চীনের মসজিদ ২
– তুমিও জান?
– আমি তো তোমাকে বলেছি, তুলনা মূলক ধর্মতত্ত্ব আমার পছন্দের বিষয়। মুসলমানরা এদেশে প্রথম এসেছিল ট্যং ডাইনেষ্টির সময়। ধর্মপ্রচারের কোন মরীয়া উদ্যোগ তখন লক্ষ করা যায়নি। তাই ইসলামের প্রসারে বড় কোন বাঁধাও আসেনি। মুসলমান বনিকরা কনফুসিয়ান,তাওবাদী আর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাথে মিলেমিশে বসবাস করেছে। প্রাচীন ধর্মগুলির তুলনায় ইসলাম অনেক বেশি আধুনিক হওয়ায় জনগণ ধীরে ধীরে এই ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। আর ধর্ম প্রচারে বাড়াবাড়ি না থাকায় নবম শতকে যখন বৌদ্ধ ধর্মের উপর আইনের খড়গ নেমে এসেছে তখনও ইসলাম ধর্ম থেকে গেছে নিরাপদ। শাসকরা বৌদ্ধদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ মনে করলেও মুসলমানদেরকে ভাসমান বিদেশি হিসাবেই গণ্য করেছে। এই সুযোগে ইসলাম ছড়িয়ে পড়েছে চীনের বিভিন্ন প্রদেশে। সং রাজাদের সময় চীনের বৈদেশিক বানিজ্য ও আমদানি-রপ্তানি শিল্পে মুসলমানরা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। এসময় থেকে প্রায় নিয়মিত ভাবেই চীনের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের মহাপরিচালক নিয়োগ করা হত মুসলমানদের মধ্য থেকে। একাদশ শতাব্দীর কোন এক সময় সম্রাট শেংজং বুখারা থেকে প্রায় সাড়ে পাঁচহাজার মুসলমানকে আমন্ত্রণ করে আনেন উত্তর পূর্বাঞ্চলের লিয়াও সম্রাজ্য আর চীনের মধ্যে বাফার অঞ্চল গড়ে তোলার লক্ষে। পরবর্তীতে সুং রাজধানি কাইফেং আর ইয়েঞ্চিং এর মাঝামাঝি এলাকায় তাদের বসতি গড়ে ওঠে। নতুন বসতির নেতা ছিলেন সো-ফি’র। সো-ফি’রের মুসলিম নাম হল আমির সাইদ। তাঁকে চাইনিজ মুসলিমদের জনকও বলা হয়। তার আগ পর্যন্ত ইসলাম ধর্মকে চীনা ভাষায় বলা হত দা’শিফা অর্থাৎ আরবদের আইন। আমির সাইদ ইসলাম ধর্মের নাম দেন হুইহুই জিয়াও বা হুইহুইদের ধর্ম।
কেভিনের জ্ঞানের গভীরতা দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেলাম। বললাম ‘প্রাচীন সেই মুসলিম বসতি গুলির এখন কি অবস্থা? আর ইসলাম ধর্মের নাম হুইহুইদের ধর্ম রাখার যুক্তিই বা কি?’
আমার প্রশ্নে কেভিন কিছু মনে করল না। বলল, সেই বসতিই তো শেষ নয়। চীনের জনসংখ্যার প্রায় দেড় শতাংশ এখন মুসলিম। তারা ছড়িয়ে আছে সর্বত্রই। ইয়েঞ্চিঙ্গের আধুনিক নাম বেইজিং, আমাদের রাজধানি। আর চীনা ভাষায় হুইহুই বলতে মধ্যপ্রাচ্যের মানুষদের বুঝায়, এ জন্যেই সম্ভবত এই নাম। একমাত্র কমিঊনষ্ট বিপ্লব আর সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের কিছুদিন ছাড়া মুসলমানরা এদেশে সুখেই ছিল। সানিয়েত সেন এর যুগে মুসলমানরা কত শক্তিশালি হয়ে উঠেছিল তুমি ভাবতেও পারবেনা। কমিউনিস্ট বিপ্লবের পর চেয়ারম্যান মাওএর আমলে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম অধ্যুসষিত অঞ্চলে দুই দুইবার স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদোগ নিয়েছিল তারা। মাওসেতুং শক্ত হাতে দমন করেছিলেন সে উদ্যোগ’।
এসব তথ্য আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন, শুনতেও ভালো লাগছিল, নামাজের সময় হয়ে আসায় উঠতে হল।
কেভিনের কাছে জানতে চাইলাম তুলনামুলক ধর্মের ছাত্র হিসাবে কোন ধর্মটি তার পছন্দের। গম্ভীর হয়ে গেল কেভিন। বলল, আমি মাঝে মাঝে ভাবি ধর্ম টর্মের আসলে দরকার আছে কি না।
কি বলব ওকে বুঝতে পারছিলাম না। খবরে পড়েছি **গতবছর রোজা রাখা নিয়ে উরঘু মুসলমানরা ঝামেলায় পড়েছে। সাংষ্কৃতিক বিপ্লবের ভুত এখনও পুরোপুরি দূর হয়নি চায়না থেকে। বললাম ‘ যতক্ষণ বিপদে না পড় ধর্ম তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়, বিপদে পড়লে এটি কাজে আসে।
– কেন? ধর্ম কি বিপদ থেকে উদ্ধার করে? এদেশে তো ধর্মই বিপদ বয়ে আনে।
– আনতেও পারে, তবে আসলে আনে কি না সেটা নির্ভর করে যার যার বিশ্বাসের উপর।
– সোজা করে বল।
একবার ভাবলাম, কেভিনের সাথে এসব কথা বলে লাভ নেই। তারপর মনেহল বললেই বা ক্ষতি কি? সময়তো কাটবে। বললাম, শোন কেভিন, প্রতিটা মানুষেরই একটা আশ্রয় দরকার, বিপদে পড়লে বা মন খারাপ হলে যে তোমাকে সাহস যোগাবে, বিপদ কাটিয়ে ওঠার প্রেরণা যোগাবে। ধর্ম হচ্ছে সেই আশ্রয়। ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই। ধর একটা লোক একা জংগলের মাঝ দিয়ে হাটছে। জংগলে জন্তু থাকতে পারে, ডাকাত থাকতে পারে আরও নানা রকম ভয় থাকতে পারে, একজন সাধারন ধর্ম ভীরু মানুষ তখন যদি আল্লাহর নাম জপতে থাকে তাহলে অনেক সময়ই তার ভয় কেটে যায়। মনে হয় সে একা নয়। তার সাথে আল্লাহ আছেন। কেভিনের কোন ভাবান্তর হল বলে মনে হলনা । ভদ্রতার খাতিরে বলল, ‘তোমার কথায় যুক্তি আছে, যদিও অত্যন্ত দুর্বল সে যুক্তি অথচ দ্যাখো এই দুর্বল যুক্তি নিয়েই পৃতুলকালাম ঘটনা ঘটে যাচ্ছে।
আমি বললাম, তুমি হয়তো বিশ্বাস করবেনা। ধর্ম আমার কাছে এক ধরণের আশ্রয়, তুমি যখন অন্যায় ভাবে তাতে আঘাত কর, অথবা আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে চাও আমার আমার মনে হয় আমি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছি।
সে বলল এভাবে কখনও ভাবিনি। আমি আর কথা না বাড়িয়ে পা বাড়ালাম মসজিদের দিকে।
পথে দেখা হল এক জন মালোয়েশিয় ভদ্রলোকের সাথে। চেহারা দেখে বাঙালি মনেকরে এগিয়ে গিয়েছিলাম, বাংলায় কথাও বলে ফেলেছিলাম । ভুল ভাংলো তার উত্তর শুনে।বললেন সরি, নো হিন্দি।
ভদ্রলোকের নাম জাফর। মেইলিনেই আছেন দু’বছর ধরে। প্রতি শুক্রবারেই নামাজ পড়তে আসেন এই মসজিদে। জানালেন প্রায় হাজার খানেক লোক হয় জামাতে। প্রচুর বিদেশিও আসে।
জাফরের কথা খুবএকটা বিশ্বাস হল না। কারন, তখন বাজে বারো টা চল্লিশ। ভীড় কিছু বাড়লেও সেটা বেড়েছে ফুটপাতে। কয়েকজন লোক পশরা সাজিয়ে বসেছেন বিভিন্ন পন্যের। তার মধ্যে আছে নান রুটি, হালাল মাংস, জবাই করা মুরগি, নানান রকম ফল,বিভিন্ন ধরণের টুপি, পাজামা কুর্তা, ছাতা,প্লাস্টিক পন্য, খেলনা আর চেনা অচেনা অনেক কিছু।
মসজিদের বারান্দায় বেশ কয়েকজন লোক বসেছিলেন। মুয়াজ্জিনের সাথে দেখা হয়ে গেল আবার। প্রথমে চিনতে পারিনি। বেশভূষায় পরিবর্তন হয়েছে। নকশাদার আলখেল্লা আর টুপিতে তাকে মোটেও চাইনিজ বক্সারের গ্র্যান্ড মাস্টারের মত মনে হচ্ছেনা। আমাকে দেখে মৃদুহেসে ওজুখানা দেখিয়ে দিলেন। ওজুখানাটি মসজিদ থেকে গজ বিশেক দূরে। যাবার পথে চোখ পড়ল মসজিদের পেছনের ইসলামিক সেন্টারে, বেশ কয়েকজন মহিলা- পুরুষ বই পড়ছেন সেখানে। অজু করে ফেরার সময় দেখা হল এনআরআই মুসলিম ইমরানের সাথে। তিনি আমেরিকা থেকে চীনে এসেছেন মোবাইল ফোনের স্পেয়ারস কিনতে। এই মসজিদে আজই প্রথম। জানতে চাইলেন সন্ধ্যার সময় মসজিদে ইফতার দেওয়া হয় কিনা। আমিও নতুন, শুনে বললেন দুরের একটা হোটেলে উঠেছেন তিনি। মেইলিনে কাটাতে চান মাগরিব পরযন্ত। কেভিনের সাথে বেশ খাতির হয়ে গেল তার। আমি জানালাম কেভিন এসেছে আমাকে মসজিদ দেখাতে। অবাক হয়ে গেলেন তিনি আর ইউ মুসলিম কেভিন? কেভিনের উত্তর মৃদু হাসি। যার মানে হতেও পারি।
দ্বিতীয়বার মসজিদে আসা অবধি কেভিনের মধ্যে একটু অস্থিরতা লক্ষ করছিলাম। তার কারণ বুঝা গেল কেভিনের প্রশ্নে, ‘তুমি যখন নামাজ পড়বে তখন আমি কি করবো?’ প্রশ্নটা আমার মনেও যে আসেনি তা নয়। সমাধান দিল ইমরান। বললো, তুমিও আমাদের সাথে মসজিদে ঢুকবে
– আমিও?
– হ্য অসুবিধা কি?
কেভিনের মুখে যুগপৎ বিষ্ময় ও আনন্দের ছায়া খেলে গেল। বলল, ‘অনেক মজা হবে আমি কখনও মুসলমানদের প্রেয়ার দেখি নাই। আমাকে কি হাত পা ধুতে হবে?’ আমি বললাম, ‘হ্যা, মসজিদে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন হয়ে ঢোকা ভাল’।
কেভিন ওজুখানায় গিয়ে হাত পা ধূয়ে এল। মসজিদে তখন বয়ান শুরু হয়েছে। আস্তে আস্তে ভীড় বাড়ছে। কেঊ সুন্নত নামাজ পড়ছে, কেউ বয়ান শুনছে। কেভিন জানতে চাইল নামাজ শুরু হয়েছে কিনা। বললাম ‘শুরুতো হয়েছেই তবে আমি যে নামাযের কথা বলছি সেটা শুরু হবে আরও পরে’।
বাইরে তখন প্রচন্ড গরম। আমি কেভিনকে নিয়ে ভিতরে ঢুকলাম। মসজিদের অর্ধেক ভরে গেছে ততক্ষ্ণনে। কেভিন জিগ্যেস করল সে ছবি তুলতে পারে কি না। বললাম, ‘কোন অসুবিধা নেই তবে নামাজের সামনে যেওনা। পিছন অথবা পাশ থেকে তুলো’।
কেভিনের প্রশ্নের শেষ নেই।
সে আর কি কি করতে পারে জানতে চাইল। বললাম, ‘মূল নামাজ শুরু হবার আগে ইমাম সাহেব কিছু কথা বলবেন। আমি যেহেতু চাইনিজ বুঝিনা তুমি মন দিয়ে শুনে আমাকে বুঝিয়েদিও’।
কেভিন কিছুক্ষণ চুপকরে থেকে বলল, ‘কোরান কিভাবে এল সে কথা বলা হচ্ছে’। আমি বললাম ‘এখন কথা বল না। অন্যদের অসুবিধা হবে পরে আমাকে বুঝিয়ে দিও’।
আরবীতে খুতবা শুরু হবার আগেই মসজিদ প্রায় পূর্ণ হয়ে গেল মুসল্লীতে। আমি ভাবলাম কেভিনকে নিয়ে মাঝের কাতারে বসা ঠিক হবে না। তাকে বললাম ‘চল বাইরে কত লোক দেখে আসি’। বাইরে তখন মানুষের ঢল নেমেছে। কেভিনও বিষ্মিত। এত লোক মসজিদে আসে!
হুজুর যখন কাতার শুরু করতে বললেন তখন মসজিদে ঢুকে পেছেনের কাতারে দাঁড়ালাম। আমাদের পেছেনে পর্দা দিয়ে ঘেরা মহিলাদের কাতার।
নামাজ শুরু হবার আগে কেভিন আবার জেনে নিল তার কি কি করনীয়। বললাম, ‘তুমি শুধু চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থেক। ছবি তুলতে চাইলে আগে যা বলেছি মনে রেখ, নামাজের সামনে যেও না’।
রুকুতে যাবার পর কেভিনের প্রশ্ন শুনে হতভম্ব হয়ে গেলাম, ‘শ্যাল আই বো?’
প্রথমে খেয়াল করিনি কেভিন যখন আমার কনুইয়ে খোঁচা দিয়ে আবার জানতে চাইল বুঝলাম সে জানতে চাইছে সে সেজদা দেবে কি না । সালাম ফিরানোর পর কেভিনের দিকে চোখ পড়ল।
সে বলল, সে অত্যন্ত অপমানিত হয়েছে এতবার প্রশ্ন করার পরও উত্তর না দেবার জন্য। তাঁকে নামাযের মনঃসংযোগের কথা বুঝিয়ে বলার পর সে শান্ত হল। বলল, ‘জানো এখানে তেরশ’ জনের বেশি লোক এসেছে কিন্তু নামাজের সময় প্রিস্টের কথা ছাড়া আর কারো কথা শুনি নাই!’
বললাম তেরশ’ লোক কিভাবে বুঝলে? ‘আই কাউন্টেড’ কেভিনের উত্তর। ‘মসজিদে মোট ৩৫টি রো আছে, প্রত্যেক রো তে ৩০ জন করে দাঁড়ায় আর বাইরে ছিল অন্ততঃ তিন শ’।
মসজিদের বাইরে এসে কেভিন বলল, ‘জানো ! আমার মাঝে মাঝে মনে হয় ধর্ম জিনিষটা খারাপ নয়, আমার বাবা থাকলে জিগেস করতাম কোন ধর্মটা আমার পালন করা উচিত’।
আমরা হাটতে হাটতে বাস স্টপের দিকে যাচ্ছিলাম। চমৎকার ছায়াঢাকা পথ।সূর্যের তেজ থাকলেও গাছের ছায়া আর বাতাসে হাটতে মন্দ লাগছিলো না। কেভিনের মুখের দিয়ে তাকিয়ে দেখলাম, তার চোখ ছল ছল করছে। আমি জানতে চাইলাম কোন সমস্যা হয়েছে কিনা। সে বলল, ‘আমি কি তোমার বন্ধু হতে পারি?’
বললাম, ‘কেভিন প্রায় সারা দিন এক সাথে কাটাবার পর তোমার এই প্রশ্ন কেন?’
সে বলল, ‘মসজিদে আসার পর মনটা অন্য রকম হয়ে গেল। ইমাম সাহেব অনেক কথা বললেন যা টিপিক্যল প্রিষ্টদের মত নয়। আমি কি মুসলমান হতে পারি?’
এবার আমার অবাক হবার পালা। বললাম, আর কয়েকদিন পর্যন্ত যদি তোমার এই কথা মনে হয় তাহলে আব্দুর রহমানের সাথে কথা বলতে পারো, ওর বাসাতো লোংগাঙ্গে।
** উরঘুর অঘটনটা ঘটেছিলো ২০১১ তে
সব ক'টি পর্ব পড়লাম। মনে অনেক প্রশ্ন জমা হলো। অনেক উত্তরও পেলাম। এখন কেন জানি মনে হচ্ছে পৃথিবীতে ধর্মের প্রয়োজনীয়তা ও ধর্মব্যবসা দুই-ই আরও বহুদিন রয়ে যাবে।
দেখেছি সবুজ পাতা অঘ্রানের অন্ধকারে হতেছে হলুদ
ধর্ম নাকি মূর্খরা বিশ্বাস করে, জ্ঞানীরা অবিশ্বাস করে আর রাজারা বিশ্বাস করেনা কিন্তু কাজে লাগায়।
এটা মূর্খরা লেখেনি, জ্ঞানী লোকের কথা।
আমি এব্যাপারে মূর্খ থাকতেই পছন্দ করবো
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, 'সাধারণ মানুষের কালচার হলো ধর্ম, আর অসাধারণ মানুষের ধর্ম হলো কালচার।'
খুব পছন্দ হয়েছে মোতাহার হোসেন চৌধুরীর কথা। ধন্যবাদ রমিত
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"মোতাহার হোসেন চৌধুরী বলেছেন, 'সাধারণ মানুষের কালচার হলো ধর্ম, আর অসাধারণ মানুষের ধর্ম হলো কালচার।'" - আমারও খুব পছন্দ হয়েছে কথাটা।
আমরা হচ্ছি জন্মসূত্রে ধর্মাবলম্বী । কখনোই ধর্মগুলোকে বুঝে কোন ধর্ম কেমন করে কি বলছে তা বুঝে ধর্ম বিশ্বাস বা চর্চাকে গ্রহণ করিনি ।
যাঁরা করেছেন তাদেরকে আমি অন্য রকম শ্রদ্ধা করি । তা সে যে ধর্মই গ্রহণ করুক না কেনো ।
আর এক অর্থে আমার মনে হয় ধর্ম কি ? মানবতার বিবিধ ব্যাখ্যা ও বয়ান । তার আচার আচরণ সম্পর্কিত নানান বিধি নিষেধ ও নিয়ম রীতির নির্দেশনা । যেখানে সত্যিকার অর্থে নৈতিকতা আর মানবতাকে বিচারে আনলে পার্থক্য থাকার কথা তার উতপত্তি-ব্যুতপত্তি ও রিচুয়াল নির্দেশনার ও চর্চার তফাত ।
মূল কথা মানবতা, সত্য সন্ধান, নৈতিকতা - এসব ।
যার যে কোনো এক রকমকে মানলেই কোনো অনাচার, অন্যায়, অপকর্ম, হঠকারীতা - এসবের কোনো চিহ্নই সেখানে থাকার কথা নয় ।
অথচ আজ ধর্ম মানেই নানান বিভেদ বিভাজনের তত্ব তথ্যের বয়ান হয়ে দাঁড়িয়েছে যেনো ।
আমরা হচ্ছি জন্মসূত্রে ধর্মাবলম্বী । তবে সময় কাটানোর জন্যে হলেও বিভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে একটু আধটু জানার চেষ্টা করেছি। আমার বিশ্বাসও বাংলাদেশের গরীব মানুষের মত। ধর্ম একটা আশ্রয়। এক জন বিপন্ন বা নিঃস্ব মানুষ যখন প্রার্থণা করে, সে যা চায় কদাচিৎ তা পায়, তারপরও সে প্রার্থণায় বসে, এই বসাটা যতটা না পাওয়ার আশায় তার চেয়ে বেশি অপ্রাপ্তির কথা গুলো জানানোর ভরসায়
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
খুব ভালো বলেছো এ কথাগুলো, সাইদুল।
মানুষ কতো অন্তঃসার শূণ্য ভাবছি।
একবার মসজিদে গেলো আর মুসলিম হতে চাইলো কেভিন।
আমিও চার্চে যাই, মন্দিরে যাই। গুরুদুয়ারায় এখনো যাওয়া হয়নি।
সব জায়গাতেই ধর্মগুরুরাই কথা বলেন। অন্যরা নয়। সবাই চুপচাপ শোনে।
পেন্টিকষ্ট রা গান গায় বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে তাও বেশ লাগে।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মানুষ অন্তঃসার শূণ্য কীনা জানিনা। তবে মানুষ আবেগ প্রবণ। কেভিন অন্তঃত আমার চেয়ে বেশি আবেগ প্রবণ সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এর পর আরও দুই সপ্তাহ আমি চীনে ছিলাম। আমিচলে আসার আগের দিনও কেভিন আমাকে মসজিদের ইমামের বয়ানের কথা বলেছে এবং একাধিকবার জিগ্যাসা করেছে সে মুসলমান হতে পারে কীনা
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
আর বাবাই যদি সব প্রশ্ন বা সঠিক পথের উত্তর বা দিক দেখাতে পারতো তবে আমরা হিন্দু থেকে মুসলিম হলাম ক্যানো!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
প্রশ্ন এবং অনুভূতিটা কেভিনের, সে এখানে নেই। আর সবাই কিন্তু বাবার অমতে যেয়ে নতুন কিছু নাও করতে পারে। আমরা হিন্দু থেকে মুসলমান হয়েছি কথাটিও সর্বাংশে সত্যি নয়। কোন কোন ক্ষেত্রে আমাদের পূর্ব পুরুষদের হয়তো নির্দিষ্ট কোন ধর্মই ছিলো না। সে কখনও আগুনের শক্তিকে ভয় পেয়া আগুণের পুজো করছে, কখনও চাঁদ, সূর্যকে দেবতা মেনেছে। কখনও সমূদ্রকে।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বলা যায় আমাদের পূর্বপুরুষ হিন্দু ছিলেন এবং নিচু জাতের।
আমি পূর্বপুরুষ বলতে ২০০/৩০০ বছর থেকে ৫০০ বা ১০০০ বছর আগে যাচ্ছি।
১০০০০০ বছর আগে গেলে অগ্নি আও প্রকৃতিপুজারি পাওয়া যাবে হয়তো।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
মজার ব্যাপার হচ্ছে একসময় মনেই থাকবেনা, তর্কটা কী নিয়ে শুরু হয়েছিলো। তার আগেই আমি থেমে যেতে চাই। তোমার কথাই ঠিক
বাবাই যদি সব প্রশ্ন বা সঠিক পথের উত্তর বা দিক দেখাতে পারতো
সম্ভবত কেভিনের বাবা ছিলোনা বলেই বেচারা এই গুঢ় তত্ত্বটা উপলব্ধি করতে পারেনি!
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
না, না, তা ক্যানো। আর আমরা তো তর্ক করছি না।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
প্রিয় রাজীব, আমরা হিন্দু থেকে মুসলিম হলাম কবে? মানে কি এই কথার?
আমরা যে কত রকম বিভ্রান্তির মধ্যে থাকি!
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সেই ৩৭০০ বছর আগে থেকে বাংলার শাসকদের একটা তালিকা দিলাম।
1 Legendary kings of Magadha: Brihadratha Dynasty (c. 1700–799 BC)
2 Pradyota Dynasty (799–684 BC)
3 Shishunaga Dynasty (684–424 BC)
4 Nanda Dynasty (424–321 BC)
5 Maurya Dynasty (324–185 BC)
6 Mahameghavahana Dynasty (c. 250 BC–400 AD)
7 Shunga Dynasty (185–73 BC)
8 Kanva Dynasty (73–43 BC)
9 Gupta Empire (c. AD 240–550 )
10 Gauda Kingdom
11 Khadga kingdom
12 Pala Empire
13 Chandra Dynasty
14 Sen Dynasty
15 Deva Dynasty
16 Khilji dynasty (1204-1227)
17 Governors of Bengal under Mamluk Sultanate (1227–1281)
18 Balban dynasty (1281-1324)
19 Governors of Bengal under Tughlaq Sultanate (1324–1339)
20 Independent Sultans of Bengal during Tughlaq Sultanate (1338-1352)
21 Ilyas Shahi dynasty (1352-1414)
22 House of Raja Ganesha (1414-1435)
23 Restored Ilyas Shahi dynasty (1435-1487)
24 Habshi rule (1487-1494)
25 Hussain Shahi dynasty (1494-1538)
26 Governors of Bengal under Suri Empire (1532–1555)
27 Muhammad Shah dynasty (1554-1564)
28 Karrani dynasty (1564-1576)
29 Mughal Subahdars of Bengal Subah (1565–1717)
29.1 During the reign of Akbar
29.2 During the reign of Jahangir
29.3 During the reign of Shah Jahan
29.4 During the reign of Aurangzeb
29.5 Post Aurangzeb Subahdars
30 The Nawabs of Bengal
31 Nawabs of Murshidabad
32 Hindu Rajas in Bengal
32.1 Maharajas of Bhurshut
32.2 Maharajas of Bankura
32.3 Maharajas of Koch kingdom
32.4 Maharajas of Midnapore
32.5 Maharajas of Jessore Kingdom
32.6 Maharajas of Sripur
32.7 Maharajas of Nadia
33 British Colonial Period
33.1 Chief Agents (1701–1756)
33.2 Governors (1757–1854)
33.3 Lieutenant-Governors (1854–1912)
33.4 Governors (1912–1947)
34 After Independence of India and Pakistan
34.1 Governors of West Bengal
34.2 Chief Ministers of West Bengal
34.3 Governor of East Pakistan
35 After independence of Bangladesh
35.1 Prime Ministers of Bangladesh
35.2 Presidents of Bangladesh
35.3 Prime Ministers of Bangladesh
পৃথিবীর প্রাচীনতম দর্শন সাংখ্য দর্শন আমাদের বাংলার মাটির দর্শন। তারই পথ ধরে বৌদ্ধ দর্শন। বৌদ্ধ দর্শনও যে এই মাটির দর্শন ও আমাদের পূর্বপুরুষরা যে মূলতঃ বৌদ্ধ ছিলেন, তা তো আমি 'ওম মনিপদ্মে হুম' আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত লিখেছি।
এই তালিকাটি চমকপ্রদ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
উট বা বাঘের পিঠে বা জায়নামাজ পানিতে বিছিয়ে, তিমি বা ডলফিনের পিঠে চড়ে আসা সৈয়দ রা বাদে এদেশের বাকি সবাই তো নিচু জাতের হিন্দুই ছিলাম; নয়কি!
আমাদের যাদের গায়ের রঙ ফর্সার দিকে তাদের অতীত তো আরো ভয়াবহ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
কম্প্লিটলি রং ইনফর্মেশন রাজীব। কোথায় পাও এসব তথ্য? (আমাদের পূর্বপুরুষরা যে নীচু জাতের হিন্দু ছিলো, এইসব তথ্য কোথায় পাও?)। আবারো বলছি আমাদের বাংলাদেশের মানুষেরা অর্থাৎ আমাদের পূর্বপুরুষেরা মূলতঃ বৌদ্ধ ছিলেন। সমগ্র বাংলাদেশ জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা প্রাচীন নিদর্শনগুলো (মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর, জগদ্দল, বিক্রমপুর বিহার, ময়নামতি, ইত্যাদি) আজও তার সাক্ষ্য বহন করছে। তোমাকে অনুরোধ করবো আমার লেখা 'ওম মনিপদ্মে হুম' আর্টিকেলটি মনযোগ দিয়ে পড়তে। আমি বিষয়টি সেখানে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। যদি সেখানে কোন ভুল পাও, আমাকে জানাবে কাইন্ডলি।
এছাড়া ইতিহাসে সত্য-মিথ্যা বিষয়েও একটি পোস্ট দিয়েছি।
হতে পারে আমার ধারণা ভুল।
তবে বৌদ্ধ ধর্ম কে মুটামুটি ভাবে শান্তির ধর্ম বলা যায়। তাই বৌদ্ধ থেকে মুসলিম হবার বিষয়টি ক্লিয়ার না। যদি না শশাঙ্কের সময় সব হিন্দু না হয়ে থাকে...... (সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
প্রিয় রাজীব, তোমার ধারণা মোটামুটি ভুল (১০০% নয়)। আমাদের বাংলাদেশের পূর্বপুরুষরা মূলতঃ বৌদ্ধই ছিলেন। এই বাংলাদেশে যত প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে সবই বৌদ্ধ নিদর্শন, পক্ষান্তরে হিন্দু প্রাচীন নিদর্শন প্রায় নাই। বিষয়টি আমি আমার লেখা আর্টিকেল 'ওম মনিপদ্মে হুম'-এ মোটামুটিভাবে দেখানোর চেষ্টা করেছি।
সম্রাট শশাঙ্ক বৌদ্ধ ছিলেন না, এবং বৌদ্ধ ধর্মের প্রতি উনার বিরূপতাও ছিলো, তবে তনি নিজেও সনাতনী ছিলেন না, হিন্দু তো ছিলেনই না। তবে তিনি পৌত্তলিক ছিলেন (শিবের পূজারী)।
বৌদ্ধদের একটা অংশকে সনাতনীতে পরিণত করার একটা প্রসেস চলেছে গুপ্ত যুগে। আর বৌদ্ধদের নির্যাতনের মুখে হিন্দু ধর্মে দীক্ষিত করার বিষয়টি মাত্রাতিরিক্ত ছিলো বাংলার বাইরে থেকে আগত আগ্রাসী সেন রাজবংশের শাসনামলে। ঐ শাসনামলেই আমাদের কয়েক শতাব্দীর বৌদ্ধ বিহারগুলো ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।
ধর্ম হিসাবে বৌদ্ধধর্ম যে শান্তির ধর্ম এটা আমরা সবাই জানি (তবে ব্যাবহারিক জীবনে বৌদ্ধরা শান্তিপ্রিয় ছিলো কি ছিলোনা সেটা আলোচনা সাপেক্ষ)। আর বৌদ্ধদের ইসলাম ধর্ম গ্রহনের বিষয়ে তুমি যে রিমার্কস দিয়েছ, সেই বিষয়ে বলতে চাই, শুধু বাংলাদেশ নয়, স্ট্রং বুদ্ধিস্ট ব্যাকগ্রাউন্ড-এর অনেক জাতিই বর্তমানে স্ট্রং মুসলিম জাতি। যেমন, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, তুরষ্ক, মালেশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ইত্যাদি। আসলে বৌদ্ধ দর্শনের সাথে ইসলামী দর্শনের অনেক মিল আছে। বিষয়টি নিয়ে আমার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। চেষ্টা করছি জানার ও বোঝার। যাহোক প্রসঙ্গ যেহেতু তুলেছোই, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে, এই বিষয়ে কয়েকটি আর্টিকেল লিখবো।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ।
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সপ্তম খ্রিস্টাব্দের দিকে যখন বৌদ্ধবিরোধী তুমুল অভিযানে উত্তর ভারতে বৌদ্ধদের অবস্থা নিদারুন হয়ে উঠেছিল বাংলা তখন বৌদ্ধধর্মের পৃষ্ঠপোষক হয়ে উঠেছিল। বাংলায় তখন জনতার সরকার পাল রাজবংশ মহাপ্রতাপে শাসনকার্য পরিচালনা করতে শুরু করেন, শুধু বাংলা নয় বাহুবলে ও জনসমর্থনে পালরা তখন জয় করে নিয়েছে সমগ্র উত্তর ভারত হয়ে গান্ধারা কাবুল পর্যন্ত। একের ওর এক প্রতিষ্ঠা করতে শুরু করে ওদন্তপুরা, সোমপুরা থেকে হয়ে বিক্রমপুরা বিহার পর্যন্ত জ্ঞান চর্চার কেন্দ্রগুলো। বাংলার জনতার হস্তক্ষেপে উপমহাদেশে আরো চারশো বছর দাপটের সাথে পদচারণা করে বৌদ্ধ দর্শন। উপরন্তু এই জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে থাকে দিকে দিকে। বিখ্যাত রেশম পরিবহন পথ ধরে সেই আলো তুরষ্ক হয়ে পৌছে যায় কাজাকস্তান, উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান ও কিরগীজস্তান পর্যন্ত।
পালদের দুর্বলতার সুযোগে তাদেরই সেনাপতি সেনরা জনসমর্থনহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিছক বাহুবলে বাংলার ক্ষমতা দখল করে শাসন করতে লাগল। শাসন না বলে তাকে তাকে দুঃশাসনই বলা চলে। তারা বৌদ্ধদের ওপরে হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। তারা বাংলা থেকে বৌদ্ধধর্ম উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। এতে বৌদ্ধরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এরপর আরও একশো-দেড়শো বছর কাটল।
ত্রয়োদশ শতকে (১২০৫ খিস্টাব্দ) বাংলায় এল মুসলিম রাজশক্তি। অবশ্য তার আগে থেকেই অর্থাৎ দশম শতাব্দী (কিংবা তারও আগে) থেকেই আরব-পারসিক সুফিসাধকগণ বাংলায় ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। সেনশাসনের ওপর বিতৃষ্ণ এবং বিপর্যস্ত বৌদ্ধরা সেই সুফিদের জিজ্ঞেস করল, আমাদের বৌদ্ধধর্মে নারীর তো অনেক সম্মান। তা আপনার ধর্মের নারীর অবস্থান কি?
সুফিরা হেসে বললেন, আমাদের ধর্মে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেস্ত। বৌদ্ধরা আরো বললেন আমাদের ধর্মে তো জন্মসূত্রে মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয়না, মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয় কর্মসূত্রে, আপনাদের ইসলাম ধর্ম কি বলে? সুফীরা বললেন "আমাদের ধর্মেও তাই।" বৌদ্ধরা অধিকতর বললেন, "আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে তো কোন জাত-পাত প্রথা নেই, আছে সামাজিক সাম্য, আপনাদের ধর্ম কি বলে?" দরবেশ-সুফীরা স্মিত হেসে বললেন, "আমাদেরও তাই।"
জন্ম হল বাঙালি মুসলমানের। তবে তাদের হৃদয়ে রয়ে গেল বুদ্ধের শিক্ষা।
এভাবে বাংলায় মানবতাবাদী ধারাটি অব্যাহত রইল।
পালদের দুর্বলতার সুযোগে তাদেরই সেনাপতি সেনরা জনসমর্থনহীন অভ্যুত্থানের মাধ্যমে নিছক বাহুবলে বাংলার ক্ষমতা দখল করে শাসন করতে লাগল। শাসন না বলে তাকে তাকে দুঃশাসনই বলা চলে। তারা বৌদ্ধদের ওপরে হয়ে উঠেছিল খড়গহস্ত। তারা বাংলা থেকে বৌদ্ধধর্ম উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পড়ে লাগল। এতে বৌদ্ধরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে।
এরপর আরও একশো-দেড়শো বছর কাটল।
ত্রয়োদশ শতকে (১২০৫ খিস্টাব্দ) বাংলায় এল মুসলিম রাজশক্তি। অবশ্য তার আগে থেকেই অর্থাৎ দশম শতাব্দী (কিংবা তারও আগে) থেকেই আরব-পারসিক সুফিসাধকগণ বাংলায় ইসলাম প্রচার শুরু করেছিলেন। সেনশাসনের ওপর বিতৃষ্ণ এবং বিপর্যস্ত বৌদ্ধরা সেই সুফিদের জিজ্ঞেস করল, আমাদের বৌদ্ধধর্মে নারীর তো অনেক সম্মান। তা আপনার ধর্মের নারীর অবস্থান কি?
সুফিরা হেসে বললেন, আমাদের ধর্মে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেস্ত। বৌদ্ধরা আরো বললেন আমাদের ধর্মে তো জন্মসূত্রে মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয়না, মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয় কর্মসূত্রে, আপনাদের ইসলাম ধর্ম কি বলে? সুফীরা বললেন "আমাদের ধর্মেও তাই।" বৌদ্ধরা অধিকতর বললেন, "আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে তো কোন জাত-পাত প্রথা নেই, আছে সামাজিক সাম্য, আপনাদের ধর্ম কি বলে?" দরবেশ-সুফীরা স্মিত হেসে বললেন, "আমাদেরও তাই।"
জন্ম হল বাঙালি মুসলমানের। তবে তাদের হৃদয়ে রয়ে গেল বুদ্ধের শিক্ষা।
এভাবে বাংলায় মানবতাবাদী ধারাটি অব্যাহত রইল।
'সুফিরা হেসে বললেন, আমাদের ধর্মে মায়ের পায়ের তলায় সন্তানের বেহেস্ত। বৌদ্ধরা আরো বললেন আমাদের ধর্মে তো জন্মসূত্রে মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয়না, মানুষের মান-মর্যাদার বিচার হয় কর্মসূত্রে, আপনাদের ইসলাম ধর্ম কি বলে? সুফীরা বললেন "আমাদের ধর্মেও তাই।" বৌদ্ধরা অধিকতর বললেন, "আমাদের বৌদ্ধ ধর্মে তো কোন জাত-পাত প্রথা নেই, আছে সামাজিক সাম্য, আপনাদের ধর্ম কি বলে?" দরবেশ-সুফীরা স্মিত হেসে বললেন, "আমাদেরও তাই।"
জন্ম হল বাঙালি মুসলমানের। তবে তাদের হৃদয়ে রয়ে গেল বুদ্ধের শিক্ষা।
এভাবে বাংলায় মানবতাবাদী ধারাটি অব্যাহত রইল।'
চমৎকার রমিত
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ধন্যবাদ সাইদুল ভাই।
আজ দেখে আসলাম হোয়াইট চ্যাপেল স্টেশনের সামনে মাইক ইত্যাদি নিয়া ইসলাম ধর্মের মেলা বসছে।
এমনিতেই বাজার এলাকা। তার উপির মাইকের শব্দে কান পাতা দায়। (সম্পাদিত)
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
আমি সিয়েরা লিওনে বিশাল সাউন্ড বক্স লাগিয়ে রাস্তার মধ্যে চার্চের অনুষ্ঠান করতে দেখেছি, কাউকে আপত্তি করতে শুনিনি। সিয়েরা লিওনে অফিসিয়ালি ৬০ ভাগ মুসলমান (সম্পাদিত)
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
কিন্তু এই যে শব্দ দূষণ তা নিশ্চয়ই সমর্থন করছেন না!!
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
সেটাও নির্ভর করে মুডের উপরে। বাংলাদেশে হুজুরদের ওয়াজ নসিহত যাদের কাছে শব্দ দূষণ মনে হয় তাদের অনেকেই হাসপাতালের পাশে সঙ্গীতের জলসা বসান। রাজনৈতিক বক্তৃতার সময়ও গলা ফাঁটিয়ে ফেলেন। আগের বারের মতই বলছি। তর্কে বহুদূর।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
:thumbup:
বাহ! আপনার ভ্রমণকাহিনীতে থাকে দার্শনিকতা আর প্রত্যুতপন্নমতিত্ব। কথোপকথনগুলো টানে। দেখার চোখই দৃশ্যকে সুন্দর করে তুলে -- আরেকবার বুঝলাম। 🙂
ধন্যবাদ নুপুর। মানুষ সব সময়ই আমাকে সবচেয়ে বেশি টানে। ছোট খাটো মানুষেরও দর্শন থাকে, জীবন বোধ থাকে। মানুষের কথা বার্তা আমার মজা লাগে। আমি হাটুরে মানুষ দেখার জন্যে চীনের গ্রামের বাজারে ঘুরে বেড়াতাম
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
আমি হাটুরে মানুষ দেখার জন্যে চীনের গ্রামের বাজারে ঘুরে বেড়াতাম - :clap: :clap:
লেখাটা খুবই ভালো লাগল, জানা হল অনেক কথা।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থেকো মাহবুব
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
শেষ পর্বটাও চমৎকার হয়েছে! লেখার শেষটায় কেভিনের মতো আমারও চোখ ভিজে উঠেছিলো। আর একটা কারণ হতে পারে, আপনার লেখা পড়ার সময় শুনছিলাম বারি সিদ্দিকীর আধ্যাত্মিক গান।
সবগুলো বিশ্বধর্ম (বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান ও ইসলাম)-ই প্রাচ্যের। আসলে আমাদের প্রাচ্যবাসীদের মনের মধ্যেই এই আধ্যাত্মিকতা প্রোথিত রয়েছে। আধ্যাত্মিকতাকে আমরা আমাদের জীবন থেকে কিছুতেই বাদ দিতে পারিনা। যতদূর জানি বাষ্পীয় ইঞ্জিনের প্রথম আবিষ্কর্তা চীনারা। তারা এই যুগান্তকারী যন্ত্র ব্যবহার করেছিলো দুটি কাজে ১। কৃষিকার্যে সেচ ব্যবস্থায় (উৎপাদনে), এবং মন্দিরের দরজা খুলতে (আধ্যাত্মিকতায়); অর্থাৎ পেটের খোরাক ও মনের খোরাক দুটিকেই তারা সমান গুরুত্ব দিয়েছিলো।
আমরা প্রাচ্যবাসীরা পেট বা দেহসর্বস্ব নই, পেটের পাশাপাশি মরমের গুরুত্বও আমরা বুঝি।
আমরা প্রাচ্যবাসীরা পেট বা দেহসর্বস্ব নই, পেটের পাশাপাশি মরমের গুরুত্বও আমরা বুঝি। :thumbup:
রমিত আমার জানা শোনা অনেক কম।
তোমার মন্তব্যগুলি খুবই চমৎকার। অনেক কেই নতুন করে ভাবাবে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
🙂 🙂 🙂 🙂
ভ্রমণকাহিনীতে যদি ধমর্ের কথা এসেই যায়, আমি ভিক্টর হুগোর সাথে কন্ঠ মিলিয়ে বলবো, টলারেশন ইজ দা বেষ্ট রিলিজিয়ন!
অপরের অশান্তি না ঘটিয়ে ধমর্ কারো মনে শান্তি নিয়ে এলে কোন ক্ষতি তো দেখিনা!
সহমত
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
দারুণ একটা কাজ করলেন ভাই। অনেক কিছু জানা হল।
পুরাদস্তুর বাঙ্গাল
ধন্যবাদ ভাই।তোমার ভালো লাগলেই আমি খুশি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
মূল লিখা আর আলোচনা দুটোই প্রাণবন্ত লাগল।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আলোচকদেরও ধন্যবাদ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"এসব তথ্য আমার কাছে সম্পূর্ণ নতুন, শুনতেও ভালো লাগছিল" - আমার কাছেও তাই।
"ধর্ম আমার কাছে এক ধরণের আশ্রয়, তুমি যখন অন্যায় ভাবে তাতে আঘাত কর, অথবা আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিতে চাও আমার আমার মনে হয় আমি বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়ছি" - এ যে গভীর দর্শন, সাইদুল!
‘শ্যাল আই বো?’ - রীতিমত চমকে উঠলাম!
পাঠকের মন্তব্যগুলো পরে পড়বো। এখন শুধু এটুকু বলতে চাই, তিন পর্ব পড়ে বেশ বুঝতে পারছি কেন তোমার 'অচেনা চীনে'র স্টক ফুরিয়ে গেলো! অসাধারণ হ্লেখা হয়েছে, নিঃসন্দেহে।
অসাধারণ হ্লেখা হয়েছে - লিখতে চেয়েছিলাম, 'অসাধারণ লেখা হয়েছে'।
স্যার, অনেক ধন্যবাদ। আপনার প্রতিটি মন্তব্যই প্রেরণা দায়ক। আমি চেষ্টা করবো অচেনা চীনে থেকে মাঝে মধ্যে পোষ্ট করতে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান