে? নিজের মনের ভিতরে একটা গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছে আজ ক’টি বছর ধরে। এটি এমনই একটি বিষয় যা নিয়ে কথা বললে আশরাফের মনে চোট লাগতে পারে ভেবে সে কখনো এ প্রসঙ্গ তোলেনি।

চায়ের কাপ নিয়ে আশরাফকে দেয়। সে তখন পাপনকে নিয়ে পড়ার টেবিলে। মিতা জিজ্ঞেস করে, ‘দেখ, চিনি লাগবে কি না?’ আশরাফ চুমুক দিয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে লাগবে না বলে। মিতা ভিতর রুমে চলে যেতে যেতে একবার পিছু ফিরে দেখে। মনের সকল জোর একত্রীত করে বলেই ফেলে, ‘ অন্যের ছেলেমেয়েদেরকে সহজে টিউশন দিয়ে এডমিশন টেস্টে পাস করিয়ে আনছ। নিজের ছেলের বেলায় এতো টেনশন কেন তোমার?’ কথাটা বলে আর অপেক্ষা করে না। তবে যাকে উদ্দেশ্য করে বলা- সেই মানুষটি সবে চায়ে আর এক চুমুক দিয়েছে… এরপর স্থানুর মত বসে থাকে। গলা দিয়ে চা নামতে চায় না। প্রচন্ড একটা তিতা অনুভূতি সমস্ত দেহমনকে অবসন্ন করে দেয়। চায়ের কাপ নামিয়ে রাখে। এখনো অনেকটা রয়ে গেছে। পাপন পড়ছে। ওকে একটু আগে কিছু একটা বুঝিয়েছেন। কিন্তু এই মুহুর্তে সেটাকে মনে করতে পারলেন না।

মিতার কথার ভিতরের প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিতটি নিয়ে ভাবছেন। ও কি আমায় ব্যঙ্গ করল? না কি চরম সত্য কথাটি মুখের উপরে বলে চলে গেলো? বুকের ভিতরে একটা জ্বলুনি টের পাচ্ছেন… পুড়ে যাচ্ছে কোথায় যেন… কিন্তু সেটাকে থামাবার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছেন না।

অনেক্ষন চুপ করে বসে রইলেন। পাপন এখন লিখছে।

লিখা শেষ হতে বাবার কাছে দেখে দেবার জন্য দেয়। বেশ কয়েকটি ভুল করেছে। তাই একটু কড়া স্বরেই ছেলেকে বলেন, ‘পরীক্ষার বেশী দেরী নেই। এতো ভুল করছ… কীভাবে চান্স পাবে বলতো?’ ছেলে চিরপরিচিত বাবার কণ্ঠস্বরের সাথে এখনকার টোনকে মিলাতে পারে না। ওর শিশু মন ম্রিয়মান হয়ে পড়ে। বাবার দিকে তাকিয়ে সে বলে ফেলে, ‘ আমাকে তো তুমি-ই চান্স পাইয়ে দেবে।’

আরো একটি ধাক্কা খান আশরাফ। ছেলেকে জিজ্ঞেস করেন, ‘ আমি তোমাকে কীভাবে চান্স পাইয়ে দিবো? তুমি যদি না পড়, পরীক্ষার খাতায় লিখবে কীভাবে?’ পাপন বাবার প্রশ্নটা শুনে যেন অবাক হয়। ঠোঁট উলটে বাবাকে বলে, ‘কেন, পরীক্ষায় যা আসবে তুমি আমাকে আগেই শিখাবে। তাহলে তো আর ভুল হবে না।’

একটা অপ্রিয় সত্য কথা এতোদিন নিজের মনের গোপন অলিন্দে উকি ঝুঁকি মেরেছে… আজ দু’বার নিজের অতি প্রিয় দুজনের মুখ দিয়ে আশরাফকে শুনতে হল। পাপনের কথা আলাদা। সে না বুঝেই বলেছে। কিন্তু মিতা? সে তো অবুঝ নয়। তবে কি মিতার মনেও এতদিন বিষয়টি ঘুরপাক খেয়েছে। কিন্তু সে কষ্ট পাবে বলে হয়তো মিতা বলেনি।

হাতে ধরা এক্সারসাইজ খাতাটি নামিয়ে রেখে ছেলেকে কাছে আনেন। মাথায় আর চিবুকে হাত বুলিয়ে দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘ বল বাবা, আমি পরীক্ষায় যা আসবে, সেগুলো তোমাকে জানিয়ে দিবো- তোমার এমনটা মনে হল কেন?’ ছেলে বাবাকে দেখে। বাবাকে কেমন অন্য রকম লাগে। এবারে একটু ভয় পায়। কিন্তু নিজের মাথায় বাবার হাতের আরাম উপভোগ করতে থাকায় ভয়টা মুহুর্তে চলে যায়। সে বলে, ‘ আমার বন্ধুরা সবাই আমাকে বলেছে। ওরা বলেছে যে তুমি অন্য সবার মতো আমাকেও পরীক্ষায় কি আসবে তা জানিয়ে দেবে।’

নিজের সত্তার কাছ থেকে চরম সত্য একটা কথা শুনে আজ আশরাফ হতভম্ব হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে এতোদিন সে যা করেছে, আজ সেটাই বুমেরাং হয়ে তার কাছে ফিরে এসেছে। অন্যের শিশুদেরকে সে প্রশ্নপত্র ফাঁস করে ভর্তি পরীক্ষার বৈতরণী পার করিয়েছে… তবে আজ তার নিজের সন্তান সেই একই পথে হাঁটতে চাইলে সে কষ্ট পাচ্ছে কেন? তবে কি যে পথ সে বেছে নিয়েছিল সেটা সঠিক নয়? পাপন না পড়েই পাস করলে ক্ষতিটা কোথায়? কিছু শিখবে না… জানবে না… একটা অসাধু পন্থাকে আঁকড়ে ধরে সামনের পরীক্ষাগুলোতেও একই পথে হাঁটার একটা মানসিকতা গড়ে উঠবে।আজ নিজের ছেলের ভিতরে এই অসাধু মানসিকতা গড়ে উঠবে চিন্তা করেই সে দগ্ধ হচ্ছে! তবে এতোদিন কত কোমলমতি শিশুদেরকে সে সামান্য কিছু টাকার লোভে ধ্বংসাত্বক যে পথটিতে চলা শিখিয়েছে, সেটা তার মারাত্বক ভুল ছিল।

একজন শিক্ষক অনেকগুলো বছর একটা ভুল পথে হাঁটার পর এখন সঠিক পথটির সন্ধান পেয়েছেন। দেখার ব্যাপার হল এই পথে হেঁটে চলার যে বিড়ম্বনা সেটা তিনি পরিবর্তিত এই প্রেক্ষাপটে সহ্য করতে পারেন কিনা। কারন মানুষ কারো কাছ থেকে একবার কিছু পেতে অভ্যস্ত হলে, হঠাৎ করে সেটা না পেলেই ক্ষিপ্ত হয়। তখন যার কাছ থেকে পায় না, তার দুর্বল যায়গা খুঁজে সেখানেই আঘাতের পর আঘাত দিতে থাকে।

আশরাফের বেলায়ও একই অবস্থা হতে যাচ্ছে। সে কি পারবে নিজের ভিতর থেকে নিজের কাছে ফিরে আসতে?

(সমাপ্ত)

১,৩৭৯ বার দেখা হয়েছে

৮ টি মন্তব্য : “বোধোদয়”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "নিজের সত্তার কাছ থেকে চরম সত্য একটা কথা শুনে আজ আশরাফ হতভম্ব হয়ে যায়। সে উপলব্ধি করে এতোদিন সে যা করেছে, আজ সেটাই বুমেরাং হয়ে তার কাছে ফিরে এসেছে"
    গল্পের আশরাফের এরকম উপলব্ধি হলেও বাস্তবের আশরাফরা এইসব উপলব্ধ টব্ধির উর্ধেই থেকে যান বরাবরই।
    বাস্তবের ওনারা আরও বেশী টাকায় কিনে নেন আরও বড় কোন সুযোগ।
    এই গল্পটা সুখপাঠ্য হলেও আমার কাছে তাই অবাস্তব বলেই মনে হয়েছে।
    দুঃখিত!


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
    • মামুন (১৯৮৪-১৯৮৪)

      আপনি একটি অপ্রিয় সত্য কথা বলে দিলেন ভাই। কিন্তু একজন লেখকের অনুভূতিতে আমি পাঠকের ভিতরে এই অনুভূতিটুকু জাগিয়ে তুলতে চেয়েছি যে, যে কোন সময়ে ফিরে আসা সম্ভব; এবং আশরাফদের যায়গায় থেকে ফিরে আসাও উচিত। আমরা যারা লিখি, আমাদেরকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়েই আগাতে হবে, যদিও জানি বাস্তবে এই চাওয়াটা সুদূরপরাহত। কিন্তু চেষ্টাটা তো থাকতেই হবে।
      সুন্দর অনুভূতি রেখে যাবার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।


      নিজের মনের আনন্দে লিখালিখি করি।

      জবাব দিন
  2. নূপুর কান্তি দাশ (৮৪-৯০)

    লেখাগুলো মোটামুটি প্রকাশের পরপরই পড়ে নিই, কিন্তু সপ্তাহান্ত আসা আগে কিছু বলে উঠতে পারিনা, এত কাজ থাকে। লেখা ভালো লেগেছে মামুন। তোমার প্রিয় বিষয় এবং অবসেশন যে ছোট গল্প এটা আমার অনুমানে ধরা পড়ছে - জানিনা সঠিক বললাম কি না। তোমার ঝরঝরে গদ্যে তরতর করে এগিয়ে যেতে বেশ ভালো লাগছিল। তবে মামুলি পাঠক হিসেবে আমার মতামত হবে -- গল্পের শেষদিকে এসে মোরালটা লেখক নিজেই যদি বয়ান না করে উহ্য রাখেন তবে যেন আরো বেশি করে দৃশ্যমান হয়। আমার বিবেচনায় গল্পকারের দায়িত্ব শুধু কাহিনীর বয়ান করা - সেখানকার চরিত্রের ভালোমন্দ বা নীতি-অনীতির ধার না ধেরে। পাঠককে এ জায়গাটুকু দিলে পাঠশেষে নিজের সঙ্গে নিজেই কথোপকথনে প্রবৃত্ত হবার সুযোগ থাকে কাহিনীর পরিণতি নিয়ে।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।