ভয়াল নেশা- ইয়াবা

ঈদানীং খবরের কাগজ খুললেই দেখা যায়, কোথাও না কোথাও ইয়াবাসহ কেউ না কেউ গ্রেপ্তার। ক’বছর আগেও এমন ছিল না। বর্তমানে এই নেশা ছড়িয়ে পরেছে ব্যাপক হারে। আর এই নেশা সেবনকারী কিন্তু সমাজের কোন বিশেষ পর্যায়ের নয়। এটার বিস্তৃতি সমাজের উপরস্তর থেকে একদম নীচুস্তর পর্যন্ত। এ যেন সবার-আপামর-

এই নেশার বিক্রেতারা কিন্তু এখন আর দূস্প্রাপ্য নয়। তাদেরকে কিন্তু এক্কেবারেই হাতের নাগালেই পাওয়া যায়। তারা কিন্তু আবার ঈদানীং পয়সার চিন্তাও করে না। পয়সা নেই তো কী আছে যদিবা শুধু গ্রহনের ইচ্ছা থাকে- ব্যাস। হয়ে গেল- পেয়ে গেল সেই নেশাগ্রহনকারী বিনে পয়সায়। এ-ই নাকি এখন চল।

এই নেশার মুল টার্গেট গ্রুপ কিন্তু স্কুলের (ইংলিশ মিডিয়াম) ছাত্র-ছাত্রীরা। যারা এখনও কিশোর-কিশোরী। যাদের কোমল মন এখনও কালিমা লিপ্ত নয়। আমরা যারা এই সময়ের বাবা-মা (অভিভাবক) তাদের যে কী অবস্থা শুধুমাত্র বিধাতায় জানেন !

আমার এ সকল লেখার কারণ- আমাদের অনেকেই বর্তমানে এই দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কাজ করছেন। আর আমরা যারা কিনা এখানকার সদস্য তারা কিনা এই দেশের বিশেষ কেউ। নিঃসন্দেহে আমরা- কেননা সারা দেশ থেকে আমরা ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হতে পারি মাত্র ছ’শ জন (বর্তমানে) আর আমদের সময় ছিল মাত্র তিন’শ জন। আর আমরা পেয়ে থাকি বিশেষ সুযোগ-সুবিধে। আমাদের প্রত্যেকের অবশ্যই তা এই সমাজকে বা দেশকে ফিরেয়ে দেবার থাকে। আর এই ফিরিয়ে দেবার অনুরনন থেকেই এখানে লেখা।

আমার ব্যক্তিগত অভিমত- আমাদের এই ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এমন একাধিক বিক্রয় প্রতিনিধির বাস। তাদেরকে যদি আমরা নিজ দায়িত্বে সনাক্তকরণে এগিয়ে আসি আর তা যদি আমরা আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত ভাই-বোনদের জানিয়ে দিয়ে তাদের (বিক্রয় প্রতিনিধি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কি দূরাশা ?

আমাদের সকলের অবগতির জন্যে- সত্যি সত্যি এখন সময় এসেছে আমাদের এক্ত্রীত হয়ে বর্তমানের সমাজের বিরাজমান এই ভয়াল পরিস্থিতি থেকে নিজেরদের সন্তানদের বাঁচানো অতীব প্রয়োজন। আর তা করার জন্যে এই মুহূর্তে আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত ভাই-বোনদের সক্রীয় সহযোগিতার প্রয়োজন। দেশের বিরাজমান আইন এগিয়ে এল কিনা তা নাদেখে আমাদের ভ্রাতৃত্ববোধের বন্ধনকেই এগিয়ে নিয়ে কি তা করা যায় না? এতে অনেকগুলো কাঁচাপ্রাণ বাঁচানো যেত।

আজ আমি এতোটাই চিন্তিত যে মনে হচ্ছে ঐ যে ছেলেটি আজ এই মরন নেশার ছোবলে কাতর সে আর কেউ নয়- সে তো আমারই স্বীয় সন্তান। আজ দেশের এই ক্রান্তিকালে আমাদের সবার কী এক্ত্রীত হয়ে কিছুই করার নাই?

আমার তো মনে হয়- বর্তমানে এই নেশা এমনভাবে ছড়িয়ে পরেছে তা অবশ্যই আমাদেরমত অভিভাবকদের আতংকিত করার মত। আমাদের আর একাকী এর প্রতিকার বা প্রতিবাদ জানানোর অবস্থান নেই এখন হতে হবে দলীয় প্রতিবাদ বা দলীয় প্রতিকার। আসুন সবাই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই আর এই ভয়াল নেশার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই।

আর আমাদের কারো সন্তান যেন ঐ পথে আর পা না বাড়ায়-আমরা সবাই মিলে তাকে প্রতিহত করবো।

৪,৫৮৬ বার দেখা হয়েছে

১৬ টি মন্তব্য : “ভয়াল নেশা- ইয়াবা”

  1. পারভেজ (৭৮-৮৪)

    "আমার ব্যক্তিগত অভিমত- আমাদের এই ঢাকা শহরের বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় এমন একাধিক বিক্রয় প্রতিনিধির বাস। তাদেরকে যদি আমরা নিজ দায়িত্বে সনাক্তকরণে এগিয়ে আসি আর তা যদি আমরা আমাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থায় কর্মরত ভাই-বোনদের জানিয়ে দিয়ে তাদের (বিক্রয় প্রতিনিধি) বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া কি দূরাশা ?"
    আমার মনে হয় না এভাবে সমস্যার কোনো সমাধান হবে।
    এজেন্সিটা এতই লাভজনক, একজন গেলে এজেন্ট হিসাবে আরেকজনকে পেতে কোনোই বেগ পেতে হবে না মূল সরবরাহকারীর জন্য।
    তাছাড়া এরকম একজন বিক্রেতাকে ছাড়িয়ে আনার লোকের যেমন অভাব হবে না, তাঁর নিজেরও যথেষ্ট অর্থনৈতিক সঙ্গতি হয়ে যাবে, এই পুলিশি ঝামেলা থেকে ছুটে আসার জন্য। (ইউ নৌ হাউ। মানি টকস...)
    পুরো সমস্যাটাকে ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মোকাবিলা করা জরুরী।

    ইয়াবা-সেবন কতটা ঝুঁকি পুর্ন, সে বিষয়ে সচেতনতা ও ইনফরমেশন শেয়ারিং দরকার।
    এটা কতটা হ্যাবিট ফর্মিং, জানা দরকার।
    সেবনোত্তর ঝুঁকি কতটা সেটা জানা দরকার।
    এসব যদি নিয়ন্ত্রনের মধ্যে থাকে, তাহলে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সাপেক্ষে ইয়াবা এমফিটামিন ট্যাবলেট আকারে বিশেষ বিশেষ ঔষধের দোকান থেকে সংগ্রহের ব্যবস্থা করা যেতে পারে।
    আমি যে দু'চার জনের কথা শুনেছি, ইয়াবাসেবি হিসাবে, তাদেরকে আমার জানা হিরুঞ্চি বা ডাইলখোরদের মত ক্ষতিকর মনে হয় নাই।
    এরা আসলে কতটা ক্ষতিকর, সে সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানানো ও সেই অনুযায়ী প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেয়েটা হবে শ্রেয়তরো পদক্ষেপ।

    যে কোনো নেশাই খারাপ, সেটা সবাই জানে তারপরেও তো মানুষ কিছু না কিছু নেশা করছে এই যেমন: সিগারেট, পান, গুল, চা, কফি, মদ, গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইত্যাদি।
    এরমধ্যে সিগারেট, পান, গুল চা, কফির নেশায় কোনোই বাঁধা নাই। উন্মুক্ত।
    মদের পারমিট থাকা সাপেক্ষে উন্মুক্ত।
    গাঁজা, ফেন্সিডিল, অন্যান্যর জন্য আইনতঃ কোনো ব্যবস্থা না থাকলেও করছে। আর করছে বলেই তা নিয়ে একটা আন্ডার ওয়ার্ল্ড বিজনেস গড়ে উঠেছে।

    নেশা তো আর বন্ধ করা যাবে না, তাই নেশাভিত্তিক আন্ডার-ওয়ার্ল্ড বিজনেস বন্ধে, এই চিন্তা ভাবনাটা শেয়ার করলাম।

    বাই দ্যা ওয়ে, এনার্জি ড্রিংকের ব্যাপারটা কি?
    ওগুলাও শুনেছি ইয়াবা জাতীয়ই এনার্জাইজিং ও কাইন্ড অফ হ্যাবিট ফর্মিং।
    ওগুলোর চেয়ে ইয়াবা কতটা ভয়ঙ্কর যে তা উন্মুক্ত করা যাবে না?
    জানার জন্য জিজ্ঞাসা করলাম।


    Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.

    জবাব দিন
  2. খায়রুল আহসান (৬৭-৭৩)

    সিসিবিতে সুস্বাগতম, জুলফিকার!
    খুব প্রয়োজনীয় ও সময়োপযোগী একটা লেখা দিয়ে এই ব্লগে তোমার যাত্রা শুরু করলে, এজন্য সাধুবাদ। এখানে তোমার যাত্রা দী্র্ঘ হোক, বিচরণ সুখকর, আনন্দময় ও ফলপ্রসূ হোক!
    যাদের পরিবারে নেশাগ্রস্ত সন্তান আছে, তারাই জানে এ বেদনা কতটা গভীর ও মারাত্মক!
    উপায়ের পথ হয়তো সবাই মিলে খুঁজে বের করা যাবে, তবে আমার টু সেন্ট হচ্ছে, সন্তানদের সাথে ডায়ালগ সর্বদা উন্মুক্ত রাখুন। কমিউনিকেশন চ্যানেল বাধাহীন রাখুন। সামাজিক বিষয়গুলোর উপরে খুব ছোট বয়স থেকেই আপোষহীন থাকুন, যেমনঃ ছোট বড় সকল আত্মীয়দের বাসায় যাওয়া আসা করতেই হবে, পরিবারের সবাই মিলে সপ্তাহে অন্ততঃ একটা দিন কোয়ালিটি টাইম পাস করতে হবে, ঘরে যেন অতি শাসন না থাকে, ঘরে যেন আনন্দ খুঁজে পেতে সন্তানদের কষ্ট না হয়।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।