[এখানকার বক্তব্যগুলো হায়দারের স্ত্রী প্রেরণা’র লেখা]
আমার ঠিক তারিখটা মনে নাই, জুন মাসের দিকেই হবে। মন খারাপ লাগলে প্রায় পিলখানার গেটের সামনে দিয়ে যাই এবং দাঁড়াই। মনে হয় এখানের মাটিতে তো তানভীর পাড়িয়েছে। ও আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে ঠিকই, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, আমার অপেক্ষার প্রহর বেড়ে যাচ্ছে। প্রতিদিনই ভাবি ও সামনে আসলে কি করবো। আমার সারাদিন ওর কথা ভাবতে ভীষণ ভালো লাগে। মাঝে মাঝে আমি আতরের গন্ধ পাই, কেন যেন মনে হয় ও আমার কাছেই এসেছে, শুধু আমি দেখতে পারছি না।
একদিন ইচ্ছা হলো, তাই আমার বেবীরা আর আমার আম্মুকে নিয়ে ধানমণ্ডি কেএফসি-তে গেলাম। বেবী আর আম্মুকে দোতলায় বসিয়ে আমি নিচে খাবার আনতে লাইনে দাঁড়িয়েছি। হঠাৎ পিছনে ১৭/১৮ বছরের একটা মেয়ে, একজন ২২/২৩ বছরের ছেলে পিলখানায় শহীদ অফিসারদের নিয়ে কমেন্ট করছে। বলছিল, ‘সব দুই নাম্বার গুলাকে আলুভর্তা করা হইছে। দুই নাম্বারের ফ্যামিলিগুলাকে সরকার টাকা-পয়সা দিয়ে সাহায্য করছে।’ তারপর ৪০/৪৫ বছরের এক মহিলা বলছেন যে তিনি ওদিকেই থাকেন। তার বাসায় ২ জন বিদ্রোহী বিডিআর সৈনিক ৩ দিন ছিল, তাদের পোসাকে রক্ত লাগা ছিল। তাদের কর্মকাণ্ডের গুণগান শুনছিলাম। এরপর যখন মহিলা বলা শুরু করলেন যে, ওরা ঠিকই করেছে, তখন আমি লাইন ছেড়ে ওদের কাছ থেকে পিছিয়ে গেলাম। ওদের সাথে কথা বলতে গেলাম। ২/৩ মিনিট পর ৩ জনই বললো, ‘আপনাকে তো টিভিতে দেখেছি। ভালোই তো! দুই নম্বরি পয়সা দিয়ে মজমস্তি করতে আসছে।’ আমি তখন নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারি নাই। ওদের সাথে প্রথমে তর্কাতর্কি হলো। একপর্যায়ে যখন আমি দোতলায় চলে যেতে চাইলাম, ওরা পিছন থেকে বললো, ‘দুই নাম্বার তো তাই কথায় পারলো না আমাদের সাথে। শালা বদমাইশগুলাকে আরো কষ্ট দিয়ে মারা উচিৎ ছিল।’ তখন আমি এসে মহিলার গালে ২ টা থাপ্পড় দিয়ে দিলাম। আমাকে এরপর আশেপাশের মানুষজন বললো, ‘মুরুব্বি মানুষ টুকটাক কথা এলোমেলো বলতেই পারে।’
তখন কাঁদতে কাঁদতে বাসায় চলে আসছি ঠিকই। কিন্তু এখন মাঝে মাঝে ঘৃণা লাগে, কতদিন এই জাতির সাথে আমার বাঁচতে হবে, আমাদের বাচ্চাকে বড় করতে হবে, ওরা এমন বাজে কথায় কি রিয়্যাক্ট করবে? আমাদের দেশের শহরের মানুষগুলো কি শিক্ষায় শিক্ষিত? নাকি ওই সব অশিক্ষিতদের দলের লোক শুধু গায়ে মিথ্যা জ্ঞানের লেবাস পড়ে থাকেন?
শুধু উনাদের কথাই বলবো কেন? আমাদের কিছু আর্মির ভাইয়েরা তো আছেন, তাদের ফ্যামিলিরা আছেন, যারা সামান্য সৌজন্য বোধটাও ভুলে গেছেন। নিজে থেকে সালাম দিলে উত্তর দেন না, বা চিনেও না চেনার ভান করে থাকেন, আর একজনের নাম উল্লেখ করতে গিয়েও আপাতত করলাম না; সেই ভাবীও আমাদের সাথেই কোয়ার্টার গার্ডে ছিলেন। ভাই বর্তমানে বেঁচে আছেন। সেই ভাবী আমাদের দেখলে বাঁকা ভাবে কথা বলেন; বলেন যে, ‘আপনারা তো খুব স্বাভাবিক হয়ে গেছেন। হাসাহাসি করেন, ভালো কাপড়-চোপড় পড়ছেন, ভালোই তো আছেন।’ এবং আরো কিছু কথা . . . মনে মনে উত্তর দেই, ‘আপনার হাজবেন্ডকে মেরে ফেলতে বলেন, তারপর আপনার ফিলিংস কি হয়, তখন আমাদের সাথে শেয়ার করেন। আমরা অবশ্যই সঙ্গ দিবো আপনাকে।’
আবার যখন কিছু ভাই-ভাবীকে দেখি যে, চিনেন না হয়তো, কাছে এসে সালাম দিয়ে আর কথা বলতে পারেন না, কেঁদে ফেলেন, চুপ থেকে বিদায় নিয়ে চলে যান। কোন কোন ভাই বলেন, ‘ভাবী মাফ করবেন, কিছু করতে পারি নি। তানভীর জুনিয়র হলেও ওকে স্যালুট করবো আজীবন।’ আমার প্রাপ্তি এখানেই।
.........
আপনারে আমি খুঁজিয়া বেড়াই
🙁 🙁
ভাবী কি বলবো? কিছু বলতে পারছিনা, শুধু দোয়া করি আল্লাহ তোমাদের অনেক অনেক ভালো রাখুক, বাচ্চাদের অনেক বড় করুক । ভালো থেকো।
.
আমি তবু বলি:
এখনো যে কটা দিন বেঁচে আছি সূর্যে সূর্যে চলি ..
.
আমার মতে এই অপরাধগুলোকেও আইনের আওতায় আনতে পারলে ভাল হত। কতটা স্যাডিস্ট হলে মানুষ এ ধরণের মন্তব্য করতে পারে?
পলিটিশিয়ানদের দোষ দিয়ে লাভ নেই- এ নেশন গেটস দা লীডারস হুম ইট ডিজার্ভস। আসলে আমরা যেহেতু খারাপ, আমাদের নেতারা যে খারাপ হবে, তা আর আশ্চর্য কি! 'মনুষ্যত্ববোধ' শব্দটা বাংলা ডিকশনারী থেকে তুলে দিলে খুব ভুল হবেনা- লেখাটা পড়ার পর ক্ষোভে এমনটাই মনে হচ্ছে।
ভাবী আপনি লড়ে যান...আমরা সিসিবির সবাই আছি আপনার সাথে।
ভাল থাকুন, ভাল থাকার চেষ্টা করুন। যেমন সাহস করে লিখতে পারলেন কথাগুলো, তেমনি যেন দৃঢ় চিত্তে বন্ধুর পথগুলো পাড়ি দিন। মঙ্গল হোক।
অমানুষ হবার প্রতিযোগিতায় লিপ্তদের কথায় কষ্ট পাবেন না, ভাবী...
সকল বাধা-বিপত্তি পেরিয়েই আপনাকে এগিয়ে যেতে হবে- নিজের জন্য, সন্তানদের জন্য...
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
দেশের শহরের মানুষগুলো কি শিক্ষায় শিক্ষিত? নাকি ওই সব অশিক্ষিতদের দলের লোক শুধু গায়ে মিথ্যা জ্ঞানের লেবাস পড়ে থাকেন?
ভাবী, আমার আব্বা বলেন যে, ডিগ্রি পাওয়া আর শিক্ষা এক জিনিস নয়। এদের হয়ত বড় বড় ডিগ্রি থাকতে পারে, কিন্তু এদের মনমানসিকতা মধ্যযুগীয় বর্বরদের চাইতেও অন্ধকারাচ্ছন্ন।
তোমার এই কথাটার সাথে আমি পুরো একমত। আমার মনে হয় না কোন বিদ্যালয় বা ডিগ্রি- তা সে যতো উচ্চপর্যায়েরই হোক না কেন- একজনের জীবনে শিক্ষার ৫০% শতাংশও পূরণ করতে পারে না।
“Happiness is when what you think, what you say, and what you do are in harmony.”
― Mahatma Gandhi
আঙ্কেল ঠিক-ই বলসেনঃ ডিগ্রী আর শিক্ষা এক না। ডিগ্রী পয়সা দিয়ে কেনা যায় অনেক সময়, কিন্তু সুশিক্ষা একেবারেই অর্জনের ব্যাপার।
আমি লজ্জিত...
.
কিছু মানুষ কখনই বদলায় না।
"Never think that you’re not supposed to be there. Cause you wouldn’t be there if you wasn’t supposed to be there."
- A Concerto Is a Conversation
ভাবি, কি বলবো... আমরা আসলেই খুব লজ্জিত। আপনি হার মানবেন না ভাবি, প্লিজ।
ভাবী, কি বলব আসলে জানা নেই... এরকম একটা ধিক্কার এর উত্তরে কি বলতে হয় তাও জানি না। ২৫ ফেব্রুয়ারির পরে একটা সময় ছিল যখন অনেক গলা উঁচু করে প্রতিবাদ করেছিলাম, এই অপমানের একটা প্রতিশোধ নেবার জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলাম, নিজের জাতিকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করা শুরু করেছিলাম। ক্যাডেট কলেজ ব্লগে ঢুকে শুধু সবার লেখা পড়তাম। সবার ক্রোধ দেখে বুঝতাম যে তাও কিছু মানুষ আছে যারা আমাদের মত হতভাগা আর্মি অফিসারদের বুকের কষ্টটা একই ভাবে অনুভব করছে। ভাবী বিশ্বাস করুন, আজ দশ মাস হতে চলছে, সেই প্রতিশোধস্পৃহাটা এখনো আছে, কষ্টটা এখনো বুকের ভেতরে চেপে থাকে, কিন্তু কিছু করতে পারিনা। আমরা খুব জুনিয়র অফিসার। একটা ইউনিট-এ লেফটেন্যান্ট, ক্যাপ্টেনরা একসাথে থাকে। আমরাও এখনো যখন ইউনিটে জুনিয়র অফিসাররা একসাথে হই, বিডিআর-এর ঘটনা নিয়ে কথা উঠে। সব দুঃখ-কষ্ট নিজেদের মধ্যে শেয়ার করি, আর দীর্ঘঃশ্বাস ফেলি। আবার যখন কোন অনুষ্ঠান হয়, প্রোগ্রাম হয়, সবার সাথে মিশে যাই। নিজেকেও এখন খুব ঘৃণা হয় মাঝে মাঝে, যখন ভাবি যে নিজের ভাইদের খুনের কোন বিচার এখনো পেলাম না, নিজে কিছু করতেও পারলাম না। মাফ চাই ভাবী... এছাড়া কিছুই বলতে পারবোনা।
ভাবী কি বলব কিছুই বুজতেছিনা। রাগে দুঃখে ঘৃনায়ে গা'টা রি রি করতেছে। ওদের কথা বইলে আর মুখ খারাপ করতে চাই না।
আপনি আপনার স্বামী হারিয়েছেন। আপনার দুঃখটা পুরোপুরি বোঝার ক্ষমতা হয়ত নেই আমাদের। কিন্তু আমরাও হারিয়েছি আমাদের ভাইকে। আমি খালি ব্লগে পড়লাম। তাতেই আমার মাথায় রক্ত উঠে গিয়েছে। আর আপনিতো সরাসরি শুনেছেন ওই অমানুষগুলার কাছ থেকে। আপনার মনের অবস্থা তখন কি হতে পারে, সেটা আমি কল্পনাও করতে পারছি না। কিন্তু ভাবী আপনাকে শক্ত হতে হবে। আপনার এবং আপনাদের সন্তানদের কথা চিন্তা করে হলেও অনেক শক্ত হতে হবে। আমরা সিসিবি পরিবার এবং ক্যাডেট পরিবার আছি আপনার সাথে।
মানুষ এতটা নিষ্ঠুর কিভাবে হয়?
চ্যারিটি বিগিনস এট হোম
সরি ভাবী... কোন কিছুই করতে পারি নাই... আজও রক্ত ক্ষরণ হয়। দুঃখ পাই ঐসব নির্বোধ মানুষ গুলোর কথা শুনলে... আমাদের ক্ষমা করবেন কাপুরুষোচিত কর্মকাণ্ডের জন্য। নিজেকে ধিক্কার দেই অপারগতার জন্য। আল্লাহ তায়ালা যেন স্যারকে বেহেশত দেন। বাবুদের জন্য রইল অনেক আদর ও দোয়া, যেন তারা অনেক বড় হয়।
মাঝে মাঝে খুব কষ্ট হয় এই কথা ভেবে, আমি কেন বাংলাদেশে জন্মগ্রহন করেছিলাম!!!!!!!!!!
লজ্জিত, মর্মাহত !!!!
...
.....................
এ লজ্জা আমাদের পুরা জাতির... এর মূল্য কোন একদিন খুব চড়া হয়ে যাবে জাতির জন্য... আজ আমি নির্বাক, আমি বলতে পারি না, কিছুই করতে পারি না... কিন্তু আমার বুকের আগুন ক্রমেই বেড়ে চলেছে... যেদিন সুযোগ আসবে সেদিন ছেড়ে দিব না ইনশাল্লাহ... দোয়া করবেন...
অমানুষগুলো কি কোন দিন মানুষ হবে???? আমাদের ক্ষমা করবেন ভাবী...।
ভাবী, মানুষের মধ্যে ভাল-খারাপ দুটোই আছে। আপনার অভিজ্ঞতাই তার প্রমাণ। দেখুন, আমি ভাল অংশটুকু উদ্ধৃত্তি আকারে এনেছি।
আপনার প্রতি অনুরোধ, ভাল অভিজ্ঞতার কথাগুলো মনে করে খারাপ গুলোকে ভুলে যাবেন। আর অমানুষদের আজেবাজে কথায় কান দিয়ে মানসিক চাপে পড়ে অসুস্থ্ হয়ে পড়বেন না। আপনাকে সুস্থ্ থাকতে হবে, অন্তঃত বাচ্চা দুটোর জন্য হলেও...
এই বাচ্চাদের মাঝেই আপনি খুঁজে পাবেন আপনার প্রাণপ্রিয় স্বামীকে, আর আমরা খুঁজে পাব আমাদের সবার প্রিয় হায়দার ভাই বা তানভীর স্যারকে।
শহীদ হায়দার ভাই (তানভীর স্যার) কে :salute: :salute: :salute:
বিডিআর-এর ঘটনার পর এরকম এক তিক্ত অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছিলাম। সেটা আর বর্ণনা করছি না। তবে ভাবী, আপনি সেই মহিলাকে অন্তত ২টা থাপ্পড় দিতে পেরেছেন। কিন্তু আমি সম্পর্কের কারনে এই কাজটুকুও করতে পারি নি। শুধু কথাগুলো কষ্ট করে শুনেছি। তবে কষ্টটা কতটুকু, সেটা মনে হয় আপনি কিছুটা বুঝতে পারছেন। ধৈর্য ধরুন ভাবী, আল্লাহ বলে কেউ একজন আছে।
..........................................
:bash: :bash: :bash:
😡 😡 😡
..........................................
Proud to be an ex-cadet..... once a cadet, always a cadet
দুই নাম্বার পয়সার বিষয়টা ওই মহিলার কাছ থেকে পরিষ্কার করতে ইচ্ছা করছে...
ওই মহিলাকে আলু ভর্তা করতে ইচ্ছা করছে খুব।
ইশ! আমি যদি থাকতাম ওখানে, তাহলে ওই মহিলাকে খুন করতাম।
............
Life is Mad.
ভাবী, আমার বাবা একটা কথা বলেন সবসময় 'শিক্ষিত হও, কিন্তু শিক্ষিত গরু না।' আমাদের দেশে শিক্ষিত গরুই বেশি। হ্যাঁ, আর যারা এগুলা বলে খোঁজ নিয়া দেখেন বর্ডারের হারাম টাকা খাওয়া বিডিআর পরিবারগুলার একটা থেকে আসা নরকিট সে। এই হত্যার একটা কারণ তো আপনি জানেনই, তা হলো ওই পশুগুলার মধ্যে কিছু আছে, যারা পিলখানাতে থাকার ফলে বহুত দিন হারাম খেতে পারেনি। অতএব যারা ওখানে ছিল ওই দিন কেএফসি-তে, তারা ওদেরই কেউ। তো আপনার ক্ষোভের কোনো কারণই নাই। কারণ ওখানে মানুষ ছিল না। এর চেয়ে বেশি বলার আর কিছু নাই আমার। কারণ আপনাদেরকে সান্তনা দেবার ভাষা এখনো জন্মেনি।
এক্স ক্যাডেট (আরসিসি), এ সান অফ এক্স ক্যাডেট (আরসিসি), এন্ড আর্মি অফিসার
🙁 🙁
সাব্বির
কোন পর্যায়ের Shameless হলে এই ধরনের কথা বলতে পারে ওই মহিলা!!
কোন পর্যায়ের ?? এরা পর্যায়ের ভেতর পড়ে নাকি আবার !!!
ঐ সময় কেএফসি-তে থাকলে আমিও মনে হয়না নিজেকে সামলে রাখতে পারতাম
ভাবী,আপনি মনোবল হারাবেন না,প্লিজ,আল্লাহ আপনার সহায় হউন