টুকিটাকি

আজকে আই ইউ টি তে আমাদের ব্যাচের চারজন এসেছিল। রিসাত UK থেকে দেশে এসেছে একমাসের মত সময়ের জন্য। তাই আমাদের সাথে দেখা করতে এসেছিল আবার চলে যাবার আগে। তো বেশ একখান আড্ডা হয়ে গেল। ক্যাডেট কলেজের কয়েকজন একত্রিত হলে যা হয়। খালি কলেজের আলাপ। সেই আড্ডার সুত্র ধরে পুরান কিছু কাহিনী আজ আবার মনে পড়লো।

…….

নুরুল হক স্যার তখন সোহরাওয়ার্দী হাউসের হাউস মাস্টার। কার কাছ থেকে জানি খবর পেয়েছেন দোতলার পোর্চ বরাবর রুমে সিগারেট আছে।স্যার এই কথা শুনে সেই রুম বরাবর রওনা দিলেন সিগারেটের সন্ধানে। রুমে গিয়ে এদিক ওদিক খুঁজছেন আর ভাবছেন কোথায় সিগারেট লুকিয়ে রাখতে পারে। হঠাৎ তার ভেন্টিলেটর এর দিকে নজর গেল। বোধহয় ভাবলেন এটা সিগারেট লুকিয়ে রাখার জন্য একটা উপযুক্ত জায়গা। কিন্তু ওখানে তিনি উঠবেন কিভাবে? তার মাথায় হঠাত আইডিয়া এল। ঐ রুমেরই শফিকুল্লাহ ভাইকে ভারিক্কী গলায় ডেকে বললেন – এই শফিকুল্লাহ, চেয়ারের উপর উঠে ভেন্টিলেটর এ তাকিয়ে দেখোতো সিগারেট রাখা আছে কীনা।
শফিকুল্লাহ ভাই কথা মত চেয়ার টেনে উঠে গেলেন। ভেন্টিলেটর এর ভেতরে নিজেরই রাখা সিগারেটের প্যাকেটগুলা দেখে টেখে শফিকুল্লাহ ভাই দুইদিকে মাথা নেড়ে নিরীহ গলায় বললেন – নাই স্যার।

একথা শুনে নুরুল হক স্যার আশ্বস্ত হয়ে খুশি মনে রুম থেকে চলে গেলেন।

…….

নুরুল হক স্যারের আরেকটা বৈশিষ্ট্য ছিল তিনি খালি ভেস্ট আর শেভ এই দুইটা জিনিস খেয়াল করতেন। খুব সম্ভবত ক্যান্ডিডেটস টাইমে আমাদের মাকসুদ পার্সোনাল ড্রেস পড়ে থার্ড প্রেপের পর করিডোর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছিল আর সবাইকে দেখায় দেখায় মান্জা মারতেসিল। হঠাত করে নুরুল হক স্যারের সামনে পড়ে গেল ও। মাকসুদ খেয়ালই করেনি পিছন এর সিড়ি দিয়ে স্যার কখন দোতলায় উঠে এসেছেন । স্যারকে দেখে ও কাঁচুমাচু মুখে অপরাধী ভংগিতে দাঁড়িয়ে রইলো। স্যার নিশ্চয়ই এইবার সেইরকম একটা ঝাড়ি দিবে পার্সোনাল ড্রেস নিয়ে আসার জন্য। মাকসুদকে ঐ অবস্থায় কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষন টর্যবেক্ষন করে স্যার বললেন

– এই মাকসুদ, তুমি শেভ করোনি ক্যানো? দেখে তো মনে হচ্ছে ভেস্টও পড়োনি।

কি বলবে বুঝতে না পেরে মাকসুদ স্যারের দিকে বেক্কলের মত তাকিয়ে রইলো।

……

ফিজিক্স এর হাশিম উদ্দিন স্যার ক্লাসে এসেই বলতেন কেউ যেন ডেস্কের ওপর কোন বই না রাখে। আমাদের রিফাত সে কথা ভুলে গিয়েই হোক বা ইচ্ছাকৃতভাবেই হোক একদিন ক্লাসের সময় সে কথা মানেনি। ওর ডেস্কের ওপর বিরাট বইয়ের স্তুপ। মুখ ঢেকে যাবার মত অবস্থা। হঠাত ক্লাস বাদ দিয়ে স্যার গুটি গুটি পায়ে রিফাতের ডেস্কের দিকে এগিয়ে গেলেন। তারপর বইগুলো সব নিজের হাতের ওপর নিয়ে রিফাতকে স্বভাবসুলভ ধীর কন্ঠে বললেন

– চলো রিফাত , তোমাকে বাড়ি পৌঁছে দেই।

……..

তালুকদার স্যার ক্লাসে অাইনস্টাইনের E=mc^2 এর প্রতিপাদন পড়াচ্ছেন। অনেকক্ষণ ধরে যা পড়ালেন তা অনেকেরই মাথার উপর দিয়ে গেল। একবার বুঝানোর পরও আমাদের কাজী সেটা বুঝলোনা। স্যারকে ও বললো – স্যার, বুঝিনাই। তালুকদার স্যারকে যারা চেনেন তারা জানেন স্যার কেমন জোর জোরে কথা বলেন। কাজীর এ কথা শুনে স্যার যেন একটু অসহিষ্ণু হলেন।তারপর সেই চিরাচরিত জোরেলা গলায় টেনে টেনে বললেন

– E যদি এনার্জি হয়, m যদি ভর হয় আর c যদি আলোর বেগ হয় তাহলে E=mc^2 হবেই। এটা না বোঝার কি আছে?

অকাট্য যুক্তি। আমরাও উপর নিচে মাথা নাড়ি। আসলেই তো না বোঝার কিছু নাই।

১,৭০৮ বার দেখা হয়েছে

১১ টি মন্তব্য : “টুকিটাকি”

  1. আশিক (১৯৯৬-২০০২)

    প্রথম দুইটা ঘটনাই বেশি জোস! :))
    নুরুল হক স্যারের ডায়লগটা এখনো মনে পড়ে...... 😀 টেনে টেনে বলতেন, 'আলওওওওম, শেএএএএভ করনি কেনোওওওওও? বেশি সিনিয়য়য়য়য়র হয়ে গেছোওওওও!!!!' :))

    জবাব দিন
  2. নুরুল হক স্যার রিটায়ার করছেন একমাস হল।
    উনি এখন উত্তরায় থাকেন।
    এক্সক্যাডেট আর এক্স-ক্যাডেট কলেজ টিচার দের নিয়ে নাকি একটা ক্যাডেট কোচিং খুলতে চাচ্ছেন।

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।