ভালবাসার একাল…সেকাল

‘ ভালোবাস মানুষেরে

যদি চাও তুমি তারে’ –

প্রেমিক শিল্পীর এই গান হৃদয়ে জাগরুক রয়েছে… আজীবন থেকেও যাবে। মানুষকে তো মানুষই ভালোবাসবে। আর আমরা এই কাজটি করার কথা ভাবলেই সর্বাগ্রে বিপরীত লিঙ্গের কথাই মনে করি।

যুগে যুগে এই ভালোবাসা তাঁর নিজস্ব রূপ নিয়ে আমাদের সামনে আবির্ভুত হয়েছে।

কেমন ছিল ভালবাসার যুগীয় রুপান্তর?

একটা সময় ছিল যখন কেউ ‘ভালবাসার জন্য দুরন্ত ষাড়ের চোখে লাল রুমাল’ বেঁধে দিতেও দ্বিধা করেনি… প্রেয়সীর জন্য ‘বিশ্বসংসার তন্নতন্ন করে খুঁজে এনেছে ১০১ টি নীল পদ্ম’…

সেই ভালোবাসা এখন ডিজিটাল যুগের ভার্চুয়াল জগতে এসে ধুঁকছে!

তাহলে সময়কে দুটো ভাগে ভাগ করতে পারি। অ্যানালগ এবং ডিজিটাল যুগ।

আমাদের সময়ের (অ্যানালগ) নীল খামের ভিতরে নীল কাগজে লেখা হৃদয়ের যরীন হরফের অব্যক্ত কথাগুলো প্রকাশের সেই দৃষ্টিভঙ্গি এখন বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে গেছে! বিনিদ্র রজনী জেগে জেগে প্রিয়াকে লেখা ভালবাসার পংক্তিগুলো এখন আর লেখা হয়ে উঠে না। অনিশ্চযতার দুরু দুরু বুকের কাঁপুনি এখন যে সেল ফোনের শর্ট ম্যাসেজ আর ফেসবুকের ইনবক্সে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। এখন আর বাড়ীর ছাদে কিংবা খোলা মাঠের বিস্তীর্ণ ধানি ফসলের ভিতর দিয়ে মেঠো পথে হেঁটে যেতে যেতে প্রেয়সীর খোঁপায় জড়ানো বেলী ফুলের তাজা নির্যাস মনকে আকূল করার সময় পায় না। চিঠি চালাচালির সেই উত্তেজনা এখন অ্যানালগ যুগের দামী এন্টিকস!! প্রেয়সীর বুকের সাথে সাময়িক মিশে থেকে সেই নীল খামের শরীর থেকে প্রিয়তমার অতি পরিচিত ‘ভালবাসার সুবাস’ এখন আর পাওয়া হয় না!

এখন মাংসল হৃদয়ের যান্ত্রিক কথাবার্তা কী-বোর্ডের ইলেক্ট্রনিক ঘ্রাণকে সাথে নিয়ে স্কাইপের দ্বারস্থ। কালো অক্ষরের হৃদয়ের লাল অনুভূতি এখন <3 এই সিম্বোলিক কনভার্সনেই তৃপ্তির স্বাদ আস্বাদনে ব্যস্ত! দামী রেস্টুরেন্টে উচ্চ কোলেষ্টরেল যুক্ত খাবার আর দামী গিফট এর পিছনে নিরন্তর ছুটে চলা…

তবুও এই ডিজিটাল যুগের ভালোবাসা সামনে এগোয়… ‘সোনার অক্ষরে লেখা ভুলে যাওয়া নামের’ মত। একই সাথে একই সময়ে কয়েকজনের সঙ্গে ভালবাসার অনুশীলনে কোনো সমস্যা নেই। ভার্চুয়াল জগতের দেয় আড়াল আমাদের এই বহুগামী প্রবণতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। এ যেন-

‘ কেন দূরে থাকো

মনের আড়াল রাখ

কে তুমি কে তুমি আমায় ডাকো…’ একই সাথে কয়েকজনকে ডাকা হচ্ছে এখন।

প্রযুক্তি স্থানিক দূরত্বকে কমাতে পারলেও মনের দূরত্বকে বাড়িয়ে দিয়েছে। আগে দু’জনের কাছে আসাটা কঠিন হলেও মনের দূরত্ব কম ছিল। এখন সহজে কাছে এসে হৃদয় দুটো দুই মেরুতে অবস্থান করে। আর মেকি সিম্বোলিক ভালবাসার ভিতরে এখন প্রয়সীর বুকের চাঁপা ফুলের ঘ্রাণের পরিবর্তে এখন শুধুই রোবোটিক ঘ্রাণ!

এখন কবিগুরু ও নেই… ভালোবাসাও এখন তাঁর মতো ছন্দে ছান্দসিকও নয়। একবার তাঁকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, ‘ ভালোবাসা কি?’ এর উত্তরে তিনি বলেছিলেন-

” ভালবাসার কোন কথার

কি বা অর্থ-মানে?

ভালো যারা বেসেছিল

তারাই ভালো জানে”।

আসলেই… ভালোবাসা এখন যারা ভালোবাসে তাঁদের নিজস্ব নিগুঢ় অর্থে দীপ্তমান।।

১,০২৬ বার দেখা হয়েছে

৪ টি মন্তব্য : “ভালবাসার একাল…সেকাল”

  1. রাজীব (১৯৯০-১৯৯৬)
    ” ভালবাসার কোন কথার

    কি বা অর্থ-মানে?

    ভালো যারা বেসেছিল

    তারাই ভালো জানে”।

    🙂


    এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।