বাবার সাথে আমার প্রায় সবসময় ই একটা (প্রায়) কোল্ড ওয়ার লেগে থাকে। চিন্তা ভাবনায় ও মাঝে মাঝেই অমিল ধরা পরে। খুব একটা গভীরের কথা মন খুলে বলা হয় না বাবা কে যত টা মা কে বলা হয়। অনেক কথা বাবার কাছে পৌছতে মাঝখানে একটা মাধ্যম লাগে, মাধ্যম টা মা। জীবনে খুব একটা সন্তুষ্ট করতে পারি নি বাবা কে। আমার সময়ে SSC তে A+ পাওয়ার পর বাবা শুধু বলেছিল “ভাল করেছ” , HSC তে পাওয়ার পর শুধু জিজ্ঞাসা করেছিল গোল্ডেন আসছে? আমি বলেছিলাম এখন ও পূর্ন রেজাল্ট বেড় হয় নি, বাবা বলেছিল, ও। এতটুকু ই। পরে আর জানতে চান নি গল্ডেন আসলে পেয়েছিলাম কি না। এমন কি ২ পরীক্ষাতেই পরে যখন জানতে পারেন বোর্ড এ পজিশন এসেছে, তখন ও প্রশংসা পাই নি। অন্তত আমার সামনে কখন পাই নি বা শুনি নি। অনেক ক্ষোভ আছে বাবার উপরে, অনেক। কিছু ঝেড়েছি সরাসরি কিছু বলা হয়নি কখনো। সব কিছু হয়ত প্রকাশ করতে ইচ্ছুক ও না আমি।
তবুও কখনো মনে হয় নি বাবা আমাকে ভালবাসেন না। বাবাকে বিশেষ দিন গুলোতে ও উইশ করা হয় না, এসব ব্যাপারে খুব একটা মাথা ঘামানো হয় না ঘটা করে আমাদের পরিবারে। তবুও গত নববর্ষে যখন বাবা কে উইশ করতে ফোন দিলাম বাবা আমাকে আগে উইশ করতে তারাহুরো করে ” শুভ নববর্ষ” বলতে গিয়ে উত্তেজনায় বলে ফেললেন “শুভ জন্মদিন” ভুল বুঝতে পেরে হেসে দিলেন। জন্মদিন আমাদের পরিবারে ওইভাবে পালন করা হয় না। আই মিন গিফট এর ব্যাপার ট্যাপার ওভাবে নেই। তবুও জন্মদিনে বাড়িতে থাকলে সারাদিনের ব্যাবসার ধকল শেষ করে সন্ধার পর বাবা কেক, ও অনান্যা খাবার দাবার ইত্যাদি ইত্যাদি আনতে ভুল করেন না, যদিও এক্ষেত্রে মা এর হেল্প ছাড়া পেরে উঠেন না। শুধু ছেলে মেয়ের ই মন খারাপ থাকে না, বাবা মায়ের ও থাকে। হয়তো সব সময় না তবুও আমার বাবা আমার সাথে তার সমস্যা, মন খারাপ বা কষ্টের কথা প্রকাশ করেন। কতটা সহযোগিতা করতে পারি জানিনা তবুও পাশে থাকার চেস্টা করি। অনেক কিছু করা উচিত জেনে ও নিজের অপারগতা ও খামখেয়ালিপনা এর জন্য করতে পারি না বা করি না। সবচেয়ে বড় কথা, জীবনে অনেক ভুল করেছি, অনেক বিপদে পড়েছি। চতুর্থ শ্রেনিতে থাকাকালিন সময়ে ক্লাসমেট এর মাথা ফাটিয়ে দিয়ে রাতে বাড়ি ফিরিনি বাবার ভয়ে, কিন্তু লোক পাঠিয়ে আমাকে বাড়িতে নিয়ে গিয়ে কিচ্ছু বলে নি বাবা। সাধারন গনিতে দুর্বল রেজাল্ট করায় যখন আমাকে সাইন্স থেকে আর্টস এ পড়তে হল কলেজের হস্তক্ষেপে তখন ও বাবা রাগ করে নি, বলেছেন আমি চাইলে ক্যাডেট কলেজ থেকে বের করে নিয়ে অন্য কোথাও ভর্তি করিয়ে দিবেন। ইন্ডিয়া তে আমার ফলস নাগরিক পরিচয়পত্র ও রেডি হয়ে গেছিল, স্কুলের ফর্ম ও রেডি ছিল। কলেজ ছেড়ে যাই নি বন্ধুদের টানে। এই সব ব্যাপারে বাবা আমার পাশে ছিল। যত বিপদে ই পিছলে পড়েছি শেষমেশ বাবার ও মায়ের হাত ই পেয়েছি ধরে উঠে দাঁড়াতে।
বিশ্ব বাবা দিবসে সবাই কত উইশ করে, ফেসবুকে পোষ্ট দেয়। আমার কখোন উইশ করা হয় নি, হয়তো ওভাবে উইশ করা ও হবে না, তবুও বাবা কে বিন্দুমাত্র কম ভালবাসি না আমি।
ভাল্লাগছে সুশান্ত :clap: :clap: :clap:
Truth is beauty, beauty is truth.
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা রাখবেন যেন ভাল কিছু করে বাবার মুখে শুনতে পারি " ভাল লেগেছে " 🙂
আমারও অনেকটা সেইম অবস্থা। সুন্দর লিখছেন ভাইয়া।
• জ্ঞান যেখানে সীমাবদ্ধ, বুদ্ধি সেখানে আড়ষ্ট, মুক্তি সেখানে অসম্ভব - শিখা (মুসলিম সাহিত্য সমাজ) •
অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
অনেক ভালো লিখেছেন ভাই। অনেক কিছু মিলে গেল আমার সাথে 🙁 তাই মনে হয় লেখাটার সাথে ভালোভাবে রিলেট করতে পারলাম।
কিছু কিছু ব্যাপার আমার জানা বেশ কিছু ক্যাডেটের সাথে পরোক্ষভাবে হলে ও মিলে যায়। ধন্যবাদ। 🙂
এখানে অনেকে আছেন যাঁদের ছেলেমেয়েই হয়তো তোমার বয়সের আশেপাশে।
আমার সন্তানটিও বড় হয়ে উঠছে। তোমার নবীনবয়সের ভাবনাটুকু আমাকে ছুঁয়ে গেলো নানা কারণেই। বাবার সঙ্গে বন্ধুত্ব হওয়া আমাদের সময়ে একটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার ছিলো। একটা দুরতিক্রম্য দূরত্বের দু'পাড়ে দাঁড়িয়ে দুটো মানুষের একাকী কষ্ট পাওয়া -- কতশত কথা অনুক্তই থেকে গেলো।
এই যে ব্লগে ফেসবুকে বাবা-মা'র প্রতি ভালোবাসা জানাচ্ছো তোমরা এটা একটা বিরাট ব্যাপার। বাবা-মায়ের ভালোবাসায় আরো সিক্ত হও --- আরো বড় হও। সকল বাবা-মায়ের জন্যে প্রণাম।
সাইকোলজি এর কাউন্সিলিং থেরাপি এর একটা থেরাপি আছে এম্পটি চেয়ার থেরাপি, জানেন হয় তো। থেরাপি এর প্রয়োজন হচ্ছে না যদিও, কিন্তু মাঝে মাঝে আমার ব্লগ এ লেখা এমন কি ফেসবুকে পোষ্ট করা ওই থেরাপি এর কৌশলের মত মনে হয়। সরাসরি বলতে না পারা কথা গুলো প্রকাশ করা।
অসংখ্য ধন্যবাদ 🙂
শূন্য চেয়ার থেরাপির কথা জানতামনা। ইন্টারেস্টিং।
বাবা ডাকার সুযোগ হারিয়েছি ২৪ বছর আগেই। ১৬-১৭ বছর আগে নতুন সুযোগ সৃষ্টি করতে ছোট কাকা এলেন সৎ বাবা হয়ে। তারপরে উনি শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসার মত দুটো ত্যাগ স্বীকার করলেন যেটার একটি মূলত আমার বাবা ডাকাকে আবার স্থগিত করে দিলঃ উনি বললেন, "তোমাদের বাবা, বাবার জায়গাতেই থাকুক, আমি তোমাদের ছোট কাকা আমাকে কাকাই ডাক।" সেই থেকে অভ্যাস। আপাতত বিবাহের অপেক্ষায় আছি, অন্তত শ্বশুড় আব্বাকে ছাড় দেয়া যাবে না! 🙂
লেখাটা খুব ভাল লাগলো!
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
:teacup:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
🙂 🙂 (সম্পাদিত)
(সম্পাদিত)
ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা। 🙂 🙂
:hatsoff:
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
🙂 🙂 🙂 🙂
:clap: :clap: :clap:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
ধন্যবাদ রাজীব ভাই 🙂 🙂
ভাইয়া লেখাটা কোনো একদিন আঙ্কেলকে পড়তে দিয়েন 🙂
ইহা খুব ভাল কোন আইডিয়া হবে না মে বি :p :p
ধন্যবাদ অ্যাপ্রিসিয়েট করার জন্য 🙂
চমৎকার লিখেছ। :clap: :clap: :clap:
মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য
ধন্যবাদ ভাইয়া 🙂 🙂
বাবার রোলটা বড়ই কঠিন। সন্তানের সাথে বন্ধুত্বে জড়াতেও ইচ্ছা হয় আবার বাবাগিরিটাও ছাড়তে ইচ্ছা করে না। বিরাট শৃংখলা......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
🙂 🙂