হাতের কাছে থাকলে আমি মোবাইল ফোন ধরি। নাম, নম্বর না দেখেই ধরি। কালও ধরলাম।
‘ সাইদ ভাই, ফোন হারিয়ে ফেলার পর কী যে মসিবতে আছি!’
ওপারে আমার খুব পরিচিত এবং প্রিয় সহকর্মীর গলা। কিন্ত আমাকে তিনি স্যার ডাকেন। তাই একটু কনফিউজড হয়ে গেলাম। বললাম হ্যা ভাই, আমিও হারিয়ে ছিলাম।
– ছিলাম? সে তো পাস্ট টেন্স, আমি তো কাল হারিয়েছি, সদ্য বিধবার মত অবস্থা।
– হা হা, ভালো বলেছেন
– ভাই আপনি আমার দুঃখ না বুঝে হুদাই প্যাচাল পাড়তেছেন, ইকবাল কী ফোন করেছিল?
এবার আমি নিশ্চিত আমার পরিচিত সেই অফিসারেরই কন্ঠ। তবে ফোনটি তিনি আমার কাছে করেননি। তারপরও আমি মজা করার জন্যে হ্যা হু করে চালিয়ে যাচ্ছিলাম। এক পর্যায়ে আর পারলাম না। বললাম
– তুমি কার সাথে কথা বল ছো ভাই?
ওপার থেকে বিব্রত কর হাসির শব্দ শুনলাম।‘ স্যার আপনি! আবুল টা কেমন আবুল দ্যাখেন, সাইদ ভাই’র নাম্বার চাইছি দিছে সাইদ স্যারের নম্বর। আর আমি স্যার, একটু মাথা খারাপ অবস্থায়ও আছি।‘
– বল কী! কেন?
এবার তিনি হাসিতে ভেঙ্গে পড়লেন, ‘আমি না স্যার হাইজ্যাক হয়ে গেছিলাম হি হি’। আমার এবার অবাক হবার পালা। বিদেশেও শুনেছি মহিলারা মাঝে মধ্যে এডভ্যাঞ্চারের জন্যে সুন্দর ছেলেদের হাইজ্যাক করে। যার কথা বলছি তিনি সুদর্শন কোন সন্দেহ নেই, তবে তিনি হাজী মানুষ ওধরনের বদ মতলবে কিছু হলে তিনি সর্মিন্দা হতে পারেন, বেহায়ার মত হাসবেন না। বললাম কোথা থেকে হাইজ্যাক হলে? কে করলো?
– এই তো স্যার গুলশান থেকে। খুবই শাদামাটা উত্তর যেন তিনি প্রায়ই হাইজ্যাক হন, এবার হয়েছেন গুলশান থেকে।
– কী ভাবে?
– বাসের জন্যে দাড়িয়েছিলাম, একটি ট্যাক্সি থামলো, মনে হল ট্রিপ দিচ্ছে, ওই যে অনেক সময় ড্রাইভাররা করে না! আমিও উঠলাম।
– তারপর।
– বলল, যা কিছু আছে দিয়ে দেন।
– বলল?
– না আগে পকেট হাতড়িয়ে পাঁচ, সাতশ’ যা ছিল, নিয়ে নিয়েছিল। পরে ড্রাইভার, মানে যে গাড়ি চালাচ্ছিল তাকে বলল, ওনার কাছে তো সাত শ’ টাকা আছে মোটে?
– ব্যাস?
– ব্যাস কেন স্যার, ড্রাইভার বলল, মাইর দে টাকা বারাইবো
– মেরেছে নাকি?
– না স্যার, আমি কোঅপারেট করেছি। দে আর গুড বয়েজ, গায়ে হাত দেয় নাই।
– তুমি কী ভাবে কোঅপারেট করলা?
– স্যার দু’টি ক্রেডিট কার্ড ছিল, দিয়েছি, পিন নম্বরও বলে দিলাম।
– পিন নম্বর বলতে পারলা?
– স্যার এর আগে কে যেন এক জন পিন নম্বর ভুল বলেছিল, তাকে চাকুর কোপ দিয়েছে কয়েকটি। আমি অফিস থেকে ফিরছি, স্যুট টাই পরা। এই ড্রেসে চাকু খাওয়া টা কী ঠিক হত? আই ওয়াজ অনেস্ট, বলেছি একটায় টাকা আছে, একটায় নাই। ওরা ২০ হাজার নেবে বলেছিল, শেষের দিকে লোভ সামলাতে পারেনি। ৪০ হাজার নিয়ে নিলো। বাট স্যার আল থ্রু দে বিহেভড ভেরী নাইস উইথ মি।
আমি রাগে ফুসতে থাকলাম, কোন সমাজে বাস করছি আমরা। রাগের চোটে ক্রেডিট কার্ডের পিন নম্বর ভুলে গেলাম। রাগ ধীরে ধীরে ভয়ে পরিনত হচ্ছে, সেই সহকর্মীকে ফোন করলাম।
– তুমি কমপ্লেন করোনি?
– কোন প্লেনই করিনি, করে কী হবে? এরাই তো সবাই আমদের সোনার ছেলে ।
– আচ্ছা, আমি যে পিন নম্বর ভুলে গিয়েছি।
– দ্যাটস নট গুড স্যার, তাড়াতাড়ি মনে করার চেষ্টা করেন, না হলে ক্রেডিট কার্ডই সাথে রাখবেন না। তবে স্যার কিছু টাকা সাথে রাখবেন, মোটামুটি ভালো এমাউন্ট, ওরা যেন অপমানিত বোধ না করে। ইফ ইউ কো অপারেট শুধু টাকার ওপর দিয়ে যাবে। দে আর গুড পিপল, দ্যাখেন আমার ৭০০ টাকা কিন্তু ফেরত দিয়ে ছিল। একটা সিএনজি ডেকে উঠিয়ে দিল। সি এনজি ওলাকে বলল, আঙ্কেলের সাথে কিন্তু ভাড়া নিয়া ক্যাচাল করবা না। ওনার এমনিতেই আইজ অনেক লস হইসে।
এমন ঘটনাগুলো আমাদের পাশে নিত্য ঘটছে আর আমরা বেশ মানিয়ে নিচ্ছি ।
কিছুদিন পরে সোনার ছেলেরা বাড়ি এসে কষ্ট করে নিয়ে যাবে । পথে ঘাটে অকস্মাত বিরক্ত করবে না ।
কিছুদিন পরে সোনার ছেলেরা বাড়ি এসে কষ্ট করে নিয়ে যাবে
সহমত
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
তোমার লেখার গুণে ভাইয়া নিদারুণ দুঃখজনক ঘটনাটিও উপভোগ করলাম নির্লজ্জের মতো! কন্টেন্ট নিয়ে বলবার মত গুণীজনের অভাব নেই এখানে, ভাইয়া! সো, আমি সেদিকে নজর না দেই। তোমার সহজবোদ্ধ লেখনী বরাবরের মত টেনে নিয়ে গেছে ঘটনার গভীরে। পড়তে পড়তে ভাবছিলাম, এটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে লেখা না হলে জগতের কী এমন ক্ষতি বৃদ্ধি হতো!
দিলাম সবকিছু মুছে। ঘটনাটি শুনে এত রাগ হয়েছিলো যে শিরোনামে সরকার, রস্ট্র, নেতা, পাতিনেতা সবকিছু লিখে ফেলতে ইচ্ছে করছিলো। থ্যাঙ্কস, সাবিনা
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
তোমার মন্তব্যটা খুবই ভালো লাগলো, সাবিনা।
কম টাকা থাকলে আগে শুনতাম চড় থাপ্পড় দিত, এরপরে কেউ কেউ শুনেছি চোখে টাইগার বাম ডলে দিত। আমার ফুপা প্রায় এক সপ্তাহ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এই টাইগারের বামের কবলে পড়ে। সাম্প্রতিক শুনেছি টাকা থাকুক আর না থাকুক, ছিনতাই করে চলে যাবার সময় অনেকে চাকু দিয়ে একটি হলেও পোঁচ দিয়ে যায় যাতে পিছু নিতে না পারে। 🙁
\\\তুমি আসবে বলে, হে স্বাধীনতা
অবুঝ শিশু হামাগুড়ি দিল পিতামাতার লাশের ওপর।\\\
মোকাব্বির,
দে আর গুড পিপল, দ্যাখেন আমার ৭০০ টাকা কিন্তু ফেরত দিয়ে ছিল। একটা সিএনজি ডেকে উঠিয়ে দিল। সি এনজি ওলাকে বলল, আঙ্কেলের সাথে কিন্তু ভাড়া নিয়া ক্যাচাল করবা না। ওনার এমনিতেই আইজ অনেক লস হইসে
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
:bash:
এখনো বিষের পেয়ালা ঠোঁটের সামনে তুলে ধরা হয় নি, তুমি কথা বলো। (১২০) - হুমায়ুন আজাদ
:goragori:
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
নিদারুন হতাশ বোধ করি যখন উপলব্ধি করি এসব অস্বাভাবিকতাই এখন চরমভাবে স্বাভাবিক 🙁
আমি বাংলায় মাতি উল্লাসে, করি বাংলায় হাহাকার
আমি সব দেখে শুনে, ক্ষেপে গিয়ে করি বাংলায় চিৎকার ৷
আহসান,
হতাশ হলে হবেনা, এই ঘটনাটি বাস্তব, চলো এ গুলি প্রতিরোধের বুদ্ধি বের করি
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"চলো এ গুলি প্রতিরোধের বুদ্ধি বের করি" - সাইদুল, আমিতো সবসময়েই এসব প্রতিরোধের বুদ্ধিসুদ্ধি নিয়ে নিজেই নীরবে অনেক নাড়াচাড়া করি, কিন্তু কোন কূল কিনারা পাই না।
দে আর গুড পিপল, শুধু তাই নয়, দে আর হাইলি ইন্টেলিজেন্ট অলসো।
সাইদুল, তোমার লেখার গুনে এ কাহিনীটা দুঃখবোধকে অতিক্রম করে উপভোগ্য হয়েছে। এসব কাহিনী পড়লে মনে মনে আমি আমার এক সুহৃদ সতীর্থকে কল্পনায় কামনা করি। সে আমারই ব্যাচমেট আলী আযম। দেহে তার অসুরের শক্তি ছিলো। কলেজের ফুটবল টীমের ব্যাকী ছিল। সে একবার সত্তর দশকের শেষ দিকে কিংবা আশীর প্রথমে, মানিক মিয়া এভিনিউতে এরকম দূর্বৃত্তের কবলে পড়েছিলো। সে রিক্সায় করে একা যাচ্ছিলো। হঠাৎ তার রিক্সা থামিয়ে ছিনতাইকারীরা তার বুকে ছুরি ধরে। সে একলাফে রিক্সা থেকে নেমে তাদের উপর সপাটে লাথি চালাতে থাকে, যেন তারা গোলের সামনে প্রতিপক্ষের পায়ে থাকা ফুটবল। লাথিতে লাথিতে আধমরা করে তাদেরকে সে সেখানে রেখেই চলে আসে। যেদিন ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় এরকম কিছু আলী আযম চলাফেরা করবে, সেদিন হয়তো সিম্বলিক হলেও এর কিছু প্রতিকার পাওয়া যাবে।
আপনার মন্তব্য দারুন ভাবে অনুপ্রাণিত করলো। আলী আযম ভাইএর মত লোক দরকার। শক্তিতে না হোক সাহসে। সবচে বড় সমস্যা হল আজকাল আমরা অন্যের বিপদে এগিয়ে আসিনা। প্রত্যেকে সত্যিই যদি পরের তরে হওয়া যেত তাহলে সমস্যা অনেক কমে যেত। ধন্যবাদ
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
"আই ওয়াজ অনেস্ট..."--- হায় আমার কপাল!
কাজী সাদিক,
এর আগে কে যেন একজন পিন নম্বর ভুল বলেছিল, তাকে চাকুর কোপ দিয়েছে কয়েকটি। আমি অফিস থেকে ফিরছি, স্যুট টাই পরা। এই ড্রেসে চাকু খাওয়া টা কী ঠিক হত?
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
এই ঘটনাটা আগেরবার পড়ে যেরকম একটা রাগে গা রি রি করা অনুভূতি হয়েছিল, এবার পার্টিসিপেশনের কারনে সেটা আরও বেশী হলো।
এ থেকে উত্তরনের কি কোনই উপায় নাই?
ভাবলে খুবই অসহয় বোধ করি......
Do not argue with an idiot they drag you down to their level and beat you with experience.
ঊত্তরণের একটি ঊপায় হল এসবের বিরুদ্ধে এক জোট বৈশাখ l সাহস করে রুখে দাঁড়ানোর সাহস দেওয়া
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
মোবাইলে বাংলা লেখার সময় এত সতর্ক থাকার চেষ্টা করি, ভুল হয়েই যায়, উত্তরণ হয়ে গেল ঊত্তরণ, উপায় ঊপায় আর বাঁধা হলো বৈশাখ।
মোট কথা "উত্তরণের একটি উপায় হল এসবের বিরুদ্ধে এক জোট বাঁধা" হয়ে গেল ঊত্তরণের একটি ঊপায় হল এসবের বিরুদ্ধে এক জোট বৈশাখ,
যে কথা কখনও বাজেনা হৃদয়ে গান হয়ে কোন, সে কথা ব্যর্থ , ম্লান
আতঙ্কিত