স্বপ্নময় স্মৃতি – স্মৃতিময় স্বপ্ন ১
জয়েনিং ইন্সট্রাকশন হাতে আসার পর শুরু হলো আরেক দফা উন্মাদনা। একদিন দুপুর হতে না হতেই আব্বা আমাকে সাথে করে নিয়ে চললেন পুরনো ঢাকার ইসলামপুর (সেই প্রথম আমার পুরনো ঢাকা দেখা) – সেখানে নাকি যাবতীয় পাইকারী কাপড়ের দোকান। অনেক অনেক ভ্যারাইটি থেকে বেছে বেছে তুলনামূলক কম দামে কাপড় পাওয়া যায়। কলেজের চাহিদা মতোন পোষাকের কাপড়ের জন্য আব্বার কাছে সেটাই উপযুক্ত মনে হয়েছে। সেখানের কারবার শেষ হলে কাপড় গেল দর্জির কাছে আর ফেরত আসল আমার মাপের বিভিন্ন পরিধেয় বস্ত্র হয়ে।
একটা জিনিস আব্বা আমাকে হাতে ধরে বহুত যত্ন করে শিখিয়েছিলেন – সেটা হলো টাইয়ের নট বাধা। আব্বার ব্যবহারের টাইগুলো থেকে স্লিম অথচ স্মার্ট একটা টাই আমাকে দিলেন। এই নট বাধা নিয়ে আমাকে সারা কলেজ জীবন (এমনকি বর্তমানের এই কর্মজীবনেও) সার্ভিস দিতে হয়েছে। বেশ কয়েকজন বন্ধুকে ব্যাপারটা শেখাতে পারলেও কেউ কেউ যেন একেবারে গো ধরেছে যে ধড়ে প্রাণ থাকতে আর টাই বাধা শিখবে না। ব্যাপারটা মজাই
লাগত। তাদেরকে একবার টাই বেঁধে দিলে পুরো টার্ম পার হয়ে যেত। টার্মের শেষের দিকে নটটা রীতিমতোন কালচে হয়ে যেত। অনেকদিন পর যখন সেই নট খোলা হতো তখন একেবারে কু্কুরের লেজ হয়ে থাকত।
মৌখিক পরীক্ষার রিহার্সালের মতোন আরও একটা রিহার্সালের ঠ্যালায় আমাকে পড়তে হয়েছিল। সেটা হলো চামচ কাঁটাচামচ সহযোগে ডাইনিং টেবিল ভব্যতা। বাসায় এমনিতে হাত ব্যবহার করে খাওয়াটাই চলত। মাঝে মাঝে ভুংভাং করলে আম্মা খাইয়েও দিতেন। সেটা অমৃত সমান। এখনও মাঝে মাঝে এই কাজ করি। একবার আম্মা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছেন দেখে তো হাঁটুর বয়সী কাজিন হেসেই অস্থির “এ্যাত্তবড় পোলারে খাওয়ায়ে দিতে হয়”!
সেই চামচ কাঁটাচামচের একবেলার জ্ঞান একেবারে বিফলে যায়নি।
এই প্রসঙ্গে মুশফিকের (এমসিসি, ৯২-৯৮) কথা মনে পড়ে গেল। এমআইএসটি’তে ও প্রতিদিন দুপুরে আহার সমাপনপূর্বক এ্যায়সা একটা ঘুম লাগাত। মাথার উপর ফ্যানটা ফুলস্পিডে ছেড়ে দিয়ে কাঁথাটা আলুথালু জট পাকিয়ে গলায় পেঁচিয়ে রাখত। কারণ জিজ্ঞেস করলে মধুর হাসি ঝড়িয়ে জবাব দিল, “কাঁথাটায় একটা মা মা গন্ধ আছে। এইটা আম্মা সেলাই করে দিছেতো, তাই”।
কলেজের গেটে ঢোকার মুখে দীর্ঘ ছয় বছরের পথ চলার প্রথম কমরেডের (আদমজীর চারজন বাদে অবশ্যই) সাথে দেখা হলো – সে মোরশেদ। কি আশ্চর্য, আমি আর মোরশেদ একই হাউসে যেয়ে পড়লাম! খালি আমি আর মোরশেদ কেন, আমাদের দুজনের সাথে সাথে আমাদের প্যারেন্টসরাও পরস্পরের পরিচিত হয়ে গেলেন। এরপর অনেকগুলো প্যারেন্টস ডে’তে তারা ঢাকা থেকে একসাথে বরিশাল এসেছেন এবং ফেরত গেছেন।
অন্যান্য কলেজে “গাইড” শব্দটা বহুল প্রচলিত হলেও আমাদের কলেজে বলা হতো “রুম লিডার”। আমার রুম লিডার ছিলেন নুরুজ্জামান কল্লোল ভাই (১৯৯১-১৯৯৭, পেশায় ডাক্তার হলেও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বর্তমানে আরটিভি’তে আছেন)। প্রথম আধা ঘন্টার ভিতরে আমাকে আর আমার রুমমেট তসবীরকে যত্ন করে প্রাথমিক কিছু কিছু জিনিস আয়ত্ব করালেন। বাবা মা বিদায় নেবার পর সময় হয়ে এলো মাগরীবের নামাজ পড়তে যাবার। পায়জামা পাজ্ঞাবীতে পরিবর্তিত হয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামতেই এক বড় ভাই (সম্ভবত আমিন ভাই, ১৯৯১-১৯৯৭) জিজ্ঞেস করলেন, “হু ইজ ইওর রুম লিডার”? বললাম, “নুরুজ্জামান ভাইয়া”। সাথে সাথে চোখের উত্তাপ বাড়ালেন – বললেন, “ডোন্ট সে ভাইয়া। বলবা নুরুজ্জামান ভাই। ওকে”? কেবল ঘন্টাখানেক ধরে এখানে ল্যান্ড করেছি বলেই হয়তো আমার ভাগ্যে এর বেশি আর কিছু না জুটে একরকম পার পেয়ে গেলাম।
[স্বপ্নময় স্মৃতি – স্মৃতিময় স্বপ্ন‘কে সিরিজ করতে চেয়ে খানিকটা বিপদেই পড়ে গিয়েছি। যতটা না আছে স্বপ্ন তার চাইতে বেশি আছে স্মৃতি। সেগুলোই একের পর এক হুড়মুড় করে চলে আসছে। এক পর্যায়ে মনে হল এইসব স্মৃতি তো স্বপ্নই। সেই স্বপ্নের জীবন ছেড়ে এসেছি প্রায় এগারো বছর হতে চলেছে – কিন্তু ঘোর এখনও কাটেনি, সারা জীবনেও বোধকরি কাটবে না। তাই ভাবছি চলুক না এই অগোছালো স্মৃতির (নাকি স্বপ্ন বলব?) কথকথা।]
১ম 🙂
বস আপনে ফাস্ট 😀 😀 😀 😀 ।
Life is Mad.
২য় 😀
:thumbup: :thumbup:
দোস্ত, আমিও মায়ের হাতের সেলাই করা কাথা গায় দিয়ে ঘুমাই 🙂 । এই লাইবেরিয়াতেও আম্মার হাতে সেলাই করা কাথা নিয়া আসছি। গায়ে দিলে মনে হয় মা হাত বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিচ্ছে। পৃথিবীর সব মাকে সালাম :salute:
সিরিজ ভাল হচ্ছে :thumbup: , চলুক...
আমিও মায়ের হাতের কাঁথা 😀 😀 😀 😀 ।
থ্যাংকু।
Life is Mad.
আর আমি এখনও মায়ের হাতে খাওয়া ধরে রেখেছি।
দারুন লাগছে... :dreamy:
চলছে...চলবে... :-B
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
আবারও অঞ্জন দত্তকে মনে পড়ে গেল 😀 😀 ।
Life is Mad.
তোমার তো দেখি অনেক কিছুই মনে আছে। আমার সব কিছু ঝাপসা হয়ে গেছে। আমার পোষ্ট দেখবা, ক্যাডেট কলেজ নিয়ে তেমন লেখা নেই, এর একটা কারন হতে পারে, সেভাবে মনে নেই।
দেখি তোমাদের লেখা পড়ে মনে পড়ে কিনা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
অবশ্যই মনে পড়বে ফয়েজ ভাই।
অপেক্ষায় রইলাম।
Life is Mad.
লেখা ভাল লাগছে ভাইয়া 🙂
চমৎকার সায়েদ।
খুব খুব ভাল লাগলো।
:thumbup:
আর শোন - উপরে তোমার কথা কোট করার উদ্দেশ্য হচ্ছে- তুমি বিপদে পড়েছো - ভাল কথা দোওয়া করি যাতে পরিত্রাণ মিলে। কিন্তু তোমার পাঠক এবং ভক্তকূল্কে বিপদে ফেলো না। তোমার লেখায় যেভাবে আমরা সবাই অভ্যস্ত হয়ে পড়ছি তাতে - লাগাতার সাপ্লাই বন্ধ হলে কিন্তু আসলেই বিপদের কথা।
তাই বলি - সাধু সাবধান... 😉
সৈয়দ সাফী
এক মত
আপনাদের দোয়া হলেই চলবে বস 🙂 🙂 ।
আমি আছি।
এর একটা ইমো বানানো যায় না।
রবিন বেচারা তাইলে ইমো দিয়েই কাম সারতে পারত :khekz: :khekz: :khekz: :khekz: ।
Life is Mad.
:)) =)) :khekz: :goragori: :just: :pira:
দোস্ত, "একমত" এর ইমো আছে তো, এই যে এইটাঃ :thumbup:
ক্যাডেট কলেজে যাবার আগে আমাকে কেউ টাই বাঁধা শিখায়নি। প্রথম দিন আমার গাইড আব্দুল্লাহ ভাই একবার শিখিয়ে দিলেন, সত্যি বলছি, এর পর আমার আর কোনোদিন টাই বাঁধতে সমস্যা হয় নি।
সব সময় নিজে বেঁধে এসেছি। কলেজ থেকে বের হয়ে কোনদিন টাই পড়িনি, (আসলে কলেজ থেকে বের হয়ে আর কোনদিন শার্ট ইন করেই পরিনি 😀 ) তবে আমার ধারনা আমি এখনো আগের মতোই পারবো।
স্বপ্নময় স্মৃতি চলুক সায়েদ ভাই। অবিরাম। 😀 😀 😀
তুমি তো বস পাব্লিক দেখি, আমি তো ছয় বছরে মোটমাট চার কি পাচবার টাই বাধছি। কুত্তার ল্যাজ তো ল্যাজ, আমার টাই অইটার আব্বা ছিল।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
সবই গাইড আব্দুল্লাহ ভাইয়ের দোয়া (!) 😀 ।
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz:
Life is Mad.
বস,টাইয়ের মত ব্লগেও সার্ভিস দিতে থাকবেন..................... :clap: :clap: :clap: :clap: :clap: পুরনো দিন গুলো চোখের সামনে ছায়াছবির মত ভেসে উঠতে লাগ লো............।। :salute:
টাই তো আরেকজনেরটা বেঁধে দিতাম। এখানেও কি আরেকজনেরটা...... 😀 😀 😛 😛 ।
Life is Mad.
হ্যাঁ, মাঝেমাঝে আমারে সার্ভিস দিস 😀 (মানে লেখার কিছু না পাইলে এই দিকে কিছু সাপ্লাই দিস আরকি 😛 , চামে নিজের নামে চালাই দিমুনে 😉
আইচ্চা 😀 😀 ।
কি খাওয়াবি সেইটা আগে ফয়সালা কইরা নিস 😉 😉 ।
Life is Mad.
ইউ এন চোচো খাওয়ামু নে 😉
ভাই ইউ এন চোচো কি?
ভাই,
খারাপ কিছু ভাইবো না আবার :no:
"চোচো" মানে খাবার দাবার
ফৌজি ভাষায় বলে "রেশন"
আর UN হইল ইউনাইটেড নেশন
("চোচো" শব্দটা লাইবেরিয়ান ওয়ার্ড, UN এর সব খাবার ফ্রি পাই তো, তাই ওইটা দিয়াই আমার দোস্তের খাওনের কামডা সারতে চাইছিলাম 😛 😀 )
খালি শর্টকাট, খালি শর্টকাট। উফ্ ...... ~x( ।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই, আপনার বর্ণনা এত সাবলীল! খুব ভালো লাগল। নিজেই যেন ফিরে গেলাম সেই সোনালী দিনগুলায়।
চলবে মানে, দৌড়াবে।
থ্যাংকস ব্রাদার।
Life is Mad.
জোস ভাই।মাত্র কলেজ থেকে বের হলাম।আপনার লেখা পড়ে আবার সেভেনে ভর্তি হতে ইচ্ছা করছে।
আপাতত সেভেনে ভর্তি হইয়া কাম নাই.......লেখা ছাড়ো 😛 😛 ।
Life is Mad.
বস, একটু বেশি অপবাদ হয়ে গেল...কালচে না বলে,বড়জোর ধূসর বলতে পারতেন...
তসবীর ভাই আপনার প্রথম রুমমেট নাকি?...আমি উনারে খুব ভালা পাই...তসবীর ভাই,জাকের ভাই, হায়দার ভাইদের সাথে প্রথম জীবনে অনেক আড্ডা মারসি...
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
তসবীর আমার শুধু প্রথম রুমমেটই না......... হাতে গোনা কয়েকটা দিন ছাড়া পুরো ক্যাডেট লাইফই আমরা রুমেমট ছিলাম 😀 । ও আর ওর বৌ-বাচ্চা নিয়ে একটা আর্টিকেল ছাড়ব ছাড়ব করে এখনও ছাড়া হলো না 😕 ।
জাকের আমার আরেক লম্বা সময়ের রুমমেট।
Life is Mad.
কি বলেন!!!
আপনার প্রতি মোহাব্বত(শ্রদ্ধা অর্থে) আরো বাইড়া গেল...
আমি তো বলতে গেলে তসবীর ভাই আর সেতু ভাবীর কাছেই বড় হইসি...উনার বড় মেয়ের জন্মের পর প্রথম কানে কানে আযানও দিসিলাম আমি... :boss:
বস, উনাদের নিয়ে একটা ব্লগ দিলে আমার নামটা অনুপ্রেরণাকারী হিসাবে দিবেন প্লীজ...এই চান্সে একটু ইমপ্রেশন কামায়া লমু 😀
"আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস"
তাইলে তোমার গপ্পোও ইকটু আধটু আমি শুনছি 😀 😀 ।
আইচ্চা মনে থাকবো তোমার কথা 😛 😛 ।
Life is Mad.
সায়েদ ভাই পুরান দিনের কথা মনে করাইয়া দিলেন :(( :(( :((
"আমি খুব ভাল করে জানি, ব্যক্তিগত জীবনে আমার অহংকার করার মত কিছু নেই। কিন্তু আমার ভাষাটা নিয়ে তো আমি অহংকার করতেই পারি।"
😮 ওয়াও... 😮
তোমার এত পুরানো কথা মনে পড়ে গেল... :thumbup: :khekz:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
:khekz: :khekz: :khekz: :khekz: :pira: :pira:
Life is Mad.
সবার কলেজে ঢুকার আগের দিনগুলা দেখি একইরকম। আমাকে তো আব্বু ভোরে ঘুম থেকে উঠিয়ে বাসা থেকে বের করে দিত। পিটি প্যারেডের প্র্যাকটিস হিসেবে আধাঘন্টা দৌড়িয়ে আসার জন্য। আম্মুর সহায়তায় ছাদে উঠে বসে থাকতা। সময় মত আবার নেমে আসতাম।
আমি কলেজে যাওয়ার আগে আমাকে কেউ কিছু শেখায় নাই। আমি মুর্খ হিসেবে কলেজে গেছিলাম।
ঠিক বলেছেন ভাইয়া। খুব সুন্দর করে লিখে গেছেন। একদম ডুবে গিয়েছিলাম আপনার স্মৃতিকথায়। 🙂
:shy: :shy:
Life is Mad.