খিচুড়ি-৪

ক।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের অফিসিয়াল ট্যুর শুরু হয়ে গিয়েছে। সব দেশের স্কোয়াড এখন আইসিসির অধীনে চলে গিয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এর মাঝে ঘরোয়া ক্লাব ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় খবর একটু আড়ালেই চলে গিয়েছে, অবশ্য খবরটা এক রকম রুটিন হয়ে যাওয়াও সেটার একটা কারন হতে পারে। সেটা হলো আবাহনী আবারো চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, এবার প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগে। জানি অনেকেই বলবেন, ধূর, এটা কোন খবর হইলো, আবাহনী যদি কখনো চ্যাম্পিয়ন হইতে না পারে, সেটাই হবে খবর। যাই হোক, মোহামেডানকে অভিনন্দন, রানার আপ হবার প্রতিযোগিতায় প্রথম হবার জন্য।

খ।
স্কুল জীবনের কোন এক সময়ে একটা সত্য/মিথ্যা প্রশ্ন দেখেছিলাম, ‘ছাপার অক্ষরে যা কিছু লেখা সব সত্য’। সত্য হলে ‘স’ মিথ্যা হলে ‘মি’ লিখো। তখন ‘মি’ ই লিখেছিলাম মনে আছে, তবে সেটা যতটা বুঝে, তার থেকে বেশি না বুঝে। এখন এর আসল মাহাত্ম্য কিছুটা হলেও মনে হয় বুঝতে পারছি। কারন প্রতিদিন কাগজ আর অনলাইন ভার্সন মিলে প্রায় ৫-৭ টি পত্রিকায় চোখ বুলানো হয়। এদের বক্তব্য আর রিপোর্টিং এর ধরন দেখলে মনে হয় ‘ছাপার অক্ষরে যা কিছু ছাপা হয় তা সবই মিথ্যা’। এইসব কর্পোরেট মিডিয়ার অত্যাচারে পত্রিকা পড়াই ধীরে ধীরে মানসিক যন্ত্রনার কারন হয়ে দাড়িয়েছে। সকল খবরের তিন চার ভার্সন পড়ে তার থেকে আসন জিনিষ উদ্ধার করা… মাফ চেয়ে গেলাম। তাই চিন্তা করতেছি পত্রিকা পড়াই বাদ দেব। কি দরকার…

গ।
ইদানিং কালের সব পত্রিকার প্রধান ফিচার বলা যায় বিজ্ঞাপন। ইঞ্চি কলামের হিসেব থেকে পুরো পাতা জুড়ে থাকা বিভিন্ন ধরনের রঙ বেরঙের বিজ্ঞাপনগুলো পত্রিকাগুলোকে আরো ঝলমলে করে তোলে। গত মাসে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বানিজ্যমেলা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন ছাড়, অটবি’র ৫০% ছাড় ছিল অন্যতম। এর মাঝে হঠাৎ করে একদিন যায়যায়দিন… খুলে দেখি তাদের হেড লাইনে অটবির এই বিজ্ঞাপন নিয়ে প্রতারনার রিপোর্ট করেছে। কোন দোকানেই নাকি ছাড়কৃত আইটেমগুলো পাওয়া যাচ্ছে না, বলা হচ্ছে স্টক শেষ। রিপোর্টটা পোড়ে মনে হয়েছিল এতদিনে ক্রেতাদের পক্ষ হয়ে কিছু লেখালেখি হলো। পরের দিনের যায়যায়দিন… এ দেখলাম অটবি অর্ধপৃষ্ঠা জুড়ে এর প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দেশ জুড়ে তাদের লোকাল এজেন্টদের মোবাওল নম্বর দিয়ে দিয়েছে, দেখে মনে হলো, ভালই তো। কিন্তু খটকা লাগলো তার পরের দিনের পত্রিকায় অটবির ছাড়ের বিজ্ঞাপন দেখে। আগের এক সপ্তাহের পত্রিকাগুলো একটু ঘেটে দেখার সিদ্ধান্ত নিলাম। ফলাফল যা আশংকা করেছিলাম তাই। অটবি আরো অনেক পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিলেও যায়যায়দিনে কোন বিজ্ঞাপন দেয়নি… হুম!

ঘ।
ভালবাসা দিবস সম্পর্কে প্রথম বুঝেছিলাম মনে নেই, তবে তার আগে থেকে বোঝা শুরু করেছি যায়যায়দিনের ভালবাসা দিবস সংখ্যা। যতদূর জানি শফিক রেহমান তার যায়যায়দিনের মাধ্যমে আমাদের দেশে ভালবাসা দিবসের আমদানি। এখন এটা বিশাল আকার ধারন করেছে, এই দিনকে ঘিরে এখন আয়োজনের শেষ নেই। এক সময় তো এই দিনে হরতাল হওয়া ফ্যাশন হয়ে দাড়িয়েছিল। টিভি চ্যানেলগুলো পাল্লা দিয়ে নাটক প্রচার করারা বিজ্ঞাপন দিয়ে যাচ্ছে। প্রমোগুলোর অনেক গুলোই ভাল লেগেছে, তবে একটায় দেখলাম নাটকের মধ্যে হিন্দি সিনেমার গানের সাথে নাচানাচি করছে, দেখে তেমন একটা ভাল লাগল না। গত কয়েক বছর ধরে আমিও একটু আলাদা ভাবে দিনটা উদযাপন করে এসেছি, কিন্তু যা মনে হচ্ছে এবারে একা একাই কাটাতে হবে।

ঙ।
এবারে সিসিবি ফ্যান্টাসী লীগ গত মৌসুমের মত অতটা জমে ওঠেনি, এখন পর্যন্ত কোন আমলনামাই ছাপা হয়নি। আমার নিজের অবস্থা শুরু থেকেই করুন, ২০ এর ভিতরেই ঢুকতে পারি না ঠিক মত। তবে এ মাসে ভাগ্য কিছুটা মুখ তুলে তাকিয়েছে, এ মৌসুমের এখন পর্যন্ত সেরা অবস্থান ১৫ তে উঠে এসেছি। দেখি শেষ পর্যন্ত কোথায় যেতে পারি। ফ্যান্টাসী লীগের অনেকেই হয়তো জানে, তারপরো কেউ যদি মিস করে থাকে তাদের জন্য একটা টিপস শেয়ার করছি। এবারের লীগে দুটো ওয়ালিল্ড কার্ড আছে, যার একটা মৌসুমের যেকোন সময়ে জন্য আরেকটা ডিসেম্বর থেকে ১২ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। অর্থাৎ আর মাত্র ১ দিন আছে। এখনো ব্যবহার না করে থাকলে এখনই সময়। এই ওয়াইল্ড কার্ডে যেকোন ম্যানেজারের ভাগ্য ঘুরে যেতে পারে। গুডলাক

চ।
বিশ্বকাপ নিয়ে সব জায়গাতেই প্রচুর লেখালেখি হচ্ছে, সবাই নিজ নিজ মতামত, আহবান, চিন্তা ভাবনা তুলে ধরছে। প্রতিদিনই এরকম কোন না ওন লেখা পড়া বা বক্তব্য শোনা হচ্ছে, তবে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে ভাল লেগেছে বাংলা ক্রিকেট ফোরামে আমাদের বোলিং কোচ ইয়ান পন্টের ফ্যানদের প্রতি আহবানটি। মূল লেখাটি আছে বাংলাক্রিকেট ফোরামে এখানে, আর এর অনুবাদ সামু ব্লগে প্রকাশিত হয়েছে। ফেসবুকের মাধ্যমে অনেকেই হয়তো ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছে। পন্টের সাথে সুর মিলিয়ে বলতে চাই পারফর্মেন্স যাই হোক না কেন, বিশ্বকাপ চলাকালে আমরা যেন আকুন্ঠ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাই। দু এক ম্যাচে খারাপ খেললেই যেন আমরা সমর্থকরা, পত্র-পত্রিকা, টিভি চ্যানেল গুলো যেন খেলোয়াড়দের মুন্ডুপাত না করি, জুনায়েদ/নাফিস, আশরাফুল/রকিবুল, শুভ/নাইম/রিয়াদ এই সমস্ত বিতর্কে না নেমে যাই। বিশ্বকাপ শেষ হবার পরে এসব নিয়ে অনেক সময় পার করা যাবে, বিশ্বকাপ চলাকালে যেন এগুলো সামনে না চলে আসে। “প্রতিটি খেলায় বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ান—একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।”

ছ।
বিশ্বকাপ নিয়ে প্রচুর গান, ভিডিও তৈরী হয়েছে, হচ্ছে তবে এখন পর্যন্ত আমার ফেভারিট আমাদের প্রথম বিশ্বকাপের থিম সং, শুভ্রদেব, সুবির নন্দী, আব্দুল হাদি সহ আরো বেশ কয়েকজনের গাওয়া, গুডলাক বাংলাদেশ, গুডলাক… অনেক খুঁজে অরিজিনাল ভার্সনটা ইউটিউবে পেলাম না। পাকিস্তানকে হারানোর পরে একি সুরে ২য় একটা ভার্সন করা হয়, সেটাই শেয়ার করলাম…

১,৪৩৪ বার দেখা হয়েছে

১৯ টি মন্তব্য : “খিচুড়ি-৪”

  1. রায়েদ (২০০২-২০০৮)
    ধূর, এটা কোন খবর হইলো, আবাহনী যদি কখনো চ্যাম্পিয়ন হইতে না পারে, সেটাই হবে খবর। যাই হোক, মোহামেডানকে অভিনন্দন, রানার আপ হবার প্রতিযোগিতায় প্রথম হবার জন্য।

    :thumbup: :thumbup:

    শফিক রেহমান তার যায়যায়দিনের মাধ্যমে আমাদের দেশে ভালবাসা দিবসের আমদানি।

    আমিও তখন এইখান হইতেই জানসি
    আর গতকাল ক্রিকিনফোর একটা রিপোর্ট এ দেখলাম লিখসে বাংলাদেশ ২০০৩ এ পাকিস্তানকে হারায়সিলো

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    ক. ধুর ধুর :grr:
    খ. + গ. _____
    ঘ. ভালোবাসা দিবস :dreamy: :dreamy: একাই পালন করমু। 😐
    ঙ. আমি শীর্ষ পাঁচে আছি এইবার। :gulli:
    চ. পন্টের কথার সারসংক্ষেপের সাথে একমত। এভাবে প্রতি ম্যাচে খেলা শেষে খেলোয়াড়দের তুলোধনা না করে; অন্তত পরের ম্যাচটা ভালো খেলবার মতো প্রেরণা যোগালে অনেক কাজে দেবে বলেই বোধ করি।
    ছ. এইটা বোধহয় অরিজিনাল ভার্সনটা হতে পারে, শিউর না।


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. তানজিনা মেহেদী অমী (অতিথি)

    valobasa dibos! eida ki jinis! khay, na mathay dei? ei dibos palon korle ki ami uchchisto sap-byanger akhra ektola basar bodle 3tolar valo basa pabo??

    Jibone sob juice apnarai kheye gelen, podatik bahini to valobasa dibos ki jinis ta janar e sujog pailo na 🙁 ar koto haram khaben!!!

    copyright: apnara apnarai

    offtopic: bolola da bole, thotola to ta e sike...ami ethon etta chola bobbo; amal cholal naam akathda al akath boudi
    3:)

    জবাব দিন
  4. তানজিনা মেহেদী অমী (অতিথি)

    Vai, amar Comillar mess-B er char tolar right most room ta ekta behesht cilo. Sylhet er mess er samne piche dui dikei shudhu jonakirno rasta; british amoler ektola ek basa faka ace, room gulo na ki tenis court er moto boro boro ar saap-byang er akhra; sei basa na nile na ki onirdistokaler majhe basa pabo na.
    :'(

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।