আমার উত্তর শুনে ড্রাইভার রঘু দাসকে একটু চিন্তিত মনে হল। ঝাড়খন্ডে বৌ বাচ্চা রেখে কিছুদিন হল সে কলকাতায় এসেছে। কলকাত্তা এখনও পুরোপুরি চেনা হয়ে ওঠেনি। লালবাতিতে গাড়ি থামার সাথে সাথে মোবাইলে কার সাথে মাতৃভাষায় কথাবার্তা শুরু করলো সে। সামাঝ গিয়া বলে ফোণ বন্ধ করে আমার দিকে ফিরলো, হাসিতে মাখামাখি তার মুখ, ‘কলকাত্তার রাস্তার লাফড়া হলো বাবু একই রাস্তার ওনেক নাম বুঝলেন এই যেমন পার্ক স্ট্রিটের একদিকের বোর্ডে দেখবেন মাদার তেরেসা রোড লেখা আছে, আবার আপনি যদি ফ্রি সকুল রোড বলতেন আমি বিলকুল বুঝে নিতুম। মির্জা গালিব স্ট্রিট তো ওই রাস্তারই দুসরা নাম আছে। চিন্তা কোরবেন না, তিস মিনিটে পৌছে দেবো, এই যে ওভার ফ্লাই আছে এই ওভার ফ্লাই সিধা এজেসি রোড তক লিয়ে যাবে সেখান থেকে বায়ে মোড়’।
কলকাতার রোদে ভাজা ভাজা হয়ে রঘু দাসের ভ্যাজর ভ্যাজর শুনতে শুনতে ফ্লাইওভার পেরিয়ে ভিড়ের মধ্যে আটকে গেলাম।এম্বসাডার গাড়ির কাঁচ পর্যন্ত গরম হয়ে যাচ্ছে রোদে, মেজাজ ঠিক রাখা যাচ্ছে না। বাইরে তাকিয়ে দোকানের সাইন বোর্ড পড়তে থাকলাম। জায়গার নাম লেখা বেলেঘাটা, বললাম, আপনি না এজেসি রোডে ঢোকার কথা বললেন। মাথা চুলকাতে চুলকাতে রঘু বলল, বাবু ভুল রাস্তা দিয়ে নেমে গিয়েছি। নতুন তো, বুঝলেন না। পেছন থেকে বৌ বাচ্চারা খোঁচাতে লাগলো, এর মানে হচ্ছে, ‘মুখ বন্ধ রাখো, তোমার ধমকা ধমকির জ্বালায় আরও ভুল কোথাও নিয়ে যাবে’। মুখে কুলুপ এটে বসে রইলাম। অনেক কসরতের পর আমদের গাড়ি যখন হোটেল হাউসেজ ফরটি থ্রির সামনে থামলো ততক্ষণে দেড়ঘন্টা হয়ে গেছে। ভাগ্যিস এয়ারপোর্ট গাড়ির জন্যে ২৮০ টাকা দিতে হয়েছিলো, নাহলে সে যে পথে এসেছে ভাড়া ৪০০ ছাড়িয়ে যেত।
হাউসেজ ফরটি থ্রি আমাদের পুরনো হোটেল। মির্জা গালিব স্ট্রিট বলা যায় বাংলাদেশি ট্যুরিস্টদের জায়গা। ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে পাঁচ হাজার টাকা পর্যন্ত রুম পাওয়া যায় এই রাস্তায়।আগের দু’বারের অভিজ্ঞতায় আমি জানি এর মধ্যে হাউসেজ ফর্টি থ্রিই আসলে হোটেল বাকি গুলি এক সময় বাড়ি ছিলো আস্তে ধীরে হোটেল হিসেবে গড়ে উঠেছে। ইন্টারনেটে দেখতে মোটামুটি ভালো হলেও থাকার জন্যে তেমন নয়। এর আগে ২৭০০ টাকায় উঠেছিলেম এখানে। এবার ইন্টারনেটে বুকিং দিয়ে গিয়েছিলাম। ভাড়া ৩১২৫। হোটেলের পুরনো কাউন্টার ম্যানেজার আমাদের দেখেই খুশি হয়ে উঠলো। বললাম ভাড়া বেড়ে গেলো যে। বলল, স্যার booking.com এর মাধ্যমে এসেছেন, ভাড়া তো বেশি হবেই। ট্যাক্সসহ ভাড়া আসবে ৩৬৬৯ রুপি। বললাম ঠিক আছে ৭ দিনের বদলে একদিন বুক করেন, কাল রুমছেড়ে দিয়ে আবার উঠবো আগের ভাড়ায়। ম্যানেজার বিনয়ের অবতার হয়ে গেলেন, বললেন স্যার আপনি বুকিং এর শর্ত দেখেন নি? এখন ছাড়তে গেলেও তো আপনাকে শুধু শুধু একদিনের পয়সা দিতে হবে। রাগে গজগজ করতে করতে করতে বললাম তাহলে আর আপনাদের এখানে এসে কী লাভ হল?তিনি বললেন স্যার একদিনের বুকিং দিয়ে চলে আসতেন বাকিটা আমরা দেখতাম। বললাম সবচেয়ে ভালো হলো বুকিং না দিয়ে আসা।
আমাদের জন্যে ২১০ নম্বর রুম বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। লাগেজ টাগেজ সব ওয়েটাররাই নিয়ে গেল। জেলখানার মত লিফটে চড়ে রুমে গিয়ে মন খারাপ হল, এর আগে আমরা ২০৩ নম্বর রুমে ছিলাম। তার তুলনায় এই রুমটি ছোট। এসির বাতাস সরাসরি বুকে লাগে। বঊ বলল এখনই রিসেপসনে ফোন কর। আমরা ২০৩ চাই।
ফোনে কথা শুরু করেছি, হঠাৎ করে সোরগোল শুরু হল। টেলিফোনে হুড়ো হূড়ির শব্দ শুনছি, কে যেন বলছে হিল রাহাহে’।আমার খাট নড়ছে।শ্রেয়া জানালার কাছে দাঁড়িয়ে ছিলো বলল, বাবা সব মানুষ রাস্তায়, ভূমিকম্প হচ্ছে নাকি?
তোমার কলকাতা ভ্রমণ কাহিনী উপভোগ করছি, ভাইয়া! ছোটবেলা থেকে কলকাতার গল্প পড়ে পড়ে প্রায় সব কিছুই চেনা মনে হয় এর। গড়ের মাঠ, হাওড়া ব্রিজ, ইডেন গার্ডেন অথবা গঙ্গার ধার... অথচ 'দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া'র মত বাড়ির পাশের এই দেশটিতে যাওয়া হয়নি কখনো। মাদার টেরেসার আশ্রমে কি গিয়েছিলে তোমরা একবার? কত গল্প পড়েছি আর ছবি যে দেখেছি এর!
আরো কিছু ছবি জুড়ে দিতে পারো, ভাইয়া! বরাবরের মত ঝরঝরে, মুচমুচে লেখনী! :clap: :clap:
ছবির কথা মনে রইলো। দেখি বাড়ানো যায় কিনা
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ভাই, আপনি প্রতিটি পর্ব খুব সাসপেন্স রেখে শেষ করছেন! 🙁
পাঠকদের চাপের মুখে রেখে দিচ্ছেন... 😛
উপরে সাবিনাপা যেমনটি বলেছেন -
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম! :dreamy:
ঐ দেখা যায় তালগাছ, তালগাছটি কিন্তু আমার...হুঁ
পাঠকদের চাপে রাখতে চাইনা। একটানা লিখতে কষ্ট হয়। দুর্বল টাইপিস্ট
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
তিনের অপেক্ষায় থাকলাম...
বুঝতে পারছি জম্পেশ হবে কাহিনিটা। ভ্রমনটা।
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
চলে আসবে তিন
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
ওভার ব্রীজের পর বামে মোড় আর তিন মিনিট ! মাথার গন্ডগোলটা দেড় ঘন্টায় এসে জবাব পেলো।
দারুন টেনে নিয়ে এনে পরের পর্বের দরোজায় আটকে দিলো।
কি করা আর অপেক্ষা ছাড়া !
আসলে রঘুদাসের মুখের ভাষা লেখায় বসাতে গিয়েই এই যন্ত্রণা। সে ফ্লাইওভারকে বলে ওভারফ্লাই। আর তিরিশ কে তিস
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
আরে ওয়াহ!
বস এই ভ্রমণ কাহিনী শেষ কইরেন না প্লিজ! যতক্ষণ পারেন আমাদের কলকাতায় জমিয়ে রেখে দেন। কলকাতায় এই হোটেলপাড়াটা তেমন চলনসই না হলেও ছাত্রাবস্থায় এবং তার পরেও বেশ কয়েকবার গিয়ে উঠতে হয়েছে। সস্তার জায়গাতেই ছিলাম -- নানান অভিজ্ঞতা। মায়া আছে জায়গাটায়।
আপনার দুর্ধর্ষ বর্ণনায় আবার ফিরে গেলাম -- ভিনদেশের বাংলা-দেশে।
না, দেখি কতদূর যাওয়া যায়!
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
কাজী সাদিকের লেখায় তোমার কথা পড়ে তোমার সেলিব্রিটি চেহারাটা আমার কাছে আরও স্পষ্ট হল নুপুর (সম্পাদিত)
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
সাইদুল ভাই,
হা হা। না না, মোটেও ব্যাপার তা না। =)) =)) =))
ব্যাটা আমারে আসলেই ডুবাইসে।
ওই লেখা পড়ে আমি নিজে ভাবতেসিলাম এই মহান লোকটা কে?
চিনতে পেরেছো?
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
জব্বর!! ভ্রমন কাহিনি না, মনে হল কোন জমজমাট উপন্যাসের শুরু।
ধন্যবাদ মাহবুব। সেটিই তো সমস্যা, শুরু হয় তো শেষ হয়না। দম থাকেনা।
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
তোমার লেখার সাসপেন্স বেশ উপভোগ করছি। সিরিজের পরবর্তী সংখ্যার অপেক্ষায় থাকলাম।
কোলকাতায় জীবনে একবারই গিয়েছি, আজ থেকে ১১ বছর আগে, ২০০৪ সালে। এখন নিশ্চয়ই অনেক কিছুর পরিবর্তন হয়েছে।
স্যার আমি গত বছর প্রথম গিয়েছিলাম, এক বছরে কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন চোখে পড়েছে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
অনেক আগ্রহ নিয়ে আপনার কলকাতা ভ্রমণ ফলো করছি সাইদুল ভাই। সাদার স্ট্রীটের কিছু "ছিল বাড়ি, এখন হোটেল"-এ বেশ অনেকবার থাকা হয়েছে ছাত্র বয়সে। ওই জায়গাটার আমেজই আলাদা।
গত বছর প্রথম গিয়েছি কলকাতায়। সাদার স্ট্রিটে রুম ঠিক করে দিয়েছিলো এক জন, পরে অবশ্য থাকা হয়নি। তবে মনে হয়েছে সাদার স্ট্রিট অনেক রাত অবধি জেগে থাকে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান