অনাহুত এক অনুভুতি

নিশুতি রাতে বসে আছি। আমার নিশুতি শব্দ টা একদম ই ভাল লাগেনা। কেমন যেন লাগে। আসলে প্রতিটা মানুষের ই কিছু কিছু ব্যাপার থাকে যা সে সহ্য করতে পারে না। আমরা বন্ধুরা যাকে বলি গা গুলানো। আহ আসল কথায় আসি, আমি তো এমনিতে এই নিশুতি রাতে মশাদের সাথে অনাহুত রক্তদান কর্মসূচি করতে বসিনি।

একটা ভাঙ্গা ঘরে বসে আছি। চারপাশে জঙ্গল আর ঝি ঝি পোকার ডাক। একটার পর একটা এসএমএস এর শব্দ আসছে। আমি জানি কার এসএমএস ওগুলো। এমনিতে আমি এসএমএস পেতে খুব পছন্দ করি। ইনফ্যাক্ট আমার খুবই ভাল লাগে । কিন্তু আজ প্রতিক্ষণে প্রতিটা এসএমএস আমাকে দ্বিধান্বিত করছে। ভালবাসা কিনা ভাললাগা জানিনা, শুধু জানি এমন অনুভুতিতে আমি কখনই পড়তে চাইনি।

মুক্তির সাথে এর আগে আমার দুই কি তিন বার দেখা হয়েছিল। কথা বলার ব্যাপারটা বলতে গেলে, এই পার্ট টা শুধু ও ই পুরন করেছিল। কেননা মেয়েদের সাথে কথা বলার লাজুক ভাবটা তখন তুখোড় অভিনেতার মত (মানে আমার বন্ধুরা বলে আরকি) গাম্ভীর্যের মেঘে লুকিয়েছিলাম। আমার বন্ধুদের বান্ধবী, বলতে গেলে আমার তো কিছু নয় বইকি।

শহিদুল্লাহ বলেছিল, “চল ভাল লাগবে”।

না এই কথা শুনে যাইনি। গিয়েছিলাম কোন নারীর সাথে কথা বলা, মেলামেশা বা কাছে থেকে দেখার অজানা রহস্য উদ্ঘাটন করতে।

কিন্তু গিয়ে লাভ বলতে যা হয়েছিল তা হল আমি জেনেছিলাম বিপরীত লিঙ্গের সাথে কথা বলার পার্ট টিতে আমি একেবারে গোবেচারা।

“চুপ করে বসে আছ কেন? কিছু বল”

“কই” এই ছোট্ট শব্দ ছাড়া আমার মুখ থেকে কিছুই না বের হওয়ার লজ্জা আমার বহুদিন ছিল।

নিজেকে ভেবেছিলাম একটা গাধা। কিন্তু পড়ে জেনেছিলাম এটা নিয়ে মুক্তির মন্তব্য বা উপলব্ধি ছিল যে আমি  নাকি খুব ভাব মারি। এটা শুনে কারো ভাল লাগে না বলেই জানি। কিন্তু আমার ভাল লেগেছিল। অন্তত এটা তো বোঝেনি যে আমি লজ্জা পেয়েছিলাম।

এর পর চার বছর পেরিয়ে গিয়েছে। মাঝে ওর সাথে দেখা করার ঘটনা নিয়ে আর কিছু বলার নেই কারণ পরবর্তী পরষ্পর দর্শনগুলোতে আমি ছিলাম নিতান্তই দর্শক। শুধু ফেসবুকে ইন্টারনেটের বিশাল ওয়েব নেটওয়ার্ক এর ধুম্রজালে মুখ ঢেকে খুব বাহাদুরি ফলিয়েছিলাম বার কয়েক। বলেছিলাম ওকে যতবার দেখি আগের চাইতে বেশি সুন্দর মনে হয় আমার।

চার বছর। নিজেকে টিনেজার বলার অধিকার আগেই হারিয়েছি। নারী আজ আমার কাছে মোটেই লজ্জা পাবার ক্ষেত্র নয়। বহু ঘাটের জল খেয়েছি বলতে অবশ্য লজ্জা হচ্ছে। ঢাকায় পড়াশোনায় ব্যস্ত আমি। কেননা বেশিরভাগ সময় পড়াশোনার বিপরীত কাজে নিজেকে নিয়োজিত করে রেখেছিলাম এতদিন, আজ পড়াশোনার পাঠ চুকিয়ে দেয়ালে পিঠ। চাকরি করতে গিয়ে সব কিছু নতুন করে শিখছি।

আমার জন্মদিন ছিল পরদিন। কিন্তু অজপাড়া গাঁ থেকে আমার সাথে আশা আজীবনের বন্ধুরা সবাই আবার গেঁয়ো হতে গিয়েছিল। আমার সাথে নিজ সাত রাজার ধন এই জীবন প্রাপ্তির দিনটিতে সাথে থাকার কেউ ছিল না। ফেসবুকে দেখলাম মুক্তি অনলাইন। আহমেদ এর কাছে শুনেছিলাম সে ঢাকাতেই থাকে। কি মনে করে পরদিন দেখা করতে চেয়েছিলাম। আশা করিনি, সত্যি বলছি আশা করিনি যে সে রাজি হবে, বললে বলতে হয় ফ্যান্টাসি দেখেছিলাম; আর তাইই হল।

আমার সব চিন্তা গুলোকে একত্রিত করে একটা ড্রেস পড়েছিলাম। বাইকটা নিয়ে পথে যেতে যেতেও অনেকবার ভেবেছিলাম না করে দেই। যাব না। এমন স্মার্ট, সুন্দরি একটা মেয়ের সাথে দেখা করব, যার সাথে আমার সামনাসামনি কথা বলার নির্লজ্জ বোধটা কখন আসেনি; তার সাথে! তাও আবার একা একা! লাইক এ ডেট! আমি কিভাবে survive করব?

কিন্তু দেখা হওয়ার কিছুক্ষন এর মধ্যেই সাচ্ছন্দ হয়ে গিয়েছিলাম। কিভাবে জানিনা হয়ত অভিজ্ঞতা অনেক বেড়েছে এই চার বছর বা যাইই হোক। ওর সৌন্দর্য, স্মার্টনেস এর ছটায় মুখ না লুকিয়ে সেদিন উপভোগ করেছিলাম।

দেখা করতেই মুক্তি যখন বলেছিল যে সে কেন!

তখন বলেছিলাম, “ দেখ আমার জন্মদিন, পুরাতন ফ্রেন্ড দের সাথে দিন টা পার করতে চাই কিন্তু আর কেও যে ঢাকায় উপস্থিত নেই”। কি বুঝেছিল জানিনা কিছু বলেনি আর এ নিয়ে। কিন্তু আমি অবশ্য আজ পর্যন্ত বের করতে পারিনি ও কবে আমার ফ্রেন্ড ছিল।

 

সেই শুরু। মানে আমি ভেবেছিলাম আরকি। মানে আমার মনের মাঝে। বাস্তবতায় নয়। আমার সেই সাচ্ছন্দ্যতাকে পাওয়ার আসায় আরও কয়েকবার আহ্বান করতে আরও বেশ কয়েকবার দেখা করেছিলাম। একা একাই। আমি পেয়েছিলাম ভাল একটা বান্ধবী(বন্ধু মহলে আমরা বলি ফ্রেন্ডী)। বন্ধুরা অবশ্য বলছিল মানে খেপাচ্ছিল যে আমি ওর প্রেমে পড়েছি। কিন্তু আমার মনে হয়েছিল মোটেই না। কখন ইমোশনাল কিছু তো অনুভব করিনি!  JUST   আন্ডারস্ট্যান্ডিং-টা ভাল আমাদের। ও আমার ভাল ফ্রেন্ড।

সেটাই তো দুজন দুজনের বিয়ে করা নিয়েও তো আলোচনা করেছি। ও আমাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করতে বলল। আমার বিয়ে খাবে। কই আমার তো কিছু মনে হয়েছিল না! খারাপ লাগেনি।

বরং বলেছিলাম, “মেয়ে মানুষ তুই আগে কর।“

কিন্তু সব ঘোলাটে হয়ে গেল আগের দিন। আমি বাড়ি গিয়েছিলাম এক মাসের জন্য। আজ আসলাম।

ও কল করে বলেছিল, “সুখবর আছে,”

“কি?”

“বলব। কিন্তু কথা দে খেপাবিনা”

“ওকে রে বাবা, কি এমন জিনিস আমার তাই খেপাব তোকে”

“আমার এংগেজমেন্ট হল একটু আগে; পরশু বিয়ে। সারপ্রাইজ দিলাম তোকে, হিহি………। আসবি কিন্তু। তুই তো কাল ফিরবি ঢাকায়! ডোন্ট মিস”

আমার মধ্যে কি হয়েছিল জানিনা। নিতান্তই কাপুরুষচিত ভাবে ফোন কেটে দিয়েছিলাম। এর পর একটা কল ও ধরিনি ওর। দুই দিনে গত দেড় বছরের না জানা সত্যকে জেনেছি। ওকে ভালবাসি। বন্ধুত্বের অলীক ভাবনার মুখোশটা যে ভালবাসাকে লুকিয়ে রেখেছিল তা আজ মুহূর্তে মুহূর্তে উপলব্ধি করছি। যা প্রকাশের সময় আমি হারিয়েছি।

কল না ধরাতে ও এসএমএস করা শুরু করেছে। ও হয়ত কিছু আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু আমার মুখ থেকে কিচ্ছু বের হচ্ছে না ওকে বলার জন্য। কোন লেখা আসছে না এসএমএস এর জন্য। আমার অনুভুতির সত্যকে প্রকাশের ক্ষেত্রে আমি সেই প্রথম দেখার লাজুক ছেলেটিই যেন রয়ে গেছি………..।

২ টি মন্তব্য : “অনাহুত এক অনুভুতি”

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।