থার্ড বেঙ্গলের প্রতিরোধ যুদ্ধ
ব্রিগেড কমান্ডারের ডাক পেলে বরাবরই মনটা চনমনে হয়ে ওঠে লেফটন্যান্ট কর্নেল ফজলে করিমের। কমান্ডারের অফিসে ঢুকে সব সময় অনার বোর্ডের দিকে নজর চলে যায়। ২৩ ব্রিগেডে এখন পর্যন্ত যারা ব্রিগেড কমান্ডার হয়েছেন সবার নাম সেখানে জ্বল জ্বল করছে।করিম স্বপ্ন দেখেন একদিন তাঁর নামটাও থাকবে ওখানে। তবে অনার বোর্ডের ডিজাইনটা পছন্দ হয়না তাঁর। ব্রিগেড কমান্ডার হলে অনার বোর্ডটা পাল্টাবেন। কমান্ডারের টেবিলটাও একটু ঘুরাতে হবে। ব্রিগেডিয়ার আব্দুল্লাহ খান মালিকের টেবিলটা একেবারে ঘরের মাঝ বরাবর। দরজা খুললেই কমান্ডারের মুখ দেখা যায়। এ বিষয়টাও ভালো লাগেনা তাঁর। তিনি কমান্ডার হলে টেবিল টা ঘুরিয়ে একপাশে নিয়ে যাবেন। আন্ডারকমান্ডদের সাথে একটা পরোক্ষ দূরত্ব তাতে মেইন্টেন করা যায়। দর্শণার্থীকে কমান্ডারের টেবিলের এপার থেকে তিনি পুরোই দেখতে পারবেন, তাঁকে দেখতে গেলে ঘাড় বাঁকাতে হবে। ব্রিগেডিয়ার মালিকের কথায় বাস্তবে ফিরে এলেন তিনি।
– তুমি অধিনায়ক থাকতে এই ঘুঘু এত সাহস পায় কি ভাবে?
চট করে উত্তর দিতে পারলেন না করিম। অন্য সময় উত্তর জানা থাকলেও তিনি সরাসরি উত্তরটা দিতে চান না। কমান্ডাররা অনেক সময় অধীনস্থদের না জানাও পছন্দ করেন।লেফটেন্যান্ট রফিক আহমেদ সরকার আজ তাঁকে সত্যিই বিপদে ফেলেছে, তিনি কমান্ডারের প্রশ্নের উত্তরটা দিতে পারছেনা। জুম্মায় জুম্মায় যে রফিকের চাকরি একবছরও হয়নি, ফিল্ড মেসে চা খাওয়ার সময়ও যে সিও’র সাথে কথা বলতে ভয় পায়, সে পাকিস্তান আর্মির কনভয় এম্বুশ করে কিভাবে? তিনি মনে মনে ভাবছিলেন, আসলে নিজামের সাথে মোখলেসই ঠিক ছিল, একটু ঢিলা ঢালা, ঘোড়া ঘাটে রফিককে পাঠানো উচিত হয়নি। তাঁর ভাবনা চিন্তার মধ্যে আবার কমান্ডারের একটা প্রশ্ন ঢুকে পড়লো, বিলিয়ার্ড টেবিলে সশব্দ রেড পট যেমন হয় তেমন। একেবারে টান টান। ঠক্কাস করে শব্দ হবার মত, ডিঞ্চিউ ডেপোজিট অল য়োর রেডিও সেট টু ব্রিগেড হেডকোয়ার্টার? ২৩ ফিল্ডের কনভয় যে পলাশবাড়ি দিয়ে যাবে ওরা জানলো কি করে?
করিম নোট বই দেখে বললেন, জমা তো দিয়েছি স্যার, ১৭ মার্চ অল দ্যা রেডিওস এন্ড দ্যা সাপোর্টিং ওয়েপন্স।
– থার্টিন ক্যাজুয়াল্টিজ, নট এ ম্যাটার অব জোক, মালিক বললেন, নিজাম ছাড়া মালাউন কোম্পানি কমান্ডার আর কয়জন আছে।
স্যার নিজাম তো মালাউন না, প্রায় করিমের মুখে এসে যাচ্ছিল, তিনি সেটাকে পেটে চালান করে বললেন, স্যার, চার্লি কোম্পানি কমান্ডার ক্যাপ্টেন আশরাফ।
২১ শে ফেব্রুয়ারির পর থেকে কমান্ডার বাঙালি অফিসারদের মালাউন বলা শুরু করেছেন। তখন থেকেই ২৩ ফিল্ডকে দিয়ে থার্ড বেঙ্গলের উপর নজরদারি করাচ্ছেন। ২৩ ফিল্ডের সিও লেফটেন্যান্ট কর্নেল শফিকে তাতে মহাখুশি মনে হচ্ছে। তিনি মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে থার্ড বেঙ্গলের চারদিদিকে ট্রেঞ্চ খোড়ানো শুরু করেছিলেন। থার্ড বেঙ্গলের সৈনিকদের সেটা পছন্দ হয়নি। সুবেদার মেজরের কাছে খবর পেয়ে শফিকে বলে সেটা তিনি বন্ধ করিয়েছেন। করিমের সমস্যাটা সিনিয়াররা আমলে নিচ্ছেন না। করিম সে রকম খোল্লাম খুল্লা বাঙালি বিদ্বেষ দেখাতে পারছেন না। তাঁকে চলতে হচ্ছে দড়ির উপর দিয়ে। তাঁর ইউনিটের অফিসার সৈনিকদের মধ্যে বেশির ভাগই বাঙালি। চুড়ান্ত কিছু করার আগ পর্যন্ত, তাদের কাছে আদর্শ পাকিস্তানি হয়ে থাকতে হবে, দেখাতে হবে তার চোখে সবাই সমান। সৈনিকরা আস্থা হারালেই সব জারিজুরি শেষ। শাফাত ছাড়া সব কোম্পানি কমান্ডার গাদ্দার। মুখে মুখে যাই বলুক, মনে মনে শেখ মুজিব। কমান্ডার ব্যপারটা অনুধাবন করতে পারছেন না। তাঁর বিএম মেজর আমজাদ আহমেদ চৌধুরি বাঙালি হলেও একেবারে বশংবদ। ব্রিগেড সিগন্যালের ওসি মেজর মাহতাব আরেক জন রত্ন। তাঁরা যে বাঙালি কোন ভাবেই তা বোঝার উপায় নেই।
কমান্ডার বললেন আমি তোমার সমস্যাটা কিছুটা বুঝতে পারছি। ঠিকাসে, বি নাইস টু য়োর পিপল, ডু য়ু নো ওয়েদ্যার দে নো এবাউট পলাশবাড়ি অর নট?
আজকের কোন প্রশ্নই কমন পড়ছেনা। ফজল করিম এসেছেন বগুড়া থেকে। তাঁর কোম্পানিগুলি ছড়ানো ছিটানো, ব্র্যাভো আর ডেল্টা ঘোড়াঘাটে, আলফা পার্বতীপুরে আর চার্লি মন্ডলপাড়ায়। ব্যাটেলিয়ান হেড কোয়ার্টারে যে ক’জন আছে, তাদের সাথে কোম্পানিগুলির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ নেই। তবে বাঙালিদের সরল সোজা ভাবার মত বোকা তিনি নন। বললেন, আই থিং স্যার দে ডোন্ট নো ইয়েট।
কমান্ডার বললেন, ওকে টক টু দেম, থ্যাংক দেম অল অন মাই বিহাফ ফর নট ইন্ডালজিং ইন পলিটিক্যাল এক্টিভিটিস। তারপর করিমকে অবাক করে দিয়ে বললেন, পেয়ার অওর জাংমে এভরি থিং’জ ফেয়ার, দেয়ার ইজ নাথিং আন ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার, কে বলেছে বলতো?
করিম এতক্ষণে একটা সহজ প্রশ্নের নাগাল পেলেন, স্যার পসিব্লি প্যারিস, হেলেন’স লাভার।
কমান্ডার বললেন, কৃষ্ণা। শালা মালাউনদের অবতার।
– উই’ল সর্ট দেম টু নাইট। কোরাইশি উইল লুক আফটার সাইদপুর। ২৬ এফএফ এন্ড ২৩ ফিল্ড ট্রুপ্স আর ইন ডেঞ্জার, ট্রাই টু রিইনফোর্স দেম। হোয়াট’স য়োর স্ট্রেন্থ এট সাইদপুর?
– স্যার ২ জন অফিসার সহ ১২০। আমি এডজুট্যান্ট সহ এক প্লাটুন নিয়ে যাবো ফর দোজ টু ইউনিটস।
বেলা দুইটার দিকে সৈয়দপুরে পৌছে, ফোজোল করিম সুবেদার মেজর হারিস মিয়াকে, নিয়ে অফিসে ঢুকলেন। এডজুটেন্ট লেফটেন্যান্ট সিরাজুল ইসলামকে বললেন, অফিসার আর জোয়ানদের সাথে তিনি জরুরী কথা বলতে চান।
– নো ইটস নট এ দরবার, মেইক ইট কুইক লেট অল দ্য এভেইলেবেল পিপল গেইট ফলিন।
সুবেদার মেজরের সাথে কথা শেষ করে। তিনি বাইরে বেরিয়ে দেখলেন, কোয়ার্টার মাস্টার ক্যাপ্টেন আনোয়ার ৭০/ ৮০ জন সৈনিক নিয়ে অধিনায়কের জন্যে অপেক্ষা করছেন। সৈনিকদের সমাবেতের বামদিকে লেফটেন্যান্ট সিরাজ আর ডানদিকে কয়েক জন জেসিও। কোন সময় নষ্ট না করে সিও সারাসরি বললেন,
– আপ সাবকে লিয়ে ম্যা এক খোশ খবরি লে আয়্যা হুঁ। ওহ ইয়ে হ্যায় যে, কোর কমান্ডার জিওসি ঔর ব্রিগেড কমান্ডার কা তারফ সে আপ সাবকা মোবারাকবাদ হ্যায়। ও ইসি লিয়ে, কে ইস ওয়াক্ত কোই কিস পার্টিও মে হিসসা নেহি লিয়ে, আওর মেই দাওয়া কে সাথ কাহ সাক্তহা হে, থার্ড ব্যাতালিয়ান হর ত্রফসে পাকিস্তান সারকার কে অফাদার রাহেগি। ম্যায় আপ্সে অয়াদা কারতা হু, আপ বরদাস্ত করে আর মুঝপার ভারোসা রাক্ষে উস ওয়াক্ত তাক আপ লোগোকা কোয়ি কুছ নেহি বোলেগা, যব তক মুঝ পার কোইভি না বলে।
সিও চলে যাবার পর ক্যাপ্টেন আনোয়ার অফিসে বসে আদ্যপান্ত ভাবতে লাগলেন। একটুপর হারিস মিয়া এসে বললেন, স্যার খাইতে যাইতেন না?
আনোয়ার বললেন, সাব সেইদিন কি কথা হয়েছিল মনে আছে?
হারিস বুঝলেন, তিনি ২৮ তারিখের কথা বলছেন, হ স্যার যেদিন, আশরাফ স্যার ২৩ ফিল্ডের একজন অফিসার সাহেবানরে নিয়া আসছিলেন হেইদিনের কথা না? ওইযে আপনি ম্যগাজিন থন অ্যামো দিতে বললেন সেদিনের কথা না?
– জি
– আজকে কত তারিখ?
– ক্যান স্যার ৩১।
– সব রেডি করছেন?
সুবেদার মেজর হারিসের অনেক বছর হয়েছে সেনাবাহিনীতে। থার্ড বেঙ্গলের বাইরে তাঁর দুনিয়ে খুব ছোট। এইসব বাচ্চা বাচ্চা অফিসারদের তাঁর নিজের ছেলের মত মনে হয়। তিনি বললেন, স্যার সেই জন্যেই তো বললাম। গিয়া খাইয়া এট্টু রেস্ট নিতেন। জরাইয়া পরলে তো আর কোন কিছুর ঠিক ঠিকানা থাকতো না।
সেকেন্ড লেফটন্যান্ট সিরাজুল ইসলামের চাকরি খুব বেশি দিনের নয়। মার্চেই তাঁর লেফটেন্যান্ট হয়ে যাবার কথা ছিল। কমান্ডারদের ব্যস্ততার কারণে তিনি র্যাংক পাননি। এই নিয়ে তাঁর একটু মনোকষ্ট আছে। এটা আর এমন কি কঠিন কাজ। কমান্ডার সাইন করে দিলেই তো হয়! কিন্তু এই মুহুর্তে তিনি ভাবছেন অন্য কথা। এই যে সিও তাদের নিয়ে চলে এলেন ২৩ ফিল্ডকে রি ইনফোর্স করার জন্যে, সেখানে তাঁর ভূমিকা কি হবে? তিনি যতদূর শুনেছেন ২৩ ফিল্ড ইপিআরের কাছে মার খেয়েছে। তাহলে কি এখন তাঁকে ইপিআরের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরতে হবে? ২৫ শে মার্চের ঘটনার পর সেটা কি আর সম্ভব? আরও একটা বিষয় তাঁকে অস্বস্তিতে রেখেছে। বাঙালিদের মধ্যে একটা কানাঘুষা চলছে, ২৬ এফ এফের একটা কনভয় নিয়ে। কনভয়টি নাকি ঘোড়াঘাটের কাছে এম্বুশ করেছে ডেল্টা কোম্পানি। ডেল্টা কোম্পানির সাথে ব্যাটালিয়ন হেডকোয়ার্টারের সরাসরি যোগাযোগ বন্ধ। খবর আসছে চুইয়ে চুইয়ে, ব্রিগেড হেড কোয়ার্টার থেকে। ব্রিগেড সিগন্যাল কোম্পানির ওসি বাঙালি, বিএমও বাঙালি তবে তাঁদের সাথে কথা বলে তা বোঝার জো নেই। দুপুরে তাড়াহুরো করে চলে আসায় খাওয়া হয়নি। ঘোড়াঘাটে ডেল্টা কোম্পানি লোকেশনে পৌছাবার আগে খাবার পাওয়া যাবে বলে মনে হয়না। তিনি সামনের দিকে তাকিয়ে সব ভাবতে ভাবতে যাচ্ছিলেন। তাঁর পিকাপের পিছনে গাদাগাদি করে বসা আরও ১৪ জন। এমনিতে পিকাপের পিছনে ১০ জনের বেশি যাবার কথা নয়। সিও থ্রি টন আনতে চাননি , বলেই দু’টি পিকাপে গাঁদাগাদি করে আসতে হয়েছে।
পলাশবাড়ির মোড় পর্যন্ত আসার পর থামতে হল। ২৩ ফিল্ড আর্টিলারির বড় সড় একটা কনভয় রাস্তার বাম দিকে থেমে আছে। বেশ খানিকটা সামনে একটা জীপে বসে আছেন ইউনিটের সিও লেঃ কর্নেল কোরাইশি। তার পাশের দরজার কাছে দাঁড়ানো একজন অফিসার। তিনি খানিকটা দৌড়ের ভঙ্গিতে এসে হাতের ইশারায় গাড়ি থামাতে বলছেন। দুই জন আরপি প্রায় সিরাজের পিকাপ থেকে গজ দশেক দূরে রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর সিগন্যাল দিচ্ছে। সিরাজ একটু অপ্রস্তুত ভঙ্গিতে ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বললেন। গাড়ি থামানোর সাথে সাথে ২৩ ফিল্ডের সবাইকে গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় দাঁড়াতে বলে চিৎকার করতে থাকল। সিরাজ দেখলেন তাঁর পিছনে কর্নেল করিম জীপ থেকে নামছেন শান্ত ভাবে। তারও পেছনে দ্বিতীয় পিক আপ থেকে সৈনিক রা নেমে রাস্তার পাশে সারি বেধে দাঁড়াচ্ছে আর ২৩ ফিল্ডের অফিসারটি এবার সবাইকে অস্ত্র জমা দিতে বলছেন। তাঁর পিছে পিছে ২৩ ফিল্ডেরর অবাঙালি সৈনিকরা সিরাজের সৈনিকদের অস্ত্র নিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সিরাজের কাছে বিষয়টি অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে। থার্ড বেঙ্গলের সিওর উপস্থিতিতে আর্টিলারি ইউনিটের অফিসার তাদের অস্ত্র জমা চাইতে পারেন না। তিনি সিও কে বললেন স্যার, আমরা কি করবো। ফজল করিম ভাবলেশ হীন ভাবে বললেন, দে দো বাচ্চু।
২৩ ফিল্ডের সৈনিকরা তখনও রাইফেল বাগিয়ে কাছে আসছে। সিও নিজের অস্ত্রও দিয়ে দিলেন।
সবার অস্ত্র নেবার পর ২৩ ফিল্ডের কনভয়ের মধ্যে থার্ড বেঙ্গলের গাড়িও ঢুকিয়ে নেওয়া হল। সবচেয়ে আগে একটি পিকাপ, তারপর ২৩ ফিল্ডের সিওর গাড়ি, তার পেছনে ফজল করিমের গাড়ি। সিরাজকে ওঠানো হল আরেকটি জীপের পিছনে। জিপের দরজা খুলে অবাক হলেন তিনি। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রফিকুল ইসলাম সরকার সেখানে নিঃশব্দে বসে আছে। তীব্র ঘৃণা আর আতঙ্ক তার চোখে মুখে। সিরাজ উঠে বসতেই তিনি সিরাজের গা ঘেসে বসলেন। তারপর কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিসিয়ে বললেন, স্যার আমাদের ভাগতে হবে।
পাকিস্তানি যে অফিসারটি এতক্ষণ হম্বিতম্বি করে সিরাজদের নিরস্ত্র করলেন, তিনি সামনের সিটে উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো রংপুরের দিকে। পাঞ্জাবি অফিসারটি একবার পিছনে ফিরে সিরাজ আর রফিকের দিকে একটি সবজান্তার হাসি দিয়ে সামনে ফিরলেন।
সিরাজ প্রায় নিঃশব্দে রফিককে জিগ্যেস করলেন, তুমি এখানে কেন? রফিক বললেন স্যার, কোরাইশি চিটেড মি। সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট রফিকের সাথে সিরাজের চাকরি, বয়স কোন কিছুরই তেমন পার্থক্য নেই। মাত্র মাস কয়েক আগে কমিশন পাওয়া ফৌজাদার হাট ক্যাডেট কলেজের এই প্রাক্তন ছাত্রটিকে তিনি পছন্দও করেন। কিছুটা চুপচাপ ধরণের রফিকের কথা বার্তা মাঝে মাঝে তিনি বুঝতে পারেন না। বললেন,
- ২৩ ফিল্ডের সিও? তোমারে চিট করবেন কিভাবে?
- ঘোড়াঘাটের কাছে শালাদের এম্বুশ করেছিলাম। তখন শাদা পতাকা উড়িয়ে মাফ চাইতে এলো, বলল, এসব ভুল বোঝাবুঝি। বাঙালিদের সাথে তাদের কোন বিরোধ নেই। আমি আমার ওসি মেজর নিজামকে খবর দিলাম সেটে। উনি এসে শয়তানটাকে ক্যাম্পে নিয়ে গেলেন। চা চাখতে চাখতে বদমাশটা আমার অনেক সুনামও করলো
- তারপর?
- এর পর সি অফ করতে যখন গাড়ির কাছে এসেছি, ক্যম্পের সামনে থেকে ওনার সৈনিকদের দিয়ে আমাকে ঘিরে ধরে টান দিয়ে গাড়িতে উঠিয়ে ফেলেছে
সিরাজের গা কাঁপতে লাগল রাগে, উত্তেজনার বসে একটু গলা উচিয়ে বলে ফেললেন, কোম্পানি ছেড়ে দিল?
পাঞ্জাবি অফিসারটা ঘাড় না ঘুরিয়েই বললেন, ডোন্ট রেইজ য়োর ভয়েস, ক্লাউন্স।
এরপর কিছুক্ষণ গাড়ির চাকার শব্দ, ছাড়া আর কিছু শোনা গেলনা। একটু পর আবার ফিস ফিসিয়ে উঠলেন রফিক। স্যার, য়ু নো ইয়োর ইউনিট। থার্ড বেঙ্গল চুপ চাপ দেখে যাবে এটা হতে পারে? দে ওপেন্ড আপ। এই শালাদের বেশ কয়েকজনকে পড়ে যেতে দেখেছি। আমাদের নায়েক মহসিন মনে হয় ইনজিউরড। আরও দুই একজনের লাগতে পারে। শেষ দিকে গলা ধরে এলো তাঁর । সিরাজ কাঁধ চেপে ধরলেন রফিকের। দুই নবীন অফিসারের চোয়াল শক্ত হয়ে উঠলো। মার্চের পড়ন্ত বেলায় গাড়ি চলতে থাকল রংপুরের দিকে।
৩১ শে মার্চ রাতে প্রচন্ড গোলাগুলির শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল ক্যাপ্টেন আনোয়ারের। এত গোলাগুলির শব্দ কেন বুঝতে পারলেন না তিনি। ২৩ ফিল্ড বা ২৬ এফ এফ কি তাহলে আক্রমণ শুরু করেছ! এডজুট্যান্টের সাথে কথা বলা দরকার। তিনি এডজুট্যন্ট সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট সিরাজের রুমের দিকে রওনা দিলেন। মাঝপথে যেয়ে মনে হল, সেই যে দুপুরে এডজুট্যান্ট সিও’র সাথে চলে গেল, আর তো ফিরে আসেনি। ব্যাটালিয়নে কোন ওয়্যারলেস সেট নেই। যোগাযোগও হয়নি। টু আইসি ছাড়া সৈয়দপুরে ইউনিটের আর কোন অফিসার নেই। টু আইসিকে বাঙালিরা কেউ বিশ্বাস করেনা। অফিসে সুবেদার মেজরের শেষ কথাগুলি মনে পড়ে গেল তাঁর। “ জরাইয়া পরলে তো আর কোন কিছুর ঠিক ঠিকানা থাকতো না”। জড়িয়ে তো তিনি ছিলেনই। ক্যাপ্টেন আশারাফ আর সালামের সাথে মিলে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, ৩১ মার্চ দিবাগত রাত্রে ক্যান্টনমেন্ট দখল করে ফেলবেন। দুপুর বেলা সিও যে এক প্লাটুন সৈন্য সহ সিরাজকে নিয়ে যাবেন এটা তখন ভাবেননি। অন্ততঃ একজন অফিসার সাথে থাকলেও তাঁর জন্যে অনেক সহজ হত। এখন আর কারো সাথে পরামর্শ করার সুযোগ নেই। বাঙালি অফিসারদের মধ্যে সবচেয়ে সিনিয়ার মেজর নিজাম কোম্পানি নিয়ে ঘোড়াঘাটে, ক্যাপ্টেন আশরাফ মন্ডল পাড়ায়। তাঁকে পরামর্শ দেবার মত সৈয়দপুরে কেউ নেই। ইউনিটের সৈনিকরা ছাড়া পাশে দাঁড়াবার মতও কেউ নেই। ২৮ তারিখে স্থানীয় বাঙ্গালিরা ক্যান্টনমেন্ট ঘেরাও করেছিল, পুরো ইচ্ছে থাকলেও সেভাবে তাঁদের পাশে দাঁড়ানো যায়নি। ইউনিটে না গেলে ঘটনা বোঝা যাবেনা। তিনি ফিল্ডটেলিফোনে ডিউটি ক্লার্ককে গাড়ি পাঠাতে বলে, ইউনিফর্ম পরে বেরিয়ে এসে দেখলেন সুবেদার মেজর (এসএম) হারিস সম্পূর্ণ ব্যাটেল ড্রেস পরে গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। তার সাথে আরও দুজন সেপাই, তাদের হাতে রাইফেল। হারিস বললেন, স্যার এনএসএ আর বিএইচএম হগলডিরে নিয়ে স্ট্যান্ড টু তে আছে। আমি আইলাম, ভাবলাম আপনার লগে এট্টু কথা কই। তাঁকে দেখে মনের জোর বেড়ে গেল আনোয়ারের। মনে হল ব্যাটেল ড্রেস সুবেদার মেজর হারিসের বয়স কমিয়ে দিয়েছে। আনোয়ার বললেন, “২৩ ফিল্ড না ২৬ এফ এফ?”
হারিস বললেন , “স্যার গোলা গুলি শুরু হইসে দ্যাড়ডার দিকে, মনে অয় দুই দিক থিক্যায় ফায়ারিং অইতাসে।“ আনোয়ার বললেন, কোন ক্যাজুয়ালটি হয়েছে?
“স্যার, আইজ অহন তরি কিছু অয় নাই, পয়লা গোলাডি পড়সে এমটি পার্কে। দেয়াল ভাইঙ্গে পড়সে। লঙ্গরেও মারসে।“
“কতক্ষণ ঠেকানো যাবে মনে হয়?”
“স্যার, মরিচায় খাড়ায় পড়তে পারলে, আমগোরে উডান যাইতো না।“
“মরিচা খুঁড়তে তো সময় লাগবে”
“স্যার, হারামিগুলান যে কয়দিন আগে আমাদের ইনোটের বুগলদি মরিচা বানান নাগছিল, সে গুলানরে দখল কত্তে পাল্লে আর ……
কথা শেষ করতে পারলেননা হারিস, চরাচর কাঁপিয়ে মর্টারের গোলা এসে পড়ল। তিনি চেচিয়ে উঠলেন, “স্যার লঙ্গরটা মনে কয় আর বাঁচলো না।“
আনোয়াররা ইউনিটে পৌছে গিয়েছিলেন। গাড়ি থেকে নেমে বিল্ডিঙ্গের আড়ালে যেতে যেতে সৈনিক মেসের এক পাশের দেয়াল কাত হয়ে যেতে দেখলেন। তিনি ফায়ারিং এর আদেশ দেবার আগেই থার্ড বেঙ্গল গর্জে উঠলো। সুবিধা মত জায়গা নিয়ে সৈনিকরা শত্রুর গোলার জবাব দিতে শুরু করেছে।
আনোয়ার অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন, তাঁর কোন ভয় করছেনা। তিনি এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দায় গিয়ে সৈনিকদের খোঁজ খবর নিতে থাকলেন। রাত সাড়ে তিনটার দিকে ব্যাটালিয়ন হাবিলদার মেজর, হাবিলদার আলতাফ জানালেন স্যার, “উত্তর দিকে ২৩ ফিল্ডের জুয়ানরা জড়ো হইসে।“ মর্টার ফায়ার তীব্রতর হতে থাকল, আনোয়ার বললেন, “ওরা মনে হয় এসল্ট করবে,” তারপর চীৎকার করে বলতে থাকলেন, “মাইনর টাইগার্স কেউ ঘাবড়াবে না, কেউ যেন ইউনিটের সীমানয় আসতে না পারে।“ এনএসএ নায়েব সুবেদার শহিদুল্লাহর চীৎকার শোনা যেতে লাগলো, “হারামিওকো মার ডালো” আলফা কোম্পানির সিনিয়ার জেসিও সুবেদার খালেক, এসএম সবাই সমানে উদ্বুদ্ধ করতে থাকলেন সৈনিকদের। মিনিট বিশেক পরে আক্রমণ থেমে এলো।
ক্যাপ্টেন আনোয়ার ক্ষয়ক্ষতির হিসাব নেয়ার চেষ্টা করছিলেন, হারিস এসে বললেন, “স্যার জুয়ানগো মোরাল ভালো আছে। কয়েকজন গুলি খাইছে, কিন্তু সাহস হারায় নাই।“ আনোয়ার চিন্তিত হয়ে পড়লেন, একজন মেডিক্যাল এসিস্টেন্ট, আর কিছু ফার্স্ট এইড কিট ছাড়া ইউনিটে চিকিৎসার কিছু নেই। হারিস কে বললেন, “কি করা যায়?”
“রাতটা কোন মতে কাটুক, সকালে ডাক্তার খুঁজে বের করবো”, বললেন হারিস।
সাড়ে চারটার দিকে আবার শুরু হল আক্রমণ, জিন্নাহ কলেজের দিক দিয়ে এবার আক্রমণ করল ২৬ এফ এফ। জীবন বাজী রেখে পালটা জবাব দিতে শুরু করল, আনোয়ারের সৈনিকেরা। দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে গোলা বারুদ। আক্রমণ ঠেকাতে ৩ইঞ্চি মর্টারও ব্যবহার করেছে ৩য় বেঙ্গলের এই সাহসী দলটি। প্রবল প্রতিরোধের মুখে পাকিস্তানি বাহিনী ঢুকতে পারেনি, ৩য় বেঙ্গলের সীমানায়। ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে। আনোয়ারের মনেহল আর বেশিক্ষণ ঠেকিয়ে রাখা যাবেনা। তিনি জেসিও আর সিনিয়ার এনসিওদের ডেকে বললেন, “এভাবে বেশিক্ষণ টেকা যাবেনা। এমো শেষ হয়ে যাচ্ছে। সৈনিকরা ক্লান্ত। এখান থেক আপাততঃ উইড্রল করতে হবে।“ হারিস বললেন, “ভাইগা যামু?” তাঁর কন্ঠে হতাশা। আনোয়ার বললেন, “উইথড্রল মানে কি ভেগে যাওয়া? ১২০ জনে যুদ্ধ শুরু করেছিলাম, এখন কত জন আছে ১০০ হবে? পাঞ্জাবিদের তো লোকবল, গোলা বারুদ কোন কিছুর অভাব নেই।“ সুবেদার খালেক বললেন, স্যার, অগো সাহস নাই। ওরা আমাদের চেয়ে ডরপোক, পলাশবাড়ির ঘটনা শুনেন নাই স্যার?
২৩ ফিল্ডরে যে ডাল্ডা কোম্পানি শুয়াই দিছে শুনেন নাই?”
আনোয়ার ভাসাভাসা শুনেছিলেন, বললেন আমি পুরো জানিনা, “তবে এখন আমাদের দরকার নিরাপদ কোথাও গিয়ে নিজেদের অর্গানাইজ করে ফিরে এসে ওদের শেষ করে দেয়া। এক সাথে এত লোক বের হওয়া যাবেনা। ছোট ছোট গ্রুপে যেতে হবে। আমি দুইটা জায়গার কথা ভেবেছি, একটা ফুলবাড়ি, ওখানে যেতে পারলে, ডেল্টা বা ব্রাভো কোন একটা কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা যাবে। আর একটা বদরগঞ্জ ওই খান থেকে চার্লি কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করা সহজ। পুরো ব্যাটালিয়ান একসাথে না হলে ওদের সাথে পেরে ওঠা যাবেনা।
শেষ পর্যন্ত ঠিক হল,ফুলবাড়ি অবস্থানের নেতৃত্বে থাকবেন আনোয়ার আর বদরগঞ্জের দায়িত্ব থাকবে হারিসের উপর। ইউনিটের দক্ষিণ পূর্ব আর দক্ষিণ পশ্চিম দিক দিয়ে ছোট ছোট দলে বেরিয়ে পড়বে সবাই। এর মধ্যেই থেমে থেমে শত্রুর আক্রমণ আসছে। সাধ্যমত তাঁর প্রত্যুত্তরও দেওয়া হচ্ছে। বেলা নয়টার কাছাকছি বেজেছে, এখনও সৈনিকরা অভুক্ত, মেসের উপর মর্টার শেল পড়ে দেয়াল ভেঙে পড়েছে, রান্না বান্না বন্ধ। বিকিউএমএইচ (ব্যাটালিয়ান কোয়ার্টার মাস্টার হাবিলদার), ধারে কাছের কোন দোকান থেকে কিছু রুটি সব্জি জোগাড় করেছে। বাইরে থেকে ঝাপবন্ধ এই দোকানের ভিতরে যারা রুটি বানিয়েছে তাদের প্রায় কেউই পেশাদার পাঁচক নন। কেউ ছাত্র, কেউ দোকানদার। সেসব নিয়ে তাদের মাথা ব্যাথা নেই। তাঁদের বিশ্বাস, যুদ্ধরত এই সৈনিকরা যদি বাঁচে তারাই খানদের হটিয়ে বাঙালিদের বাঁচাবে।
কয়েকজন সৈনিক আহত সহযোদ্ধাদের শুশ্রূষা দেবার চেষ্টা করছে। এসএম সাহেব আনোয়ারকে চুপিচুপি বললেন, স্যার প্রায় ৩৫ জন শেষ। ২০ জনের মত গুলি খাইসে, আর ১০ পনরজন ভাগুড়া। আনোয়ারের ২৪ বছরের জীবনে এর চেয়ে বড় কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি মাথা ঠান্ডা রেখে পরবর্তী করণীয় ঠিক করার চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন। হঠাত কমবয়সী একজন সৈনিকের কান্না সবাইকে সচকিত করে দিল। ইউনিট ছেড়ে যাবার কথা ভেবে মৃত সহযোদ্ধাদের দিকে তাকিয়ে আর কান্না সংবরণ করতে পারেনি সে।
দশটার দিকে আক্রমণের তীব্রতা বেড়ে গেল। নিরবচ্ছিন্ন গুল বৃষ্টির মধ্যে দিয়ে ছোট ছট দলে বেরিয়ে যেতে থাকল থার্ড বেঙ্গল। বদরগঞ্জ প্রায় ১৬ মাইল, ফুলবাড়ি তিরিশ মাইলের কাছাকাছি। রাতভর যুদ্ধের পর ক্লান্ত শরীরে সেখানে পৌছানো সহজ কথা নয়।
যার যার জায়গায় পৌছাতে পৌছাতে সন্ধ্যা নেমে এলো। নিরুপায় হয়ে ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে এসে আনোয়ার স্বস্তি পাচ্ছিলেন না। তিনি রাতেই মেজর নিজামকে বিস্তারিত জানিয়ে ফুলবাড়িতে এসে ইউনিট পুনর্গঠনের অনুরোধ করলেন।
১লা এপ্রিল সকালে, সুবেদার মেজর হারিস নামাজ শেষ করে, স্ট্যান্ড টু করাবেন কিনা ভাবতে ভাবতে হাটছিলেন, হঠাত দেখলেন নিসবেতগঞ্জের রাস্তা ধরে একা একজন মানুষ টলোমলো পায়ে এগিয়ে আসছে। কাছাকাছি এসে ধপ করে পড়ে গেল লোকটা। দু’জন সেপাইকে পাঠালেন তিনি আগন্তুককে সাহায্য করতে। লোকটির পরণে ইউনিফর্মের প্যান্ট, গায়ে ময়লা গেঞ্জি, মাটি কাদায় মাখামাখি সারা শরীর এবং তিনি অজ্ঞান। আরও কয়েকজন কৌতুহলি সৈনিক হাজির হল আশে পাশে। তাদের একজন বলল, উনি তো হেডকোয়ার্টার কোম্পানির কাদের উস্তাদ।
দ্রুত জ্ঞান ফেরানো হল তার। ঘন্টা দুই পরে একটু সুস্থ হতেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তিনি। দুপুরে সিওর সাথে যে পেট্রলটি গিয়েছিল তাদের সবাইকে পলাশবাড়ি থেকে ধরে এনে রাতের বেলা নিসবেত গঞ্জের কাছে গুলি করে ঘাঘট ব্রিজের নিচের গর্ত পুতে ফেলা হয়েছিল। পরে তিনি মাটি ফুঁড়ে বেরিয়ে এসেছেন। লেফটেন্যান্ট দু’জনকেও একই সাথে নিয়ে এসেছিল। সম্ভবত তাদেরও একই পরিনতি হয়েছে।
সুবেদার মেজর হারিস জীবনে অনেক কিছু দেখেছেন। এই সব বাচ্চা বাচ্চা অফিসার তাঁর সন্তানের মত। এডজুটেন্ট লেফটেন্যান্ট সিরাজের বাবা গোবিন্দগঞ্জের স্কুল শিক্ষক প্রায় তাঁরই বয়সী। সেকেন্ড লেফটেন্যনান্ট রফিকের বয়স তো আরও কম। তাঁরই এক প্রাক্তন সহকর্মীর ছেলে তিনি। তাঁদের কথা ভাবতে ভাবতে চোখ ভিজে এলো তাঁর। তিনি মনে মনে আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। হে পারোয়ার দিগার এই পোলাপানডির খুনের বদলা যেন নিবার পারি, তুমি আমারে ততটুকু হায়াত দাও।
সূত্রঃ The 25/26 March 1971 revolt in Chittagong; Mahmud ur Rahman Choudhury,
Time: Flames of Freedom, Beginning of Liberation war in Chittagong,
স্মৃতিচারণঃ অগ্নিঝরা মার্চ ১৯৭১ সালের সেই উত্তাল দিনগুলো- মেজর জেনারেল (অবঃ) আমীন আহম্মেদ চৌধুরী বীর বিক্রম ।
সাক্ষাৎকারঃ মেজর জেনারেল আনোয়ার হোসেন, বীর প্রতীক (অবঃ)।
মেজর এস এম সাইদুল ইসলাম (অবঃ); বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধযাত্রা ১৯৭১
সাইদুল ভাই, অসাধারণ। উর্দু উক্তির পরে ব্রাকেটে বাংলা তর্জমা করে দিলে আমার মত পাঠকের জন্য সুবিধা হত।
বিবেক হলো অ্যানালগ ঘড়ি, খালি টিক টিক করে। জীবন হলো পেন্ডুলাম, খালি দুলতেই থাকে, সময় হলে থেমে যায়।