বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধ যাত্রা ১৯৭১

5.5″ x 8.5″

বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধ যাত্রা আমি হঠাৎ করে লিখিনি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমার আগ্রহ অনেকদিনের। ছোটবেলা থেকে  হাতের কাছে যা পেয়েছি পড়েছি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আস্ত একটা বই সম্ভবত ক্লাশ সেভেনে  থাকতেই পড়ে ফেলেছিলাম। বইটির নাম মুক্তিযুদ্ধে নয় মাস। লেখক মেজর সুবিদ আলী ভুঁইয়া। তখন মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বই ছিল হাতে গোনা। যা ছিল তাঁর বেশিরভাগই হয় রাজনীতিবিদ অথবা রাজনীতিমনষ্ক মানুষদের লেখা। এই বইটি ছিল তার ব্যতিক্রম। একজন আর্মি অফিসারের প্রত্যক্ষ যুদ্ধ অভিজ্ঞতার বর্ণণা। এই সময়ই পেলাম, মাহাবুব উল আলমের বই রক্ত, আগুণ অশ্রুজল, স্বাধীনতা। মাহাবুব উল আলমের বইটি নানান তথ্যে ঠাসা। এই বইটাকে বলা যায় ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত সংবাদ পত্রে প্রকশিত রিপোর্টের এটি একটি সংকলন। এটি এখন বাজারে পাওয়া যায়না, ‘বাঙ্গালির মুক্তিযুদ্ধের ইতিবৃত্ত’ নামে আরেকটি বই পাওয়া যায়। সেই বইটি আসলে রক্ত, আগুন, অশ্রুজল,স্বাধীনতার ই পরিবর্ধিত সংষ্করন। এই সময় আরও কিছু বই হাতে এল তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য টেল অব এ মিলিয়ন্স।ক্যাডেট কলেজ থেকে বেরুতে বেরুতে আরো বেশ কিছু বই পেলাম, তাঁর মধ্যে কিছু গল্প উপন্যাস (জীবন আমার বোন, খেলাঘর, নিষিদ্ধ লোবান, স্মৃতিমেধ, আমি বিজয় দেখেছি, এন্ডারসন পেপার্স, ইন্ডিয়ান সোর্ড স্ট্রাইক্স ইন ইষ্ট পাকিস্তান, অপারেশন উইন্ডফল, ইনসাইড র’, শামসুল হুদা চৌধুরির একটি বই) আর বেশ কিছু মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বই। বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমি থেকে কমিশন পেয়ে বেরুতে বেরুতে আরও কত যে বই হাতে এল ! তাঁর কিছু নাম মনে আছে কিছু মনে নেই। সেই অসংখ্য বইয়ের মধ্যে পাঁচটি বই আমার মনের মধ্যে গেঁথে রইল, নন ফিকশনের মধ্যে মূলধারা ৭১, বার বার ফিরে যাই, রক্তে ভেজা একাত্তর, বাংলাদেশ অ্যাট ওয়ার,জনযুদ্ধের গণযোদ্ধা। আর ফিকশনের মধ্যে জোছনা ও জননীর গল্প, জীবন আমার বোন, অশরীরী।(আমরা এক অর্থে অর্থে সৌভাগ্যবান, আমাদের প্রধান দুইজন লেখক মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে খুবই বিশ্বাসযোগ্য বই লিখেছেন। জোসনা ও জননীর গল্পকে তো হুমায়ুন ভক্তরা রেফারেন্স হিসাবেও মাঝে মধ্যে উল্লেখ করেন, তবে মাহমুদুল হক কোন অতিরঞ্জন ছাড়াই যা লিখেছেন, তা প্রতে গেলে গায়ের রক্ত হীম হয়ে আসে)।

আমি ভালোবেসে সেনাবাহিনীতে যাইনি। তবে সেনাবাহিনীতে গিয়ে সেনাবাহিনীকে ভালোবেসে ফেলেছিলাম। আমাদের  কিছু জলস্বভাবের বুদ্ধিজীবি (পানির নিজস্ব আঁকার নাই …) ,মতলববাজ কিছু পলিটিশিয়ান এবং তাদের কয়েকজন ধামাধরা সাগরেদ, এবং উন্নাসিক কিছু বামপন্থী বাদে অধিকাংশ মানুষই সেনাবাহিনীর উপর ভরসা করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় থেকেই করে। তবে আমার মনে হয়েছে,

সেনাবাহিনীর প্রতি মানুষের ভালোবাসার কথা অথবা দেশের প্রতি সেনাবাহিনীর ভালোবাসার কথা  মুক্তিযুদ্ধের বইগুলিতে তেমন ভাবে আসেনি।অধিকাংশ মুক্তিযুদ্ধের বইয়ে রাজনীতি যত বিস্তারিত ভাবে এসেছে যুদ্ধ সেভাবে আসেনি। অনেকে বলেন সেটিই হবার কথা, রাজনীতির পথটি ছিল দীর্ঘ। রাজনীতি জনগণকে ধীরে ধীরে প্রস্তুত  করেছিল যুদ্ধের জন্যে। কেউ কেউ ভাবেন মুক্তিযুদ্ধ একটি রাজনৈতিক ব্যার্থতার পরিণতি (পৃথিবীতে কয়টি দেশকে যুদ্ধ করে স্বাধীন হতে হয়েছে? ভারতবর্ষের স্বাধীনতা কি যুদ্ধ করে অর্জন করতে হয়েছে? বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বিষয়টি  সেরকম হয়নি। যে কোন ভাবেই হোক রাজনৈতিক ব্যর্থতার দায়ভার বইতে হয়েছে জনগনকে, আর যুদ্ধের সূচনালগ্ন থেকেই  জনতার পাশে দাঁড়িয়েছে সেনাবাহিনী)।

 

আমি বিষয়গুলি ওভাবে দেখতে চাইনি। আমার কাছে মনে হয়েছে, যুদ্ধটা সঠিক ভাবে বোঝাতে গেলে যুদ্ধের আবহ তৈরি করতে হবে। শুধু ইতিহাস লিখলে হবেনা। ইতিহাস মানুষকে বেশি কথা বলার সুযোগ দেয়না। ইতিহাস বোঝে দিন, তারিখ, ঘটনা, মানুষের মনের অন্দরমহলের খবর সেখানে ততটা গুরুত্বপূর্ন নয় পরিণতি যতটা। কিন্তু আমার কাছে অন্দরমহল্টা বেশি গুরুত্ব পুর্ণ, কারণ মনের এই অন্দর মহলই কাউকে যুদ্ধ করতে আর কাউকে না করতে প্রভাবিত করে। প্রায় পাঁচ বছর আগে যখন লেখা শুরু করলাম, একজন পাঠক প্রশ্ন করলেন, আপনি কি ইতিহাস লিখছেন ? আমার মনে হল প্রশ্নটির মধ্যে আরও একাধিক প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি কোন ঐতিহাসিক নই। অনেকে প্রশ্ন করা শুরু করল আমি কি মুক্তিযুদ্ধের সময় আপনার বয়স কত ছিল?  ব্যাপারটা অনেকটা এমন যেন তাজমহল নিয়ে লিখতে গেলে সম্রাট শাজাহানের যুগে জন্মাতে হবে।

আমি ঠিক করলাম, আমি যাই লিখি তথ্যে কোন ভুল থাকা চলবে না তবে লেখায় আমার স্বাধীনতা চাই। আমার লেখা ইতিহাস নয়। ইতিহাস স্বাধীনতা দেয়না। আমার লেখা হবে ডকু ফিকশন। চরিত্রগুলি আমি পুনঃ নির্মান করবো, তাদেরি দোষগুন মিলিয়ে। লেখা বাদ রইলো বছর খানিক। এই একবছর আমি এই বীর যোদ্ধাদের  মুক্তিযুদ্ধের বাইরের আচার আচরণ নিয়ে গবেষনা করেছি। তথ্য যাঁচাই বাঁছাই করতেও সময় লেগেছে অনেক দিন।

তারপরও দুইএকজন মন্তব্য করেছেন, যেহেতু আমি বঙ্গবন্ধুর দীর্ঘ সংগ্রামের কথা বলিনি এটি খন্ডিত ইতিহাস হচ্ছে। আরেকদল বলেছেন জিয়ার ঘোষোণার কথা যদি  যদি না থাকে, এটি কি স্বাধীনতা যুদ্ধের কিছু হল?  আমার মনে হয়েছে এসব নিয়ে অনেক বই রচিত হয়েছে আমার টা নাহয় শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়েই হোক।

 

পুনশ্চঃ বইটি দুই একজন খুঁজে না পাওয়ায় আমাকে জানানোর কারনে আমি রকমারি ডট কমে সার্চ দিয়ে দেখলাম। বইটি এখন আর পাওয়া যাচ্ছে না। তার মানে কি বইটির সকল কপিই বিক্রি হয়ে গিয়েছে?

পাঠকদের আবারও ধন্যবাদ।

 

 

 

২ টি মন্তব্য : “বেঙ্গল রেজিমেন্টের যুদ্ধ যাত্রা ১৯৭১”

  1. মাহমুদুল (২০০০-০৬)

    অনেক গুলো বইয়ের নাম জানতে পারলাম। যেগুলো পড়াই হয়নি। সময় পেলে পড়বো।

    বাংলাদেশের বাইরে আছি। কিভাবে আপনার বইটা পেতে পারি?


    মানুষ* হতে চাই। *শর্ত প্রযোজ্য

    জবাব দিন
  2. সাইদুল (৭৬-৮২)

    আমিও বাংলাদেশের বাইরে আছি। নিজেই জানিনা বই পাবার উপায়। প্রকাশক সূত্রে জানি জুন মাসে নিউ ইয়র্রকের বই মেলায় যাবে বইটি। ওখানে পরিবেশক মুক্তধারা। আর বাংলাদেশে রকমারি, প্রথমা, কিম্বা অনন্যা জানতে পারে। আমি বই প্রকাশের মাস খানেক পরে কয়েকটি কপি পেয়েছিলাম। এখন সেগুলিও নেই


    যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান

    জবাব দিন

মন্তব্য করুন

দয়া করে বাংলায় মন্তব্য করুন। ইংরেজীতে প্রদানকৃত মন্তব্য প্রকাশ অথবা প্রদর্শনের নিশ্চয়তা আপনাকে দেয়া হচ্ছেনা।