সাপ্তাহিক ১৪

অপয়া ১৩ তে এসে সাপ্তাহিক বেশ কিছুদিন আটকে গিয়েছিল। গুনে বললে তিন সপ্তাহ। ঈদের ছুটি থেকে ফিরে ভয়াবহ রকমের ব্যস্ততার মধ্য দিয়ে এ তিন সপ্তাহ গিয়েছে। মাঝে মাঝে ঢু মেরে দু’একটা মন্তব্য করার বাইরে সিসিবিতেও তেমন একটা আসতে পারিনি। আজ অনেকদিন পরে একটু অবসর পেলাম। সেই সুযোগে সমকালীন সিসিবিও ধারা বজায় রেখে আমিও আমার সাপ্তাহিক ছোট খাট একটা প্রত্যাবর্তন করে ফেললাম।

প্রচন্ড ব্যস্ততার কারনে বিগত দিনগুলো কেটেছে খুবই বৈচিত্রহীন ভাবে। তাই ব্লগর ব্লগর করারা মত জিনিষও খুঁজে পাচ্ছি না। তাই আশেপাশের যে ঘটনাগুলো চোখে পড়েছে সেগুলো নিয়েই প্যাচাল পাড়ছি।

সিরিয়াল কিলারদের কাহিনি আমাকে সবসময়ই আকর্ষন করে। এ নিয়ে কোন মুভি পেলেই দেখে ফেলি। তবে এতোদিনে একজন দেশি সিরিয়াল কিলার এর সন্ধান পেলাম। রসু মিয়ার কাহিনি মনে হয় ইতিমধ্যে সবাই জানেন। তবে সংবাদ মাধ্যমের সিরিয়াল কিলারের বাংলা হিসেবে ক্রমিক খুনি শব্দটা কেমন জানি পছন্দ হয় নি ( তবে ভাল লেগেছে যে বাংলা সিরিয়াল কিলার এর বদলে বাংলা শব্দ ব্যবহার করছে),আমি অবশ্য অনেক ভেবেও ভাল কোন কিছু খুঁজে পেলাম না। ধারাবাহিক খুনি? কারো মাথায় কি অন্য কিছু আসছে?

আমাদের সরকার ব্যবস্থা সংসদীয় গনতন্ত্র হলেও সংসদের কার্যকারিতা(?) নিয়ে আমাদের কারও মনে মনে হয় কোন সন্দেহ নেই। তবে ইদানিং দেখলাম বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংসদ জমিয়ে রাখতে সরকারী দল নিজেরা নিজেরাই ব্যাপক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মাছের বাজারের ক্রেতা, বিক্রেতা, আড়ৎদার নির্ধারন করতে ব্যাপক গবেষনা শুরু হয়েছে। অসধারন!

গত সরকারের ( ফখরুদ্দিন সাহেবের সরকার) সময়েই সরকারী কর্মকর্তা- কর্মচারীদের বেতন ভাতা বাড়ানোর জন্য কার্যক্রম শুরু হয়। এর পর থেকেই কান খাড়া করে রাখি এ সম্পর্কে কোন খবর পেলেই। বর্তমান সরকার আসার পরেও এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকে, ঘোষনা আসে জুলাই থেকেই নতুন স্কেলে বেতন বৃদ্ধি হবে। আশায় দিন গুনতে থাকি, আর বিভিন্ন উড়ো খবর শুনে হিসাব করতে থাকি আসলেই কত বাড়তে পারে। কিন্তু জুলাই যায়, আগস্ট, সেপ্টেম্বর যায়, মাঝে একটা ঈদ ও যায়। কিন্তু বেতন বৃদ্ধির ঘোষনা আর আসে না। এক বিশেষ প্রানীর সামনে ঝুলে থাকা মূলোর মতো এটা শুধু দূরেই সরে যাচ্ছে, সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য মতে মূলো আর মাত্র একমাস দূরত্বে অবস্থান করছে। জনাব মাল মুহিত সাহেবের কাছে আকূল আবেদন থাকবে আবারো যেন মূলোটা দূরে সরে না যায়। কষ্টে আছি…

শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করলো। এন্টি আর্জেন্টিনা ( ব্রাজিলকেও সমর্থন করিনা) হওয়ার কারনে যদিও চাচ্ছিলাম যে আর্জেন্টিনা বাদ পড়ে যাক তারপরো একটা জমজমাট বিশ্বকাপের জন্য (বিশেষ করে আমাদের দেশে) আর্জেন্টিনা যাওয়াতে এক প্রকার খুশিই হয়েছি। তবে এই নাটকিয়তার কারনে যেটা হয়েছে সেটা হলো এবার বাছাই পর্ব থেকেই বিশ্বকাপের খোঁজ খবর শুরু হয়েছে, ফুটবলের আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছে। বেশ ভালই লাগে, আশা করি এর রেশ আমাদের ঘরোয়া ফুটবলেও এসে পড়বে।

দেশের ক্রীড়াঙ্গন এখন জমজমাট। ফুটবলের চলছে ফেডারেশন কাপ আর ক্রিকেটে প্রিমিয়ার লীগ টি টুয়েন্টি । ফেডারেশন কাপের কোয়ার্টার ফাইনাল শেষ। গ্রুপ পর্বে ভাল খেললেও আবাহনী- মোহামেডান উভয় দলকেই কোয়ার্টার ফাইনালে বেশ ঘাম ঝরাতে হয়েছে। দুদলই কোয়ার্টার ফাইনাল জিতেছে ট্রাইবেকারে। তবে শেষ পর্যন্ত এদেরই ফাইনালে মুখোমুখি হবার সম্ভাবনা প্রায় শতভাগ। অন্যান্য দলগুলোর সাথে এবার দুই দলের ব্যবধান অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে। দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ আসর বি-লীগ শুরু হতে যাচ্ছে আগামী ২৫ এ অক্টোবর। আশা করি এবারের লীগ গতবারের থেকেও জমজমাট হবে।

ক্রিকেটে শুরু হয়েছে প্রিমিয়ার লীগ ২০/২০। আইপিএল, চ্যাম্পিয়ন্স লীগের হাওয়া লাগানোর চেষ্টায় ক্রিকেট বোর্ড বেশ তৎপর ছিল। তবে বিসিবির নতুন সভাপতির মাঠে আসতে সাময়িক বিলম্বের (১এক ঘন্টা) কারনে পুরো উদ্বোধনী অনুষ্ঠানই বাতিল হয়ে গিয়েছে। ( সাব্বাশ বাঙ্গালী)। এবার দলবদলে বড় দলগুলো বেশ বড় অংকের টাকাই ঢেলেছে। আমার কাছে সবচেয়ে শক্তিশালী মনে হয়েছে মোহামেডানকে। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচে তারা খেলেছেও দূর্দান্ত। ( দেশ টিভিতে খেলাগুলো দেখাচ্ছে, তবে সবগুলো মনে হয় না) আর আবাহনীর দলবদল যে আমার পছন্দ হয়নি তা আগেও মনে হয় উল্লেখ করেছিলাম। রেকর্ড টাকায় কেনা দু তারকা সাকিব আর মাশরাফি ইঞ্জুরির কারনে এখনো মাঠে নামতে পারেনি, কবে নাগাত পারবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। এর ফল প্রথম ম্যাচেই দেখতে পেয়েছে আবাহনী। কলাবাগানের মাত্র ১০৯ রান তাড়া করে ধুকতে ধুকতে ৩ উইকেটে জিতেছে তারা।

এক সপ্তাহ বিরতির পর আবার ফিরে আসছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ, সেই সাথে সিসিবি চ্যাম্পিয়ন্স লীগ। আশা করি এখন থেকে আবার খেলা দেখতে পারব সে সাথে ফ্যান্টাসী লীগেও সময় দিতে পারব, তবে শেষ সপ্তাহে মনে হয় সিসিবি লীগের আমলনামা প্রকাশ হয় নাই।

গত কয়েকদিন ধরে অর্ণবের গানে ডুবে আছি। অর্ণবের গান প্রথম ভাল লেগেছিল বাংলা ব্যান্ডের প্রথম এলবামের তুই গান গা গানটি শোনার পর থেকে, তারপর থেকে সব গানই শুনছি। তবে সর্বশেষ প্রকাশ পাওয়া অর্নব এন্ড ফ্রেন্ডস এর দুটো গানের কম্পোজিশন সব ভাললাগাকে ছাপিয়ে গিয়েছে। একটা হলো ভালবাসা তারপর আর আরেকটি হারিয়ে গিয়েছি

শুভেচ্ছা!

২,৮১৯ বার দেখা হয়েছে

৪৭ টি মন্তব্য : “সাপ্তাহিক ১৪”

  1. জুনায়েদ কবীর (৯৫-০১)

    তোর সাপ্তাহিক পড়তে ভাল লাগে... :thumbup:

    একটা দুর্দান্ত আইডিয়া মাথায় আইলো... ;;)
    ব্লগের সেলিব্রেটি ডজাররা তো এই রকম সিরিয়াল চালু করতে পারেন...
    সাপ্তাহিক এর বদলে না হয় 'বাৎসরিক'ই দিলেন...!!! :-B

    কি বলেন কাইয়ূম ভাই...??? 😀


    ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ

    জবাব দিন
  2. রকিব (০১-০৭)

    অবশেষে ফিরে এলেন আকাশদা।
    আপনার সাপ্তাহিক পড়তে ভাল লাগে…

    একটা দুর্দান্ত আইডিয়া মাথায় এসেছে…
    ব্লগের তারকা ডজাররা তো এই রকম সিরিয়াল চালু করতে পারেন…
    সাপ্তাহিক এর বদলে না হয় ‘বাৎসরিক’ই দিলেন…!!!

    কি বলেন কাইয়ূম ভাই, জুনা ভাই, স্বপ্ন ভাই, তানভীর ভাই, এবং আরো অনেকে (এর মইধ্যে আমি নাই)…???


    আমি তবু বলি:
    এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..

    জবাব দিন
  3. কামরুলতপু (৯৬-০২)

    সাপ্তাহিকের ফরম্যাট চেঞ্জ করলি কেন। আর্জেন্টিনা কোয়ালিফাই করাতে কি কষ্ট পাইছিস মনে হয়।
    আচ্ছা সরকার আসলেই একটা করে বেতন স্কেল চেঞ্জ করে। এই মূলা ঝুলানোর আসল কারণ কি। সবার চোখে ধুলা দেওয়া? এরচেয়ে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করাটা বেশি দরকার। যেটুকু বাড়ায় তারচেয়ে বহুগুণ বেড়ে যায় দ্রব্যমূল্য।
    আর ঘড়ির কাটা পেছানোর কথা কিছু বললিনা। আমার ছোট ভাইর একটা কথা মনে ধরেছে। বাংলাদেশে একবার যেটা বেড়ে যায় সেটা কি আর কমে?

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      সত্যি করে বললে আর্জেন্টিনা কোয়ালিফাই করায় কষ্ট পাইনাই, তা না হলে বিশ্বকাপের সময় তেমন জমত না, খেলা দেখার সময় পাশে সি রকম এন্টি পার্টি না থাকলে কি আর জমে।

      সেভাবে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রন করা কখনোই মনে হয় সম্ভব নয়। আর টাকার মান ধীরে ধীরে কমে, এ জন্য একটা নির্দিস্ট সময় পর পর বেতন বাড়ানো হয় ( অর্থনীতেই আরো কি সব জানি ব্যাখ্যা আছে...)

      সময় তো শুনতেছিলাম আবার আগের মত করবে, কবে করবে কে জানে, তবে নতুন করে সরকারি অফিস, বেসরকারি অফিস, ব্যাঙ্ক, স্কুল কলেজ এসবের জন্য আলাদা আলাদা অফিস টাইম নির্ধারন করেছে, রাস্তার জ্যাম কমানোর জন্য, দেখি কতটা কাজে লাগে।

      ফরম্যাট কোথায় চেঞ্জ দেখলি?


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      সাপ্তাহিক একটি নিয়মিত প্রকাশনা, শুধু মাঝে মাঝে অনিবার্য কারনবসত ( টাইমের অভাব) এর প্রকাশনা স্থগিত থাকে। :-B

      তোর খবর কি? লেখা দেখি না অনেকদিন... পারিবারিক উদ্যোগে কিছু লেখা নামা তাড়াতাড়ি।


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  4. রহমান (৯২-৯৮)
    অপয়া ১৩ তে এসে সাপ্তাহিক বেশ কিছুদিন আটকে গিয়েছিল।

    আহসান, ১৩ সংখ্যাটা অপয়া বা আনলাকি নয়, অন্ততঃ আমি মানি না। কলেজে আমাদের ব্যাচ নং ছিল ১৩। আমরা ছিলাম খুবই লাকি একটা ব্যাচ B-) (যেটা কিনা আমাদের সিনিয়র, জুনিয়ররাও স্বীকার করে)।

    এনিওয়ে,
    সাপ্তাহিক চলুক তার নামের প্রতি সুবিচার করে
    এবং তার রেশ থাকুক সারা সপ্তাহ জুড়ে... এই কামনা রইল :thumbup:

    জবাব দিন
    • আহসান আকাশ (৯৬-০২)

      ১৩ আনলাকি, ৭ লাকি এর কোনটাই আমি বিশ্বাস করি না। তবে ১৩ বা ৭ এর সাথে লাকি আর আনলাকি শব্দ দুটো চলেই আসে শুধু সে কারনেই বলা।

      শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ 😀


      আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
      আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷

      জবাব দিন
  5. সানাউল্লাহ (৭৪ - ৮০)

    বহুত দিন পর আমিও আজকা অনেকগুলা পোস্ট পড়তে আইলাম। আর্জেন্টিনা শেষ পর্যন্ত আসায় খুশি হইছি। আসলেই প্রতিপক্ষ না থাকলে লড়াই জমে নাকি!!

    বাংলায় কয়েকটা প্রবাদ আছে, "আগে গেলে বাঘে খায়, শেষে গেলে সোনা পায়" অথবা "সব ভালো তার, শেষ ভালো যার"- এমন সব কিছু নিয়ে ম্যারডোনার চেলারা আপাতত দিবাস্বপ্ন দেখতে থাকুক। আসল খেলা তো হইবো মাঠে।

    আকাশ, মুলাটা তাড়াতাড়ি তোমাদের মুখে ঢুকুক সে কামনাই করি। মাস দুয়েক হলো, আমাদের মুলো পেয়েছি!! :grr: :grr: :grr:


    "মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।