আমার ঘুমবেলা -১

এই ব্লগ এ লিখার কথা ভাবলেই কলেজের কত কথা মনে হয় লিখি…। কিন্তু আটকে যাই শুধু সেন্সরশিপ এর কথা ভেবে…কি করব , বয়সটাই এমন ছিল। ভবিষ্যতে কেউ অগ্রগামী হবে এই আশায় বসে আছি।

কলেজের যে আবেগটা এখনো ধরে রাখতে পেরেছি তা হল ঘুমের প্রতি সীমাহীন ভালবাসা । আহাঃ ক্লাস সেভেন এ তাকে কতই যে মিস করতাম, ভাবলে এখনো বুক থেকে একদলা ধোয়া বের হয় । তবে এটা ঠিক অত বাধা বিপত্তির মধ্যেও তার প্রতি দায়িত্ব পালনে খুব কমই উদাসীন ছিলাম । সত্যি বলতে আমাদের খুব কম জনই এর ব্যাতিক্রম ছিল । সে যে ছিল আমাদের প্রথম প্রেম, শরতের প্রথম শিশিরের মত। বৃহঃস্পতি বার রুম লিডার এর ফল ইন শেষে যখন তাকে একান্তে পেতাম, ঠিক রবি ঠাকুরের হৈমন্তির কথা মনে হত ” আমি পাইলাম, তাকে একান্তই আমার করিয়া পাইলাম” । লোক মুখে শুনেছি অই প্রেম ভালবাসা প্রথমে মিষ্টি, পরে আস্তে আস্তে পানসে হয়ে যায়। কই, আমাদের এই প্রেমতো রীতিমত নব নব দিগন্ত উন্মচন করে তার শুভ্র রুপ প্রদর্শন করত।

কথায় বলে শ্রী কৃষ্ণের প্রেম নাকি চাতক পাখির যন্ত্রনা । মনে আছে , যখন আমরা ক্লাস টুয়েলভ এ পাঁচ সদস্য রুম এর চার জন রাত ২ টা পর্যন্ত পড়ে মাত্র ঘুমের প্রস্তুতি নিতাম ঠিক তখনি আমাদের অবশিষ্ট রাবন, চুন্নু (আমাদের দেয়া আদরের নাম) এক ঘুম দিয়ে পড়ার বিসমিল্লাহ করত। রাগে পাঁচ জনই দশ মিনিট চুপ থেকে অবশেষে বিধির বিধান মেনে নিয়ে ওপাশ ফিরতাম ( কি করব, আমরা সবাই মিলে গত পাঁচ বছরেও এই চিজ সাইজ করতে পারি নাই, সব পালেই এমন দুই একটা… থাকে এই ভেবে আর কোনো উৎসাহ পেতাম না)।

তবে সবচেয়ে দুঃসহ সময় ছিল যখন ডে প্রেপ এর সিজন শুরু হত। বিছানায় অন্তরঙ্গ মুহুর্ত যখন অতি উচ্চ মার্গে ঠিক তখনি কেন যেন ম্যাডাম এর কর্কশ কন্ঠ ” এই তৌহিদ এখনো ওঠনি…যাও যাও দেরি হয়ে যাচ্ছে…” মুখ দিয়ে অজান্তেই কিছু শব্দ (আস্তে) ফুস করে বের হত। কোন মত ড্রেস পরে ক্যাডেট কলেজ এর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করতে করতে হাটতাম। তবে ওই দলে আমি একা ছিলাম্ না, সবাই তো বটেই এমনকি প্রায়ই আমাদের ফার্স্ট বয় , এভার মেইডেন ( সে নাকি কখনও হাত দিয়ে ব্যাস্ত হয় নি, তাই সবাই…) কেউ বিড় বিড় করতে দেখতাম। হুম সব সুখ কি আর সবসময় ছাড়া যায়।

তবে ম্যাডাম এর অই কর্কশ কন্ঠ যে তারই পুর্বেকার সেন্সরড ভারসন তা আমরা কয়েকদিন পর জানতে পারি। জনস্রুতি আছে আগে নাকি তিনি কম্বল মুড়ি দিয়ে ঘুমন্ত ক্যাডেট এর কম্বল ধরেই টান দিয়ে ঘুম ভাঙ্গাতেন। তার এহেন অত্যাচার চরমে উত্তির্ণ হওয়ায় আমাদের সিনিয়র এক ভাই ( তিনি তার শারিরিক অবস্থার জন্য কালাপাহার নামে পরিচিত ছিলেন) তার চরম রুপ ধারন করেন। কোনো একদিন যখন ম্যাডাম যখন তার জীবনের সর্ব শেষ কম্বল ধরে টান দেন তখন নাকি আমাদের প্রিয় কালাপাহার ভাই সেইখানে শুধু তার ছাই রঙ্গা অন্তর্বাস পরে চোখ বন্ধ করে দাঁত বের করে শুয়ে ছিলেন ( পরে শুনেছি ঐ দৃশ্য নাকি তার রুম মেটরাও সহজে হজম করতে পারত না)। জয়তু প্রিয় কালাপাহার ভাই…

১,৫৩৩ বার দেখা হয়েছে

১৪ টি মন্তব্য : “আমার ঘুমবেলা -১”

  1. রেজওয়ান (৯৯-০৫)

    আহ হা রে আমি এখনও ঘুমাইতে পারিনা ঠিক মত :((
    ভাবছিলাম কলেজ দিয়া বাইরাইয়া ঘুম থেকে আর কেউ আমাকে আলাদা করতে পারবে না ...
    কিন্তু হায় কপাল :bash:
    কই আইলাম !!!!

    জবাব দিন

মওন্তব্য করুন : মঞ্জুর

জবাব দিতে না চাইলে এখানে ক্লিক করুন।

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।