অনেক দিন পর অন্যরকম একটা ছুটির দিন কাটালাম। তেমন কিছুই না, পুরো শনিবার রুমে শুয়ে শুয়ে শুধু গল্পের বই পড়া। শেষ কবে গল্পের বই পড়েছিলাম ভুলে গেছি। কমপক্ষে চার থেকে সাড়ে চার বছর হবে। ভাবতে গেলে অবাকই লাগে। কারন রীতিমত বইয়ের পোকা ছিলাম এক সময়ে। এতটাই যে বিএমএতে থাকতেও(৩য় টার্ম থেকে)নিয়মিত গল্পের বই পড়তাম। কিন্তু তারপর কম্পিউটার গেমস, ইন্টারনেট, টিভি এইসবের ভিড়ে গল্পের বই পড়ার অভ্যাস হারিয়ে যেতে থাকে। গতকাল লোডশেডিং এর সময় আর কোন কাজ খুজে না পেয়ে একটা গল্পের বই যোগাড় করে ফেললাম। তাও সেই সেবা বই প্রিয় বই… শুরু করতেই নতুন করে যেন আবার নেশায় পেয়ে বসল, সারাদিনে শেষ করলাম সেবার তিনটি অনুবাদ।
এই সেবা দিয়েই আমার গল্পের বই পড়ার শুরু হয়েছিল। আমাদের দেশের ৯০% মানুষের ক্ষেত্রেই মনে হয় এই ঘটনা ঘটে। ক্লাস ফোরে থাকতে জন্মদিনের উপহার হিসেবে খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে পেয়েছিলাম গোয়েন্দা রাজু সিরিজের খেলনা বিমান বইটা। সে থেকেই শুরু, ঐ ভাইয়ের কাছ থেকেই একে একে গোয়েন্দা রাজু’র সবগুলো বই পড়া হয়ে গেল। ততদিনে ফাইনাল পরীক্ষা শেষ। এবার হাত দিলাম ওর তিন গোয়েন্দার ভান্ডারে, তখন পর্যন্ত বের হওয়া প্রায় সবগুলোই ওর কালেকশনে ছিল। নাওয়া খাওয়া ভুলে পড়তে থাকলাম কিশোর,মুসা, রবিন আর জিনার কার্যকলাপ। সমস্যা শুরু হলো স্কুল খুলে যাবার পর। গল্পের বই পড়ার উপর বাসা থেকে নিষেধাজ্ঞা জারি হলো, খালাও খালাতো ভাইয়ের কাছ থেকে সাপ্লাই বন্ধ করার ব্যবস্থা করলেন। কিছুদিন বেশ কষ্ট করে পার করার পর শুরু হলো বই কেনার জন্য টাকা জমানো। টিফিনের টাকা জমিয়ে জমিয়ে ১৮-২০ টাকা হয়ে গেলেই একটা নতুন বই কিনে ফেলতাম। নতুন বইয়ের সেই সুগন্ধ কি ভালই না লাগত। তবে নিয়মিত নতুন বইয়ের জন্য টাকা জমানো বেশ কষ্টকর ছিল, একারনে নতুন বই কেনার পর প্রতিদিন অল্প অল্প করে পড়তাম যাতে শেষ না হয়ে যায়।
এ অবস্থায় হঠাৎ করে যেন স্বর্গ হাতে পেলাম। আমাদের এলাকায় নতুন একটা লাইব্রেরি হলো যেখানে ২ টাকা দিয়ে সেবার বই ভাড়া দেওয়া শুরু করলো, কিন্তু সমস্যা হলো এর জন্য ১০০ টাকা জমা দিতে হবে। এই ১০০ টাকার জন্য অপেক্ষা করতে হলো ঈদ পর্যন্ত। সালামীর টাকা হাতে পেয়েই ছুটে গেলাম সেই লাইব্রেরিতে, কিন্তু ঈদের দিন স্বভাবতই লাইব্রেরি বন্ধ, আরো ২/৩ দিন অপেক্ষার পর যখন লাইব্রেই খুলল ১০০ টাকা জমা দিয়ে সদস্য হয়ে গেলাম, সদস্য কার্ডটা হাতে পেয়ে মনে হলো স্বর্নের খনির চাবি পেয়ে গিয়েছি, তিন গোয়েন্দা দিয়েই শুরু করলাম। তারপর অন্যান্য সিরিজ। অন্যগুলোর মাঝে সবচেয়ে ভাল লেগেছিল রেজা-সুজা’র লোমহর্ষক সিরিজ, সেবা কেন যে সিরিজটা বেশিদিন কন্টিনিউ করলো না…অনুবাদগুলোও ছিল সেই রকম, প্রথম পড়েছিলাম মনে হয় বাউন্টিতে বিদ্রোহ, সর্বশেষ গতকাল পড়লাম হ্যাগার্ডের জেস।
এভাবে ক্লাস ফাইভ পুরোটাই বেশ ভালই কাটছিল। কিন্তু নতুন সমস্যা দেখা দিল ক্লাস সিক্স এর শুরুতে, এতোদিন আমরা থাকতাম মীরপুরে, কিন্তু হঠাৎ করে বাসা বদলি করে আমরা চলে আসলাম রামপুরায়, যেখানের কিছুই আমি চিনি না, কোন পরিচিত মানুষ নেই, বন্ধুতো আরো পরের কথা। আবারো দেখা দিল গল্পের বইয়ের সংকট… এর পরের কথা হয়তোবা আরেকদিন বলবো, সেই সাথে বাসার সবার চোখ ফাকি দিয়ে গল্পের বই পড়ার বিভিন্ন এডভেঞ্চার।
* এই ব্লগটা লিখতে গিয়ে সেই মজার স্মৃতিগুলো মনে পড়ে খুব ভাল লাগছিল, সে জন্যই হয়তো লম্বা হয়ে যাচ্ছে…
লম্বা হ্য়নাইতো :dreamy:
১ম 😀
মনে মনে আরো লম্বা হচ্ছে, কিন্তু আপাতত টাইম নাই... তাই লিখে ফেলতে পারলাম না 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
বড়ই সৌন্দর্য্য......... :thumbup: :thumbup:
মনে পড়ে গেল সেই ছেলেবেলা.........।। :salute:
এটাই চরম বাস্তবতা। একটা সময় ছোটদের বিনোদনের অন্যতম মাধ্যম ছিল এই গল্পের বই। এখন সময় পরিবর্তন হয়েছে। টেকনোলজির উন্নতি আমাদেরকে ভিতর থেকে আমাদের ঐতিহ্য কেড়ে নিচ্ছে। শুধু গল্পে বই কেন আমার মনে হয় আজকাল ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা পাড়ার মাঠে খেলার চেয়ে বাসায় বসে কম্পিউটার গেমস খেলাটা বেশি পছন্দ করে। =)) =))
ওইদিন কোন চ্যানেলে জানি দেখি তিন গোয়েন্দা নিয়া নাটক করছে। খুব আগ্রহ নিয়া দেখতে বসলাম। কিন্তু এতো ফাউল নাট্যরুপ হইছে, মেজাজটাই গরম হয়ে গেছিলো
এ জন্যই আমি সাধারনত আমার ভাললাগা কোন গল্প বা উপন্যাসের নাটক বা সিনেমা ভার্সন এড়িয়ে চলি... ব্যতিক্রম শুধু ফেলুদা
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আহা কত কথা মনে পড়লো 🙂
গল্পের বই, আড্ডা আর সিসিবি- এই তিনের নেশা থেকে বোধহয় আর বের হতে পারবো না :grr: :grr: ।
একটু তাড়াতাড়ি বলেন, আগ্রহ নিয়ে বসে আছি 😀
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
সময় পাইলেই বলে ফেলব...
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আমার লাইফে কিন্তু সেবা দিয়ে শুরু হয় নাই। আমি সেবার নাম শুনলাম ক্যাডেট কলেজে এসে।
আমার শুরু কি দস্যু বনহুর দিয়ে শুরু? সম্ভবত। তারপর মাসুদ রানা, ওয়েস্টার্ন, ক্যাডেট কলেজে গিয়ে লাইব্রেরিটা পেয়ে যেন স্বর্ন খনি পেলাম। গল্প-উপন্যাস সব দ্রুতই শেষ হয়ে গেল। উইনিভার্সিটি জীবনে সেটা আরো বহুমুখী হলো। রাজনীতি, সাহিত্য, বিশেষ করে বিপ্লবী সাহিত্য, প্রবন্ধ-নিবন্ধ, গল্প-উপন্যাস সব গিলেছি। বাবার কাছ থেকে মিথ্যে বলে টাকা নিয়ে শুধু বই কিনেছি। সেই আশির দশকেও কখনো মাসে দুই হাজার টাকার। সেই পড়ার অভ্যাসটা নষ্ট হলো সাংবাদিকতায় এসে। এখানে প্রয়োজনের পড়া। তবে শিগগিরই আবার পুরনো অভ্যাসে ফিরবো। পড়ার মতো মজা আর কিছুতেই হয়না! তখন হয়তো সিসিবিকে মিস করবো!! B-) B-) B-)
ধন্যবাদ আকাশ অনেক কিছু মনে করাইয়া দিলা।
"মানুষে বিশ্বাস হারানো পাপ"
😮 😮 😮
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
ধন্যবাদ সানা ভাই..... আসলেই পড়ার মত মজা আর কোন কিছুতেই হয় না।
কিন্তু সিসিবিকে মিস করার চিন্তা মাথায় আসলো কোথা থেকে 😮
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আরে এত তাড়াতাড়ি থামলেন কেন 🙁
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়
জটিল
চলুক আহসান :clap: :clap:
সংসারে প্রবল বৈরাগ্য!
ধন্যবাদ কাইয়ুম ভাই :shy:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
এই জীবনে যদি খালি গল্পের বই পড়তে হইত তয় কতই না মজা হইত।
এক্কেবারে মনের কথা বলছো
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আহসান, ভালো লাগল তোমার লেখাটা। ছোটবেলার কত কথা মনে পড়ে গেল।
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই।
ধন্যবাদ তানভীর ভাই
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
ইস, কতদিন সেবার বই পড়িনা।
পালটে দেবার স্বপ্ন আমার এখনও গেল না
কতদিন বাংলা গল্প-উপন্যাস পড়া হয় না! :dreamy: এইবার দেশে গিয়ে মনের খায়েস মিটিয়ে পড়ুম :grr:
There is no royal road to science, and only those who do not dread the fatiguing climb of its steep paths have a chance of gaining its luminous summits.- Karl Marx
আমি মাশাল্লাহ এখনো চালিয়ে যাচ্ছি। 😉
ভাই একদম মনের কথাটা বলছেন 🙁
বেশ কয়েকটা তিন গোয়েন্দা র পিডিএফ ফাইল নামিয়েছি। কয়েকটা মাসুদ রানা ও আছে.. মাঝে মাঝে ই চোখ বুলাই। পুরোনো দিনের কথা মনে আসে... সেবা প্রকাশনীর বই আমার কাছে কখনোই পুরোনো হবেনা।
এতদিন পরে কোথা থেকে এই লেখা খুঁজে বের করলে? 😮
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷